দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর কাল উদ্বোধন

আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর বরগুনায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সন্নিকটে প্রায় ১ একর জমির ওপর নির্মিত বিশালাকৃতির নৌকায় স্থান পেয়েছে আবাহমান বাংলার শত প্রকার নৌকার মডেল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে জাদুঘর উদ্বোধনের।

মুজিববর্ষ হিসেবে বরগুনার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নৌকা জাদুঘর স্থাপন উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১০০ বিভিন্ন প্রকার নৌকার মডেল নিয়ে নৌকা জাদুঘরের পরিকল্পনা করা হলেও আপাতত ৭৫টি নৌকা নিয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর বরগুনায় নৌকা জাদুঘরের সূচনা হচ্ছে। জাদুঘরটি তৈরি হয়েছে ১২৫ ফুট দৈর্ঘের এবং ৩০ ফুট প্রস্তের একটি নৌকার আদলে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে একটি বড় নৌকা। এর মূল ভবনটি ৭৫ ফুট, গলুই ২৫ ফুট করে নৌকার পেটের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ১০০ নৌকার মডেল। ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে নৌকার মডেল সংগ্রহ হয়েছে। বড়-ছোট খাল-নদী-সাগর, এলাকা, যাত্রী ও মালামাল পরিবহন বিবেচনায় নৌকা রয়েছে, যা স্থান পেয়েছে জাদুঘরে।

কালের বিবর্তনে নৌকা এখন খাল-নদী-সাগরে তেমন দেখা না গেলেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পেক্ষাপটে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অবদান রেখেছে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে। যুক্তফ্রন্ট থেকে স্বাধীনতা এবং বর্তমান রাজনীতিতে প্রতীক হিসেবে নৌকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বরগুনা বরিশালের অংশ হিসেবে হাজার নদী খাল এমনকি সংশ্লিষ্ট সাগরে এক সময় নৌকার আধিপত্য ছিল। যদিও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, স্পিডবোট বের হয়েছে যা ধীর গতির নৌকার দ্রত গমন উপযোগী সংস্করণ। এক সময় নৌকা শুধু যানবাহনই নয় মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা-নেয়া, সুন্দরবন থেকে কাঠ সংগ্রহ, নদী-সাগরে মৎস্য শিকার ইত্যাদি বহু কাজে ব্যবহার হতো নৌকা। এখন নৌকার মাঝি পেশা নিয়ে বেকার হাজার হাজার মাঝিমাল্লা। এখন তাদের কেউ খোঁজ নেয় না, এমনকি নৌকা নিয়ে গবেষণা বা এর সংরক্ষণে এ যাবতকাল কোথাও তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সে শূন্যতা পূরণে বরগুনার নৌকা জাদুঘর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন আয়োজকরা

মানিক বন্দ্যোপধ্যায়ের সেই বিখ্যাত উপন্যাস যা চলচিত্র রূপ পেয়েছে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ নামে। মনে পড়ে সেই মনকাড়া গান, কই যাওরে পদ্মার ঢেউ আমার কথা লইয়া যাওরে—। নৌকা এবং নদী নিয়ে বাংলার মানুষের যে রূপকথা সে চিরন্তন। যদিও বাংলার সেই চিরন্তন ঐতিহ্য এখন আর নেই। খালগুলো গেছে শুকিয়ে, নদী গেছে ভরাট হয়ে। ধীরগতির নৌকার বদলে তৈরি হয়েছে দ্রুতগতির ট্রলার এবং ইঞ্জিনচালিত যানবাহন। নাইওর নিতে এখন আর পানসি বা একমালই কেরায়া নৌকা নদীর ঘাটে আসে না। বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়ায় অটো বা দামি গাড়ি। এক সময় প্রতন্ত আঞ্চলে পুলিশের থানায় নৌকায় আসামি ধরার জন্য নৌকা ব্যাবহার হতো। আমরা সেই নৌকার মাঝিদের দাপটের কথা জানি যা দারোগাকে হার মানাত।

বরগুনা নামের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে নৌকা। বরগুনা নামের উৎপত্তি হয়েছে বরগুন বা অনুকূল প্রবাহকে নিয়ে। উত্তরাঞ্চল থেকে বাওয়ালীরা সুন্তর বনে কাঠ কাটতে আসা এবং ফিরে যাওয়ার জন্য অনুকূল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য অপেক্ষা করতো খাকদন নদীর তীরে বিষখালীর মোহনার কাছে। বড়গোনের জন্য এই অপেক্ষার স্থানের নামই এক সময় বরগুনা হয়ে যায়। বড় নৌকা, বড় গোন, লগি, বৈঠা, পাল এলাকার মানুষে অতি পরিচিত উপকরণ ছিল। বরগুনার দুটি বৃহৎ নদী বিষখালী ও পায়ড়া। উপকথা ছিল এই পমত্তা নদী ও নৌকা নিয়ে। বলা হতো ‘যে দেয় পায়রা পাড়ি হের মাউগ অয় দুফাইররা রারি।’ আবার ‘যার স্বামী বিষ খায় হে বিষখালি পাড়ি দেয়।’ নানা কাহিনী রয়েছে এই নৌকা ও নদীকে কেন্দ্র করে। যা আজ বলতে গেলে রূপকথা, স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরের জন্যই বরগুনায় নৌকা জাদুঘর।

আরও খবর
আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে পেরেছে বলে মানুষ সুফল পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী
একাদশ সংসদ নির্বাচনের দু’বছর পূর্তি আজ
২০২১ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের সব বই স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে
ভাওয়াইয়া কিংবদন্তি আব্বাসউদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংকলন ‘বিজয় চিরন্তন’
‘বধ্যভূমিতে একদিন’ এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী
মাকে হত্যা, লাশ গুম ও পুড়িয়ে ফেলার লোমহর্ষক কাহিনী
নিখোঁজের একদিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার
আয়কর রিটার্ন জমার শেষ দিন আজ
থার্টিফার্স্টে আতশবাজি মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ
তুরাগ তীরে ৪৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
করোনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে মির্জা ফখরুল

