সব শিল্পে সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের আহ্বান

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব খাতে সমান সুযোগ সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করেন অর্থনীতিবিদরা। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বহুমুখীকরণে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় তারা এই সুপারিশ করেন। আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএইচএম আহসান।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সাল পরবর্তী সময়ে অনেক রপ্তানি বাণিজ্য ও স্বল্প ব্যয়ে ঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি নানাধরনের শুল্ক-অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হতে হবে। বাংলাদেশের ১৭৫০টি রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৮১ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের অন্তর্ভুক্ত। এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে দেশের রপ্তানি শিল্প পোশাক খাতসহ অন্যান্য মাঝারি ও ছোট শিল্প যেমন পাট, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা, ফার্মাসিটিক্যাল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইসিটিসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে ও বাজারে বৈচিত্র নিশ্চিত করতে আমরাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণমান, মূল্য ও ভোক্তার আচরণ পরিবর্তনসহ গবেষণা ও উদ্ভাবনের ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এএইচএম আহসান জানান, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হবে বাংলাদেশের এ অর্জনকে টেকসই করার লক্ষ্যে সরকারের নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের রপ্তানি পণ্যের বাজার মূলত ইউরোপ ও আমেরিকা ভিত্তিক, তবে সময় এসেছে বর্তমান বাজারের বাইরে বিশেষ করে আফ্রিকা, ল্যাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগী হতে হবে এবং পণ্যের পাশাপাশি সার্ভিস বা সেবা রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতে বন্ডসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসেছে।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল’র জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হুদা, এসিআই মবিলিটি, প্লাস্টিক অ্যান্ড এগ্রিবিজনেস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ড. এফ এইচ আনসারী, লেদারগুডস্ অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি অনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইআইওএ)-এর সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক অংশগ্রহণ করেন।

সিপিডি-এর সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ অর্জন বিভিন্ন সূচকে আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নের একটি স্বীকৃতি। তবে এর ফলে অর্থনীতির কোথায়, কি ধরনের প্রভাব পড়বে তার জন্য আমাদের হোম ওয়ার্ক করতে হবে। আমাদের দেশীয় আইন ও নীতিমালাগুলোকে ডব্লিউটিও সুপারিশের আলোকে সংশোধন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। সেক্টর ভিত্তিক চাহিদাগুলোকে মাথায় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে পাশাপাশি বিএসটিআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হয়ে গেলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, তা যেমন সত্য, সেই সঙ্গে শিল্প-কারখানাগুলোতে কাজ করার জন্য দেশীয় মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন করা না হলে, বিদেশি নাগরিকরা এখানে আসবে এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজ দেশে নিয়ে যাবে। তাই আমাদের নিজস্ব মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন খুবই জরুরি। পাশাপাশি তিনি সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ স্মারক স্বাক্ষরে আরও গতি আনায়নের ওপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াবে এবং এ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।

তিনি সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা পরিহারের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘নেগোশিয়েশন সেল’ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। গবেষণা কার্যক্রমে বরাদ্দকে ব্যয় হিসেবে না দেখে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

বেসিস’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তিখাতে রপ্তানির যেসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবি হতে প্রদান করা হয়। সেখানে বেশকিছু গরমিল রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে সারা পৃথিবীতে সাস (সফটওয়্যার ভিত্তিক সেবা) মডেল বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এবং বাংলাদেশ হতে সফটওয়্যার ভিত্তিক সেবা আমদানির বিষয়টি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ জন্য নীতি সহায়তা খুবই জরুরি। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কর্পোরেট কর কমানো দরকার। সেই সঙ্গে এখাতের উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা প্রদান করতে হবে।’

‘আইপি ভ্যালু গাইডলাইন’ প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান।

লেদারগুডস্ অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়ন হলে আমাদের নেগোশিয়েশন ক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে এর ফলে বাংলাদেশ যে সব সুযোগ হারাবে তা মোকাবিলায় সরকারি এবং বেসরকারি খাতকে পার্টনার হিসেবে কাজ করতে হবে। পণ্য উৎপাদন ব্যয় কমাতে জ¦ালানির দক্ষ ব্যবহার, বেকওয়ার্ড লিংকেজ খাতগুলোকে আরও সক্ষমতা বাড়ানো, সকল রপ্তানিমুখী পণ্যের জন্য একই নীতি সহায়তা প্রদান খুবই জরুরি।’

বিইআইওএ’র সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং একটি ক্রস কাটিং খাত এবং এখাতের উন্নয়ন হলে অন্যান্য শিল্পখাতের সুযোগ বাড়বে। সারাদেশে এ খাতের প্রায় ৪০-৫০ হাজার উদ্যোক্তা রয়েছে। তবে এ খাতের উদ্যোক্তারা শিল্প-কারখানা স্থাপনে জমি সংকটে রয়েছে। ২০০৬ সাল হতে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের জন্য মুন্সীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে একটি শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে সেখানে প্রতিকাঠা জমির মূল্য ধার্য করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা, যা এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত বেশি।’

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল’র জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পরও ওষুধ শিল্পে প্যাটেন্ট সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং বাংলাদেশ বর্তমানে ১১০টা দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। দেশের ড্রাগ কর্তৃপক্ষকে আরও দক্ষ জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধ উৎপাদনে বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য এপিআই উৎপাদনে শক্তিশালী হওয়া খুবই আবশ্যক।

