সূচকের ঊর্ধ্বগতিতে বাজার মূলধনে রেকর্ড 

একের পর এক বড় ধরনের চমক দেখাচ্ছে শেয়ারবাজার। প্রায় প্রতিদিনই বড় উত্থান হচ্ছে সূচকের। লেনদেনও বাড়ছে সমান তালে। গত বছর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক নেমেছিল সাড়ে ৩ হাজারে। গতকাল সেই সূচক বেড়ে ৬ হাজারের কাছাকাছি অবস্থান করছে। একইভাবে বাজার মূলধনও গত দুই বছরের রেকর্ড ভেঙে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বলছে, এটি বাজারের স্বাভাবিক গতি। কিন্তু কোন কোন বাজার বিশেষজ্ঞ বলছেন, এতো দ্রুতগতির উত্থানের পেছনে রহস্যজনক কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে।

গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ বেলা ১১টায় ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯১৯ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১৩২৭ ও ২২৪১ পয়েন্টে পৌঁছে। এরপর কিছুটা কমে লেনদেন চলতে থাকে। দিন শেষে ডিএসইএক্স ৫ হাজার ৯০৯.৩০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। অর্থাৎ গতকাল ডিএসইএক্স ১৩৯.৩০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। এই সূচকটি ১ বছর ১১ মাস ১৫ দিন পর ৫ হাজার ৯০০ পয়েন্ট অতিক্রম করল। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি সূচকটি ৫ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।

শুধু সূচকই নয়, বাজার মূলধনেও রেকর্ড করেছে ডিএসই। গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন ৫ লাখ ১ হাজার ৭০৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা পৌঁছায় যা ডিএসই’র ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এটা ভালো খবর। তবে এক দুইদিন পর পরই সূচকের এতো বড় উত্থান সন্দেহজনক। বিএসইসিকে এই বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। সম্ভবত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ারের দাম ও লেনদেনের পরিমাণে বড় ধরনের তারতম্য ঘটলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য গত মঙ্গলবার যে নির্দেশনা জারি করেছিল বিএসইসি গতকাল তা স্থগিত করেছে। এটার কারণেও বাজারে বড় উত্থান হতে পারে।’ তবে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্থ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘বাজারে বড় উত্থান হচ্ছে এতে শঙ্কার কিছু নেই। বাজারে বিনিয়োগকারী বাড়ছে, মূলধন আসছে। তাই বাজারে বড় উত্থান হতেই পারে। কেউ যদি মনে করে যে কোন একটা গোষ্ঠী বাজারকে প্রভাবিত করছে, সেটা ঠিক নয়। কারণ বাজার এখন অনেক বড়। এখন আমাদের বাজার ৫ লাখ কোটি টাকার উপর। এতো বড় বাজারকে প্রভাবিত করা সহজ নয়। হয়তো কোন গোষ্ঠীর হাতে ৫০০ কোটি বা ১ হাজার কোটি টাকা আছে আর সেটা দিয়ে বাজার প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। এতে এতো বড় বাজারের কিছুই হবে না। আমরা প্রতিনিয়ত বাজারের ওপর নজর রাখছি।’

তদন্ত স্থগিতের বিষয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘তদন্ত কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করেছি। সেটা আবার চালু হবে। এটা বাজারে প্রভাব ফেলবে না।’

বাজারের উত্থান-পতনে বড় ভূমিকা রাখছে টেলিকমিউনিকেশন খাতের কোম্পানি রবি। রবি আজিয়াটা এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় মূলধনি কোম্পানি। এটির পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এর আগে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মূলধনি কোম্পানি ন্যাশনাল ব্যাংক। পাশাপাশি রবির তালিকাভুক্তির মধ্যদিয়ে শেয়ারবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২টি। গতকাল লেনদেনের শুরুতেই রবি আজিয়াটাসহ তিন কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে। বাকি দুটি কোম্পানি হলো- জিবিবি পাওয়ার ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন, রবি হল্টেড হওয়ার কারণেও বাজারের এমন উত্থান হতে পারে।

