আটজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আট আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট, দুইজনের সাজা কমিয়ে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। প্রায় আট বছর আগে লক্ষ্মীপুর সদর থানার বসুদৌহিতা গ্রামে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় আসামিরা।

গতকাল বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোলরার বেঞ্চ এ রায় দেয়। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও এসএম শফিকুল ইসলাম কাজল। পলাতক আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামসুন নাহার লাইজু ও ফারহানা আফরোজ রুনা। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন- কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হিরণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দহরপাড়া গ্রামের মানিক, তালিতপুর গ্রামের রাশেদ, রুদ্রপুর গ্রামের সুমন, সুধারামের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের হেদায়েত উল্যা হেদু, চাটখিল উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের নুরনবী, সোনাইমুড়ি উপজেলার ধন্যপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন ওরফে রুবেল ও লক্ষ্মীপুর সদরের শ্রীরামপুর গ্রামের নুর আলম ওরফে নুরু। এই আট ফাঁসির আসামির মধ্যে মানিক, রাশেদ, সুমন ও রুবেল পলাতক। বাকিরা কারাগারে আছেন।

আসামিদের মধ্যে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও একলাশপুর গ্রামের সোহেলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিলেও হাইকোর্ট তাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। এই দুজনের মধ্যে সোহেল পলাতক।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৮ জুলাই মধ্যরাতে লক্ষ্মীপুর সদর থানার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বসুদৌহিতা গ্রামে এ মামলার বাদীর বাড়িতে ডাকাতি করতে যায় আসামি নূর নবীসহ ২০-২৫ জন মুখোশধারী। ডাকাতরা ঘরের সবাইকে জিম্মি করে স্বর্ণালংকারসহ পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুট করার পাশাপাশি বাদীর নাতনিকে একটি কক্ষে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করে। বাদীর নাতনি তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ত। ওই ঘটনার পরদিন ২০-২৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করে ওই পরিবার। ২০১৩ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঞ্জুরুল বাছিদ ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যে রায় দেন। রায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ১৫ জনকে খালাস দেয়া হয়। পরে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ওই বছরই ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। আসামিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। সেসবের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দিল।

আমিনুল ইসলাম বলেন, যে দুজনের সাজা কমেছে তারা ওই ঘটনায় জড়িত হলেও সরাসরি ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণিত হয়নি। অন্য আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বা মামলার সাক্ষীদের সাক্ষীও ওই দুইজনের সম্পৃক্ততা আসেনি। এই যুক্তিতে উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে তাদের যাবজ্জীবন দিয়েছে।

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০ , ১৫ মাঘ ১৪২৬, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪১

স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা

আটজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আট আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট, দুইজনের সাজা কমিয়ে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। প্রায় আট বছর আগে লক্ষ্মীপুর সদর থানার বসুদৌহিতা গ্রামে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় আসামিরা।

গতকাল বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোলরার বেঞ্চ এ রায় দেয়। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও এসএম শফিকুল ইসলাম কাজল। পলাতক আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামসুন নাহার লাইজু ও ফারহানা আফরোজ রুনা। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন- কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হিরণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দহরপাড়া গ্রামের মানিক, তালিতপুর গ্রামের রাশেদ, রুদ্রপুর গ্রামের সুমন, সুধারামের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের হেদায়েত উল্যা হেদু, চাটখিল উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের নুরনবী, সোনাইমুড়ি উপজেলার ধন্যপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন ওরফে রুবেল ও লক্ষ্মীপুর সদরের শ্রীরামপুর গ্রামের নুর আলম ওরফে নুরু। এই আট ফাঁসির আসামির মধ্যে মানিক, রাশেদ, সুমন ও রুবেল পলাতক। বাকিরা কারাগারে আছেন।

আসামিদের মধ্যে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও একলাশপুর গ্রামের সোহেলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিলেও হাইকোর্ট তাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। এই দুজনের মধ্যে সোহেল পলাতক।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৮ জুলাই মধ্যরাতে লক্ষ্মীপুর সদর থানার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বসুদৌহিতা গ্রামে এ মামলার বাদীর বাড়িতে ডাকাতি করতে যায় আসামি নূর নবীসহ ২০-২৫ জন মুখোশধারী। ডাকাতরা ঘরের সবাইকে জিম্মি করে স্বর্ণালংকারসহ পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুট করার পাশাপাশি বাদীর নাতনিকে একটি কক্ষে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করে। বাদীর নাতনি তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ত। ওই ঘটনার পরদিন ২০-২৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করে ওই পরিবার। ২০১৩ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঞ্জুরুল বাছিদ ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যে রায় দেন। রায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ১৫ জনকে খালাস দেয়া হয়। পরে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ওই বছরই ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। আসামিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। সেসবের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দিল।

আমিনুল ইসলাম বলেন, যে দুজনের সাজা কমেছে তারা ওই ঘটনায় জড়িত হলেও সরাসরি ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণিত হয়নি। অন্য আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বা মামলার সাক্ষীদের সাক্ষীও ওই দুইজনের সম্পৃক্ততা আসেনি। এই যুক্তিতে উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে তাদের যাবজ্জীবন দিয়েছে।