রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বিশ্লেষক

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এর আদেশে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে বাধ্য হবে মায়ানমার। অন্যদিকে মায়ানমার আইসিজে’র আদেশ প্রত্যাখান করলেও এ আদেশকে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আদেশ মায়ানমারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করবে বলেও মনে করেন তারা।

বিশ্লেষকদের মতে, আইসিজে যে আদেশ দিয়েছেন মায়ানমার তা মেনে চলবে। আদেশ অনুযায়ী মায়ানমারকে অবশ্যই ৪ মাসের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে, সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপর ৬ মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দিতে হবে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে মায়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব হলে তাদের নিজেদের বসত-ভিটায় ফেরাও সম্ভবপর হবে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মায়ানমার সেনাবাহিনী। সেনা অভিযানের ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। মায়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে। ওই নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বরে আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। শুনানি শেষে আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।

আইসিজের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেস থেকে এই আদেশ ঘোষণা করেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মায়ানমারকে জরুরিভিত্তিতে চার দফা অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছেন, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোন পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না, যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। গণহত্যার অভিযোগের সমস্ত আলামত তাদের সংরক্ষণ করতে হবে।

আইসিজের আদেশের পর বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হি লি বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ ও তাদের সুরক্ষায় আইসিজে যে আদেশ দিয়েছেন তা মায়ানমারকে মানতে হবে। তা ছাড়া মায়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচারের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় নতুন একটি আন্তর্জাতিক অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের তিনি পরামর্শ দেবেন বলেও জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিকভাবে আর কী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি- এমন এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ দূত বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিরাপত্তা পরিষদ মায়ানমারের ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে নিরাপত্তা পরিষদের ওপর ক্রমাগত চাপ বজায় রাখতে হবে। ইস্যুটি আইসিসিতে না নেয়ার কারণে নিরাপত্তা পরিষদ একে তাদের বাধ্যবাধকতা ও দায়িত্ব মনে করছে না। ফলে এক্ষেত্রে আরও কিছু করার রয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো শুধু মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল করার জন্য আমি চাপ দিয়ে আসছি।

এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় আইসিজে মায়ানমারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে যে অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করেছে তাকে মানবতার জয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তার মতে, এ রায় মানবাধিকার কর্মীদের জন্যও মাইলফলক হয়ে থাকবে। মন্ত্রী আশা করেন, আদালতের আদেশের পর প্রত্যাবাসনের পথ সুগম হবে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা তাদের স্বভূমে (রাখাইনে) ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে।

ইকুয়েডর সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বার্তায় তিনি আরও বলেন, গাম্বিয়া, ওআইসি, রোহিঙ্গা এবং অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় বিজয়। জয় হোক বিশ্ব মানবতার, মঙ্গল হোক মানবতার জননী শেখ হাসিনার। তিনি আরও বলেন, আদালত রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং মায়ানমারের দাবি নাকচ করেছেন। মায়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নৃশংসতা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশের ফলে আশা করি বিশ্বে জাতিগত শুদ্ধি ও গণহত্যার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে।

আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ মায়ানমারকে মানতে হবে জানিয়ে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, পৃথিবীর সব মুক্তিকামী ও শান্তিকামী জনগণের রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) যে আদেশ দিয়েছেন সেটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এই আদেশকে সবাই স্বাগত জানিয়েছে। আমরা চাই এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মায়ানমারের বোধোদয় হবে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ অনেকটাই সুগম হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আরেক অনুষ্ঠানে আনিসুল হক বলেন, আইসিজে এর আদেশে পরিলক্ষিত হয়েছে সারা বিশ্বের মানুষ চায় রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান হোক। মায়ানমার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে তাদের প্রকৃত আবাস ভূমিতে ফিরিয়ে দিলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।

এদিকে আদেশের পর মায়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আইসিজের আদেশ যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গত বৃহস্পতিবার গুলশানে ‘রোহিঙ্গা সংকট : গণহত্যা’ শীর্ষক সভায় তিনি বলেন, আইসিজেতে গাম্বিয়ার কথায় অনেক বিষয় ওঠে এসেছে, যা জাতিসংঘ ও কফি আনান কমিশনে আগেই বলা হয়েছে। আইসিজের রায় বিশ্বের সব গণহত্যার ভুক্তভোগীর জন্য একটি জয়। আমরা বিশ্বাস করি আইসিজের এ রায় রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদে ফেরা নিশ্চিত করবে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আইসিজের এ রায় পুরোপুরি বাস্তবায়নে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রভাবিত হবে না। আমরা গাম্বিয়া ও আইসিজেকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি গাম্বিয়ার এ পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরে আসবে এবং তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ডক্টর আমেনা মহসীন বলেন, আইসিজের আদেশে মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। রোহিঙ্গারা হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে বলেও জানায় আদালত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আইসিজের আদেশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আত্মপরিচয় ফিরে পাবে। তবে এতে দু’দেশরে কূটনৈতকি সম্পর্কে কতটা প্রভাব পড়ে সেটি এখন দেখার বিষয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, এই আদেশ প্রভাব পড়তে পারে দুই দেশের সম্পর্কে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইসিজের আদেশের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ এক ধাপ এগিয়েছে। এখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার যে বিষয়গুলো রয়েছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের একটা প্রচণ্ড চাপ মায়ানমারের ওপর এসেছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে আইসিজের রায়ের আলোকে বাংলাদেশকে ভূমিকা নিতে হবে আন্তর্জাতিক মহলকে আরও বেশি সোচ্চার করার। এ প্রচেষ্টা বাংলাদেশের অব্যাহত রাখা জরুরি।