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর কাল উদ্বোধন

চিত্তরঞ্জন শীল

আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর বরগুনায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সন্নিকটে প্রায় ১ একর জমির ওপর নির্মিত বিশালাকৃতির নৌকায় স্থান পেয়েছে আবাহমান বাংলার শত প্রকার নৌকার মডেল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে জাদুঘর উদ্বোধনের।

মুজিববর্ষ হিসেবে বরগুনার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নৌকা জাদুঘর স্থাপন উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১০০ বিভিন্ন প্রকার নৌকার মডেল নিয়ে নৌকা জাদুঘরের পরিকল্পনা করা হলেও আপাতত ৭৫টি নৌকা নিয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর বরগুনায় নৌকা জাদুঘরের সূচনা হচ্ছে। জাদুঘরটি তৈরি হয়েছে ১২৫ ফুট দৈর্ঘের এবং ৩০ ফুট প্রস্তের একটি নৌকার আদলে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে একটি বড় নৌকা। এর মূল ভবনটি ৭৫ ফুট, গলুই ২৫ ফুট করে নৌকার পেটের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ১০০ নৌকার মডেল। ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে নৌকার মডেল সংগ্রহ হয়েছে। বড়-ছোট খাল-নদী-সাগর, এলাকা, যাত্রী ও মালামাল পরিবহন বিবেচনায় নৌকা রয়েছে, যা স্থান পেয়েছে জাদুঘরে।

কালের বিবর্তনে নৌকা এখন খাল-নদী-সাগরে তেমন দেখা না গেলেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পেক্ষাপটে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অবদান রেখেছে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে। যুক্তফ্রন্ট থেকে স্বাধীনতা এবং বর্তমান রাজনীতিতে প্রতীক হিসেবে নৌকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বরগুনা বরিশালের অংশ হিসেবে হাজার নদী খাল এমনকি সংশ্লিষ্ট সাগরে এক সময় নৌকার আধিপত্য ছিল। যদিও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, স্পিডবোট বের হয়েছে যা ধীর গতির নৌকার দ্রত গমন উপযোগী সংস্করণ। এক সময় নৌকা শুধু যানবাহনই নয় মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা-নেয়া, সুন্দরবন থেকে কাঠ সংগ্রহ, নদী-সাগরে মৎস্য শিকার ইত্যাদি বহু কাজে ব্যবহার হতো নৌকা। এখন নৌকার মাঝি পেশা নিয়ে বেকার হাজার হাজার মাঝিমাল্লা। এখন তাদের কেউ খোঁজ নেয় না, এমনকি নৌকা নিয়ে গবেষণা বা এর সংরক্ষণে এ যাবতকাল কোথাও তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সে শূন্যতা পূরণে বরগুনার নৌকা জাদুঘর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন আয়োজকরা

মানিক বন্দ্যোপধ্যায়ের সেই বিখ্যাত উপন্যাস যা চলচিত্র রূপ পেয়েছে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ নামে। মনে পড়ে সেই মনকাড়া গান, কই যাওরে পদ্মার ঢেউ আমার কথা লইয়া যাওরে—। নৌকা এবং নদী নিয়ে বাংলার মানুষের যে রূপকথা সে চিরন্তন। যদিও বাংলার সেই চিরন্তন ঐতিহ্য এখন আর নেই। খালগুলো গেছে শুকিয়ে, নদী গেছে ভরাট হয়ে। ধীরগতির নৌকার বদলে তৈরি হয়েছে দ্রুতগতির ট্রলার এবং ইঞ্জিনচালিত যানবাহন। নাইওর নিতে এখন আর পানসি বা একমালই কেরায়া নৌকা নদীর ঘাটে আসে না। বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়ায় অটো বা দামি গাড়ি। এক সময় প্রতন্ত আঞ্চলে পুলিশের থানায় নৌকায় আসামি ধরার জন্য নৌকা ব্যাবহার হতো। আমরা সেই নৌকার মাঝিদের দাপটের কথা জানি যা দারোগাকে হার মানাত।

বরগুনা নামের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে নৌকা। বরগুনা নামের উৎপত্তি হয়েছে বরগুন বা অনুকূল প্রবাহকে নিয়ে। উত্তরাঞ্চল থেকে বাওয়ালীরা সুন্তর বনে কাঠ কাটতে আসা এবং ফিরে যাওয়ার জন্য অনুকূল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য অপেক্ষা করতো খাকদন নদীর তীরে বিষখালীর মোহনার কাছে। বড়গোনের জন্য এই অপেক্ষার স্থানের নামই এক সময় বরগুনা হয়ে যায়। বড় নৌকা, বড় গোন, লগি, বৈঠা, পাল এলাকার মানুষে অতি পরিচিত উপকরণ ছিল। বরগুনার দুটি বৃহৎ নদী বিষখালী ও পায়ড়া। উপকথা ছিল এই পমত্তা নদী ও নৌকা নিয়ে। বলা হতো ‘যে দেয় পায়রা পাড়ি হের মাউগ অয় দুফাইররা রারি।’ আবার ‘যার স্বামী বিষ খায় হে বিষখালি পাড়ি দেয়।’ নানা কাহিনী রয়েছে এই নৌকা ও নদীকে কেন্দ্র করে। যা আজ বলতে গেলে রূপকথা, স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরের জন্যই বরগুনায় নৌকা জাদুঘর।