সংক্রমণ বেড়েই চলেছে

একদিনেই শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি বিধিনিষেধ আরেক দফা এক মাস বাড়লো

ঢাকায় একদিনেই রোগী ও শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। গত একদিনে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) কোভিড-১৯ রোগী বেড়েছে ৫৮৫ জন। এই সময়ে ঢাকার পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।

তবে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলায় সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু বেড়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে তিন হাজার ৯৫৬ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরেক দফা একমাস বাড়িয়েছে সরকার। সর্বশেষ সিন্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলমান শর্তযুক্ত বিধি-নিষেধ বহাল থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ৬০ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৩১ জন রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এই দুই বিভাগের বেশির ভাগ জেলা সীমান্তবর্তী।

ঢাকা জেলায় (মহানগর সহ) গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দশ হাজার ৭৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ১৩৫ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আগের এই জেলায় ৫৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

ঢাকায় ২৪ ঘন্টায় সংক্রমনের হার ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ হিসেবে একদিনে ঢাকায় শনাক্তের হার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

জানতে চাইলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও খ্যাতিমান রোগতত্ত্ববিদ প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে গতকাল বলেছেন, ‘সংক্রমণ পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। সীমান্ত জেলার সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। সেখান থেকে সংক্রমণ ভেতরে ঢুকেছে... এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

চলমান ‘লকডাউন’ কার্যকর হয়নি- দাবি করে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করলেই লকডাউন হয় না; স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকা-ও থাকতে হয়। গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণ করা যাইনি। আমরা দেখছি, রোগী বাড়ছে; কিন্তু টেস্টিং, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন কোনকিছুই ঠিকমতো হচ্ছে না।’ নামমাত্র লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না বলে মনে করেন প্রবীণ এই ভাইরোলজিস্ট।

ঢাকা ছাড়া অন্যান্য জেলার মধ্যে গত একদিনে রাজশাহী ৩৪৩ জন, যশোরে ২০৪ জন, খুলনায় ২২২ জন, নাটোরে ১২০ জন, নওগাঁয় ১২৫ জন এবং চট্টগ্রামে ১০৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

রাজধানীর আশপাশের জেলার মধ্যে গত একদিনে ফরিদপুরে ৮৯ জন, গাজীপুরে ৫৯ জন, গোপালগঞ্জে ৪১ জন, কিশোরগঞ্জে ২৪ জন, মাদারীপুরে ২৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৪ জন, নরসিংদীতে ১৪ জন, রাজবাড়ীতে ৫৯ জন, টাঙ্গাইলে ৯৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

একদিনে ৮ সপ্তাহের মধ্যে

সর্বোচ্চ শনাক্ত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশে তিন হাজার ৯৫৬ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা প্রায় আট সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এর আগে ২৪ ঘণ্টায় এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় গত ২২ এপ্রিল; ওইদিন চার হাজার ১৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত একদিনে রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো আট লাখ ৩৭ হাজার ২৪৭ জনে।

প্রায় দেড় মাস পর গত একদিনে সর্বোচ্চ (৬০ জন)-এর মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এর আগে একদিনে এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত ৪ মে। ওইদিন করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৬১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ২৮২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

একদিনে দুই হাজার ৬৭৯ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়ালো সাত লাখ ৭৩ হাজার ৭৫২ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় মোট সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১৩টি ল্যাবে ২৩ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬২ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬টি। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ জন রাজশাহী বিভাগের এবং ১৪ জন ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা।

অন্যদের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন করে, সিলেট বিভাগে ৬ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন ৩ জন।

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৩৬ জন এবং নারী ২৪ জন। তাদের ৪৬ জন সরকারি হাসপাতালে, ৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং বাসায় মারা যান ৫ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত্যু হওয়া ৬০ জনের মধ্যে ২৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১ জনের ২১ থেকে ৩০ বছর এবং ৩ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

বিভাগভিত্তিক শনাক্তে শীর্ষে ঢাকা

বিভাগওয়ারি হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় গত একদিনে এক হাজার ৫৭৯ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; যা দেশের মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশ। আগের দিন এই বিভাগে শনাক্ত হয়েছিল ৯০৭ জন। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে গত একদিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় গতকাল ৮১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের এই বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭১২ জন। রাজশাহী বিভাগে শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৮১৮ জন রোগী; যা আগের দিন ৮০০ জন ছিল। খুলনা বিভাগে গত একদিনে সংক্রমণের হার ছিল ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অন্যান্য বিভাগের মধ্যে গত একদিনে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ৩৬৮ জন, ময়মনসিংহের ৪ জেলায় ৭৮ জন, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ১৮৫ জন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪৭ জন এবং সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৬৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