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

আইসিজের রায়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বিশ্লেষক

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এর আদেশে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে বাধ্য হবে মায়ানমার। অন্যদিকে মায়ানমার আইসিজে’র আদেশ প্রত্যাখান করলেও এ আদেশকে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আদেশ মায়ানমারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করবে বলেও মনে করেন তারা।

বিশ্লেষকদের মতে, আইসিজে যে আদেশ দিয়েছেন মায়ানমার তা মেনে চলবে। আদেশ অনুযায়ী মায়ানমারকে অবশ্যই ৪ মাসের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে, সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপর ৬ মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দিতে হবে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে মায়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব হলে তাদের নিজেদের বসত-ভিটায় ফেরাও সম্ভবপর হবে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মায়ানমার সেনাবাহিনী। সেনা অভিযানের ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। মায়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে। ওই নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বরে আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। শুনানি শেষে আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।

আইসিজের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেস থেকে এই আদেশ ঘোষণা করেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মায়ানমারকে জরুরিভিত্তিতে চার দফা অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছেন, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোন পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না, যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। গণহত্যার অভিযোগের সমস্ত আলামত তাদের সংরক্ষণ করতে হবে।

আইসিজের আদেশের পর বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হি লি বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ ও তাদের সুরক্ষায় আইসিজে যে আদেশ দিয়েছেন তা মায়ানমারকে মানতে হবে। তা ছাড়া মায়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচারের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় নতুন একটি আন্তর্জাতিক অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের তিনি পরামর্শ দেবেন বলেও জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিকভাবে আর কী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি- এমন এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ দূত বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিরাপত্তা পরিষদ মায়ানমারের ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে নিরাপত্তা পরিষদের ওপর ক্রমাগত চাপ বজায় রাখতে হবে। ইস্যুটি আইসিসিতে না নেয়ার কারণে নিরাপত্তা পরিষদ একে তাদের বাধ্যবাধকতা ও দায়িত্ব মনে করছে না। ফলে এক্ষেত্রে আরও কিছু করার রয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো শুধু মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল করার জন্য আমি চাপ দিয়ে আসছি।

এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় আইসিজে মায়ানমারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে যে অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করেছে তাকে মানবতার জয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তার মতে, এ রায় মানবাধিকার কর্মীদের জন্যও মাইলফলক হয়ে থাকবে। মন্ত্রী আশা করেন, আদালতের আদেশের পর প্রত্যাবাসনের পথ সুগম হবে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা তাদের স্বভূমে (রাখাইনে) ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে।

ইকুয়েডর সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বার্তায় তিনি আরও বলেন, গাম্বিয়া, ওআইসি, রোহিঙ্গা এবং অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় বিজয়। জয় হোক বিশ্ব মানবতার, মঙ্গল হোক মানবতার জননী শেখ হাসিনার। তিনি আরও বলেন, আদালত রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং মায়ানমারের দাবি নাকচ করেছেন। মায়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নৃশংসতা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশের ফলে আশা করি বিশ্বে জাতিগত শুদ্ধি ও গণহত্যার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে।

আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ মায়ানমারকে মানতে হবে জানিয়ে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, পৃথিবীর সব মুক্তিকামী ও শান্তিকামী জনগণের রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) যে আদেশ দিয়েছেন সেটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এই আদেশকে সবাই স্বাগত জানিয়েছে। আমরা চাই এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মায়ানমারের বোধোদয় হবে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ অনেকটাই সুগম হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আরেক অনুষ্ঠানে আনিসুল হক বলেন, আইসিজে এর আদেশে পরিলক্ষিত হয়েছে সারা বিশ্বের মানুষ চায় রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান হোক। মায়ানমার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে তাদের প্রকৃত আবাস ভূমিতে ফিরিয়ে দিলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।

এদিকে আদেশের পর মায়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আইসিজের আদেশ যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গত বৃহস্পতিবার গুলশানে ‘রোহিঙ্গা সংকট : গণহত্যা’ শীর্ষক সভায় তিনি বলেন, আইসিজেতে গাম্বিয়ার কথায় অনেক বিষয় ওঠে এসেছে, যা জাতিসংঘ ও কফি আনান কমিশনে আগেই বলা হয়েছে। আইসিজের রায় বিশ্বের সব গণহত্যার ভুক্তভোগীর জন্য একটি জয়। আমরা বিশ্বাস করি আইসিজের এ রায় রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদে ফেরা নিশ্চিত করবে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আইসিজের এ রায় পুরোপুরি বাস্তবায়নে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রভাবিত হবে না। আমরা গাম্বিয়া ও আইসিজেকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি গাম্বিয়ার এ পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরে আসবে এবং তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ডক্টর আমেনা মহসীন বলেন, আইসিজের আদেশে মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। রোহিঙ্গারা হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে বলেও জানায় আদালত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আইসিজের আদেশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আত্মপরিচয় ফিরে পাবে। তবে এতে দু’দেশরে কূটনৈতকি সম্পর্কে কতটা প্রভাব পড়ে সেটি এখন দেখার বিষয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, এই আদেশ প্রভাব পড়তে পারে দুই দেশের সম্পর্কে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইসিজের আদেশের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ এক ধাপ এগিয়েছে। এখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার যে বিষয়গুলো রয়েছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের একটা প্রচণ্ড চাপ মায়ানমারের ওপর এসেছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে আইসিজের রায়ের আলোকে বাংলাদেশকে ভূমিকা নিতে হবে আন্তর্জাতিক মহলকে আরও বেশি সোচ্চার করার। এ প্রচেষ্টা বাংলাদেশের অব্যাহত রাখা জরুরি।