একের পর এক দুর্যোগের পরও

লিচুর ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

চলতি মৌসুমে করোনাভাইরাস আতঙ্ক, শিলাবৃষ্টি, আম্ফানের তাণ্ডব, লকডাউনের কারণে পরিবহন সংকটসহ সবমিলে একের পর এক দুর্যোগ গেছে লিচুর ওপর দিয়ে। ফলে মৌসুমের শুরুতেই লিচুর দাম নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন পাবনা অঞ্চলের লিচু চাষিরা। বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় লিচু নিয়ে তাদের সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। লিচু চাষিরা এখন খুশি।

পাবনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়। এর মধ্যে ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়। উপজেলায় দেশি, বোম্বাই ও চায়না-৩ নামে তিন জাতের লিচুর ফলন হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলার লিচু ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এখানে বড় গাছে গড়ে ১০ হাজার ও ছোট গাছে ৩ হাজার করে ধরলে এবার লিচুর সংখ্যা প্রায় ১২৯ কোটি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩২৪ কোটি টাকা। এছাড়া আটঘরিয়া ও চাটমোহর উপজেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার লিচু বিক্রি করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

লিচুর বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ফাল্গুনে লিচুর ফুল ফোটে। চৈত্রে তৈরি হয় গুটি। বৈশাখের মাঝামাঝি লিচুতে রঙ ধরতে শুরু করে। জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে লিচুর রঙে রঙিন হয়ে ওঠে বাগান। লিচু বাগানে ফুল ফুটতেই বেচাকেনা শুরু হয়। ফুল থেকে গুটি, গুটি থেকে পরিপক্ক লিচু। যত বড় হবে, লিচুর দাম তত বাড়বে। কয়েক ধাপে চলে হাতবদল। এবার করোনাভাইরাস আতঙ্কে মৌসুমের শুরুতেই বেচাকেনায় বিড়ম্বনা তৈরি হয়। ব্যাপারিরা না আসতে পারায় আধিকাংশ বাগান অবিক্রিত থাকে। এতে মৌসুমের শুরু থেকেই লিচু নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। তবে শেষ পর্যন্ত সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় লিচু বিক্রিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি চাষিদের। মিলেছে ভালো দাম। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালো দামে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। লিচুর রাজধানী নামে সারাদেশে পরিচিত ঈশ্বরদীর আওতাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাগান সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও লিচু নিয়ে কর্মব্যস্ত অধিকাংশ মানুষ। পুরোদমে লিচু বিকিকিনি চলছে ছলিমপুর, জয়নগর, আওতাপাড়া, সাহাপুর, দাশুড়িয়া মোড়ে। ট্রাক ও ভ্যানে লিচু যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

কয়েকজন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হলেও বর্তমানে বাজারে চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। বাগানেই প্রতি ১০০ লিচু ১৮০ টাকা থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এই লিচু ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ছলিমপুর গ্রামের বাগান মালিক কিতাব মন্ডল জানান, তিনি প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে লিছু আবাদ করেন। গত মৌসুমে এসব জমির বাগান থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাগানের ৪৫ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার তিনি অর্ধেক দাম পেয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে কিভাবে লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করবেন তা নিয়ে প্রথমে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তবে সরকার অনলাইনে ফল বিপণনের সুবিধা করে দিয়েছেন এবং ট্রেনে বিশেষ বগি লাগিয়ে অল্প ভাড়ায় আম লিচু পরিবহনের ব্যবস্থা করায় তাদের ক্ষতি কম হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না জানান, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক। তবে গতবছরের চেয়ে এবার লিচুর দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় চাষিরা খুশি।

রবিবার, ১৪ জুন ২০২০ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২১ শাওয়াল ১৪৪

একের পর এক দুর্যোগের পরও

লিচুর ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

image

চলতি মৌসুমে করোনাভাইরাস আতঙ্ক, শিলাবৃষ্টি, আম্ফানের তাণ্ডব, লকডাউনের কারণে পরিবহন সংকটসহ সবমিলে একের পর এক দুর্যোগ গেছে লিচুর ওপর দিয়ে। ফলে মৌসুমের শুরুতেই লিচুর দাম নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন পাবনা অঞ্চলের লিচু চাষিরা। বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় লিচু নিয়ে তাদের সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। লিচু চাষিরা এখন খুশি।

পাবনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়। এর মধ্যে ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়। উপজেলায় দেশি, বোম্বাই ও চায়না-৩ নামে তিন জাতের লিচুর ফলন হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলার লিচু ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এখানে বড় গাছে গড়ে ১০ হাজার ও ছোট গাছে ৩ হাজার করে ধরলে এবার লিচুর সংখ্যা প্রায় ১২৯ কোটি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩২৪ কোটি টাকা। এছাড়া আটঘরিয়া ও চাটমোহর উপজেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার লিচু বিক্রি করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

লিচুর বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ফাল্গুনে লিচুর ফুল ফোটে। চৈত্রে তৈরি হয় গুটি। বৈশাখের মাঝামাঝি লিচুতে রঙ ধরতে শুরু করে। জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে লিচুর রঙে রঙিন হয়ে ওঠে বাগান। লিচু বাগানে ফুল ফুটতেই বেচাকেনা শুরু হয়। ফুল থেকে গুটি, গুটি থেকে পরিপক্ক লিচু। যত বড় হবে, লিচুর দাম তত বাড়বে। কয়েক ধাপে চলে হাতবদল। এবার করোনাভাইরাস আতঙ্কে মৌসুমের শুরুতেই বেচাকেনায় বিড়ম্বনা তৈরি হয়। ব্যাপারিরা না আসতে পারায় আধিকাংশ বাগান অবিক্রিত থাকে। এতে মৌসুমের শুরু থেকেই লিচু নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। তবে শেষ পর্যন্ত সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় লিচু বিক্রিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি চাষিদের। মিলেছে ভালো দাম। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালো দামে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। লিচুর রাজধানী নামে সারাদেশে পরিচিত ঈশ্বরদীর আওতাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাগান সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও লিচু নিয়ে কর্মব্যস্ত অধিকাংশ মানুষ। পুরোদমে লিচু বিকিকিনি চলছে ছলিমপুর, জয়নগর, আওতাপাড়া, সাহাপুর, দাশুড়িয়া মোড়ে। ট্রাক ও ভ্যানে লিচু যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

কয়েকজন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হলেও বর্তমানে বাজারে চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। বাগানেই প্রতি ১০০ লিচু ১৮০ টাকা থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এই লিচু ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ছলিমপুর গ্রামের বাগান মালিক কিতাব মন্ডল জানান, তিনি প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে লিছু আবাদ করেন। গত মৌসুমে এসব জমির বাগান থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাগানের ৪৫ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার তিনি অর্ধেক দাম পেয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে কিভাবে লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করবেন তা নিয়ে প্রথমে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তবে সরকার অনলাইনে ফল বিপণনের সুবিধা করে দিয়েছেন এবং ট্রেনে বিশেষ বগি লাগিয়ে অল্প ভাড়ায় আম লিচু পরিবহনের ব্যবস্থা করায় তাদের ক্ষতি কম হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না জানান, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক। তবে গতবছরের চেয়ে এবার লিচুর দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় চাষিরা খুশি।