খুলনায় ক্ষুদের খাল খননে হরিলুট

মাত্র দেড় বছরের মধ্যে আবারও ভরাট হয়ে গেছে কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা খুলনা নগরীর ক্ষুদের খাল। ৫ কিলোমিটারজুড়ে খনন করা এ খালের দুই পাশের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নেট-পাটা দিয়েও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে পানির স্রোত। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ওই খালটি খননের যে লক্ষ্য তা ভেস্তে গেছে। দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে খালের দৈর্ঘ্য। স্থানীয়রা বলছেন, খননের নামে হরিলুট হওয়ায় খালের এ অবস্থা।

খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরীর বয়রা শ্মশানঘাট সেতুটি ময়ূর নদ ও ক্ষুদে খালকে বিভক্ত করেছে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা ১৭টি ড্রেনের পানি ক্ষুদে খাল ও ময়ূর নদে পড়ে। অন্যদিকে দুই পাশে অসংখ্য দখলদার খালটি দখল করে মৎস্য ঘের, পাকা ভবনসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ফলে খালটি সঙ্কুচিত ও ভরাট হয়ে গেছে। গভীরতাও হ্রাস পাচ্ছে।

বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদে খাল খননের উদ্যোগ নেয় খুলনা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ক্ষুদে খাল খনন, খালের পাশে দেয়াল নির্মাণ ও ৩টি কালভার্ট নির্মাণের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নূর এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন হয়। যার মোট ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছিল খাল খননের জন্য ১ কোটি ২ লাখ, দেয়াল নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৬৯ লাখ এবং কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৩৯ লাখ টাকা। গত দেড় বছর আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই খনন কাজ শেষ করে। সূত্রটি জানায়, এ প্রকল্পটির পুরো কাজ শেষ না করেই কাজ গুটিয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রথম থেকে খনন কাজ ভালোভাবে চললেও উজানের দিকে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়। খালের দুই পাশে দখলের পরিমাণও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে আন্দিরঘাট ব্রিজ এলাকায় ৭০ ফুট খাল দখলের কারণে পরিণত হয় ১০ ফুট নালায়। খালের মাঝে বাঁশ দিয়ে ভরাট শুরু করেন প্রভাবশালীরা। কয়েকটি স্থানে খাল ভরাট করে গাছও লাগানো হয়। স্থানীয়দের দাবি, চলমান কাজের সঙ্গে অবৈধভাবে দখলে থাকা খালের জমি খনন করার দাবি ছিল তাদের। কিন্তু ঠিকাদার অবৈধ দখলে থাকা খালের ওই জমি খনন করেনি। ফলে ওইসব জায়গায় শুধুমাত্র ৮ থেকে ১০ ফুট নালা খনন করেই কাজ শেষ করা হয়েছে। মূলত খননের নামে হরিলুট হওয়ায় খালের এ অবস্থা।

সরেজমিনে ওই খালে গিয়ে দেখা যায়, আন্দিরঘাট এলাকায় ৭০ ফুট খালের ১৫ ফুট বাদে বাকি জায়গা দখল হয়ে গেছে। খাল থেকে প্রায় ২০ ফুট দূরে লাল নিশান পোতা। খালের জমির ভেতর কেউ গাছ লাগিয়েছেন। কেউ খালের মাটি দিয়ে জমি ভরাট করে উঁচু করেছেন। অনেক স্থানে সীমানা চিহ্নিত করে লাগানো নিশানা তুলে ফেলেছেন প্রভাবশালীরা। বর্তমানে খালের দু’পাশে উদ্ধার হওয়া জমি বাঁশ পুঁতে ঘিরে দখল করা হয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তি বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সাইন বোর্ডও চোখে পড়ে। আর পুরো খালজুড়ে বেড়ে উঠেছে সবুজ কচুরিপানা। কোথাও সহজে পানির দেখা মিলবে না। মাঝে মাঝে তলদেশ ভরাট হয়ে উঁচু মাটিতে বেড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। মাছ চাষের জন্য নেট-পাটা দিয়েও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে স্রোত।

এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশনের বৈষয়িক কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বিভিন্ন ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা প্রতিনিয়ত খালে এসে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে খালটিতে পানির প্রবাহ অব্যাহত রাখতে মাঝে মাঝে পরিষ্কার করা উচিত। দখলের ব্যাপারে তিনি বলেন, খাল পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু লোক বাঁশ ও সাইনবোর্ড দিয়ে দখলের চেষ্টা করছে। এগুলো উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলমুক্ত করা হবে।

আরও খবর
একনেকে ৫১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ প্রকল্প অনুমোদন
কাবিননামার পাঁচ নম্বর বিধি কেন অবৈধ নয়
বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নের প্রকৃষ্ট উদাহরণ
২৫-৩১ জুলাই পর্যন্ত মশক নিধন সপ্তাহ
রংপুরেই সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের লাশ দাফন
২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ৬ হাজার কোটি ডলার
চীনা ডেমো ট্রেন আর কিনবে না সরকার
৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
দেশজুড়ে গুম খুন-ধর্ষণ মহামারী
জঙ্গি সংগঠন ধ্বংস করেছি, মতাদর্শ রয়ে গেছে
চার বছর পর পলাতক আসামি গ্রেফতার
সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ১০ বছর পর মুক্তি পেলেন আজমত আলী
কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় আহত পুলিশ সার্জেন্ট কিবরিয়ার মৃত্যু
বিয়ের আনন্দবাড়ি বিষাদে পরিণত

