দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তারা একথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা চার দফা দাবি পেশ করেন। তাদের দাবিগুলো হলো, ২৯ মে’র পর ছুটি বৃদ্ধি করা যাবে না, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নিতে হবে, অনতিবিলম্বে হাফিজুর রহমানের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে ও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে আজ শিক্ষামন্ত্রী চলমান ছুটি ১২ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা, এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করলাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বর্ধিত করার পেছনে তিনি করোনা পরিস্থিতি ও ভ্যাক্সিনের অপর্যাপ্ততাকে দায়ী করেছেন। অথচ করোনা পরিস্থিতিতে কলকারখানা, অফিস, শিল্পপ্রতিষ্ঠান; এমনকি গণপরিবহন কোন কিছুই থেমে থাকেনি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অপরদিকে, ভ্যাক্সিন নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য দায়ী সরকারি নীতি-নির্ধারক ও তাদের করপোরেট প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর চাকরি ও টিউশনও নেই। অপরদিকে, একটি দৈনিক পত্রিকার জরিপে দেখা গেছে, গত ৫ মাসে প্রায় ৩৯ জন ঢাবি শিক্ষার্থী নিজ এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন। ৮০ জন শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ, ঢাবি ক্যাম্পাসেই ঢাবি ছাত্র হাফিজুুর রহমানের অস্বাভাবিক ও নির্মম মৃত্যু আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাই এসবের জন্য দায়ী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আরও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, শিক্ষামন্ত্রী এই অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় নিজেই কয়েকবার ডিসকানেক্টেড হয়ে গিয়েছেন। এছাড়াও, গতকাল বিবিসি বাংলায় সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় ঢাবি ভিসি নিজেও টানা তিনবার ডিসকানেক্টেড হন। সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে তাদের ইন্টারনেটের যদি এমন বেহাল দশা হয়, সেক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন? আমরা শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে এই প্রশ্ন রাখছি। সম্প্রতি ইউনিসেফের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মতো এতো দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশসহ কেবল ১৩টি দেশে। এই ১৩টি দেশের মধ্যে রয়েছে পানামা, বলিভিয়া, এল সালভাদরের মতো দেশগুলো। আর এসব দেশে এ দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ১৬৮ মিলিয়ন শিক্ষার্থী।

‘আঁচল ফাউন্ডেশন দাবি করছে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্মহত্যা ৪৪.৩৬% বেড়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন ‘পুলসওয়ান’-এ গত বছর প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মধ্যে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব চলাকালীন মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে এক গবেষণা নিবন্ধ অনুসারে ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশায় রয়েছেন, ৭১ শতাংশ উদ্বেগ এবং ৭০ শতাংশ মানসিক চাপের মধ্যে নিমজ্জিত। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সময় কমে গেছে ৮০ শতাংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর দে এর সূত্র মতে, দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর দৈনিক ১৮ কোটি শিক্ষাঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে এই বন্ধের কারণে।’

এ সময় তিনি আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কথা জানান এবং উপাচার্য যদি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কোন স্পষ্ট বক্তব্য না দেন তাহলে রোববার থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব উপাচার্য বরাবর এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করার আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান

দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের

প্রতিনিধি, ঢাবি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তারা একথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা চার দফা দাবি পেশ করেন। তাদের দাবিগুলো হলো, ২৯ মে’র পর ছুটি বৃদ্ধি করা যাবে না, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নিতে হবে, অনতিবিলম্বে হাফিজুর রহমানের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে ও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে আজ শিক্ষামন্ত্রী চলমান ছুটি ১২ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা, এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করলাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বর্ধিত করার পেছনে তিনি করোনা পরিস্থিতি ও ভ্যাক্সিনের অপর্যাপ্ততাকে দায়ী করেছেন। অথচ করোনা পরিস্থিতিতে কলকারখানা, অফিস, শিল্পপ্রতিষ্ঠান; এমনকি গণপরিবহন কোন কিছুই থেমে থাকেনি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অপরদিকে, ভ্যাক্সিন নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য দায়ী সরকারি নীতি-নির্ধারক ও তাদের করপোরেট প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর চাকরি ও টিউশনও নেই। অপরদিকে, একটি দৈনিক পত্রিকার জরিপে দেখা গেছে, গত ৫ মাসে প্রায় ৩৯ জন ঢাবি শিক্ষার্থী নিজ এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন। ৮০ জন শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ, ঢাবি ক্যাম্পাসেই ঢাবি ছাত্র হাফিজুুর রহমানের অস্বাভাবিক ও নির্মম মৃত্যু আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাই এসবের জন্য দায়ী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আরও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, শিক্ষামন্ত্রী এই অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় নিজেই কয়েকবার ডিসকানেক্টেড হয়ে গিয়েছেন। এছাড়াও, গতকাল বিবিসি বাংলায় সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় ঢাবি ভিসি নিজেও টানা তিনবার ডিসকানেক্টেড হন। সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে তাদের ইন্টারনেটের যদি এমন বেহাল দশা হয়, সেক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন? আমরা শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে এই প্রশ্ন রাখছি। সম্প্রতি ইউনিসেফের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মতো এতো দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশসহ কেবল ১৩টি দেশে। এই ১৩টি দেশের মধ্যে রয়েছে পানামা, বলিভিয়া, এল সালভাদরের মতো দেশগুলো। আর এসব দেশে এ দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ১৬৮ মিলিয়ন শিক্ষার্থী।

‘আঁচল ফাউন্ডেশন দাবি করছে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্মহত্যা ৪৪.৩৬% বেড়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন ‘পুলসওয়ান’-এ গত বছর প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মধ্যে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব চলাকালীন মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে এক গবেষণা নিবন্ধ অনুসারে ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশায় রয়েছেন, ৭১ শতাংশ উদ্বেগ এবং ৭০ শতাংশ মানসিক চাপের মধ্যে নিমজ্জিত। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সময় কমে গেছে ৮০ শতাংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর দে এর সূত্র মতে, দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর দৈনিক ১৮ কোটি শিক্ষাঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে এই বন্ধের কারণে।’

এ সময় তিনি আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কথা জানান এবং উপাচার্য যদি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কোন স্পষ্ট বক্তব্য না দেন তাহলে রোববার থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব উপাচার্য বরাবর এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করার আহ্বান জানান।