আজ থেকে টিকা দেয়া শুরু

এক নার্সকে দেয়ার মাধ্যমে কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী 

দেশে প্রথম করোনার টিকা পাচ্ছেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্স। তাকে দিয়েই উদ্বোধন হচ্ছে টিকাদান কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়ালি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। গতকাল ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ৫০ লাখ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। দেশব্যাপী ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সম্প্রতি স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা কর্মসূচি শুরু করার কথা জানিয়েছিলেন।

প্রথম দিন ২৫ জনকে টিকা

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বিকেলে কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকার স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, এদিন ২৫ জনকে করোনা টিকা দেয়া হবে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যারা টিকা পাবেন তাদের ৫ জনের টিকা দেয়া দেখবেন প্রধানমন্ত্রী।

কুর্মিটোলা ছাড়াও ৩-৪টি হাসপাতালে টিকাদান শুরু হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারত থেকে আনা টিকা আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে প্রয়োগ শুরু করা হবে।’

কুর্মিটোলায় উদ্বোধনের পরদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও করোনার টিকা দেয়া হবে।

টিকা কেন্দ্রে গিয়েও নিবন্ধন করা যাবে

প্রধানমন্ত্রী টিকা কর্মসূচির উদ্বোধনের পরপরই নিবন্ধনের জন্য অনলাইন ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্ম খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা (অ্যাপে) নিবন্ধন করতে পারবেন না, তারা ভ্যাকসিন কেন্দ্রে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা রেখেছি।’

এর আগে গত সোমবার আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যাদের ইন্টারনেট সুবিধা বা অ্যাপ ব্যবহারের মতো ডিভাইস নেই, তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগ্রহীদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ফ্রি নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য আমরা নানা ব্যবস্থা নিয়েছি। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারির কথা বলা হলেও আমরা ৭ তারিখেই সারাদেশে শুরু করার চিন্তা করছি। আশা করি, দেশব্যাপী ব্যাপকহারে আমরা ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।’

যারা টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘টিকা আনা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে, শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এজন্য গত ৯ মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কাজেই করোনাভাইরাসের টিকা সরকারের কাছে কোন রাজনীতি নয়। এটা মানুষের জীবন রক্ষা করতে আনা হয়েছে। যারা এই টিকা নিয়ে বিরূপ প্রচার চালাচ্ছেন, তারা ভালো কাজ করছেন না। তারা এদেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করলে এটা নিয়ে বিরূপ প্রচারণা চালাবেন না।’

জোর করে কাউকে টিকা দেব না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

গতকাল রাতে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে টিকা কর্মসূচির কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘জোর করে আমরা কাউকে টিকা দেব না। টিকা নেয়াটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। আমরা আহ্বান জানাব টিকা নেয়ার জন্য। কারণ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা কার্যকর ব্যবস্থা। টিকার জন্য তো আমরা উদগ্রীব ছিলাম। কাজেই আমি আহ্বান করবো, আপনারা যারা আগ্রহী তারা টিকা নিতে আসবেন।’

কারা টিকা নিতে পারবে কারা নিতে পারবে না সে প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপসের মাধ্যমে কারা টিকা নিতে পারবে আর কারা টিকা নিতে পারবে না তা জানা যাবে। যাদের আমরা টিকা দিতে চাচ্ছি অর্থাৎ বয়স যদি আমরা হিসাব করি, ৫৫ বছর বয়সের ওপর যারা আছেন তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। যারা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মী তারাও নিবন্ধন করতে পারবেন। গর্ভবতী মা ও অনেক অসুস্থ ব্যক্তি সেখানে নিবন্ধন করতে পারবেন না।’

অ্যাপস সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যদিও অ্যাপসের টেকনিক্যাল বিষয়ে আমার পুরোপুরি এখনও জানা নেই। যতটুকু জানি, যারা অ্যাপসের গাইডলাইন মেনে টিকা নিতে নিবন্ধন করবে বা নিবন্ধন করতে সক্ষম হবে তারা সবাই টিকা পাবে।’

এ সময় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টিকা ব্যবহারের উপযোগিতা সনদ

চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম চালানে আসা ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান এ কথা জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) এই টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান।’

এই ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি- উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং সেদেশে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী বিশ্বমানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে। ভারতের সেই সব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে।’

টিকা নিবন্ধন প্রক্রিয়া

১৮ বছরের নিচে কেউ টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবে না। টিকা গ্রহণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।

