ধারাবাহিক উপন্যাস : ছয়

শিকিবু

আবুল কাসেম

(পূর্ব প্রকাশের পর)

দশ.

তামেতোকি পুত্র-কন্যাকে নিয়ে কিয়োটোর টেরামাচি লেনের নিজের বাড়িতে উঠলেন। ভ্রমণক্লান্তি নিয়ে মুরাসাকি এখানে পৌঁছে এক ধরনের স্বস্তিবোধ করল। ইচিঝেন ভালো লেগে গিয়েছিল। তারপরও এই বাড়িটাকেই মনে হল মধুর বাসস্থান (সুইট হোম)।

তাদের আসার সংবাদ পেয়ে পারিবারিক বন্ধুরা এলো। আর এলেন মাসামুনে। মাসামুনে ইঝোমি শিকিবুর বাবা। মাসামুনে এবং তামেতোকিকে গভীরভাবে ভাবাচ্ছে সেনাপতির মৃত্যু। মাসামুনে বললেন, এতটা শক্ত ব্যবস্থা নেবেন ভাবতে পারিনি। কেন সম্রাট তার ওপর এত ক্ষুব্ধ হলেন।’

একই প্রশ্ন আমারও। বললেন তামেতোকি। আমি পৌঁছবার আগেই আদেশ কার্যকর হয়ে গেছে। শুনলাম প্রথামাফিক মস্তকটাও সম্রাটের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে।

সামুরাই সেনাপতি আরো আছে। কিন্তু সে এতটা বেড়ে গেল কেন? ওখানে প্রতিক্রিয়া কি?

একটা থমথমে অবস্থা। আমি ভারপ্রাপ্ত সেনাপতিকে ডেকেছিলাম। কথায় মনে হলো তাকে তারা পছন্দ করতো না।

তাদের জন্য এটা একটা শিক্ষা হলো। বেসামরিক প্রশাসনকে অতিক্রম করে যাওয়ার ভুল উচ্চাভিলাষ এখন স্তিমিত হবে।

বিপরীতটাও হতে পারে।

কি রকম?

সামুরাই সৈন্যরা আগের চাইতে সংঘবদ্ধ। এরা এটা মনে রাখবে। সামরিক গুরুত্ব কমে যাক সামুরাই সেনারা তা চাইবে না। চাইকি একটা প্রতিশোধ স্পৃহাও জাগতে পারে। সম্রাট নিশ্চয়ই জানেন সামরিক শক্তির প্রাধান্যের জন্য সাম্রাজ্য এবং সমাজ নিয়ন্ত্রণে বুশিদো মতাদর্শ আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

মনে হয় ঠিকই বলছেন। বুশিদো বিজয়ীর পথ হলেও সে পথ ভুলে তার অনুসারীরা শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় নেমে গেছে।

শুধু কি তাই? ধর্মীয় সংস্কৃতিতেও হস্তক্ষেপ করছে।

উৎসব-অনুষ্ঠানে নাক গলাচ্ছে। সম্রাটের উচিত তাদের যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা।

এ নিয়ে কথা না বলাই ভালো।

তা ঠিক। মেয়ের বিয়ের কতদূর?

তাদের সাক্ষাতের পর বুঝা যাবে।

সে ব্যবস্থাই করুন। সম্রাটের দরবারে গেলে সাক্ষাৎ হবে নিশ্চয়ই।

আপনার বাড়িতেও যেতে পারি।

তা হলে তো অনেক ভালো হয়।

মাসামুনে চলে গেলে তামেতোকি তাদের কিয়োটোতে আসার সংবাদ উৎসব এবং অনুষ্ঠান বিভাগে পাঠালেন। তার অর্থ নোবুতাকার জানা যে মুরাসাকি এখন কিয়োটোতে।

সংবাদ পেয়েছেন নোবুতাকা। সমস্যা হচ্ছে এই স্মার্ট মানুষটি প্রচলিত হেইয়ান বিবাহরীতির মধ্য দিয়ে যেতে চান না। মুরাসাকির সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা বললেনও তিনি।

মুরাসাকি বলল, রীতিটা আমার পছন্দ এবং শিন্টু শ্রাইনে প্রচলিত নিয়মরীতি অনুসরণ করে আমাদের বিয়ে হবে।

গোপন সাক্ষাৎ এবং কবিতাপত্র লেখা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছি তো?

