আরও ৫০ লাখ দরিদ্র লোককে রেশনকার্ড দেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামারী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দিনমজুর ও মেহেনতি শ্রেণীর মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য আরও ৫০ লাখ দরিদ্র লোককে ১০ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহের জন্য রেশন কার্ড সুবিধার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ৫০ লাখ চরম দরিদ্র ও দুস্থ মানুষ সরকারের রেশন কার্ড সুবিধার আওতায় প্রতি কেজি ১০ টাকায় চাল পাচ্ছেন। কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আরও ৫০ লাখ লোককে এই সুবিধার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিভাগের নয়টি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।

ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিল। যারা হাত পেতে খেতে পারবে না তাদের জন্যই তার সরকার ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে ৫০ লাখ রেশন কার্ড আরও অতিরিক্ত দেব সেখানে যারা সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছেন এবং যাদের ইতোমধ্যেই রেশন কার্ড রয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে যাদের সত্যিকার প্রয়োজন তাদের নামটা যেন তালিকায় থাকে।’

ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীদের প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে কমিটি করতে বলেছেন যাতে যারা সত্যিকার দুস্থ এবং যাদের ঘরে খাবার নেই তাদের খুঁজে বের করা যায়, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের প্রকৃত প্রয়োজন তাদের কাছে সাহায্য যেন পৌঁছায় সেজন্য ইতোমধ্যেই আমরা নির্দেশ দিয়েছি। সরকারি বা বেসরকারিভাবে যে সহায়তা দেব সেটা যেন সঠিক লোকের কাছেই পৌঁছায়। সেখানে যেন কেউ অনিয়ম করতে না পারে। সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশ্ব মন্দা এমনকি দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করায় দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য তার সরকার ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরি করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, এই প্যাকেজ শুধু আজকের জন্যই নয়, উপরন্তু আগামী তিন বছর কিভাবে এই মন্দার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই করা হয়েছে।

তিনি এ সময় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে পুনরায় গুরুত্বারোপ করে কোথাও এক টুকরো জমিও যেন পতিত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘরের পাশের এক চিলতে জায়গা থাকলে সেটাকেও কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি খানিক বাদে বাদে গরম পানি খাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘ফ্লাস্কে গরম পানি রেখে খানিক বাদে বাদে পান করতে থাকলে গলাটা পরিষ্কার থাকবে। তাহলে এই ভাইরাসটা আর ক্ষতি করতে পারবে না। সেই সঙ্গে মৌসুমী যে ফলগুলো রয়েছে সেগুলো খেয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।’

যারা বাইরে থেকে আসছে তাদের দ্বারাই এই ভাইরাসটা নতুন নতুন জায়গায় সংক্রমিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী লকডাউন কঠোরভাবে অনুসরণের এবং কোন জেলায় নতুন করে কেউ প্রবেশ করতে গেলে তাকে বাধা প্রদান করে সেখানেই লকডাউনের নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, যেখানে ন্যূনতম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে সেখানে যাওয়া যাবে না। কারণ, অনেক জায়গায় আমরা দেখেছি অবস্থা ভালো ছিল কিন্তু অন্য জায়গার থেকে লোকজন আসার ফলে সংক্রমণ হয়েছে।

সৌদি আরবে পর্যন্ত মসজিদে জামাত বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনকি তারাবির নামাজও সেখানে ঘরে বসে সবাই পড়বে। মন্দির, মসজিদ, গীর্জা এমনকি ভ্যাটিক্যান সিটিতে পর্যন্ত এ ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা আসন্ন মাহে রমজানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত আপনি সব জায়গায় বসে করতে পারবেন। আপনারা ইসলামী ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মেনে ঘরে বসেই তারাবির নামাজ পড়বেন। আর আল্লাহকে ডাকতে হবে। সেটা আপনি আপনার মতো করে যতো ডাকতে পারবেন, মহান রাব্বুল আলামিন সেটাই কবুল করবেন।’

তিনি বলেন, ‘মসজিদে গিয়ে নিজেকে সংক্রমিত করবেন না বা অন্যের সংক্রমণের কারণ হবেন না।’

‘সামনে রোজা। সে সময় পণ্য পরিবহন এবং খাদ্য সামগ্রীর যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘জীবনকে চলমান রাখার জন্য যেটুকু না করলেই নয় সেটুকু কাজ করবেন, অযথা কোথাও ঘোরাঘুরি করবেন না।’

প্রধানমন্ত্রী গত ১২ এপ্রিল খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬টি জেলার জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।

এর আগে তিনি একই ইস্যুতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং সারাদেশে একযোগেও ভিডিও কনফারেন্স করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের প্রশাসন এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে বর্ডারগার্ড, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ডাক্তার নার্সসহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে তারা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

