ঢাকা টেস্ট শুরু আজ

জিম্বাবুয়ের চোখ রাঙানির সামনে টাইগাররা

বছর দুয়েক আগেও ক্রিকেটের যে কোন ফরম্যাটে জিম্বাবুয়েকে বলে-কয়ে হারাতে পারত বাংলাদেশ। চিত্রটা এখন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ সফরে আসা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে আজ মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মমিনুল হক টস করতে নামার সময় স্বাগতিক দলের ড্রেসিংরুম ততটা আত্মবিশ্বাসে ভাসবে না। সম্ভবত ১৫ বছরের মধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমন অবস্থায় ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে মাঠে নামবে স্বাগতিক দল। অথচ গত ১৫টা বছর ধরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের খেলাটা উপভোগ করেছে টাইগাররা। বিশেষ করে বাংলাদেশের কন্ডিশনে স্পিন বোলারদের সামনে অনভিজ্ঞ জিম্বাবুয়েকে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখা গেছে। সোজা সাপটা কথা হলো, বছর দুয়েক আগেও টাইগারদের চ্যালেঞ্জ জানানোর কোন ক্ষমতাই ছিল না জিম্বাবুয়ের। ২০১৮ সালে সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশ দলের হতাশাজনক পরাজয় পাল্টে দিয়েছে দৃশ্যপট। সেবারের জয়টা ছিল দীর্ঘদিন পর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে অনেক বড় অর্জন। অবশ্য পরের টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিম্বাবুয়েকে ২১৮ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন টাইগাররা।

পরের সময়টাতে বাংলাদেশের চিত্র আরও হতাশার। টানা ছয় টেস্টে ইনিংস পরাজয় ব্যবধানে পরাজয়সহ আফগানিস্তানের মতো নবীন টেস্ট খেলুড়েদের কাছেও ঘরের মাঠে লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ দল। টানা পরাজয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে দল নির্বাচন ব্যবস্থাসহ গেমপ্ল্যানও। টেস্ট শুরুর তিন দিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এর সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন পর্যন্ত দলের সমালোচনা করতে ছাড়েননি। টেস্ট শুরুর আগে বোর্ড সভাপতির সমালোচনা দলকে উজ্জীবিত করবে নাকি মানসিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়ার জন্য টেস্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।

বোর্ড সভাপতির মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কোন কথা না বললেও অধিনায়ক মুমিনুল হক মনে করছেন তার নেতৃত্ব থাকা না থাকা নির্ভর করবে জিম্বাবুয়ে টেস্টের ফলাফলের ওপর। অন্তত দলের সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্স যে তার নেতৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে এটা মানতে কোন দ্বিধা নেই তার।

শনিবার শুরু হতে যাওয়া টেস্টের জন্য একাদশে সম্ভবত দু’জন স্পেশালিস্ট পেস বোলারের সঙ্গে দু’জন স্পেশালিস্ট স্পিনার খেলাবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। শেরেবাংলার পিচ প্রথাগতভাবেই স্পিনারদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। তারপরও স্কোয়াডে বেশ কয়েকজন পেস বোলারের উপস্থিতি ভিন্নরকম ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়া মুশফিকুর রহিম দলে ফিরেছেন। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই দলের ব্যাটিং লাইনআপের মিডল অর্ডারের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ে দল সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে উন্নতির ধারাতেই আছে। শেষ পাঁচটি টেস্টে বাংলাদেশ যেখানে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে, সেখানে তিনটি টেস্টে পরাজয়ের সঙ্গে একটা ড্র এবং একটা জয় রয়েছে জিম্বাবুয়ের। তবে, সমস্যা হলো বাংলাদেশ দলে যেমন নেই সাকিব আল হাসান, তেমনি জিম্বাবুয়ে দল সফরে এসেছে তাদের নিয়মিত অধিনায়ক শন উইলয়ামসকে ছাড়া। অবশ্য ব্রেন্ডন টেলর, সিকান্দার রাজা এবং স্ট্যান্ড ইন অধিনায়ক ক্রেগ আরভিনের মতো ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখেন। জিম্বাবুয়ের ইনিংস উদ্বোধনে আছেন ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা প্রিন্স মাসভুরি ও কেভিন কাসুজার মতো দুই ব্যাটসম্যান। বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবেন ডোনাল্ড তিরিপানো। এই দলটার কিন্তু ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করার সুখস্মৃতি আছে। কাজেই শেরেবাংলার হোম অব ক্রিকেটে মাঠে নামার আগে খুব একটা স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে টাইগারদের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের চিরপরিচিত ‘ধস’ ঠেকানো না গেলে সামনের পাঁচটা দিন জিম্বাবুয়ের চোখ রাঙানি সহ্য করতে হতে পারে।

জিম্বাবুয়ে অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট টেস্টে বাংলাদেশকে পরাজিত করার সুখস্মৃতি থেকে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে না। দলের প্রধান কোচ লালচাঁদ রাজপুত বলেন, ২০১৮ সাল ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। আমরা টানা দুটো টেস্ট খেলে বাংলাদেশ সফরে এসেছি। ক্রিকেটাররা খেলার মধ্যেই আছে। আশা করছি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারব। আমাদের অধিনায়ক যেমনটা বলেছেন যে, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দল শক্ত প্রতিপক্ষ হলেও আমরা সহজে ছাড় দিচ্ছি না।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৯ ফল্গুন ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ঢাকা টেস্ট শুরু আজ