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

খুলনায় ক্ষুদের খাল খননে হরিলুট

শুভ্র শচীন, খুলনা

মাত্র দেড় বছরের মধ্যে আবারও ভরাট হয়ে গেছে কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা খুলনা নগরীর ক্ষুদের খাল। ৫ কিলোমিটারজুড়ে খনন করা এ খালের দুই পাশের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নেট-পাটা দিয়েও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে পানির স্রোত। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ওই খালটি খননের যে লক্ষ্য তা ভেস্তে গেছে। দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে খালের দৈর্ঘ্য। স্থানীয়রা বলছেন, খননের নামে হরিলুট হওয়ায় খালের এ অবস্থা।

খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরীর বয়রা শ্মশানঘাট সেতুটি ময়ূর নদ ও ক্ষুদে খালকে বিভক্ত করেছে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা ১৭টি ড্রেনের পানি ক্ষুদে খাল ও ময়ূর নদে পড়ে। অন্যদিকে দুই পাশে অসংখ্য দখলদার খালটি দখল করে মৎস্য ঘের, পাকা ভবনসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ফলে খালটি সঙ্কুচিত ও ভরাট হয়ে গেছে। গভীরতাও হ্রাস পাচ্ছে।

বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদে খাল খননের উদ্যোগ নেয় খুলনা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ক্ষুদে খাল খনন, খালের পাশে দেয়াল নির্মাণ ও ৩টি কালভার্ট নির্মাণের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নূর এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন হয়। যার মোট ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছিল খাল খননের জন্য ১ কোটি ২ লাখ, দেয়াল নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৬৯ লাখ এবং কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৩৯ লাখ টাকা। গত দেড় বছর আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই খনন কাজ শেষ করে। সূত্রটি জানায়, এ প্রকল্পটির পুরো কাজ শেষ না করেই কাজ গুটিয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রথম থেকে খনন কাজ ভালোভাবে চললেও উজানের দিকে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়। খালের দুই পাশে দখলের পরিমাণও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে আন্দিরঘাট ব্রিজ এলাকায় ৭০ ফুট খাল দখলের কারণে পরিণত হয় ১০ ফুট নালায়। খালের মাঝে বাঁশ দিয়ে ভরাট শুরু করেন প্রভাবশালীরা। কয়েকটি স্থানে খাল ভরাট করে গাছও লাগানো হয়। স্থানীয়দের দাবি, চলমান কাজের সঙ্গে অবৈধভাবে দখলে থাকা খালের জমি খনন করার দাবি ছিল তাদের। কিন্তু ঠিকাদার অবৈধ দখলে থাকা খালের ওই জমি খনন করেনি। ফলে ওইসব জায়গায় শুধুমাত্র ৮ থেকে ১০ ফুট নালা খনন করেই কাজ শেষ করা হয়েছে। মূলত খননের নামে হরিলুট হওয়ায় খালের এ অবস্থা।

সরেজমিনে ওই খালে গিয়ে দেখা যায়, আন্দিরঘাট এলাকায় ৭০ ফুট খালের ১৫ ফুট বাদে বাকি জায়গা দখল হয়ে গেছে। খাল থেকে প্রায় ২০ ফুট দূরে লাল নিশান পোতা। খালের জমির ভেতর কেউ গাছ লাগিয়েছেন। কেউ খালের মাটি দিয়ে জমি ভরাট করে উঁচু করেছেন। অনেক স্থানে সীমানা চিহ্নিত করে লাগানো নিশানা তুলে ফেলেছেন প্রভাবশালীরা। বর্তমানে খালের দু’পাশে উদ্ধার হওয়া জমি বাঁশ পুঁতে ঘিরে দখল করা হয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তি বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সাইন বোর্ডও চোখে পড়ে। আর পুরো খালজুড়ে বেড়ে উঠেছে সবুজ কচুরিপানা। কোথাও সহজে পানির দেখা মিলবে না। মাঝে মাঝে তলদেশ ভরাট হয়ে উঁচু মাটিতে বেড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। মাছ চাষের জন্য নেট-পাটা দিয়েও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে স্রোত।

এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশনের বৈষয়িক কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বিভিন্ন ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা প্রতিনিয়ত খালে এসে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে খালটিতে পানির প্রবাহ অব্যাহত রাখতে মাঝে মাঝে পরিষ্কার করা উচিত। দখলের ব্যাপারে তিনি বলেন, খাল পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু লোক বাঁশ ও সাইনবোর্ড দিয়ে দখলের চেষ্টা করছে। এগুলো উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলমুক্ত করা হবে।