টিকা নিতে প্রথমে ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd) প্রবেশ করতে হবে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করা যাবে। এরপর নিবন্ধন বাটনে ক্লিক করে নাগরিক শ্রেণী (সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক-আধা সামরিক, প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যালয়, গণমাধ্যম কর্মী, জনপ্রতিনিধি, সিটি ও পৌর কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি ইত্যাদি মোট ১৮টি ক্যাটাগরি) সিলেক্ট করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। এরপর যাচাই বাটনে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে বাংলা ও ইংরেজিতে নাম ফর্মে দেখা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ-বিধি আছে কিনা হ্যাঁ অথবা না সিলেক্ট করতে হবে।

পরবর্তী ধাপগুলোতে নিবন্ধনকারী নাগরিকের পেশা এবং সরকারি কোভিড-১৯ কাজের সঙ্গে জড়িত কিনা তা নির্বাচন করতে হবে, যে মোবাইলে ভ্যাকসিনের তথ্য ও ভেরিফিকেশন এসএমএস পেতে চান নিবন্ধনের সময় তা দিতে হবে, ফরমে বর্তমান ঠিকানা ও টিকাদান কেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে এবং সব শেষে মোবাইলে প্রাপ্ত ঙঞচ (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে গেলে ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

আবেদনকারীর মোবাইল ফোন নম্বরে নির্ধারিত সময়ে এসএমএসে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র জানিয়ে দেয়া হবে। টিকা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রিন্টেড টিকা কার্ড ও এনআইডি কপি সঙ্গে নিতে হবে। প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেয়া হবে। দুটি ডোজ নেয়া হলে সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারকে ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র করোনার টিকা সরবরাহ করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি পাওয়ায় বেক্সিমকো এখন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় জেলায় টিকা পৌঁছে দেবে।

চুক্তির আওতায় কেনা তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা পৌঁছায়। পরে এই টিকা নিয়ে রাখা হয় টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যারহাউজে। সেখান থেকে প্রতিটি লটের নমুনা পরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।

এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একই প্রতিষ্ঠানের টিকার ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় পাঁচটি হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে ‘পাইলটিং’ হিসেবে করোনার টিকা দেয়া হবে।

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১ , ১৩ মাঘ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

আজ থেকে টিকা দেয়া শুরু

এক নার্সকে দেয়ার মাধ্যমে কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী 

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

দেশে প্রথম করোনার টিকা পাচ্ছেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্স। তাকে দিয়েই উদ্বোধন হচ্ছে টিকাদান কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়ালি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। গতকাল ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ৫০ লাখ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। দেশব্যাপী ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সম্প্রতি স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা কর্মসূচি শুরু করার কথা জানিয়েছিলেন।

প্রথম দিন ২৫ জনকে টিকা

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বিকেলে কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকার স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, এদিন ২৫ জনকে করোনা টিকা দেয়া হবে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যারা টিকা পাবেন তাদের ৫ জনের টিকা দেয়া দেখবেন প্রধানমন্ত্রী।

কুর্মিটোলা ছাড়াও ৩-৪টি হাসপাতালে টিকাদান শুরু হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারত থেকে আনা টিকা আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে প্রয়োগ শুরু করা হবে।’

কুর্মিটোলায় উদ্বোধনের পরদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও করোনার টিকা দেয়া হবে।

টিকা কেন্দ্রে গিয়েও নিবন্ধন করা যাবে

প্রধানমন্ত্রী টিকা কর্মসূচির উদ্বোধনের পরপরই নিবন্ধনের জন্য অনলাইন ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্ম খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা (অ্যাপে) নিবন্ধন করতে পারবেন না, তারা ভ্যাকসিন কেন্দ্রে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা রেখেছি।’

এর আগে গত সোমবার আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যাদের ইন্টারনেট সুবিধা বা অ্যাপ ব্যবহারের মতো ডিভাইস নেই, তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগ্রহীদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ফ্রি নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য আমরা নানা ব্যবস্থা নিয়েছি। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারির কথা বলা হলেও আমরা ৭ তারিখেই সারাদেশে শুরু করার চিন্তা করছি। আশা করি, দেশব্যাপী ব্যাপকহারে আমরা ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।’