‘লকডাউন’ বাড়ল একমাস

সংক্রমণ রোধে সরকার আগামী এক মাসের বিধিনিষেধ বা ‘লকডাউনে’ সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এতে বলা হয়, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা থাকবে।

গত মার্চের শুরুতে দেশে করোনা সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ শুরু হয়। এরপর গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়।

দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয় আর ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন অফিস বন্ধ (সাধারণ ছুটি) থাকে।

সাতক্ষীরায় আক্রান্তের হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ

সাতক্ষীরা : জেলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে তিনজন ও বুশরা হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এনিয়ে জেলায় উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৫১ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০০ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। যার শতকরা হার ৫৩.১৯ শতাংশ। এর আগের দিন শনাক্তের হার ছিল শতকরা ৪৮ ভাগ। তার আগের দিন সংক্রমণের হার ছিল ৪৭ ভাগ। আজ পর্যন্ত জেলায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫১১ জন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও ছয়টি ক্লিনিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে ২৪৩ জন। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৪৩ জন রোগী।

জেলা প্রশাসনের ঘোষিত দ্বিতীয় দফা লকডাউনের ৫ম দিনে রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক। হাটবাজারগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। তবে, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। দোকানপাট অধিকাংশ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন।

যশোরের ‘লকডাউন’ বাড়লো

আরও ৭ দিন : বেড়েছে আওতা

যশোর অফিস

নতুন বিধিনিষেধ জারি করে যশোরের ‘লকডাউন’ আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে আরও বেশ কয়েকটি এলাকাও এই লকডাউনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। দ্বিতীয় দফার এই লকডাউন ১৬ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত চলবে।

সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জেলা সদরের চাঁচড়া, উপশহর, আরবপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ঝিকগাছা ও নওয়াপাড়া পৌরসভা, শার্শা উপজেলার শার্শা ইউনিয়ন এবং বেনাপোল বাজার লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।

খুলনায় রেকর্ড শনাক্ত

খুলনা : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ২২২ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। বিভাগে একদিনে করোনা শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগে করোনার সংক্রমণের পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে মঙ্গলবার একদিনে ৮০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

বুধবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ১০ জেলায় আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ২৭৭টি, র?্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে ৭০৩টি এবং জিন এক্সপার্ট পদ্ধতিতে ৪৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

এই তিন পদ্ধতিতে মোট ২ হাজার ২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮১৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ সময়ে আগের দিনের চেয়ে ৬৬টি নমুনা বেশি পরীক্ষা হয়েছে। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৪০ দশমিক ৮২ শতাংশ।

দিনাজপুরে লকডাউন মানছে না সাধারণ মানুষ

শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ

দিনাজপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে ১৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৭৬ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। আর এদের মধ্যে ৬০ জনই সদরের। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জেলায় মোট আক্রান্ত ৬ হাজার ৪৪৩ জন। সদরেই আক্রান্ত মোট ৩ হাজার ৬৮৪ জন। আর জেলায় মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত ১৪৪ জনের। যার মধ্যে সদরেই ৭১ জন।

এদিকে দিনাজপুরে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো কঠোর লকডাউন চলে দিনাজপুর সদর ও হাকিমপুর উপজেলায়। যা চলবে আগামী ২১ জুন রাত ১২ পর্যন্ত। কিন্তু লকডাউনে মানুষের চলাচলের ওপর যে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মোটেও মানছে না কেউ।

image
আরও খবর
দাম প্রকাশ করায় চীন থেকে টিকা পেতে দেরি হচ্ছে
‘ত্রাণ চাই না বাঁধ চাই’, গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে সংসদে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ লাখ শিক্ষার্থী প্রমোশন পেলেন তবে শর্তসাপেক্ষে 
মুক্তি পেলেন অন্যের সাজা খাটা শিমু আক্তার
সিলেটে এক পরিবারের ৩ জনকে জবাই করে হত্যা
পরীমনিকে যেভাবে দেখা গেল বোট ক্লাবের সিসি ক্যামেরায়
অমির রিক্রুটিং এজেন্সিতে অভিযান, শতাধিক পাসপোর্ট জব্দ, গ্রেপ্তার ২
অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ পরীমনির বিরুদ্ধে
বিভিন্ন ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা লোপাটের ৫৪ মামলা, ১০টির বিচার শেষ
মামুনুলসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা
প্রতারক চক্র রাজা-বাদশাহ গ্রুপ ১৬ সদস্য গ্রেপ্তার

