মীরসরাইয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই ও ড্রেসিং করা হয়ে থাকে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভারসহ প্রায় সব বাজারের একাধিক মুরগির দোকান রয়েছে। আর এই সব দোকানে মুরগি জবাই ও ড্রেসিং করতে দেখা যায়।
মুরগি জবাইয়ের পর বড় একটি ড্রেসিং এর ড্রামের মধ্যে মুরগিকে ফেলে গরম পানি দিয়ে সাধারণ ড্রেসিং করা হয়। সাধারণত মুরগি পালক, বিষ্ঠা, রক্ত, পানি এবং মুখে থাকা খাদ্য পানির সঙ্গে মিশে এক ধরনের বিষাক্ত পানিতে পরিণত হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজার ভেদে শত শত মুরগি ড্রেসিং করা হয় এই বিষাক্ত পানির মধ্যে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ। আবার ড্রামের ভেতরেও বার বার জবাই করা মুরগির রক্তসহ বর্জ্য গরম পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়।
সরজমিনে দেখা যায়, দোকানগুলোর কর্মচারীরা প্রতিটি মুরগি জবাই করে প্রথমে টিনের ড্রামের মধ্যে জাবাইয়ের পর রাখে। মুরগি অসাড় হয়ে পড়লে কর্মচারীরা সেটি বের করে জমাট বাঁধা রক্তমাখা মুরগি ড্রেসিংয়ের ড্রামের মধ্যে ফেলে কয়েক মিনিট পর মুরগি চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, ছাড়িয়ে পলিথিনে ভরে গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়। ওই সব দোকানে যে ড্রামগুলোতে জবাই করা মুরগি রাখা হয় সেগুলো রক্ত-পানিতে ভরে গেলে রাস্তার পাশেই ফেলে দেয়া হচ্ছে। এতে মুরগিতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানের কর্মচারী বলেন, ‘ভাই রাইতের বেলা সব ধোঁয়া হয়। আবার সকালে দোকান খোলার সময় ধোঁয়া হয়।’ দুই বেলা ড্রাম পরিষ্কার করলে ময়লার স্তর জমে থাকার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রক্ত জমে যায় তো। সহজে পরিষ্কার হয় না। বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মিঠাছড়া বাজারে মুরগি জবাই করার স্থানও ড্রেসিং করার স্থান একসঙ্গে। এর মধ্যে গরুর বাজার সংলগ্ন পাশাপাশি দুটি মুরগি দোকান অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই ও ড্রেসিং করছেন। একই ধরনের মুরগি ড্রেসিং করতে দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন দোকানে।
২০০৮-২০০৯ সালে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ নিয়ে হুলুস্থুল পড়ে যায়। তখন সরকার বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকগুলো নিয়ম করেছিলেন। বার্ড ফ্লু আক্রমণ থেকে বাঁচতে হাতে গ্লাভস ও মুখে মাক্স ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে দোকানিরা এখন আর তা ব্যবহার করেন না এবং ওইসব নিয়ম আর মানা হয়। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বার্ড ফ্লু নয়, বর্তমানে যে পরিবেশে যে প্রক্রিয়ায় মুরগি জাবাই করে বিক্রি করা হচ্ছে সেখান থেকে নানা ব্যাকটিয়া ও ভাইরাস জনিত রোগ ছড়াতে পারে। এই বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, খোলা বাজারে মুরগি জবাই করা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরুপ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই ও ড্রেসিং করলে বার্ড ফ্লুসহ নানা ধরনের রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। তাই আমি মনে করি বাজার কমিটির উচিত এই সব দোকানগুলো সঠিকভাবে তরারকি করা।
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৩ পৌষ ১৪২৬, ৩০ রবিউস সানি ১৪৪১
রণজিত ধর, মীরসরাই (চট্টগ্রাম)
মীরসরাইয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই ও ড্রেসিং করা হয়ে থাকে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভারসহ প্রায় সব বাজারের একাধিক মুরগির দোকান রয়েছে। আর এই সব দোকানে মুরগি জবাই ও ড্রেসিং করতে দেখা যায়।
মুরগি জবাইয়ের পর বড় একটি ড্রেসিং এর ড্রামের মধ্যে মুরগিকে ফেলে গরম পানি দিয়ে সাধারণ ড্রেসিং করা হয়। সাধারণত মুরগি পালক, বিষ্ঠা, রক্ত, পানি এবং মুখে থাকা খাদ্য পানির সঙ্গে মিশে এক ধরনের বিষাক্ত পানিতে পরিণত হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজার ভেদে শত শত মুরগি ড্রেসিং করা হয় এই বিষাক্ত পানির মধ্যে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ। আবার ড্রামের ভেতরেও বার বার জবাই করা মুরগির রক্তসহ বর্জ্য গরম পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়।
সরজমিনে দেখা যায়, দোকানগুলোর কর্মচারীরা প্রতিটি মুরগি জবাই করে প্রথমে টিনের ড্রামের মধ্যে জাবাইয়ের পর রাখে। মুরগি অসাড় হয়ে পড়লে কর্মচারীরা সেটি বের করে জমাট বাঁধা রক্তমাখা মুরগি ড্রেসিংয়ের ড্রামের মধ্যে ফেলে কয়েক মিনিট পর মুরগি চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, ছাড়িয়ে পলিথিনে ভরে গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়। ওই সব দোকানে যে ড্রামগুলোতে জবাই করা মুরগি রাখা হয় সেগুলো রক্ত-পানিতে ভরে গেলে রাস্তার পাশেই ফেলে দেয়া হচ্ছে। এতে মুরগিতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানের কর্মচারী বলেন, ‘ভাই রাইতের বেলা সব ধোঁয়া হয়। আবার সকালে দোকান খোলার সময় ধোঁয়া হয়।’ দুই বেলা ড্রাম পরিষ্কার করলে ময়লার স্তর জমে থাকার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রক্ত জমে যায় তো। সহজে পরিষ্কার হয় না। বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মিঠাছড়া বাজারে মুরগি জবাই করার স্থানও ড্রেসিং করার স্থান একসঙ্গে। এর মধ্যে গরুর বাজার সংলগ্ন পাশাপাশি দুটি মুরগি দোকান অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই ও ড্রেসিং করছেন। একই ধরনের মুরগি ড্রেসিং করতে দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন দোকানে।
২০০৮-২০০৯ সালে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ নিয়ে হুলুস্থুল পড়ে যায়। তখন সরকার বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকগুলো নিয়ম করেছিলেন। বার্ড ফ্লু আক্রমণ থেকে বাঁচতে হাতে গ্লাভস ও মুখে মাক্স ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে দোকানিরা এখন আর তা ব্যবহার করেন না এবং ওইসব নিয়ম আর মানা হয়। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বার্ড ফ্লু নয়, বর্তমানে যে পরিবেশে যে প্রক্রিয়ায় মুরগি জাবাই করে বিক্রি করা হচ্ছে সেখান থেকে নানা ব্যাকটিয়া ও ভাইরাস জনিত রোগ ছড়াতে পারে। এই বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, খোলা বাজারে মুরগি জবাই করা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরুপ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই ও ড্রেসিং করলে বার্ড ফ্লুসহ নানা ধরনের রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। তাই আমি মনে করি বাজার কমিটির উচিত এই সব দোকানগুলো সঠিকভাবে তরারকি করা।