গৌরনদীতে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল সংস্কারে অর্থ বরাদ্দে অনিয়ম

সম্প্রতি সময়ের ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাধারণ (ক্ষুদ্র) মেরামত-সংস্কারে অর্থ বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে নামেমাত্র স্কুল মেরামত করা হয়েছে। বরাদ্দের তালিকায় কয়েকটি স্কুলে টিনসেড ভবন ক্ষতিগ্রস্তের কথা উল্লেখ করা হলেও সরেজমিনে কোন টিনসেড স্কুল ভবন পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটের আওতায় ঘূর্নিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য উপজেলার ২৩টি বিদ্যালয়ের প্রতিটির অনুকূলে দেড় লাখ টাকা করে মোট ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকা উপজেলার বেজগাতী মৈস্তারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে দুইটি পাকাভবন। এরমধ্যে কোনটিই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ সরকারি টাকা বরাদ্দের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওই স্কুলটিকে আম্ফানের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রেখেছেন। এমনকি ওই বিদ্যালয়ে কোন টিনের ঘর না থাকা সত্বেও প্রতিবেদনে একটি টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ের জন্য দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক কল্পনা রানী জানান, বিদ্যালয়টি পূর্বে টিনসেড ছিলো। ২০১৭ সালে ভবন হয়েছে। তিনি আরও জানান, বরাদ্দকৃত টাকা এখনও উত্তোলন করা হয়নি। কমিটি না থাকায় কাজ করা হয়নি। তবে নতুন করে একটি টিনসেড ঘর উত্তোলন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একইভাবে উপজেলার ইল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনসেড ভবন ক্ষতিগ্রস্তের জন্য দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও সেখানে কোন টিনসেড ভবন পাওয়া যায়নি। সূত্রে আরও জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকা কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টরকির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বিদ্যালয়ে নাম সর্বস্ব কাজ করে পুরো টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষকরা জানান, মূলত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যেসব বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকদের সু-সম্পর্ক রয়েছে সেসব স্কুল আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এমনকি অনেক স্কুলে একইসাথে দুইটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা আরও জানান, ওইসব স্কুলের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আতাত করে প্রধান শিক্ষকরা উত্তোলন করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

অপরদিকে চলতি বছর নিয়োগ পাওয়া নতুন শিক্ষকদের বেতন ভাতা করে দেয়ার নামে উপজেলা শিক্ষা অফিসার একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে দুই হাজার পাঁচ শ’ টাকা করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজের অফিসের সামনে ‘আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে মহাদাপটে দুর্নীতি মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা ও দুদক কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস পূর্বে একযোগে ২৪টি বিদ্যালয় বন্ধ করে বনভোজনে গিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল বলেন, যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করার পর সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন করার পরেই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে বিল দেয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিল করার নামে কারও কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক এসএম ফারুক বলেন, এসব বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০ , ৮ মহররম ১৪৪২, ২৮ আগস্ট ২০২০

তালিকায় টিনসেড ভবন বিধ্বস্ত, বাস্তবে নেই

গৌরনদীতে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল সংস্কারে অর্থ বরাদ্দে অনিয়ম

প্রতিনিধি, গৌরনদী (বরিশাল)

সম্প্রতি সময়ের ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাধারণ (ক্ষুদ্র) মেরামত-সংস্কারে অর্থ বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে নামেমাত্র স্কুল মেরামত করা হয়েছে। বরাদ্দের তালিকায় কয়েকটি স্কুলে টিনসেড ভবন ক্ষতিগ্রস্তের কথা উল্লেখ করা হলেও সরেজমিনে কোন টিনসেড স্কুল ভবন পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটের আওতায় ঘূর্নিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য উপজেলার ২৩টি বিদ্যালয়ের প্রতিটির অনুকূলে দেড় লাখ টাকা করে মোট ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকা উপজেলার বেজগাতী মৈস্তারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে দুইটি পাকাভবন। এরমধ্যে কোনটিই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ সরকারি টাকা বরাদ্দের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওই স্কুলটিকে আম্ফানের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রেখেছেন। এমনকি ওই বিদ্যালয়ে কোন টিনের ঘর না থাকা সত্বেও প্রতিবেদনে একটি টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ের জন্য দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক কল্পনা রানী জানান, বিদ্যালয়টি পূর্বে টিনসেড ছিলো। ২০১৭ সালে ভবন হয়েছে। তিনি আরও জানান, বরাদ্দকৃত টাকা এখনও উত্তোলন করা হয়নি। কমিটি না থাকায় কাজ করা হয়নি। তবে নতুন করে একটি টিনসেড ঘর উত্তোলন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একইভাবে উপজেলার ইল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনসেড ভবন ক্ষতিগ্রস্তের জন্য দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও সেখানে কোন টিনসেড ভবন পাওয়া যায়নি। সূত্রে আরও জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকা কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টরকির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বিদ্যালয়ে নাম সর্বস্ব কাজ করে পুরো টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষকরা জানান, মূলত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যেসব বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকদের সু-সম্পর্ক রয়েছে সেসব স্কুল আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এমনকি অনেক স্কুলে একইসাথে দুইটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা আরও জানান, ওইসব স্কুলের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আতাত করে প্রধান শিক্ষকরা উত্তোলন করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

অপরদিকে চলতি বছর নিয়োগ পাওয়া নতুন শিক্ষকদের বেতন ভাতা করে দেয়ার নামে উপজেলা শিক্ষা অফিসার একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে দুই হাজার পাঁচ শ’ টাকা করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজের অফিসের সামনে ‘আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে মহাদাপটে দুর্নীতি মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা ও দুদক কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস পূর্বে একযোগে ২৪টি বিদ্যালয় বন্ধ করে বনভোজনে গিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল বলেন, যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করার পর সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন করার পরেই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে বিল দেয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিল করার নামে কারও কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক এসএম ফারুক বলেন, এসব বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।