গোপন সাক্ষাৎ এবং কবিতা ভীতি কেন?

তোমাকে আমি আগে থেকেই চিনি। তুমি স্বনামধন্য কবি। আমি তো তা নই। তাই দু’কাজে অব্যাহতি চাইছি। পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে এটুকু দয়া পেতে পারি নিশ্চয়।

নোবুতাকার কথা শুনে মুরাসাকি হাসলো এবং বলল, শিন্টু শ্রাইনে যেতেই হবে। তাতে কোনো ক্ষমা নেই।

অবশ্যই, অবশ্যই। পারিবারিকভাবে ব্যাপারটা নিয়ে অগ্রসর হতে বলি?

ধারাবাহিকভাবে ‘সংবাদ’-এ প্রকাশিত হচ্ছে আবুল কাসেম রচিত উপন্যাস “শিকিবু”। একাদশ শতকের জাপানের গৌরবময় সাহিত্য-সমৃদ্ধি পটভূমিতে চারজন বিখ্যাত নারী কবি ও ঔপন্যাসিকদের নিয়ে লেখা এই উপন্যাস। বিশ্বসাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক মুরাসাকি সিকিবু আছেন এর কেন্দ্রে। আরও আছেন কবি আকাঝুমি ইমন, কবি ইঝোমি সিকিবু এবং বিখ্যাত “দ্য পিলুবুক” রচয়িতা সেইসোনাগান।

এবারেও কিছু না বলে মুরাসাকি হাসলো।

নোবুতাকা উঠে চলে গেলেন।

এ সময় আকাঝোমি ইমন এসে উপস্থিত হলেন। বললেন, তোমার অনুপস্থিতি আমাকে বেশ শূন্যতায় ফেলে দিয়েছে। কারো সঙ্গে কথা বলি, সে রকম কেউ নেই।

মুরাসাকি দুষ্টুমি করে বলল, কেন? কনফুসিয়ান স্কলার কি আপনার কথা শুনবেন না বলেছেন।

ধ্যাৎ, তাকে সব কথা বলতে যাবো কেন?

কী কথা?

ইঝোমি শিকিবুর কথা।

কি হয়েছে তার?

কী হয়নি তাই বলো?

মুরাসাকি হেসে দিয়ে বলল, খুব ঝামেলা হচ্ছে বুঝি?

আমি মুশকিলে পড়েছি।

কি রকম?

তাকে আমি সম্রাজ্ঞী শোশিকে বলে তাঁর দরবারে লেডি-ইন ওয়েটিং করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সেই শোনাগনকে সে জব্দ করতে পারবে।

সেই শোনাগনকে জব্দ করতে হবে কেন?

তুমি জানো না, দুই সম্রাজ্ঞীর মধ্যে কী এক অঘোষিত যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধ এখন সাহিত্যের ময়দানে।

আপনার কথা শুনে হাসি পাচ্ছে আমার।

আমি খুব কষ্টে আছি তাকাকু।

তাকে বুঝিয়ে বলুন, ওয়াকা তেমন ভালো লেখে না। তবে দরবারি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তা যথেষ্ট।

আরে আমি তাকে পাবো কোথায়?

নতুন বিয়ে হয়েছে, স্বামীকে তো একটু সময় দেবেই; স্বামীকে সে সময় দিচ্ছে না।

তাহলে?

সে সময় দিচ্ছে প্রিন্স তামেতাকাকে। তার স্বামী এ সম্পর্কের কথা জেনে গেছে। তাদের মধ্যে বনিবনা নেই।

একজন বিবাহিতা স্ত্রী সে, কিভাবে সম্ভব? আপনি জানলেন কখন?

