রাজিবপুরে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা হরিলুটের অভিযোগ

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের টিআর(গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ), কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা)ও কাবিখা(কাজের বিনিময় খাদ্য) কর্মসূচিতে ব্যাপক হরিলুটের খবর পাওয়া গেছে। কোনটা কিছু কাজ করে, আবার কোনটা কাজ না করেই, ভুয়া বিল-ভাউচারে সরকারি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বারবার ব্যাপারটি বলা সত্বেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি । জুন মাসে বন্যার কারণে কাজ করতে না পারায় প্রকল্পের চাল/গম খাদ্য গুদামে রাখা হয়। টাকা রাখা হয় ব্যাংকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ হিসাবে । বন্যা পরবর্তী সময়ে কাবিটার কিছু কাজ করলেও টিআর ও কাবিখার কোন কাজ না করেই বিল ছাড় করেছেন প্রকল্প কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যস্ত থাকার কারণে তদারকি করতে পারেনি। এ সুযোগে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কোন কাজের তদারকির প্রয়োজন মনে করেননি। ক্ষমতাসীন দলের সুপারিশে প্রকল্প সভাপতি ও সদস্য সচিবের সঙ্গে যোগসাজসে ভুয়া ছবি দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে বিল ছাড় করেছেন। কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সরেজমিনে টিআর, কাবিটার বেশ কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে।

কাবিটা ও কাবিখা প্রকল্পের ৬নং ওয়ার্ডের মরিচা কান্দি রহম আলীর বাড়ির দক্ষিণ হইতে পশ্চিমে শরবত আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ। যার বরাদ্দ ছিল ১৪ মে.টন। প্রকল্প সভাপতি ছিলেন উক্ত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন এবং সেক্রেটারি ছিলেন চেয়ারম্যানের ভাই রফিকুল ইসলাম। সেখানে এখন পর্যন্ত কোন কাজই হয়নি। এ ব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি ইসমাইল মেম্বর জানান, চেয়ারম্যান আমার নিকট থেকে সই নিয়েছে। আমি বার বার বলছি কাজ করব টাকা দেন। কিন্তু টাকাও দিচ্ছে না আমি কাজও করতে পারছি না। উক্ত ওয়ার্ডে শিবের ডাঙ্গী মাস্টারপাড়া মজিবরের বাড়ি হতে উত্তর দিকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। যার বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। এর অনেকটাই কয়েক মেম্বর মিলে ভাগ বাটোয়ার করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ৩নং ওয়ার্ড ধুবালিয়া পাড়া মানিকের বাড়ি থেকে হাজী কাদেরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত(টিআর) বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮০টাকা। প্রকল্প সভাপতি পর্বত আলী মেম্বর। সেখানেও এক টাকার কাজ হয়নি। ১নং বালিয়ামারী ওয়ার্ডে ব্যাপারী পাড়া মোজাম্মেলের বাড়ি থেকে কাদেরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। বরাদ্দ ছিল ৬২ হাজার ১৪০ টাকা। সেটি বাবু মেম্বর ও তার মামা আউয়াল চান কাজ না করেই আত্মসাত করেছে। ৮নং ওয়ার্ডে মুন্সি পাড় জিয়াউর রহমান সাবেক মেম্বরের বাড়ি থেকে সাইফুলের বাড়ি পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা কোন কাজ করা হয়নি। প্রকল্প সভাপতি ছিলেন ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক। ৪নং ওয়ার্ডের সবুজবাগ সোহরাফ আলরি বাড়ি থেকে পশ্চিমে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজা বেগমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। বরাদ্দ ছিল সাড়ে ১০ মে.টন। সভাপতি ছিলেন ইউপি সদস্য রজব আলী। এলাকাবাসী জানান, সেখানে এক পাছিয়া মাটিও ফেলা হয়নি। রাজিবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট। এখনও কাজ আরম্ভ করা হয়নি। মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে সিলেটপাড় দক্ষিণ থেকে জামালপুর সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ১২ মে. টন চাল। প্রকল্প সভাপতি মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস সালাম তালুকদার। উক্ত ইউনিয়নের চর নেওয়াজী হাই স্কুল থেকে শফি বিএসসির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামাত বাবদ ১০ মে.টন চাল। সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আদিল চন্দ্র। এছাড়া নদী বিচ্ছিন্ন কোদালকাটি ইউনিয়নেও কোন কাজ হয়নি বলে স্থানীয়রা অফিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে চর রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, সব কাজ হয়নি তা ঠিক নয়। তবে কয়েকটি কাজের চূড়ান্ত বিল দেয়া হয়নি। সেখানে মাটির সমস্যা আছে। প্রকল্প সভাপতিদের বলেছি কাজ আরম্ভ করতে। তবে ব্যাংক ও খাদ্য গুদামে খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে ২০১৮ ও ২০১৯ অর্থবছরের কোন বিল বাকি নেই। সকল বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের সমোদ্বয় টাকা ৩০ জুনের আগেই উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে উত্তোলন করে পরে তা ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্নসাত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের বরাদ্দকৃত গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ভেস্তে গেছে। তবে বর্তমানে কর্মসৃজন প্রকল্পের লেবার দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছেন এলাকাবাসী।

রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২০ , ৫ মাঘ ১৪২৬, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রাজিবপুরে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা হরিলুটের অভিযোগ

প্রতিনিধি, রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম)

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের টিআর(গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ), কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা)ও কাবিখা(কাজের বিনিময় খাদ্য) কর্মসূচিতে ব্যাপক হরিলুটের খবর পাওয়া গেছে। কোনটা কিছু কাজ করে, আবার কোনটা কাজ না করেই, ভুয়া বিল-ভাউচারে সরকারি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বারবার ব্যাপারটি বলা সত্বেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি । জুন মাসে বন্যার কারণে কাজ করতে না পারায় প্রকল্পের চাল/গম খাদ্য গুদামে রাখা হয়। টাকা রাখা হয় ব্যাংকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ হিসাবে । বন্যা পরবর্তী সময়ে কাবিটার কিছু কাজ করলেও টিআর ও কাবিখার কোন কাজ না করেই বিল ছাড় করেছেন প্রকল্প কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যস্ত থাকার কারণে তদারকি করতে পারেনি। এ সুযোগে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কোন কাজের তদারকির প্রয়োজন মনে করেননি। ক্ষমতাসীন দলের সুপারিশে প্রকল্প সভাপতি ও সদস্য সচিবের সঙ্গে যোগসাজসে ভুয়া ছবি দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে বিল ছাড় করেছেন। কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সরেজমিনে টিআর, কাবিটার বেশ কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে।

কাবিটা ও কাবিখা প্রকল্পের ৬নং ওয়ার্ডের মরিচা কান্দি রহম আলীর বাড়ির দক্ষিণ হইতে পশ্চিমে শরবত আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ। যার বরাদ্দ ছিল ১৪ মে.টন। প্রকল্প সভাপতি ছিলেন উক্ত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন এবং সেক্রেটারি ছিলেন চেয়ারম্যানের ভাই রফিকুল ইসলাম। সেখানে এখন পর্যন্ত কোন কাজই হয়নি। এ ব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি ইসমাইল মেম্বর জানান, চেয়ারম্যান আমার নিকট থেকে সই নিয়েছে। আমি বার বার বলছি কাজ করব টাকা দেন। কিন্তু টাকাও দিচ্ছে না আমি কাজও করতে পারছি না। উক্ত ওয়ার্ডে শিবের ডাঙ্গী মাস্টারপাড়া মজিবরের বাড়ি হতে উত্তর দিকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। যার বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। এর অনেকটাই কয়েক মেম্বর মিলে ভাগ বাটোয়ার করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ৩নং ওয়ার্ড ধুবালিয়া পাড়া মানিকের বাড়ি থেকে হাজী কাদেরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত(টিআর) বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮০টাকা। প্রকল্প সভাপতি পর্বত আলী মেম্বর। সেখানেও এক টাকার কাজ হয়নি। ১নং বালিয়ামারী ওয়ার্ডে ব্যাপারী পাড়া মোজাম্মেলের বাড়ি থেকে কাদেরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। বরাদ্দ ছিল ৬২ হাজার ১৪০ টাকা। সেটি বাবু মেম্বর ও তার মামা আউয়াল চান কাজ না করেই আত্মসাত করেছে। ৮নং ওয়ার্ডে মুন্সি পাড় জিয়াউর রহমান সাবেক মেম্বরের বাড়ি থেকে সাইফুলের বাড়ি পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা কোন কাজ করা হয়নি। প্রকল্প সভাপতি ছিলেন ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক। ৪নং ওয়ার্ডের সবুজবাগ সোহরাফ আলরি বাড়ি থেকে পশ্চিমে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজা বেগমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। বরাদ্দ ছিল সাড়ে ১০ মে.টন। সভাপতি ছিলেন ইউপি সদস্য রজব আলী। এলাকাবাসী জানান, সেখানে এক পাছিয়া মাটিও ফেলা হয়নি। রাজিবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট। এখনও কাজ আরম্ভ করা হয়নি। মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে সিলেটপাড় দক্ষিণ থেকে জামালপুর সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ১২ মে. টন চাল। প্রকল্প সভাপতি মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস সালাম তালুকদার। উক্ত ইউনিয়নের চর নেওয়াজী হাই স্কুল থেকে শফি বিএসসির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামাত বাবদ ১০ মে.টন চাল। সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আদিল চন্দ্র। এছাড়া নদী বিচ্ছিন্ন কোদালকাটি ইউনিয়নেও কোন কাজ হয়নি বলে স্থানীয়রা অফিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে চর রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, সব কাজ হয়নি তা ঠিক নয়। তবে কয়েকটি কাজের চূড়ান্ত বিল দেয়া হয়নি। সেখানে মাটির সমস্যা আছে। প্রকল্প সভাপতিদের বলেছি কাজ আরম্ভ করতে। তবে ব্যাংক ও খাদ্য গুদামে খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে ২০১৮ ও ২০১৯ অর্থবছরের কোন বিল বাকি নেই। সকল বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের সমোদ্বয় টাকা ৩০ জুনের আগেই উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে উত্তোলন করে পরে তা ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্নসাত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের বরাদ্দকৃত গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ভেস্তে গেছে। তবে বর্তমানে কর্মসৃজন প্রকল্পের লেবার দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছেন এলাকাবাসী।