বৃষ্টি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রেকর্ড বৃষ্টি ১০০ মি.মিটার

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী ৯-১১ জুন সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল ১০০ মিলিমিটার দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। ঢাকায় গতকাল থেকে ১৬ মিলিমিটারের বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মীর মো. শহীদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগসহ কিছু এলাকায় মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছে। তাই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই-একদিনের মধ্যে যা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া বৈশি্বক জলবায়ুর প্রভাবে এবার বর্ষা ভারতীসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হবে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নাল। গত শুক্রবার একটি গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, গত ১০ লাখ বছরে জলবায়ু কীভাবে বদলেছে, সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এ গবেষণায় ধারণা দিতে চেয়েছেনÑ কেমন হতে পারে আগামী দিনের বর্ষাকাল। ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মোটামুটি জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বর্ষাকাল ধরা হয়। এ সময় মৌসুমি বায়ু যে বিপুল বৃষ্টি নিয়ে আসে তা এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বৃষ্টি পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশ মানুষের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। সময়মতো বৃষ্টি যেমন ফসল উৎপাদন বাড়ায়, তেমনি আবার অসময়ের অতিবর্ষণ ফসল ধ্বংসও করে। অতিবৃষ্টি নিয়ে আসে বন্যা, কেড়ে নেয় প্রাণ, ধ্বংস করে লোকালয়, ছড়িয়ে দেয় দূষণ।

নতুন এই গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বর্ষার এই মেজাজ বদলে পুরো অঞ্চলের চেহারা আর ইতিহাসই বদলে যেতে পারে। এ গবেষণার জন্য ১০ লাখ বছরের জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য বিজ্ঞানীরা কীভাবে পেলেন? না, টাইম মেশিন তাদের নেই। তারা কাজ করেছেন কাদা নিয়ে। প্রতি বর্ষায় পুরো ভারতবর্ষ ধুয়ে বিপুল পলি নিয়ে বৃষ্টির পানি পৌঁছায় বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরে। সাগরের ভূ-স্তর খনন করে বিজ্ঞানীরা সেই নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

এ কাজে পৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার গভীর পর্যন্ত মাটির নমুনা নেয়া হয়েছে, যাতে প্রতি বর্ষায় জমা নতুন স্তরগুলো থেকে বৃষ্টিপাত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যে বছর বৃষ্টি বেশি হয়, সাগরে স্বাদু পানির জোগান বাড়ে, উপরিভাগের লবণাক্ততা কমে আসে। তাতে সাগরের উপরিতলে থাকা অনেক ক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবের মৃত্যু হয়, সেসব দেহাবশেষ জমা হয় মাটির স্তরের সঙ্গে। এভাবে প্রতিবছর পরতের পর পরত জমে সাগরতলের ভূ-স্তরে গ্রন্থিত হয় ইতিহাস। মাটির নমুনা সংগ্রহ করার পর বিজ্ঞানীরা সেসব মৃত প্লাঙ্কটনের ফসিল পরীক্ষা করে অক্সিজেন আইসোটোপ বিশ্লেষণ করেছেন। তাতে ওই সময়ের পানির লবণাক্ততার পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে।

দেখা গেছে, বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি, বরফ স্তর কমে আসার পর মৌসুমি বায়ুতে আর্দ্রতা বাড়তে শুরু করে এবং তারপর আসে সেই অতি বৃষ্টি আর সাগরের পানিতে লবণাক্ততা কমে আসার পর্ব। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কর্মকাণ্ড বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ যেভাবে বাড়িয়ে চলেছে, তাতে মৌসুমি বায়ুতে সেরকম আরেকটি পরিবর্তন আসন্ন। এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির আর্থ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের অধ্যাপক স্টিভেন ক্লেমেন্স।

তিনি বলেন, ‘গত ১০ লাখ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যায়। ফলে জলবায়ু মডেলগুলোর যে পূর্বাভাস আমরা এতদিন পেয়ে আসছি, তার সঙ্গে লাখো বছরের প্রবণতা দারুণভাবে মিলে যাচ্ছে।’