মাত্র দু’দিন আগে।

কি বলল আপনাকে?

প্রিন্স তামেতাকাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে, সেখান থেকে সরে আসা সম্ভব নয়।

সম্রাজ্ঞী শোশি তা জানেন?

আমি ঠিক জানি না। তিনি তার ওপর তো বটেই, আমার ওপরও ক্ষেপে আছেন।

বোধহয় তার লেডি-ইন-ওয়েটিং থাকতে চাইছে না।

সম্রাট কবিতা শুনতে চাইছেন। সকল সম্রাজ্ঞীরা থাকবেন। সকলের আগ্রহটা সেই শোনাগনের দিকে। তাতে সম্রাজ্ঞী তেইশির গুরুত্ব বেড়ে যাবে। সম্রাজ্ঞী শোশি এ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছেন।

ইঝোমিকে এ কথা বলেননি?

বলেছি। সে বলেছে কবিতা লেখার তার সময় নেই, সে খুব ব্যস্ত আছে।

সে একথা বলতে পারলো? সম্রাট, সম্রাজ্ঞী, যুবরাজ এবং দরবারের অমাত্য-আমলাদের সামনে কবিতা পাঠের মতো এত বড় সুযোগকে পায়ে ঠেলে দিল? মনে হয় তার মতিভ্রম হয়েছে।

আসলেই কবি ইঝোমি শিকিবু প্রিন্স তামেতাকার প্রেমে পাগল হয়ে গেছে এখন সবার চোখের সামনে দিয়েই পরকীয়ায় যান। কাউকে পরোয়া করেন না। প্রিন্সের কক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন। অদ্ভুত এক অনুরাগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন প্রিন্সের চোখে চোখ রেখে। অকাতরে বিলিয়ে দেন নিজেকে প্রিন্সের আহ্বানে।

প্রিন্স বলেন, এতদিন কোথায় ছিলে আমার প্রিয়া, প্রিয়তমা? তোমাকে পেয়ে আমি জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছি, তোমার প্রেম আমাকে স্বর্গীয় সুধা এনে দিয়েছে। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।

একথা শুনে ইঝোমি শক্তভাবে জড়িয়ে ধরেন প্রিন্সকে।

প্রিন্স বললেন, এভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকো অনন্তকাল। আমি তোমাকে যেতে দেব না।

আমি তো যেতে চাই না, আমার প্রাণ। সম্রাজ্ঞী শোশি আমাকে তার আশপাশে রাখতে চাইছেন। সম্রাট নাকি কবিতা শুনবেন। সম্রাজ্ঞী তেইশির লেডি-ইন-ওয়েটিং শোনাগানের চাইতে ভালো কবিতা শোনাতে হবে। তাকে হারাতে হবে, শোশিরে মুখ উজ্জ্বল করতে হবে সবার কাছে।

তুমি কি বললে?

আমি বলেছি আমার সময় নেই। আমার সকল কবিতা, সকল ভালোবাসা আপনার জন্য প্রিন্স, আর কারো জন্য নয়। সম্রাজ্ঞী শোশির দরবারে আর যাব না আমি।

না, যাবে না। তুমি শুধু আমার হয়েই থাকবে।

সকাল যায়, দুপুর যায়, বিকাল যায়, সন্ধ্যা নামে এবং রাত গভীর হয়ে আসে, এরা গভীর থেকে গভীর প্রেমে মত্ত হন। রাগ অনুরাগের নানা মুহূর্তগুলো উপভোগ করেন। প্রথমে কামাসক্তি কাছে টানলেও এখন প্রেম হৃদয় দিয়ে তাদের শাসন করছে। তাই লোকলজ্জার ভয়, সব কিছুকেই অতিক্রম করে গেছেন ইঝোমি। কে কি বলছে, তা কানেই তুলছেন না। স্বামী-সংসারকে অর্থহীন ভাবছেন। প্রিন্স তামেতাকার মধ্যে নিজের ভাগ্যকে খুঁজছেন।

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২১ শাওয়াল ১৪৪২

ধারাবাহিক উপন্যাস : ছয়

শিকিবু

আবুল কাসেম

image

(পূর্ব প্রকাশের পর)

দশ.