জিম্বাবুয়ের চোখ রাঙানির সামনে টাইগাররা

বিশেষ প্রতিনিধি

image

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশর অধিনায়ক আরবিন ও মোমিনুল হক -সংবাদ

বছর দুয়েক আগেও ক্রিকেটের যে কোন ফরম্যাটে জিম্বাবুয়েকে বলে-কয়ে হারাতে পারত বাংলাদেশ। চিত্রটা এখন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ সফরে আসা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে আজ মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মমিনুল হক টস করতে নামার সময় স্বাগতিক দলের ড্রেসিংরুম ততটা আত্মবিশ্বাসে ভাসবে না। সম্ভবত ১৫ বছরের মধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমন অবস্থায় ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে মাঠে নামবে স্বাগতিক দল। অথচ গত ১৫টা বছর ধরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের খেলাটা উপভোগ করেছে টাইগাররা। বিশেষ করে বাংলাদেশের কন্ডিশনে স্পিন বোলারদের সামনে অনভিজ্ঞ জিম্বাবুয়েকে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখা গেছে। সোজা সাপটা কথা হলো, বছর দুয়েক আগেও টাইগারদের চ্যালেঞ্জ জানানোর কোন ক্ষমতাই ছিল না জিম্বাবুয়ের। ২০১৮ সালে সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশ দলের হতাশাজনক পরাজয় পাল্টে দিয়েছে দৃশ্যপট। সেবারের জয়টা ছিল দীর্ঘদিন পর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে অনেক বড় অর্জন। অবশ্য পরের টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিম্বাবুয়েকে ২১৮ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন টাইগাররা।

পরের সময়টাতে বাংলাদেশের চিত্র আরও হতাশার। টানা ছয় টেস্টে ইনিংস পরাজয় ব্যবধানে পরাজয়সহ আফগানিস্তানের মতো নবীন টেস্ট খেলুড়েদের কাছেও ঘরের মাঠে লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ দল। টানা পরাজয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে দল নির্বাচন ব্যবস্থাসহ গেমপ্ল্যানও। টেস্ট শুরুর তিন দিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এর সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন পর্যন্ত দলের সমালোচনা করতে ছাড়েননি। টেস্ট শুরুর আগে বোর্ড সভাপতির সমালোচনা দলকে উজ্জীবিত করবে নাকি মানসিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়ার জন্য টেস্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।

বোর্ড সভাপতির মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কোন কথা না বললেও অধিনায়ক মুমিনুল হক মনে করছেন তার নেতৃত্ব থাকা না থাকা নির্ভর করবে জিম্বাবুয়ে টেস্টের ফলাফলের ওপর। অন্তত দলের সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্স যে তার নেতৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে এটা মানতে কোন দ্বিধা নেই তার।

শনিবার শুরু হতে যাওয়া টেস্টের জন্য একাদশে সম্ভবত দু’জন স্পেশালিস্ট পেস বোলারের সঙ্গে দু’জন স্পেশালিস্ট স্পিনার খেলাবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। শেরেবাংলার পিচ প্রথাগতভাবেই স্পিনারদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। তারপরও স্কোয়াডে বেশ কয়েকজন পেস বোলারের উপস্থিতি ভিন্নরকম ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়া মুশফিকুর রহিম দলে ফিরেছেন। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই দলের ব্যাটিং লাইনআপের মিডল অর্ডারের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ে দল সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে উন্নতির ধারাতেই আছে। শেষ পাঁচটি টেস্টে বাংলাদেশ যেখানে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে, সেখানে তিনটি টেস্টে পরাজয়ের সঙ্গে একটা ড্র এবং একটা জয় রয়েছে জিম্বাবুয়ের। তবে, সমস্যা হলো বাংলাদেশ দলে যেমন নেই সাকিব আল হাসান, তেমনি জিম্বাবুয়ে দল সফরে এসেছে তাদের নিয়মিত অধিনায়ক শন উইলয়ামসকে ছাড়া। অবশ্য ব্রেন্ডন টেলর, সিকান্দার রাজা এবং স্ট্যান্ড ইন অধিনায়ক ক্রেগ আরভিনের মতো ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখেন। জিম্বাবুয়ের ইনিংস উদ্বোধনে আছেন ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা প্রিন্স মাসভুরি ও কেভিন কাসুজার মতো দুই ব্যাটসম্যান। বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবেন ডোনাল্ড তিরিপানো। এই দলটার কিন্তু ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করার সুখস্মৃতি আছে। কাজেই শেরেবাংলার হোম অব ক্রিকেটে মাঠে নামার আগে খুব একটা স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে টাইগারদের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের চিরপরিচিত ‘ধস’ ঠেকানো না গেলে সামনের পাঁচটা দিন জিম্বাবুয়ের চোখ রাঙানি সহ্য করতে হতে পারে।

জিম্বাবুয়ে অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট টেস্টে বাংলাদেশকে পরাজিত করার সুখস্মৃতি থেকে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে না। দলের প্রধান কোচ লালচাঁদ রাজপুত বলেন, ২০১৮ সাল ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। আমরা টানা দুটো টেস্ট খেলে বাংলাদেশ সফরে এসেছি। ক্রিকেটাররা খেলার মধ্যেই আছে। আশা করছি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারব। আমাদের অধিনায়ক যেমনটা বলেছেন যে, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দল শক্ত প্রতিপক্ষ হলেও আমরা সহজে ছাড় দিচ্ছি না।