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ৫ জিলকদ ১৪৪২

সংক্রমণ বেড়েই চলেছে

একদিনেই শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি বিধিনিষেধ আরেক দফা এক মাস বাড়লো

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ঢাকায় একদিনেই রোগী ও শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। গত একদিনে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) কোভিড-১৯ রোগী বেড়েছে ৫৮৫ জন। এই সময়ে ঢাকার পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।

তবে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলায় সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু বেড়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে তিন হাজার ৯৫৬ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরেক দফা একমাস বাড়িয়েছে সরকার। সর্বশেষ সিন্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলমান শর্তযুক্ত বিধি-নিষেধ বহাল থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ৬০ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৩১ জন রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এই দুই বিভাগের বেশির ভাগ জেলা সীমান্তবর্তী।

ঢাকা জেলায় (মহানগর সহ) গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দশ হাজার ৭৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ১৩৫ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আগের এই জেলায় ৫৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

ঢাকায় ২৪ ঘন্টায় সংক্রমনের হার ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ হিসেবে একদিনে ঢাকায় শনাক্তের হার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

জানতে চাইলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও খ্যাতিমান রোগতত্ত্ববিদ প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে গতকাল বলেছেন, ‘সংক্রমণ পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। সীমান্ত জেলার সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। সেখান থেকে সংক্রমণ ভেতরে ঢুকেছে... এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

চলমান ‘লকডাউন’ কার্যকর হয়নি- দাবি করে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করলেই লকডাউন হয় না; স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকা-ও থাকতে হয়। গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণ করা যাইনি। আমরা দেখছি, রোগী বাড়ছে; কিন্তু টেস্টিং, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন কোনকিছুই ঠিকমতো হচ্ছে না।’ নামমাত্র লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না বলে মনে করেন প্রবীণ এই ভাইরোলজিস্ট।

ঢাকা ছাড়া অন্যান্য জেলার মধ্যে গত একদিনে রাজশাহী ৩৪৩ জন, যশোরে ২০৪ জন, খুলনায় ২২২ জন, নাটোরে ১২০ জন, নওগাঁয় ১২৫ জন এবং চট্টগ্রামে ১০৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

রাজধানীর আশপাশের জেলার মধ্যে গত একদিনে ফরিদপুরে ৮৯ জন, গাজীপুরে ৫৯ জন, গোপালগঞ্জে ৪১ জন, কিশোরগঞ্জে ২৪ জন, মাদারীপুরে ২৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৪ জন, নরসিংদীতে ১৪ জন, রাজবাড়ীতে ৫৯ জন, টাঙ্গাইলে ৯৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

একদিনে ৮ সপ্তাহের মধ্যে

সর্বোচ্চ শনাক্ত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশে তিন হাজার ৯৫৬ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা প্রায় আট সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এর আগে ২৪ ঘণ্টায় এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় গত ২২ এপ্রিল; ওইদিন চার হাজার ১৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত একদিনে রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো আট লাখ ৩৭ হাজার ২৪৭ জনে।

প্রায় দেড় মাস পর গত একদিনে সর্বোচ্চ (৬০ জন)-এর মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এর আগে একদিনে এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত ৪ মে। ওইদিন করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৬১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ২৮২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

একদিনে দুই হাজার ৬৭৯ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়ালো সাত লাখ ৭৩ হাজার ৭৫২ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় মোট সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১৩টি ল্যাবে ২৩ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬২ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬টি। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ জন রাজশাহী বিভাগের এবং ১৪ জন ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা।

অন্যদের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন করে, সিলেট বিভাগে ৬ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন ৩ জন।

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৩৬ জন এবং নারী ২৪ জন। তাদের ৪৬ জন সরকারি হাসপাতালে, ৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং বাসায় মারা যান ৫ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত্যু হওয়া ৬০ জনের মধ্যে ২৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১ জনের ২১ থেকে ৩০ বছর এবং ৩ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