তামেতোকি পুত্র-কন্যাকে নিয়ে কিয়োটোর টেরামাচি লেনের নিজের বাড়িতে উঠলেন। ভ্রমণক্লান্তি নিয়ে মুরাসাকি এখানে পৌঁছে এক ধরনের স্বস্তিবোধ করল। ইচিঝেন ভালো লেগে গিয়েছিল। তারপরও এই বাড়িটাকেই মনে হল মধুর বাসস্থান (সুইট হোম)।

তাদের আসার সংবাদ পেয়ে পারিবারিক বন্ধুরা এলো। আর এলেন মাসামুনে। মাসামুনে ইঝোমি শিকিবুর বাবা। মাসামুনে এবং তামেতোকিকে গভীরভাবে ভাবাচ্ছে সেনাপতির মৃত্যু। মাসামুনে বললেন, এতটা শক্ত ব্যবস্থা নেবেন ভাবতে পারিনি। কেন সম্রাট তার ওপর এত ক্ষুব্ধ হলেন।’

একই প্রশ্ন আমারও। বললেন তামেতোকি। আমি পৌঁছবার আগেই আদেশ কার্যকর হয়ে গেছে। শুনলাম প্রথামাফিক মস্তকটাও সম্রাটের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে।

সামুরাই সেনাপতি আরো আছে। কিন্তু সে এতটা বেড়ে গেল কেন? ওখানে প্রতিক্রিয়া কি?

একটা থমথমে অবস্থা। আমি ভারপ্রাপ্ত সেনাপতিকে ডেকেছিলাম। কথায় মনে হলো তাকে তারা পছন্দ করতো না।

তাদের জন্য এটা একটা শিক্ষা হলো। বেসামরিক প্রশাসনকে অতিক্রম করে যাওয়ার ভুল উচ্চাভিলাষ এখন স্তিমিত হবে।

বিপরীতটাও হতে পারে।

কি রকম?

সামুরাই সৈন্যরা আগের চাইতে সংঘবদ্ধ। এরা এটা মনে রাখবে। সামরিক গুরুত্ব কমে যাক সামুরাই সেনারা তা চাইবে না। চাইকি একটা প্রতিশোধ স্পৃহাও জাগতে পারে। সম্রাট নিশ্চয়ই জানেন সামরিক শক্তির প্রাধান্যের জন্য সাম্রাজ্য এবং সমাজ নিয়ন্ত্রণে বুশিদো মতাদর্শ আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

মনে হয় ঠিকই বলছেন। বুশিদো বিজয়ীর পথ হলেও সে পথ ভুলে তার অনুসারীরা শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় নেমে গেছে।

শুধু কি তাই? ধর্মীয় সংস্কৃতিতেও হস্তক্ষেপ করছে।

উৎসব-অনুষ্ঠানে নাক গলাচ্ছে। সম্রাটের উচিত তাদের যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা।

এ নিয়ে কথা না বলাই ভালো।

তা ঠিক। মেয়ের বিয়ের কতদূর?

তাদের সাক্ষাতের পর বুঝা যাবে।

সে ব্যবস্থাই করুন। সম্রাটের দরবারে গেলে সাক্ষাৎ হবে নিশ্চয়ই।

আপনার বাড়িতেও যেতে পারি।

তা হলে তো অনেক ভালো হয়।

মাসামুনে চলে গেলে তামেতোকি তাদের কিয়োটোতে আসার সংবাদ উৎসব এবং অনুষ্ঠান বিভাগে পাঠালেন। তার অর্থ নোবুতাকার জানা যে মুরাসাকি এখন কিয়োটোতে।

সংবাদ পেয়েছেন নোবুতাকা। সমস্যা হচ্ছে এই স্মার্ট মানুষটি প্রচলিত হেইয়ান বিবাহরীতির মধ্য দিয়ে যেতে চান না। মুরাসাকির সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা বললেনও তিনি।

মুরাসাকি বলল, রীতিটা আমার পছন্দ এবং শিন্টু শ্রাইনে প্রচলিত নিয়মরীতি অনুসরণ করে আমাদের বিয়ে হবে।

গোপন সাক্ষাৎ এবং কবিতাপত্র লেখা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছি তো?