দেশের ১৭টি জায়গায় সরকার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী সবার জন্য পিপিইসহ সব রকমের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোগীদের জন্য চিকিৎসা এবং বেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোথাও করোনা আক্রান্তের খবর পেলেই ত্বড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ১৬ হাজার ৬১৬ পিস পিপিই সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৫৮ হাজার ২৯৪টি বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ আছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩২২ পিস এবং প্রতিনিয়ত তার সরকার এটি সংগ্রহ করে যাচ্ছে।

এ সময় তিনি অবসরে চলে যাওয়া চিকিৎসক এবং নার্সদের কাজে লাগানোর বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মহলকে পরামর্শ দেন। আতঙ্কিত না হয়ে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণের উদ্দেশে তার উদাত্ত আহ্বান ও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে আমরা ত্রাণ দিচ্ছি। সেখানে কেউ থাবা বাসাক সেটা আমরা চাই না। কাজেই এরকম কোন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, কিছু জায়গায় ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের স্বার্থান্বেষী লোকজন ষড়যন্ত্র করেও কাউকে কাউকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। কারণ তদন্তে দেখা গেছে এ ধরনের ঘটনাই (ত্রাণ আত্মসাতের) ঘটেনি। তবে, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটুক তা আমরা চাই না।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সবাই আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করে যাবেন। সেটাই আমরা চাই।’

তিনি বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় কেউ কারও পেছনে এভাবে লেগে থাকবে সেটাও কিন্তু ঠিক হবে না। সবাইকে পীড়িতদের সাহয্যে এগিয়ে আসতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে যেকোন প্রকার দুর্নীতি এবং অনিয়ম আমরা কোনভাবেই বরদাশত করব না। ইতোমধ্যেই কিছু মামলাও হয়েছে এবং সাজাও প্রদান করা হয়েছে। তবে, আমরা চাইব এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।’

দেশে এবং প্রবাসে যে যেখানেই রয়েছেন তাদের আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ করার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা। যেন এই ভাইরাসের কবল থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেতে পারে।

আরও খবর
সারাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ
জাতিসংঘ তহবিল গঠন না করলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে ডাব্লিউএফপি সংবাদ ডেস্ক করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া বিশ
বাদুরের দুই প্রজাতির মধ্যে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে
আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস
করোনা সৃষ্টি করছে দীর্ঘমেয়াদি প্রাণঘাতী সংকট
ইরানের ম্যাজিকাল ডিভাইসে ৫ সেকেন্ডে শনাক্ত হবে করোনা রোগী
মাঠে নামছে ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’
আইইডিসিআরের ৬ কর্মী আক্রান্ত
এসএসসি ফল নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ হচ্ছে না
করোনায় মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার বেশি
টিভি চ্যানেলের আরও ৪ জন করোনা আক্রান্ত
২৫০ ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ডিলার আটক
করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি ১৩০০ ছাড়াল

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল ২০২০ , ৪ বৈশাখ ১৪২৭, ২২ শাবান ১৪৪১

আরও ৫০ লাখ দরিদ্র লোককে রেশনকার্ড দেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামারী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দিনমজুর ও মেহেনতি শ্রেণীর মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য আরও ৫০ লাখ দরিদ্র লোককে ১০ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহের জন্য রেশন কার্ড সুবিধার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ৫০ লাখ চরম দরিদ্র ও দুস্থ মানুষ সরকারের রেশন কার্ড সুবিধার আওতায় প্রতি কেজি ১০ টাকায় চাল পাচ্ছেন। কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আরও ৫০ লাখ লোককে এই সুবিধার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিভাগের নয়টি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।

ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিল। যারা হাত পেতে খেতে পারবে না তাদের জন্যই তার সরকার ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে ৫০ লাখ রেশন কার্ড আরও অতিরিক্ত দেব সেখানে যারা সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছেন এবং যাদের ইতোমধ্যেই রেশন কার্ড রয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে যাদের সত্যিকার প্রয়োজন তাদের নামটা যেন তালিকায় থাকে।’

ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীদের প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে কমিটি করতে বলেছেন যাতে যারা সত্যিকার দুস্থ এবং যাদের ঘরে খাবার নেই তাদের খুঁজে বের করা যায়, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের প্রকৃত প্রয়োজন তাদের কাছে সাহায্য যেন পৌঁছায় সেজন্য ইতোমধ্যেই আমরা নির্দেশ দিয়েছি। সরকারি বা বেসরকারিভাবে যে সহায়তা দেব সেটা যেন সঠিক লোকের কাছেই পৌঁছায়। সেখানে যেন কেউ অনিয়ম করতে না পারে। সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশ্ব মন্দা এমনকি দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করায় দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য তার সরকার ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরি করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, এই প্যাকেজ শুধু আজকের জন্যই নয়, উপরন্তু আগামী তিন বছর কিভাবে এই মন্দার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই করা হয়েছে।