যারা টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘টিকা আনা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে, শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এজন্য গত ৯ মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কাজেই করোনাভাইরাসের টিকা সরকারের কাছে কোন রাজনীতি নয়। এটা মানুষের জীবন রক্ষা করতে আনা হয়েছে। যারা এই টিকা নিয়ে বিরূপ প্রচার চালাচ্ছেন, তারা ভালো কাজ করছেন না। তারা এদেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করলে এটা নিয়ে বিরূপ প্রচারণা চালাবেন না।’

জোর করে কাউকে টিকা দেব না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

গতকাল রাতে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে টিকা কর্মসূচির কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘জোর করে আমরা কাউকে টিকা দেব না। টিকা নেয়াটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। আমরা আহ্বান জানাব টিকা নেয়ার জন্য। কারণ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা কার্যকর ব্যবস্থা। টিকার জন্য তো আমরা উদগ্রীব ছিলাম। কাজেই আমি আহ্বান করবো, আপনারা যারা আগ্রহী তারা টিকা নিতে আসবেন।’

কারা টিকা নিতে পারবে কারা নিতে পারবে না সে প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপসের মাধ্যমে কারা টিকা নিতে পারবে আর কারা টিকা নিতে পারবে না তা জানা যাবে। যাদের আমরা টিকা দিতে চাচ্ছি অর্থাৎ বয়স যদি আমরা হিসাব করি, ৫৫ বছর বয়সের ওপর যারা আছেন তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। যারা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মী তারাও নিবন্ধন করতে পারবেন। গর্ভবতী মা ও অনেক অসুস্থ ব্যক্তি সেখানে নিবন্ধন করতে পারবেন না।’

অ্যাপস সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যদিও অ্যাপসের টেকনিক্যাল বিষয়ে আমার পুরোপুরি এখনও জানা নেই। যতটুকু জানি, যারা অ্যাপসের গাইডলাইন মেনে টিকা নিতে নিবন্ধন করবে বা নিবন্ধন করতে সক্ষম হবে তারা সবাই টিকা পাবে।’

এ সময় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টিকা ব্যবহারের উপযোগিতা সনদ

চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম চালানে আসা ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান এ কথা জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) এই টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান।’

এই ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি- উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং সেদেশে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী বিশ্বমানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে। ভারতের সেই সব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে।’

টিকা নিবন্ধন প্রক্রিয়া

১৮ বছরের নিচে কেউ টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবে না। টিকা গ্রহণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।

টিকা নিতে প্রথমে ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd) প্রবেশ করতে হবে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করা যাবে। এরপর নিবন্ধন বাটনে ক্লিক করে নাগরিক শ্রেণী (সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক-আধা সামরিক, প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যালয়, গণমাধ্যম কর্মী, জনপ্রতিনিধি, সিটি ও পৌর কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি ইত্যাদি মোট ১৮টি ক্যাটাগরি) সিলেক্ট করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। এরপর যাচাই বাটনে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে বাংলা ও ইংরেজিতে নাম ফর্মে দেখা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ-বিধি আছে কিনা হ্যাঁ অথবা না সিলেক্ট করতে হবে।

পরবর্তী ধাপগুলোতে নিবন্ধনকারী নাগরিকের পেশা এবং সরকারি কোভিড-১৯ কাজের সঙ্গে জড়িত কিনা তা নির্বাচন করতে হবে, যে মোবাইলে ভ্যাকসিনের তথ্য ও ভেরিফিকেশন এসএমএস পেতে চান নিবন্ধনের সময় তা দিতে হবে, ফরমে বর্তমান ঠিকানা ও টিকাদান কেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে এবং সব শেষে মোবাইলে প্রাপ্ত ঙঞচ (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে গেলে ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

আবেদনকারীর মোবাইল ফোন নম্বরে নির্ধারিত সময়ে এসএমএসে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র জানিয়ে দেয়া হবে। টিকা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রিন্টেড টিকা কার্ড ও এনআইডি কপি সঙ্গে নিতে হবে। প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেয়া হবে। দুটি ডোজ নেয়া হলে সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারকে ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র করোনার টিকা সরবরাহ করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি পাওয়ায় বেক্সিমকো এখন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় জেলায় টিকা পৌঁছে দেবে।

চুক্তির আওতায় কেনা তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা পৌঁছায়। পরে এই টিকা নিয়ে রাখা হয় টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যারহাউজে। সেখান থেকে প্রতিটি লটের নমুনা পরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।

এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একই প্রতিষ্ঠানের টিকার ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় পাঁচটি হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে ‘পাইলটিং’ হিসেবে করোনার টিকা দেয়া হবে।