কুমিল্লায় ৪ খুন

মা-ছেলেসহ ৩ জন, গণপিটুনিতে খুনি নিহত

কুমিল্লায় একের পর এক মা, শিশু ছেলেসহ প্রকাশ্যে ৩ জনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে ৪ নারীসহ অন্তত ৬ জন। পরে গণপিটুনিতে ঘাতক রিকশাচালক মোখলেছুর রহমান নিহত হয়েছে। বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাঁধানগর গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পুলিশ হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবিদ্বারের রাঁধানগর গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে মোখলেছুর রহমান (৩৫) পেশায় রিকশাচালক। প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে সে রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় এবং সকাল ১০টার দিকে বাড়ি ফিরে। এ সময় সে ঘরে ঢুকে লম্বা একটি ধারাল ছেনি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। প্রথমে সে প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী নাজমা বেগম ও মা মাজেদা বেগমকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই নাজমার মৃত্যু হয়। পরে ঘাতক একই বাড়ির মৃত শাহ আলমের শিশুসন্তান আবু হানিফকে (১০) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় শিশু হানিফের মা আনোয়ারা বেগম ছেলেকে বাঁচাতে দৌড়ে এলে ঘাতক মোখলেছ তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে। মা ও ছেলের হত্যা নিশ্চিত করে ঘাতক মোখলেছ রক্তমাখা ছেনি হাতে নিয়ে বাড়িতে ও রাস্তায় জাহানারা বেগমসহ আরও অন্তত ২ জনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় লোকজন ঘাতক মোখলেছকে গণপিটুনি দেয়, এতে সে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত নুরুল ইসলাম, ফাহিমা, রাবেয়া বেগম, মাজেদা বেগম ও জাহানারা বেগমকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘাতক মোখলেছের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও ভাবী মরিয়ম আক্তারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। নিহত ঘাতকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম সাংবাদিকদের জানান, ‘তাদের ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে। তার স্বামী নামাজি ছিল, মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক রোগী ছিল না। তবে মাঝেমধ্যে তার মাথাব্যথা হতো এবং সে নিয়মিত মাথাব্যথার ট্যাবলেট খেত। প্রতিদিন রিকশা চালানোর পর বিকেলে বাড়িতে ফিরলেও বুধবার সকাল ১০টার দিকে সে বাড়ি আসার পর হঠাৎ করে ধারালো ছেনি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে। কিন্তু কী কারণে সে একের পর এক বাড়ির লোকজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তা জানি না।’ এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াৎ হোসেনসহ জেলা পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে এমন নৃশংস ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের এলাকার শত শত লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। এ ঘটনা এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাতক একজন রিকশাচালক, সে মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক রোগী ছিল কিনাÑ এমন তথ্য জানা নেই। এমন নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে।’

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দেবিদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার জানান, ‘ঘাতক এলোপাতাড়ি ৮/৯ জনকে কুপিয়ে ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা ঘাতকসহ ৪ জনের মরদেহ পেয়েছি, হাসপাতালে আরও ২ জনের মৃত্যুর গুজব থাকলেও এ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন কেউ মারা যায়নি। হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি হত্যামামলা দায়ের করা হবে।’

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

কুমিল্লায় ৪ খুন

মা-ছেলেসহ ৩ জন, গণপিটুনিতে খুনি নিহত

প্রতিনিধি, কুমিল্লা

কুমিল্লায় একের পর এক মা, শিশু ছেলেসহ প্রকাশ্যে ৩ জনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে ৪ নারীসহ অন্তত ৬ জন। পরে গণপিটুনিতে ঘাতক রিকশাচালক মোখলেছুর রহমান নিহত হয়েছে। বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাঁধানগর গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পুলিশ হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবিদ্বারের রাঁধানগর গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে মোখলেছুর রহমান (৩৫) পেশায় রিকশাচালক। প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে সে রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় এবং সকাল ১০টার দিকে বাড়ি ফিরে। এ সময় সে ঘরে ঢুকে লম্বা একটি ধারাল ছেনি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। প্রথমে সে প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী নাজমা বেগম ও মা মাজেদা বেগমকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই নাজমার মৃত্যু হয়। পরে ঘাতক একই বাড়ির মৃত শাহ আলমের শিশুসন্তান আবু হানিফকে (১০) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় শিশু হানিফের মা আনোয়ারা বেগম ছেলেকে বাঁচাতে দৌড়ে এলে ঘাতক মোখলেছ তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে। মা ও ছেলের হত্যা নিশ্চিত করে ঘাতক মোখলেছ রক্তমাখা ছেনি হাতে নিয়ে বাড়িতে ও রাস্তায় জাহানারা বেগমসহ আরও অন্তত ২ জনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় লোকজন ঘাতক মোখলেছকে গণপিটুনি দেয়, এতে সে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত নুরুল ইসলাম, ফাহিমা, রাবেয়া বেগম, মাজেদা বেগম ও জাহানারা বেগমকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘাতক মোখলেছের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও ভাবী মরিয়ম আক্তারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। নিহত ঘাতকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম সাংবাদিকদের জানান, ‘তাদের ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে। তার স্বামী নামাজি ছিল, মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক রোগী ছিল না। তবে মাঝেমধ্যে তার মাথাব্যথা হতো এবং সে নিয়মিত মাথাব্যথার ট্যাবলেট খেত। প্রতিদিন রিকশা চালানোর পর বিকেলে বাড়িতে ফিরলেও বুধবার সকাল ১০টার দিকে সে বাড়ি আসার পর হঠাৎ করে ধারালো ছেনি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে। কিন্তু কী কারণে সে একের পর এক বাড়ির লোকজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তা জানি না।’ এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াৎ হোসেনসহ জেলা পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে এমন নৃশংস ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের এলাকার শত শত লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। এ ঘটনা এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাতক একজন রিকশাচালক, সে মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক রোগী ছিল কিনাÑ এমন তথ্য জানা নেই। এমন নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে।’

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দেবিদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার জানান, ‘ঘাতক এলোপাতাড়ি ৮/৯ জনকে কুপিয়ে ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা ঘাতকসহ ৪ জনের মরদেহ পেয়েছি, হাসপাতালে আরও ২ জনের মৃত্যুর গুজব থাকলেও এ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন কেউ মারা যায়নি। হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি হত্যামামলা দায়ের করা হবে।’