প্রাইভেটকারে যাত্রী পরিবহনের নামে ছিনতাই

বাসায় ফিরতে বাসের জন্য কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন আরিফুল ইসলাম। তার মতো আরও কয়েকজন অপেক্ষা করছিলেন। কিছু সময়ের মধ্যে একটি প্রাইভেটকার আসে। সামনে থেকে ছুটে যান কয়েকজন। তাদের পিছু পিছু যান আরিফুল। একটি সিট পেয়ে তিনিও উঠে বসেন। তাকে মাঝখানে বসিয়ে গাড়ি সামনে যায়। কিছুদূর যেতেই দুপাশ থেকে দুজন চেপে ধরে আরিফুলকে। ফোন, নগদ টাকা ও বিকাশের পিন নম্বর নিয়ে নেয়। সব লুটে নিয়ে চোখে স্প্রে করে গাজীপুরের কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে ফেলে যায়।

গত ২০ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুড়াতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে ভুলতাগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আরিফুল। সেখান থেকে প্রাইভেটকারে যেতে গিয়ে ছিনতাইয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। শুধু কুড়াতলী বাসস্ট্যান্ডের এ ঘটনাই নয়, রাজধানীতে রাত নামলে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়ে ওঠে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী আরিফুলের খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে গত বুধবার রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চক্রের প্রধান মো. মানিক মিয়া, মো. জাকির হোসেন, আরিফ, হযরত আলী ও জাহিদ হোসেন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার যার রেজি. নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-১১-৭৪৫৭, একটি নকিয়া মোবাইল সেট, লোহার বাঁটযুক্ত একটি ছুরি, একটি সবুজ রঙের পুরাতন গামছা, একটি খাকি স্কচটেপ, লাল-কালো রঙের ইলেকট্রিক তার, কালো বাঁটযুক্ত একটি স্ক্রু ড্রাইভার, একটি লোহার তৈরি লিভার উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ভিকটিম আরিফুলের আশপাশে আরও কিছু লোক ছিল। তারাও বাসের জন্য অপেক্ষা করার অভিনয় করছিলেন। মূলত তারাও এই চক্রের সদস্য। হঠাৎ আসা একটি প্রাইভেটকারে অন্যদের সঙ্গে উঠতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন আরিফুল।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তারা ঢাকা মহানগরীর খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে ভুলতা-গাউছিয়া ও এয়ারপোর্ট থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুরে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে কৌশলে যাত্রী উঠায়। পরবর্তী সময়ে যাত্রীর গলায় ইলেকট্রিক তার পেঁচিয়ে, গামছা দিয়ে চোখ ও হাত বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে, গলায় ছুরি ধরে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে যাত্রীর সর্বস্ব লুট করে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায়। তারা ওই ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। রাইড শেয়ারের আগে সতর্ক থাকতে নগরবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন একেএম হাফিজ আক্তার।

রাজধানীর সড়কগুলো সিসিটিভির আওতায় আনতে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান হাফিজ আক্তার। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে অনেকগুলো কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। সেগুলোকে কেন্দ্র করে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। আমরা পুরো শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনতে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আগামী ১-২ বছরের মধ্যে সিসিটিভির আওতায় আনাসহ তদন্তে অন্যান্য প্রযুক্তির সুবিধা যুক্ত হবে বলে জানান তিনি।

থানা মামলা না নিলে ডিবিতে আসুন

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেছেন, অপরাধীরা রাতে ও ভোরে সক্রিয় ওয়ে ওঠে। অনেক সময় দিনের বেলা জনবহুল এলাকাতেও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু ভিকটিম থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন না। অনেকে থানায় হয়রানির স্বীকার হওয়ার কথাও বলেন। কিন্তু মামলা বা অভিযোগ না দিলে এসব অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ভিকটিমদের উদ্দেশে বলব, ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানা মামলা না নিলে ডিবির কাছে আসুন।

শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১ , ৪ আষাড় ১৪২৮ ৬ জিলকদ ১৪৪২

প্রাইভেটকারে যাত্রী পরিবহনের নামে ছিনতাই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাসায় ফিরতে বাসের জন্য কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন আরিফুল ইসলাম। তার মতো আরও কয়েকজন অপেক্ষা করছিলেন। কিছু সময়ের মধ্যে একটি প্রাইভেটকার আসে। সামনে থেকে ছুটে যান কয়েকজন। তাদের পিছু পিছু যান আরিফুল। একটি সিট পেয়ে তিনিও উঠে বসেন। তাকে মাঝখানে বসিয়ে গাড়ি সামনে যায়। কিছুদূর যেতেই দুপাশ থেকে দুজন চেপে ধরে আরিফুলকে। ফোন, নগদ টাকা ও বিকাশের পিন নম্বর নিয়ে নেয়। সব লুটে নিয়ে চোখে স্প্রে করে গাজীপুরের কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে ফেলে যায়।

গত ২০ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুড়াতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে ভুলতাগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আরিফুল। সেখান থেকে প্রাইভেটকারে যেতে গিয়ে ছিনতাইয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। শুধু কুড়াতলী বাসস্ট্যান্ডের এ ঘটনাই নয়, রাজধানীতে রাত নামলে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়ে ওঠে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী আরিফুলের খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে গত বুধবার রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চক্রের প্রধান মো. মানিক মিয়া, মো. জাকির হোসেন, আরিফ, হযরত আলী ও জাহিদ হোসেন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার যার রেজি. নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-১১-৭৪৫৭, একটি নকিয়া মোবাইল সেট, লোহার বাঁটযুক্ত একটি ছুরি, একটি সবুজ রঙের পুরাতন গামছা, একটি খাকি স্কচটেপ, লাল-কালো রঙের ইলেকট্রিক তার, কালো বাঁটযুক্ত একটি স্ক্রু ড্রাইভার, একটি লোহার তৈরি লিভার উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ভিকটিম আরিফুলের আশপাশে আরও কিছু লোক ছিল। তারাও বাসের জন্য অপেক্ষা করার অভিনয় করছিলেন। মূলত তারাও এই চক্রের সদস্য। হঠাৎ আসা একটি প্রাইভেটকারে অন্যদের সঙ্গে উঠতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন আরিফুল।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তারা ঢাকা মহানগরীর খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে ভুলতা-গাউছিয়া ও এয়ারপোর্ট থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুরে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে কৌশলে যাত্রী উঠায়। পরবর্তী সময়ে যাত্রীর গলায় ইলেকট্রিক তার পেঁচিয়ে, গামছা দিয়ে চোখ ও হাত বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে, গলায় ছুরি ধরে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে যাত্রীর সর্বস্ব লুট করে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায়। তারা ওই ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। রাইড শেয়ারের আগে সতর্ক থাকতে নগরবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন একেএম হাফিজ আক্তার।

রাজধানীর সড়কগুলো সিসিটিভির আওতায় আনতে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান হাফিজ আক্তার। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে অনেকগুলো কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। সেগুলোকে কেন্দ্র করে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। আমরা পুরো শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনতে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আগামী ১-২ বছরের মধ্যে সিসিটিভির আওতায় আনাসহ তদন্তে অন্যান্য প্রযুক্তির সুবিধা যুক্ত হবে বলে জানান তিনি।

থানা মামলা না নিলে ডিবিতে আসুন

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেছেন, অপরাধীরা রাতে ও ভোরে সক্রিয় ওয়ে ওঠে। অনেক সময় দিনের বেলা জনবহুল এলাকাতেও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু ভিকটিম থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন না। অনেকে থানায় হয়রানির স্বীকার হওয়ার কথাও বলেন। কিন্তু মামলা বা অভিযোগ না দিলে এসব অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ভিকটিমদের উদ্দেশে বলব, ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানা মামলা না নিলে ডিবির কাছে আসুন।