তিনি এ সময় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে পুনরায় গুরুত্বারোপ করে কোথাও এক টুকরো জমিও যেন পতিত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘরের পাশের এক চিলতে জায়গা থাকলে সেটাকেও কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি খানিক বাদে বাদে গরম পানি খাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘ফ্লাস্কে গরম পানি রেখে খানিক বাদে বাদে পান করতে থাকলে গলাটা পরিষ্কার থাকবে। তাহলে এই ভাইরাসটা আর ক্ষতি করতে পারবে না। সেই সঙ্গে মৌসুমী যে ফলগুলো রয়েছে সেগুলো খেয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।’

যারা বাইরে থেকে আসছে তাদের দ্বারাই এই ভাইরাসটা নতুন নতুন জায়গায় সংক্রমিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী লকডাউন কঠোরভাবে অনুসরণের এবং কোন জেলায় নতুন করে কেউ প্রবেশ করতে গেলে তাকে বাধা প্রদান করে সেখানেই লকডাউনের নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, যেখানে ন্যূনতম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে সেখানে যাওয়া যাবে না। কারণ, অনেক জায়গায় আমরা দেখেছি অবস্থা ভালো ছিল কিন্তু অন্য জায়গার থেকে লোকজন আসার ফলে সংক্রমণ হয়েছে।

সৌদি আরবে পর্যন্ত মসজিদে জামাত বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনকি তারাবির নামাজও সেখানে ঘরে বসে সবাই পড়বে। মন্দির, মসজিদ, গীর্জা এমনকি ভ্যাটিক্যান সিটিতে পর্যন্ত এ ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা আসন্ন মাহে রমজানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত আপনি সব জায়গায় বসে করতে পারবেন। আপনারা ইসলামী ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মেনে ঘরে বসেই তারাবির নামাজ পড়বেন। আর আল্লাহকে ডাকতে হবে। সেটা আপনি আপনার মতো করে যতো ডাকতে পারবেন, মহান রাব্বুল আলামিন সেটাই কবুল করবেন।’

তিনি বলেন, ‘মসজিদে গিয়ে নিজেকে সংক্রমিত করবেন না বা অন্যের সংক্রমণের কারণ হবেন না।’

‘সামনে রোজা। সে সময় পণ্য পরিবহন এবং খাদ্য সামগ্রীর যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘জীবনকে চলমান রাখার জন্য যেটুকু না করলেই নয় সেটুকু কাজ করবেন, অযথা কোথাও ঘোরাঘুরি করবেন না।’

প্রধানমন্ত্রী গত ১২ এপ্রিল খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬টি জেলার জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।

এর আগে তিনি একই ইস্যুতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং সারাদেশে একযোগেও ভিডিও কনফারেন্স করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের প্রশাসন এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে বর্ডারগার্ড, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ডাক্তার নার্সসহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে তারা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

দেশের ১৭টি জায়গায় সরকার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী সবার জন্য পিপিইসহ সব রকমের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোগীদের জন্য চিকিৎসা এবং বেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোথাও করোনা আক্রান্তের খবর পেলেই ত্বড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ১৬ হাজার ৬১৬ পিস পিপিই সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৫৮ হাজার ২৯৪টি বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ আছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩২২ পিস এবং প্রতিনিয়ত তার সরকার এটি সংগ্রহ করে যাচ্ছে।

এ সময় তিনি অবসরে চলে যাওয়া চিকিৎসক এবং নার্সদের কাজে লাগানোর বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মহলকে পরামর্শ দেন। আতঙ্কিত না হয়ে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণের উদ্দেশে তার উদাত্ত আহ্বান ও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে আমরা ত্রাণ দিচ্ছি। সেখানে কেউ থাবা বাসাক সেটা আমরা চাই না। কাজেই এরকম কোন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, কিছু জায়গায় ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের স্বার্থান্বেষী লোকজন ষড়যন্ত্র করেও কাউকে কাউকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। কারণ তদন্তে দেখা গেছে এ ধরনের ঘটনাই (ত্রাণ আত্মসাতের) ঘটেনি। তবে, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটুক তা আমরা চাই না।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সবাই আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করে যাবেন। সেটাই আমরা চাই।’

তিনি বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় কেউ কারও পেছনে এভাবে লেগে থাকবে সেটাও কিন্তু ঠিক হবে না। সবাইকে পীড়িতদের সাহয্যে এগিয়ে আসতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে যেকোন প্রকার দুর্নীতি এবং অনিয়ম আমরা কোনভাবেই বরদাশত করব না। ইতোমধ্যেই কিছু মামলাও হয়েছে এবং সাজাও প্রদান করা হয়েছে। তবে, আমরা চাইব এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।’

দেশে এবং প্রবাসে যে যেখানেই রয়েছেন তাদের আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ করার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা। যেন এই ভাইরাসের কবল থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেতে পারে।