ভাঙা সেতু : ঝুঁকির খেয়া পারাপারে কমছে শিক্ষার্থী!

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের খারিজা বেতাগী এলাকায় সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে স্কুলে যেতে হয় ছোট্ট খেয়া নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এলাকার জমিন মৃধা বাজার এলাকার সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় এই দুর্ভোগ চরমে পৌছে গেছে। সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ইউনিয়নটি দুই ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেতুটি মেরামত কিংবা নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুতাবড়িয়া শাখানদী। নদীর পূর্ব পারে মর্দনা, জাফরাবাদ, খারিজা বেতাগীর একাংশ ও তাফালবাড়িয়ার একাংশ। পশ্চিম পারে রামবল্লভ, দাবাড়ি, চিংগরিয়া, চন্দ্রাবাজ এবং খারিজা বেতাগী ও তাফালবাড়িয়ার একাংশ। এই ১১ গ্রামের বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগ সংযোগ ছিল জমির মৃধা বাজার এলাকার খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটি। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা যায়, উপজেলার ঠাকুরের হাটসংলগ্ন পরিত্যক্ত লোহার সেতুটি সরিয়ে এনে বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের জমির মৃধা বাজার এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই সেতু স্থাপন করতে ব্যয় হয় ১০ লাখ টাকা। লোহার বিমের ওপর আরসিসি কংক্রিট ঢালাই প্লেট বসানো ১৫০ ফুট লম্বার এই সেতুর মাঝখানে প্রায় ২৫ ফুট অংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে।

গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট্ট ডিঙি নৌকায় শিক্ষার্থীরা নদী পার হচ্ছে। তারা নদীর পূর্ব পারের বাসিন্দা ও পশ্চিম পারের খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) হিরন আহমেদ বলেন, নদীর পশ্চিম পারে খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩২০ জন শিক্ষার্থী ও খারিজা বেতাগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫০ শিক্ষার্থী নদীর পূর্ব পারের বাসিন্দা। সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গেছে। সেতুটি যখন ভেঙ্গে পড়েছিল, তখন একটি শিশু মারাও গিয়েছিল। এখন শিক্ষার্থীরা ছোট্ট খেয়ানৌকায় পারাপার হচ্ছে। এতে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় শিক্ষার্থী ও লোকজনকে।

স্কুল থেকে দক্ষিণ দিকে একটু হেঁটে জমির মৃধা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খারিজা বেতাগী কমিউনিটি ক্লিনিক। একজন রোগী সেখানে সেবা নিচ্ছেন। ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ফারিয়া সুলতানা বলেন, এখানে আগে অনেক রোগী আসতেন। সেতুটি ভেঙ্গে পড়ার পর এখন নদীর পূর্ব পারের নারী-শিশু রোগী কমই আসছে। বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর মেলকার বলেন, সেতুটি ভেঙ্গে পড়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। ওই পাড়ের লোকজন উপজেলা সদরে চলে যাচ্ছে।

বেতাগি সানকিপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. মহিবুল আলম বলেন, সেতুটি ভাঙ্গার পর ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নতুন একটি সেতুর জন্য এলজিইডি কার্যালয়ে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

দশমিনা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন পালোয়ান বলেন, ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সংযোগ সেতুর। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মানুষের চলাচলের জন্য পুরোনো এই লোহার সেতুটি এখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কারণ, এই সেতুটি শুধু ওই ইউনিয়নই নয়, পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপজেলার সঙ্গে সড়কপথে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন আর সেখানে লোহার সেতু নির্মাণ সঠিক হবে না। এ ছাড়া সেতুর স্থানে নদীভাঙন, তাই স্থান পরিবর্তন করে আরসিসি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।

রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২০ , ২৮ পৌষ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ভাঙা সেতু : ঝুঁকির খেয়া পারাপারে কমছে শিক্ষার্থী!

প্রতিনিধি, দশমিনা (পটুয়াখালী)

image

দশমিনা(পটুয়াখালী) : খেয়া পারাপারে এভাবে স্কুলে যাওয়া আসা করে শিক্ষার্থীরা। গতকাল তোলা ছবি -সংবাদ

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের খারিজা বেতাগী এলাকায় সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে স্কুলে যেতে হয় ছোট্ট খেয়া নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এলাকার জমিন মৃধা বাজার এলাকার সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় এই দুর্ভোগ চরমে পৌছে গেছে। সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ইউনিয়নটি দুই ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেতুটি মেরামত কিংবা নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুতাবড়িয়া শাখানদী। নদীর পূর্ব পারে মর্দনা, জাফরাবাদ, খারিজা বেতাগীর একাংশ ও তাফালবাড়িয়ার একাংশ। পশ্চিম পারে রামবল্লভ, দাবাড়ি, চিংগরিয়া, চন্দ্রাবাজ এবং খারিজা বেতাগী ও তাফালবাড়িয়ার একাংশ। এই ১১ গ্রামের বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগ সংযোগ ছিল জমির মৃধা বাজার এলাকার খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটি। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা যায়, উপজেলার ঠাকুরের হাটসংলগ্ন পরিত্যক্ত লোহার সেতুটি সরিয়ে এনে বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের জমির মৃধা বাজার এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই সেতু স্থাপন করতে ব্যয় হয় ১০ লাখ টাকা। লোহার বিমের ওপর আরসিসি কংক্রিট ঢালাই প্লেট বসানো ১৫০ ফুট লম্বার এই সেতুর মাঝখানে প্রায় ২৫ ফুট অংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে।

গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট্ট ডিঙি নৌকায় শিক্ষার্থীরা নদী পার হচ্ছে। তারা নদীর পূর্ব পারের বাসিন্দা ও পশ্চিম পারের খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) হিরন আহমেদ বলেন, নদীর পশ্চিম পারে খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩২০ জন শিক্ষার্থী ও খারিজা বেতাগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫০ শিক্ষার্থী নদীর পূর্ব পারের বাসিন্দা। সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গেছে। সেতুটি যখন ভেঙ্গে পড়েছিল, তখন একটি শিশু মারাও গিয়েছিল। এখন শিক্ষার্থীরা ছোট্ট খেয়ানৌকায় পারাপার হচ্ছে। এতে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় শিক্ষার্থী ও লোকজনকে।

স্কুল থেকে দক্ষিণ দিকে একটু হেঁটে জমির মৃধা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খারিজা বেতাগী কমিউনিটি ক্লিনিক। একজন রোগী সেখানে সেবা নিচ্ছেন। ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ফারিয়া সুলতানা বলেন, এখানে আগে অনেক রোগী আসতেন। সেতুটি ভেঙ্গে পড়ার পর এখন নদীর পূর্ব পারের নারী-শিশু রোগী কমই আসছে। বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর মেলকার বলেন, সেতুটি ভেঙ্গে পড়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। ওই পাড়ের লোকজন উপজেলা সদরে চলে যাচ্ছে।

বেতাগি সানকিপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. মহিবুল আলম বলেন, সেতুটি ভাঙ্গার পর ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নতুন একটি সেতুর জন্য এলজিইডি কার্যালয়ে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

দশমিনা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন পালোয়ান বলেন, ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সংযোগ সেতুর। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মানুষের চলাচলের জন্য পুরোনো এই লোহার সেতুটি এখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কারণ, এই সেতুটি শুধু ওই ইউনিয়নই নয়, পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপজেলার সঙ্গে সড়কপথে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন আর সেখানে লোহার সেতু নির্মাণ সঠিক হবে না। এ ছাড়া সেতুর স্থানে নদীভাঙন, তাই স্থান পরিবর্তন করে আরসিসি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।