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১ মাঘ ১৪২৭, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সূচকের ঊর্ধ্বগতিতে বাজার মূলধনে রেকর্ড 

রেজাউল করিম

একের পর এক বড় ধরনের চমক দেখাচ্ছে শেয়ারবাজার। প্রায় প্রতিদিনই বড় উত্থান হচ্ছে সূচকের। লেনদেনও বাড়ছে সমান তালে। গত বছর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক নেমেছিল সাড়ে ৩ হাজারে। গতকাল সেই সূচক বেড়ে ৬ হাজারের কাছাকাছি অবস্থান করছে। একইভাবে বাজার মূলধনও গত দুই বছরের রেকর্ড ভেঙে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বলছে, এটি বাজারের স্বাভাবিক গতি। কিন্তু কোন কোন বাজার বিশেষজ্ঞ বলছেন, এতো দ্রুতগতির উত্থানের পেছনে রহস্যজনক কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে।

গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ বেলা ১১টায় ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯১৯ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১৩২৭ ও ২২৪১ পয়েন্টে পৌঁছে। এরপর কিছুটা কমে লেনদেন চলতে থাকে। দিন শেষে ডিএসইএক্স ৫ হাজার ৯০৯.৩০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। অর্থাৎ গতকাল ডিএসইএক্স ১৩৯.৩০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। এই সূচকটি ১ বছর ১১ মাস ১৫ দিন পর ৫ হাজার ৯০০ পয়েন্ট অতিক্রম করল। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি সূচকটি ৫ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।

শুধু সূচকই নয়, বাজার মূলধনেও রেকর্ড করেছে ডিএসই। গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন ৫ লাখ ১ হাজার ৭০৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা পৌঁছায় যা ডিএসই’র ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এটা ভালো খবর। তবে এক দুইদিন পর পরই সূচকের এতো বড় উত্থান সন্দেহজনক। বিএসইসিকে এই বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। সম্ভবত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ারের দাম ও লেনদেনের পরিমাণে বড় ধরনের তারতম্য ঘটলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য গত মঙ্গলবার যে নির্দেশনা জারি করেছিল বিএসইসি গতকাল তা স্থগিত করেছে। এটার কারণেও বাজারে বড় উত্থান হতে পারে।’ তবে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্থ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘বাজারে বড় উত্থান হচ্ছে এতে শঙ্কার কিছু নেই। বাজারে বিনিয়োগকারী বাড়ছে, মূলধন আসছে। তাই বাজারে বড় উত্থান হতেই পারে। কেউ যদি মনে করে যে কোন একটা গোষ্ঠী বাজারকে প্রভাবিত করছে, সেটা ঠিক নয়। কারণ বাজার এখন অনেক বড়। এখন আমাদের বাজার ৫ লাখ কোটি টাকার উপর। এতো বড় বাজারকে প্রভাবিত করা সহজ নয়। হয়তো কোন গোষ্ঠীর হাতে ৫০০ কোটি বা ১ হাজার কোটি টাকা আছে আর সেটা দিয়ে বাজার প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। এতে এতো বড় বাজারের কিছুই হবে না। আমরা প্রতিনিয়ত বাজারের ওপর নজর রাখছি।’

তদন্ত স্থগিতের বিষয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘তদন্ত কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করেছি। সেটা আবার চালু হবে। এটা বাজারে প্রভাব ফেলবে না।’

বাজারের উত্থান-পতনে বড় ভূমিকা রাখছে টেলিকমিউনিকেশন খাতের কোম্পানি রবি। রবি আজিয়াটা এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় মূলধনি কোম্পানি। এটির পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এর আগে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মূলধনি কোম্পানি ন্যাশনাল ব্যাংক। পাশাপাশি রবির তালিকাভুক্তির মধ্যদিয়ে শেয়ারবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২টি। গতকাল লেনদেনের শুরুতেই রবি আজিয়াটাসহ তিন কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে। বাকি দুটি কোম্পানি হলো- জিবিবি পাওয়ার ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন, রবি হল্টেড হওয়ার কারণেও বাজারের এমন উত্থান হতে পারে।