সোমবার, ০৭ জুন ২০২১ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৫ শাওয়াল ১৪৪২

বৃষ্টি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রেকর্ড বৃষ্টি ১০০ মি.মিটার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী ৯-১১ জুন সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল ১০০ মিলিমিটার দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। ঢাকায় গতকাল থেকে ১৬ মিলিমিটারের বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মীর মো. শহীদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগসহ কিছু এলাকায় মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছে। তাই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই-একদিনের মধ্যে যা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া বৈশি্বক জলবায়ুর প্রভাবে এবার বর্ষা ভারতীসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হবে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নাল। গত শুক্রবার একটি গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, গত ১০ লাখ বছরে জলবায়ু কীভাবে বদলেছে, সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এ গবেষণায় ধারণা দিতে চেয়েছেনÑ কেমন হতে পারে আগামী দিনের বর্ষাকাল। ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মোটামুটি জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বর্ষাকাল ধরা হয়। এ সময় মৌসুমি বায়ু যে বিপুল বৃষ্টি নিয়ে আসে তা এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বৃষ্টি পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশ মানুষের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। সময়মতো বৃষ্টি যেমন ফসল উৎপাদন বাড়ায়, তেমনি আবার অসময়ের অতিবর্ষণ ফসল ধ্বংসও করে। অতিবৃষ্টি নিয়ে আসে বন্যা, কেড়ে নেয় প্রাণ, ধ্বংস করে লোকালয়, ছড়িয়ে দেয় দূষণ।

নতুন এই গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বর্ষার এই মেজাজ বদলে পুরো অঞ্চলের চেহারা আর ইতিহাসই বদলে যেতে পারে। এ গবেষণার জন্য ১০ লাখ বছরের জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য বিজ্ঞানীরা কীভাবে পেলেন? না, টাইম মেশিন তাদের নেই। তারা কাজ করেছেন কাদা নিয়ে। প্রতি বর্ষায় পুরো ভারতবর্ষ ধুয়ে বিপুল পলি নিয়ে বৃষ্টির পানি পৌঁছায় বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরে। সাগরের ভূ-স্তর খনন করে বিজ্ঞানীরা সেই নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

এ কাজে পৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার গভীর পর্যন্ত মাটির নমুনা নেয়া হয়েছে, যাতে প্রতি বর্ষায় জমা নতুন স্তরগুলো থেকে বৃষ্টিপাত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যে বছর বৃষ্টি বেশি হয়, সাগরে স্বাদু পানির জোগান বাড়ে, উপরিভাগের লবণাক্ততা কমে আসে। তাতে সাগরের উপরিতলে থাকা অনেক ক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবের মৃত্যু হয়, সেসব দেহাবশেষ জমা হয় মাটির স্তরের সঙ্গে। এভাবে প্রতিবছর পরতের পর পরত জমে সাগরতলের ভূ-স্তরে গ্রন্থিত হয় ইতিহাস। মাটির নমুনা সংগ্রহ করার পর বিজ্ঞানীরা সেসব মৃত প্লাঙ্কটনের ফসিল পরীক্ষা করে অক্সিজেন আইসোটোপ বিশ্লেষণ করেছেন। তাতে ওই সময়ের পানির লবণাক্ততার পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে।

দেখা গেছে, বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি, বরফ স্তর কমে আসার পর মৌসুমি বায়ুতে আর্দ্রতা বাড়তে শুরু করে এবং তারপর আসে সেই অতি বৃষ্টি আর সাগরের পানিতে লবণাক্ততা কমে আসার পর্ব। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কর্মকাণ্ড বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ যেভাবে বাড়িয়ে চলেছে, তাতে মৌসুমি বায়ুতে সেরকম আরেকটি পরিবর্তন আসন্ন। এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির আর্থ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের অধ্যাপক স্টিভেন ক্লেমেন্স।

তিনি বলেন, ‘গত ১০ লাখ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যায়। ফলে জলবায়ু মডেলগুলোর যে পূর্বাভাস আমরা এতদিন পেয়ে আসছি, তার সঙ্গে লাখো বছরের প্রবণতা দারুণভাবে মিলে যাচ্ছে।’