টাকা দিলেই জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট

টাকা দিলে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে এমনি জালিয়াত চক্রের আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখান থেকে হাজারেরও বেশি ফরম, কয়েকশ আবেদন ও নকল সিল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত মো. নুরুল আলম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। চক্রের পলাতক অন্য সদস্যদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।

র‌্যাবের একজন দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও অনুসন্ধান চালিয়ে এ চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যত ধরনের কাগজপত্র দরকার সবই জাল করে লাইসেন্স দিত। এ চক্র গত কয়েক বছর ধরে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ নানা জালিয়াতি করছে।

শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্সই নয়, পুলিশ ভেরিফিকেশান, ডাক্তারি সার্টিফিকেট, এসপি ও থানার ওসির নকল সিলও তার আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আস্তায় পাওয়া গেছে, এক হাজারেরও বেশি ফরম। বিআরটিএ যত ধরনের কাগজ আছে এ চক্রের কাছে সব নকল কাগজই আছে। বিআরটিএ কিছু অসাধু কর্মচারী ও কর্মকর্তার যোগসাজশে এ চক্র অপকর্ম করে যাচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

র‌্যাব-২ মিডিয়া শাখার এএসপি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত বুধবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ভিআইপি হাট নামক বাড়ির নিচতলায় অভিযান চালায়। ওই বাড়ির গার্ডরুম থেকে বিআরটিএ’র নামে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাল সনদপত্র দেয়ার ঘটনায় প্রতারক চক্রের সদস্য মো. নুরুল আলমকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকের আস্তানা থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জাল কাগজপত্র, নকল সিল, জাল লাইসেন্স তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক নূরুল আলম র‌্যাবকে জানায়, বিআরটিএ থেকে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স, লাইসেন্স নবায়ন, ইঞ্জিন পরিবর্তনের আবেদন তৈরি, লাইসেন্সের মালিকানা পরিবর্তন, অথরিটি স্থানান্তর করে দেয়াসহ বিভিন্ন কাজ করে দেয়ার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করতে ১৮,০০০ টাকা, প্রাইভেটকার লাইসেন্স করতে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, রুটপারমিট-২,০০০ টাকা, ফিটনেস সার্টিফিকেটের কাগজপত্রের জন্য ২,০০০ টাকা নিত। কারও ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে সে লাইসেন্স নতুন করে তৈরি করে দেয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিত।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিআরটিএসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জাল সিল ব্যবহার করে নকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, নকল ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির বিভিন্ন জাল কাগজপত্র, শিক্ষানবিশ লাইসেন্স ইত্যাদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে করে দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি নুরুল পেশাদার প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। মো. নুরুল আলমের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে বিআরটিএ কর্তৃক পুলিশ সুপার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন ফরম, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফরম (বিভিন্ন নামীয়), মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আবেদন ফরম, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন ফরম, বিভিন্ন ব্যাংকের মানি রিসিভ, পেশাদার চালকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন ফরম, বিআরটিএ বিভিন্ন কর্মকর্তার নকল সিলসহ জালিয়াতের কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার ও প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।

আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে যা যাচাই বাছাই করে ভবিষ্যতে র‌্যাব এ প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা চলছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান। আর গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যানরবাহন চালানোর কারনে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নকলবাজ পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনলে জালিয়াতি কমবে বলে আশাবাদী।

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১ , ৮ মাঘ ১৪২৭, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

টাকা দিলেই জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট

বাকী বিল্লাহ

টাকা দিলে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে এমনি জালিয়াত চক্রের আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখান থেকে হাজারেরও বেশি ফরম, কয়েকশ আবেদন ও নকল সিল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত মো. নুরুল আলম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। চক্রের পলাতক অন্য সদস্যদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।

র‌্যাবের একজন দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও অনুসন্ধান চালিয়ে এ চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যত ধরনের কাগজপত্র দরকার সবই জাল করে লাইসেন্স দিত। এ চক্র গত কয়েক বছর ধরে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ নানা জালিয়াতি করছে।

শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্সই নয়, পুলিশ ভেরিফিকেশান, ডাক্তারি সার্টিফিকেট, এসপি ও থানার ওসির নকল সিলও তার আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আস্তায় পাওয়া গেছে, এক হাজারেরও বেশি ফরম। বিআরটিএ যত ধরনের কাগজ আছে এ চক্রের কাছে সব নকল কাগজই আছে। বিআরটিএ কিছু অসাধু কর্মচারী ও কর্মকর্তার যোগসাজশে এ চক্র অপকর্ম করে যাচ্ছে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

র‌্যাব-২ মিডিয়া শাখার এএসপি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত বুধবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ভিআইপি হাট নামক বাড়ির নিচতলায় অভিযান চালায়। ওই বাড়ির গার্ডরুম থেকে বিআরটিএ’র নামে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাল সনদপত্র দেয়ার ঘটনায় প্রতারক চক্রের সদস্য মো. নুরুল আলমকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকের আস্তানা থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জাল কাগজপত্র, নকল সিল, জাল লাইসেন্স তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক নূরুল আলম র‌্যাবকে জানায়, বিআরটিএ থেকে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স, লাইসেন্স নবায়ন, ইঞ্জিন পরিবর্তনের আবেদন তৈরি, লাইসেন্সের মালিকানা পরিবর্তন, অথরিটি স্থানান্তর করে দেয়াসহ বিভিন্ন কাজ করে দেয়ার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করতে ১৮,০০০ টাকা, প্রাইভেটকার লাইসেন্স করতে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, রুটপারমিট-২,০০০ টাকা, ফিটনেস সার্টিফিকেটের কাগজপত্রের জন্য ২,০০০ টাকা নিত। কারও ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে সে লাইসেন্স নতুন করে তৈরি করে দেয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিত।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিআরটিএসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জাল সিল ব্যবহার করে নকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, নকল ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির বিভিন্ন জাল কাগজপত্র, শিক্ষানবিশ লাইসেন্স ইত্যাদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে করে দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি নুরুল পেশাদার প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। মো. নুরুল আলমের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে বিআরটিএ কর্তৃক পুলিশ সুপার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন ফরম, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফরম (বিভিন্ন নামীয়), মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আবেদন ফরম, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন ফরম, বিভিন্ন ব্যাংকের মানি রিসিভ, পেশাদার চালকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন ফরম, বিআরটিএ বিভিন্ন কর্মকর্তার নকল সিলসহ জালিয়াতের কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার ও প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।

আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে যা যাচাই বাছাই করে ভবিষ্যতে র‌্যাব এ প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা চলছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান। আর গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যানরবাহন চালানোর কারনে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নকলবাজ পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনলে জালিয়াতি কমবে বলে আশাবাদী।