গোপন সাক্ষাৎ এবং কবিতা ভীতি কেন?

তোমাকে আমি আগে থেকেই চিনি। তুমি স্বনামধন্য কবি। আমি তো তা নই। তাই দু’কাজে অব্যাহতি চাইছি। পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে এটুকু দয়া পেতে পারি নিশ্চয়।

নোবুতাকার কথা শুনে মুরাসাকি হাসলো এবং বলল, শিন্টু শ্রাইনে যেতেই হবে। তাতে কোনো ক্ষমা নেই।

অবশ্যই, অবশ্যই। পারিবারিকভাবে ব্যাপারটা নিয়ে অগ্রসর হতে বলি?

ধারাবাহিকভাবে ‘সংবাদ’-এ প্রকাশিত হচ্ছে আবুল কাসেম রচিত উপন্যাস “শিকিবু”। একাদশ শতকের জাপানের গৌরবময় সাহিত্য-সমৃদ্ধি পটভূমিতে চারজন বিখ্যাত নারী কবি ও ঔপন্যাসিকদের নিয়ে লেখা এই উপন্যাস। বিশ্বসাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক মুরাসাকি সিকিবু আছেন এর কেন্দ্রে। আরও আছেন কবি আকাঝুমি ইমন, কবি ইঝোমি সিকিবু এবং বিখ্যাত “দ্য পিলুবুক” রচয়িতা সেইসোনাগান।

এবারেও কিছু না বলে মুরাসাকি হাসলো।

নোবুতাকা উঠে চলে গেলেন।

এ সময় আকাঝোমি ইমন এসে উপস্থিত হলেন। বললেন, তোমার অনুপস্থিতি আমাকে বেশ শূন্যতায় ফেলে দিয়েছে। কারো সঙ্গে কথা বলি, সে রকম কেউ নেই।

মুরাসাকি দুষ্টুমি করে বলল, কেন? কনফুসিয়ান স্কলার কি আপনার কথা শুনবেন না বলেছেন।

ধ্যাৎ, তাকে সব কথা বলতে যাবো কেন?

কী কথা?

ইঝোমি শিকিবুর কথা।

কি হয়েছে তার?

কী হয়নি তাই বলো?

মুরাসাকি হেসে দিয়ে বলল, খুব ঝামেলা হচ্ছে বুঝি?

আমি মুশকিলে পড়েছি।

কি রকম?

তাকে আমি সম্রাজ্ঞী শোশিকে বলে তাঁর দরবারে লেডি-ইন ওয়েটিং করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সেই শোনাগনকে সে জব্দ করতে পারবে।

সেই শোনাগনকে জব্দ করতে হবে কেন?

তুমি জানো না, দুই সম্রাজ্ঞীর মধ্যে কী এক অঘোষিত যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধ এখন সাহিত্যের ময়দানে।

আপনার কথা শুনে হাসি পাচ্ছে আমার।

আমি খুব কষ্টে আছি তাকাকু।

তাকে বুঝিয়ে বলুন, ওয়াকা তেমন ভালো লেখে না। তবে দরবারি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তা যথেষ্ট।

আরে আমি তাকে পাবো কোথায়?

নতুন বিয়ে হয়েছে, স্বামীকে তো একটু সময় দেবেই; স্বামীকে সে সময় দিচ্ছে না।

তাহলে?

সে সময় দিচ্ছে প্রিন্স তামেতাকাকে। তার স্বামী এ সম্পর্কের কথা জেনে গেছে। তাদের মধ্যে বনিবনা নেই।

একজন বিবাহিতা স্ত্রী সে, কিভাবে সম্ভব? আপনি জানলেন কখন?

