সীমান্ত জেলায়

মানুষকে ঘরে রাখার সুপারিশ পরামর্শক কমিটির

দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি। তারা বলেছে, এ পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে চাপ পড়বে তা সামাল দেয়া কঠিন হবে।

ভারতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে এ কমিটি আগাম কিছু প্রস্তুতির সুপারিশ করেছে। তবে তারা বলেছে, সবচেয়ে জরুরি ওই এলাকায় মানুষকে ঘরে রাখা, সামাজিক মেলামেশার সুযোগ বন্ধ করা।

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গত ৩০ ও ৩১ মে জুম মিটিংয়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে তারা সংক্রমণ ঠেকাতে ৬ দফা সুপারিশ গ্রহণ করেছে।

কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়। কোভিড-১৯সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের সার্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাট এলাকাতে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সংক্রমণ প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। এতে জনপ্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

পরামর্শক কমিটির সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. দেশব্যাপী জারি করা বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। (ক) সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা। (খ) রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা। (গ) সকল প্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা। (ঘ) পর্যটন স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা।

২. সংক্রমণের উচ্চহার বিবেচনায় সীমান্ত এলাকাসমূহ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। (ক) সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়া। (খ) জরুরি সেবায় নিয়োজিত ছাড়া সকল জনগণের বাড়িতে থাকার আদেশ দেয়া। (গ) সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা ও টহলের পরিমাণ বাড়ানো দরকার। (ঘ) তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কার্যক্রম গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতা অর্পণ করা।

৩. সীমান্তবর্তী জেলাসহ উচ্চ সংক্রমিত এলাকা থেকে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করা দরকার।

৪. জেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিধিনিষেধ পালনে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে কঠোর মনিটরিং জোরদার করা দরকার। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় দূরীকরণের আইন সংশোধন করা যেতে পারে।

৬. সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধের প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করা।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্পর্কে পরামর্শক কমিটি বলেছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ নতুন নয়। এ সংক্রমণ আগেও দেখা গেছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রমণ দেখা যেতে পারে। পরামর্শক কমিটি ১. কোভিড-১৯ চিকিৎসা গাইডলাইনে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্তকরণ ২. দরকারি ওষুধের মজুদ সংরক্ষণ ও ৩ স্টেরয়েডের যৌক্তিক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া। ভারতের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ দেশেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন ব্যবহারের দরকার হতে পারে।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জুম সভায় সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নিয়ে অহেতুক ভয় পাবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগ প্রতিরোধ যোগ্য। এ রোগ হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আবশ্যক। সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এজন্য ছত্রাকবিরোধী ওষুধ বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রাগ জরুরি প্রয়োগ করতে হবে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে হবে। দরকার হলে আক্রান্ত অঙ্গে সার্জারি করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২১ শাওয়াল ১৪৪২

সীমান্ত জেলায়

মানুষকে ঘরে রাখার সুপারিশ পরামর্শক কমিটির

বাকী বিল্লাহ

image

দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি। তারা বলেছে, এ পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে চাপ পড়বে তা সামাল দেয়া কঠিন হবে।

ভারতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে এ কমিটি আগাম কিছু প্রস্তুতির সুপারিশ করেছে। তবে তারা বলেছে, সবচেয়ে জরুরি ওই এলাকায় মানুষকে ঘরে রাখা, সামাজিক মেলামেশার সুযোগ বন্ধ করা।

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গত ৩০ ও ৩১ মে জুম মিটিংয়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে তারা সংক্রমণ ঠেকাতে ৬ দফা সুপারিশ গ্রহণ করেছে।

কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়। কোভিড-১৯সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের সার্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাট এলাকাতে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সংক্রমণ প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। এতে জনপ্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

পরামর্শক কমিটির সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. দেশব্যাপী জারি করা বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। (ক) সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা। (খ) রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা। (গ) সকল প্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা। (ঘ) পর্যটন স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা।

২. সংক্রমণের উচ্চহার বিবেচনায় সীমান্ত এলাকাসমূহ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। (ক) সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়া। (খ) জরুরি সেবায় নিয়োজিত ছাড়া সকল জনগণের বাড়িতে থাকার আদেশ দেয়া। (গ) সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা ও টহলের পরিমাণ বাড়ানো দরকার। (ঘ) তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কার্যক্রম গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতা অর্পণ করা।

৩. সীমান্তবর্তী জেলাসহ উচ্চ সংক্রমিত এলাকা থেকে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করা দরকার।

৪. জেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিধিনিষেধ পালনে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে কঠোর মনিটরিং জোরদার করা দরকার। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় দূরীকরণের আইন সংশোধন করা যেতে পারে।

৬. সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধের প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করা।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্পর্কে পরামর্শক কমিটি বলেছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ নতুন নয়। এ সংক্রমণ আগেও দেখা গেছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রমণ দেখা যেতে পারে। পরামর্শক কমিটি ১. কোভিড-১৯ চিকিৎসা গাইডলাইনে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্তকরণ ২. দরকারি ওষুধের মজুদ সংরক্ষণ ও ৩ স্টেরয়েডের যৌক্তিক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া। ভারতের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ দেশেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন ব্যবহারের দরকার হতে পারে।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জুম সভায় সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নিয়ে অহেতুক ভয় পাবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগ প্রতিরোধ যোগ্য। এ রোগ হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আবশ্যক। সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এজন্য ছত্রাকবিরোধী ওষুধ বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রাগ জরুরি প্রয়োগ করতে হবে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে হবে। দরকার হলে আক্রান্ত অঙ্গে সার্জারি করতে হবে।