মিন্নির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক

রাব্বির স্বীকারোক্তি

বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ২৬ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া ভিডিওতে স্বামীকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচাতে প্রাণপণে লড়াই করতে দেখা যায় মিন্নিকে। শুরুতেই সমালোচনা থাকলেও আসামিদের গ্রেফতারের পর দ্রুত আলোচনায় চলে আসেন মিন্নি।

যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে স্বামী রিফাত শরীফকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা যায় হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী মিন্নিকে। সে অনুযায়ী ঘটনার পরপরই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিন্নির বর্তমান অবস্থান বাবার বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। প্রথমে ৪ জন থাকলেও গত শুক্রবার থেকে পুলিশ সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ সদস্যর অস্থায়ী পুলিশ চৌকি বসানো হয়েছে।

এদিকে গত শনিবার রিফাত হত্যা সংক্রান্ত সিসিটিভি ক্যামেরায় তোলা দু’টি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। ওই ভিডিওতে মিন্নির ভূমিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে কলেজের প্রধান ফটক থেকে রিফাতকে নিয়ে মিন্নিকে বেরুতে দেখা যায়, পরবর্তীতে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফের রিফাত শরীফকে কলেজের ভেতর টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপরই সন্ত্রাসীরা কলেজ গেট থেকে যখন রিফাতকে ধরে সামনের দিকে যায়, তখন মিন্নিকে পেছনে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে দেখা যায়। এর কয়েক সেকেন্ড পরেই নয়ন বন্ড ও অন্যরা যখন কিল-ঘুষি, লাথি দিতে শুরু করলে তখনই মিন্নি ঝাঁপিয়ে পরে রক্ষা করতে শুরু করেন এবং কুপিয়ে জখম করার সময় কখনো রিফাত ফরাজী, কখনো নয়ন বন্ডকে আগলে ধরে ফেরাতে চেষ্টা করেন। কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যাওয়ার পর রিফাত শরীফ হেঁটে রিকশায় ওঠেন। মিন্নি তখন ব্যাগ ও জুতো তুলে রিফাতকে খুঁজতে সামনে এগিয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজের এমন দৃশ্য দেখার পর কেন মিন্নি রিফাতকে কলেজের ভেতর নিয়ে যাচ্ছিল, সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কেন স্বাভাবিক হাঁটছিল এবং শেষপর্যায়ে রিফাতের দিকে ছুটে না গিয়ে কেন জুতো ও ব্যাগ তুলতে গিয়েছিলেন এমন নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে শুরু করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে। কেউ কেউ মনে করেন, জনমনে মিন্নিকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য অথবা তদন্ত প্রভাবিত করার জন্য পুতপক্ষ সামাজিক গণমাধ্যমে উঠেপড়ে লেগেছে।

রাব্বির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি হৃদয় রিমান্ডে

বরগুনায় রিফাত হত্যাকান্ডের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে রাফিউল ইসলাম রাব্বি। এ সময় মামলার এজাহারভুক্ত আসামি টিকটক হৃদয়কে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ন কবির।

বুধবার বিকেল ৫টার দিকে প্রথম দফার ৫ দিনের রিমান্ড শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারকের কাছে মামলায় পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয় রাফিউল ইসলাম রাব্বি। অন্যদিকে টিকটক হৃদয়কে ৫ দিনের রিমান্ডে আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২ জুলাই ভোররাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিন জনসহ ৭ আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। পরে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

রিফাত হত্যা

মিন্নির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক

রাব্বির স্বীকারোক্তি

প্রতিনিধি, বরগুনা

বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ২৬ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া ভিডিওতে স্বামীকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচাতে প্রাণপণে লড়াই করতে দেখা যায় মিন্নিকে। শুরুতেই সমালোচনা থাকলেও আসামিদের গ্রেফতারের পর দ্রুত আলোচনায় চলে আসেন মিন্নি।

যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে স্বামী রিফাত শরীফকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা যায় হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী মিন্নিকে। সে অনুযায়ী ঘটনার পরপরই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিন্নির বর্তমান অবস্থান বাবার বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। প্রথমে ৪ জন থাকলেও গত শুক্রবার থেকে পুলিশ সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ সদস্যর অস্থায়ী পুলিশ চৌকি বসানো হয়েছে।

এদিকে গত শনিবার রিফাত হত্যা সংক্রান্ত সিসিটিভি ক্যামেরায় তোলা দু’টি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। ওই ভিডিওতে মিন্নির ভূমিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে কলেজের প্রধান ফটক থেকে রিফাতকে নিয়ে মিন্নিকে বেরুতে দেখা যায়, পরবর্তীতে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফের রিফাত শরীফকে কলেজের ভেতর টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপরই সন্ত্রাসীরা কলেজ গেট থেকে যখন রিফাতকে ধরে সামনের দিকে যায়, তখন মিন্নিকে পেছনে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে দেখা যায়। এর কয়েক সেকেন্ড পরেই নয়ন বন্ড ও অন্যরা যখন কিল-ঘুষি, লাথি দিতে শুরু করলে তখনই মিন্নি ঝাঁপিয়ে পরে রক্ষা করতে শুরু করেন এবং কুপিয়ে জখম করার সময় কখনো রিফাত ফরাজী, কখনো নয়ন বন্ডকে আগলে ধরে ফেরাতে চেষ্টা করেন। কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যাওয়ার পর রিফাত শরীফ হেঁটে রিকশায় ওঠেন। মিন্নি তখন ব্যাগ ও জুতো তুলে রিফাতকে খুঁজতে সামনে এগিয়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজের এমন দৃশ্য দেখার পর কেন মিন্নি রিফাতকে কলেজের ভেতর নিয়ে যাচ্ছিল, সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কেন স্বাভাবিক হাঁটছিল এবং শেষপর্যায়ে রিফাতের দিকে ছুটে না গিয়ে কেন জুতো ও ব্যাগ তুলতে গিয়েছিলেন এমন নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে শুরু করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে। কেউ কেউ মনে করেন, জনমনে মিন্নিকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য অথবা তদন্ত প্রভাবিত করার জন্য পুতপক্ষ সামাজিক গণমাধ্যমে উঠেপড়ে লেগেছে।

রাব্বির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি হৃদয় রিমান্ডে

বরগুনায় রিফাত হত্যাকান্ডের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে রাফিউল ইসলাম রাব্বি। এ সময় মামলার এজাহারভুক্ত আসামি টিকটক হৃদয়কে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ন কবির।

বুধবার বিকেল ৫টার দিকে প্রথম দফার ৫ দিনের রিমান্ড শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারকের কাছে মামলায় পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয় রাফিউল ইসলাম রাব্বি। অন্যদিকে টিকটক হৃদয়কে ৫ দিনের রিমান্ডে আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২ জুলাই ভোররাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিন জনসহ ৭ আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। পরে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।