মাত্র দু’দিন আগে।

কি বলল আপনাকে?

প্রিন্স তামেতাকাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে, সেখান থেকে সরে আসা সম্ভব নয়।

সম্রাজ্ঞী শোশি তা জানেন?

আমি ঠিক জানি না। তিনি তার ওপর তো বটেই, আমার ওপরও ক্ষেপে আছেন।

বোধহয় তার লেডি-ইন-ওয়েটিং থাকতে চাইছে না।

সম্রাট কবিতা শুনতে চাইছেন। সকল সম্রাজ্ঞীরা থাকবেন। সকলের আগ্রহটা সেই শোনাগনের দিকে। তাতে সম্রাজ্ঞী তেইশির গুরুত্ব বেড়ে যাবে। সম্রাজ্ঞী শোশি এ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছেন।

ইঝোমিকে এ কথা বলেননি?

বলেছি। সে বলেছে কবিতা লেখার তার সময় নেই, সে খুব ব্যস্ত আছে।

সে একথা বলতে পারলো? সম্রাট, সম্রাজ্ঞী, যুবরাজ এবং দরবারের অমাত্য-আমলাদের সামনে কবিতা পাঠের মতো এত বড় সুযোগকে পায়ে ঠেলে দিল? মনে হয় তার মতিভ্রম হয়েছে।

আসলেই কবি ইঝোমি শিকিবু প্রিন্স তামেতাকার প্রেমে পাগল হয়ে গেছে এখন সবার চোখের সামনে দিয়েই পরকীয়ায় যান। কাউকে পরোয়া করেন না। প্রিন্সের কক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন। অদ্ভুত এক অনুরাগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন প্রিন্সের চোখে চোখ রেখে। অকাতরে বিলিয়ে দেন নিজেকে প্রিন্সের আহ্বানে।

প্রিন্স বলেন, এতদিন কোথায় ছিলে আমার প্রিয়া, প্রিয়তমা? তোমাকে পেয়ে আমি জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছি, তোমার প্রেম আমাকে স্বর্গীয় সুধা এনে দিয়েছে। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।

একথা শুনে ইঝোমি শক্তভাবে জড়িয়ে ধরেন প্রিন্সকে।

প্রিন্স বললেন, এভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকো অনন্তকাল। আমি তোমাকে যেতে দেব না।

আমি তো যেতে চাই না, আমার প্রাণ। সম্রাজ্ঞী শোশি আমাকে তার আশপাশে রাখতে চাইছেন। সম্রাট নাকি কবিতা শুনবেন। সম্রাজ্ঞী তেইশির লেডি-ইন-ওয়েটিং শোনাগানের চাইতে ভালো কবিতা শোনাতে হবে। তাকে হারাতে হবে, শোশিরে মুখ উজ্জ্বল করতে হবে সবার কাছে।

তুমি কি বললে?

আমি বলেছি আমার সময় নেই। আমার সকল কবিতা, সকল ভালোবাসা আপনার জন্য প্রিন্স, আর কারো জন্য নয়। সম্রাজ্ঞী শোশির দরবারে আর যাব না আমি।

না, যাবে না। তুমি শুধু আমার হয়েই থাকবে।

সকাল যায়, দুপুর যায়, বিকাল যায়, সন্ধ্যা নামে এবং রাত গভীর হয়ে আসে, এরা গভীর থেকে গভীর প্রেমে মত্ত হন। রাগ অনুরাগের নানা মুহূর্তগুলো উপভোগ করেন। প্রথমে কামাসক্তি কাছে টানলেও এখন প্রেম হৃদয় দিয়ে তাদের শাসন করছে। তাই লোকলজ্জার ভয়, সব কিছুকেই অতিক্রম করে গেছেন ইঝোমি। কে কি বলছে, তা কানেই তুলছেন না। স্বামী-সংসারকে অর্থহীন ভাবছেন। প্রিন্স তামেতাকার মধ্যে নিজের ভাগ্যকে খুঁজছেন।