জাল আইডি ৪২ ইসি কর্মচারী বরখাস্ত

জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ ও জমি জালিয়াতিসহ বেশ কিছু অপরাধ করেছে একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রকে জাল এনআইডি তৈরি করতে সাহায্য করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা। জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিটি এনআইডি তৈরির জন্য লাখ টাকা নিয়েছে ইসির অসাধু এই কর্মচারীরা।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, এমন ৪২ কর্মীকে বরখাস্তের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর জালিয়াতির কাজে ব্যবহার করা এমন এক হাজার ৫৭টি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) লক করেছে নির্বাচন কমিশন। আর তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ৫৫৬টি মামলা করেছে ইসির আইন বিভাগ। সম্প্রতি ভুয়া এনআইডি তৈরিতে সহায়তার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ইসির ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ ৯ জন গ্রেফতার হওয়ার পর মামলাটি তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

ডিবি পুলিশ সূত্র বলছে, এসব জাল এনআইডি ব্যবহার করে ইতোমধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অন্তত ১২ কোটি টাকার ঋণ হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এভাবে ঠিক কি পরিমাণ ঋণ নেয়া হয়েছে তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) সহায়তা চেয়েছেন তারা। এছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে জমি দখল ও বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছে চক্রটি। ডিবি পুলিশ বলছে, জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিটি এনআইডি তৈরির জন্য এক লাখ টাকা নিয়েছে সিন্ডিকেট। যার মধ্যে ইসির ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা পেতেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে। বাকি টাকা পেতেন সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা।

গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডের ডি-ব্লক এলাকা থেকে দুই ইসি কর্মীসহ এনআইডি জালিয়াত চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তারা হলো- ইসির খিলগাঁও অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর ও গুলশান অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আনোয়ারুল ইসলাম, তাদের সহযোগী সুমন পারভেজ, মজিদ ও আবদুল্লাহ আল মামুন। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দ্বৈত, জাল ও নকল ১২টি এনআইডি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাদের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার বাইরের দুটি জেলা থেকে আরও চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। ইসির সঙ্গেও কথা হয়েছে। এই প্রতারক চক্র কোন কোন এনআইডি ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো থেকে টাকা নিয়েছেন, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সব কিছু মিলে তদন্ত শেষ করে আমরা দ্রুতই চার্জশিট দিবো। এদিকে ইসি সূত্র বলছে, গত ১০ বছরে অন্তত ১০ লাখ মানুষ দ্বৈত ভোটার হতে চেয়েছিলেন। যেখানে শুধু ২০১৯ সালে দুই লাখ সাত হাজার ৬৩৫ জন দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে খারাপ উদ্দেশ্যে দ্বৈত ভোটার হওয়া এক হাজার ৫৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেক নিয়ম মেনে পরিচয়পত্র করতে হলেও কিছু অসাধু কর্মীর কারণে জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে দুই বার এনআইডি কার্ড করে দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। জালিয়াতি করে যারা এনআইডি কার্ড নিয়েছেন তাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আর যেসব কর্মকর্তা এসব দুর্নীতি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল স্বাক্ষরের পাশাপাশি ফেসিয়াল রিকগনিশন এবং আইরিশ স্ক্যান যুক্ত করেছি। এখন চাইলেও কেউ জাল বা দ্বৈত এনআইডি তৈরি করতে পারবে না।

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৩ পৌষ ১৪২৭, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

জাল আইডি ৪২ ইসি কর্মচারী বরখাস্ত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ ও জমি জালিয়াতিসহ বেশ কিছু অপরাধ করেছে একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রকে জাল এনআইডি তৈরি করতে সাহায্য করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা। জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিটি এনআইডি তৈরির জন্য লাখ টাকা নিয়েছে ইসির অসাধু এই কর্মচারীরা।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, এমন ৪২ কর্মীকে বরখাস্তের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর জালিয়াতির কাজে ব্যবহার করা এমন এক হাজার ৫৭টি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) লক করেছে নির্বাচন কমিশন। আর তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ৫৫৬টি মামলা করেছে ইসির আইন বিভাগ। সম্প্রতি ভুয়া এনআইডি তৈরিতে সহায়তার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ইসির ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ ৯ জন গ্রেফতার হওয়ার পর মামলাটি তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

ডিবি পুলিশ সূত্র বলছে, এসব জাল এনআইডি ব্যবহার করে ইতোমধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অন্তত ১২ কোটি টাকার ঋণ হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এভাবে ঠিক কি পরিমাণ ঋণ নেয়া হয়েছে তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) সহায়তা চেয়েছেন তারা। এছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে জমি দখল ও বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছে চক্রটি। ডিবি পুলিশ বলছে, জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিটি এনআইডি তৈরির জন্য এক লাখ টাকা নিয়েছে সিন্ডিকেট। যার মধ্যে ইসির ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা পেতেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে। বাকি টাকা পেতেন সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা।

গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডের ডি-ব্লক এলাকা থেকে দুই ইসি কর্মীসহ এনআইডি জালিয়াত চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তারা হলো- ইসির খিলগাঁও অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর ও গুলশান অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আনোয়ারুল ইসলাম, তাদের সহযোগী সুমন পারভেজ, মজিদ ও আবদুল্লাহ আল মামুন। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দ্বৈত, জাল ও নকল ১২টি এনআইডি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাদের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার বাইরের দুটি জেলা থেকে আরও চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। ইসির সঙ্গেও কথা হয়েছে। এই প্রতারক চক্র কোন কোন এনআইডি ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো থেকে টাকা নিয়েছেন, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সব কিছু মিলে তদন্ত শেষ করে আমরা দ্রুতই চার্জশিট দিবো। এদিকে ইসি সূত্র বলছে, গত ১০ বছরে অন্তত ১০ লাখ মানুষ দ্বৈত ভোটার হতে চেয়েছিলেন। যেখানে শুধু ২০১৯ সালে দুই লাখ সাত হাজার ৬৩৫ জন দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে খারাপ উদ্দেশ্যে দ্বৈত ভোটার হওয়া এক হাজার ৫৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেক নিয়ম মেনে পরিচয়পত্র করতে হলেও কিছু অসাধু কর্মীর কারণে জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে দুই বার এনআইডি কার্ড করে দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। জালিয়াতি করে যারা এনআইডি কার্ড নিয়েছেন তাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আর যেসব কর্মকর্তা এসব দুর্নীতি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল স্বাক্ষরের পাশাপাশি ফেসিয়াল রিকগনিশন এবং আইরিশ স্ক্যান যুক্ত করেছি। এখন চাইলেও কেউ জাল বা দ্বৈত এনআইডি তৈরি করতে পারবে না।