বিভাগভিত্তিক শনাক্তে শীর্ষে ঢাকা

বিভাগওয়ারি হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় গত একদিনে এক হাজার ৫৭৯ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; যা দেশের মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশ। আগের দিন এই বিভাগে শনাক্ত হয়েছিল ৯০৭ জন। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে গত একদিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় গতকাল ৮১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের এই বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭১২ জন। রাজশাহী বিভাগে শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৮১৮ জন রোগী; যা আগের দিন ৮০০ জন ছিল। খুলনা বিভাগে গত একদিনে সংক্রমণের হার ছিল ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অন্যান্য বিভাগের মধ্যে গত একদিনে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ৩৬৮ জন, ময়মনসিংহের ৪ জেলায় ৭৮ জন, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ১৮৫ জন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪৭ জন এবং সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৬৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

‘লকডাউন’ বাড়ল একমাস

সংক্রমণ রোধে সরকার আগামী এক মাসের বিধিনিষেধ বা ‘লকডাউনে’ সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এতে বলা হয়, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা থাকবে।

গত মার্চের শুরুতে দেশে করোনা সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ শুরু হয়। এরপর গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়।

দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয় আর ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন অফিস বন্ধ (সাধারণ ছুটি) থাকে।

সাতক্ষীরায় আক্রান্তের হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ

সাতক্ষীরা : জেলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে তিনজন ও বুশরা হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এনিয়ে জেলায় উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৫১ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০০ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। যার শতকরা হার ৫৩.১৯ শতাংশ। এর আগের দিন শনাক্তের হার ছিল শতকরা ৪৮ ভাগ। তার আগের দিন সংক্রমণের হার ছিল ৪৭ ভাগ। আজ পর্যন্ত জেলায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫১১ জন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও ছয়টি ক্লিনিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে ২৪৩ জন। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৪৩ জন রোগী।

জেলা প্রশাসনের ঘোষিত দ্বিতীয় দফা লকডাউনের ৫ম দিনে রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক। হাটবাজারগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। তবে, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। দোকানপাট অধিকাংশ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন।

যশোরের ‘লকডাউন’ বাড়লো

আরও ৭ দিন : বেড়েছে আওতা

যশোর অফিস

নতুন বিধিনিষেধ জারি করে যশোরের ‘লকডাউন’ আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে আরও বেশ কয়েকটি এলাকাও এই লকডাউনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। দ্বিতীয় দফার এই লকডাউন ১৬ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত চলবে।

সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জেলা সদরের চাঁচড়া, উপশহর, আরবপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ঝিকগাছা ও নওয়াপাড়া পৌরসভা, শার্শা উপজেলার শার্শা ইউনিয়ন এবং বেনাপোল বাজার লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।

খুলনায় রেকর্ড শনাক্ত

খুলনা : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ২২২ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। বিভাগে একদিনে করোনা শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগে করোনার সংক্রমণের পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে মঙ্গলবার একদিনে ৮০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

বুধবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ১০ জেলায় আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ২৭৭টি, র?্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে ৭০৩টি এবং জিন এক্সপার্ট পদ্ধতিতে ৪৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

এই তিন পদ্ধতিতে মোট ২ হাজার ২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮১৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ সময়ে আগের দিনের চেয়ে ৬৬টি নমুনা বেশি পরীক্ষা হয়েছে। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৪০ দশমিক ৮২ শতাংশ।

দিনাজপুরে লকডাউন মানছে না সাধারণ মানুষ

শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ

দিনাজপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে ১৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৭৬ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। আর এদের মধ্যে ৬০ জনই সদরের। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জেলায় মোট আক্রান্ত ৬ হাজার ৪৪৩ জন। সদরেই আক্রান্ত মোট ৩ হাজার ৬৮৪ জন। আর জেলায় মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত ১৪৪ জনের। যার মধ্যে সদরেই ৭১ জন।

এদিকে দিনাজপুরে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো কঠোর লকডাউন চলে দিনাজপুর সদর ও হাকিমপুর উপজেলায়। যা চলবে আগামী ২১ জুন রাত ১২ পর্যন্ত। কিন্তু লকডাউনে মানুষের চলাচলের ওপর যে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মোটেও মানছে না কেউ।