এসিআই মবিলিটি, প্লাস্টিক অ্যান্ড এগ্রিবিজনেস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, ‘কৃষি খাতে আমরা মোটামুটি সব কিছুই আমদানি করছি। দেশের জনগণের চাহিদা মেটাতে ৭০ ভাগ জমিতেই ধান উৎপাদন করতে হয়। যেখানে কৃষি খাতে কর্মরত মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ জড়িত। এজন্য তিনি কৃষি খাতে গবেষণা বৃদ্ধি, নতুনত্ব ও প্রযুক্তি আনায়ন এবং পণ্যের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৮ ২৬ জিলক্বদ ১৪৪২

এলডিসিপরবর্তী রপ্তানি সক্ষমতা অর্জনে

সব শিল্পে সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের আহ্বান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব খাতে সমান সুযোগ সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করেন অর্থনীতিবিদরা। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বহুমুখীকরণে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় তারা এই সুপারিশ করেন। আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএইচএম আহসান।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সাল পরবর্তী সময়ে অনেক রপ্তানি বাণিজ্য ও স্বল্প ব্যয়ে ঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি নানাধরনের শুল্ক-অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হতে হবে। বাংলাদেশের ১৭৫০টি রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৮১ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের অন্তর্ভুক্ত। এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে দেশের রপ্তানি শিল্প পোশাক খাতসহ অন্যান্য মাঝারি ও ছোট শিল্প যেমন পাট, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা, ফার্মাসিটিক্যাল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইসিটিসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে ও বাজারে বৈচিত্র নিশ্চিত করতে আমরাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণমান, মূল্য ও ভোক্তার আচরণ পরিবর্তনসহ গবেষণা ও উদ্ভাবনের ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এএইচএম আহসান জানান, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হবে বাংলাদেশের এ অর্জনকে টেকসই করার লক্ষ্যে সরকারের নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের রপ্তানি পণ্যের বাজার মূলত ইউরোপ ও আমেরিকা ভিত্তিক, তবে সময় এসেছে বর্তমান বাজারের বাইরে বিশেষ করে আফ্রিকা, ল্যাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগী হতে হবে এবং পণ্যের পাশাপাশি সার্ভিস বা সেবা রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতে বন্ডসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসেছে।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল’র জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হুদা, এসিআই মবিলিটি, প্লাস্টিক অ্যান্ড এগ্রিবিজনেস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ড. এফ এইচ আনসারী, লেদারগুডস্ অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি অনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইআইওএ)-এর সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক অংশগ্রহণ করেন।

সিপিডি-এর সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ অর্জন বিভিন্ন সূচকে আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নের একটি স্বীকৃতি। তবে এর ফলে অর্থনীতির কোথায়, কি ধরনের প্রভাব পড়বে তার জন্য আমাদের হোম ওয়ার্ক করতে হবে। আমাদের দেশীয় আইন ও নীতিমালাগুলোকে ডব্লিউটিও সুপারিশের আলোকে সংশোধন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। সেক্টর ভিত্তিক চাহিদাগুলোকে মাথায় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে পাশাপাশি বিএসটিআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হয়ে গেলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, তা যেমন সত্য, সেই সঙ্গে শিল্প-কারখানাগুলোতে কাজ করার জন্য দেশীয় মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন করা না হলে, বিদেশি নাগরিকরা এখানে আসবে এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজ দেশে নিয়ে যাবে। তাই আমাদের নিজস্ব মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন খুবই জরুরি। পাশাপাশি তিনি সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ স্মারক স্বাক্ষরে আরও গতি আনায়নের ওপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াবে এবং এ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।

তিনি সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা পরিহারের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘নেগোশিয়েশন সেল’ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। গবেষণা কার্যক্রমে বরাদ্দকে ব্যয় হিসেবে না দেখে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

বেসিস’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তিখাতে রপ্তানির যেসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবি হতে প্রদান করা হয়। সেখানে বেশকিছু গরমিল রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে সারা পৃথিবীতে সাস (সফটওয়্যার ভিত্তিক সেবা) মডেল বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এবং বাংলাদেশ হতে সফটওয়্যার ভিত্তিক সেবা আমদানির বিষয়টি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ জন্য নীতি সহায়তা খুবই জরুরি। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কর্পোরেট কর কমানো দরকার। সেই সঙ্গে এখাতের উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা প্রদান করতে হবে।’

‘আইপি ভ্যালু গাইডলাইন’ প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান।

লেদারগুডস্ অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়ন হলে আমাদের নেগোশিয়েশন ক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে এর ফলে বাংলাদেশ যে সব সুযোগ হারাবে তা মোকাবিলায় সরকারি এবং বেসরকারি খাতকে পার্টনার হিসেবে কাজ করতে হবে। পণ্য উৎপাদন ব্যয় কমাতে জ¦ালানির দক্ষ ব্যবহার, বেকওয়ার্ড লিংকেজ খাতগুলোকে আরও সক্ষমতা বাড়ানো, সকল রপ্তানিমুখী পণ্যের জন্য একই নীতি সহায়তা প্রদান খুবই জরুরি।’

বিইআইওএ’র সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং একটি ক্রস কাটিং খাত এবং এখাতের উন্নয়ন হলে অন্যান্য শিল্পখাতের সুযোগ বাড়বে। সারাদেশে এ খাতের প্রায় ৪০-৫০ হাজার উদ্যোক্তা রয়েছে। তবে এ খাতের উদ্যোক্তারা শিল্প-কারখানা স্থাপনে জমি সংকটে রয়েছে। ২০০৬ সাল হতে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের জন্য মুন্সীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে একটি শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে সেখানে প্রতিকাঠা জমির মূল্য ধার্য করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা, যা এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত বেশি।’

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল’র জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পরও ওষুধ শিল্পে প্যাটেন্ট সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং বাংলাদেশ বর্তমানে ১১০টা দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। দেশের ড্রাগ কর্তৃপক্ষকে আরও দক্ষ জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধ উৎপাদনে বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য এপিআই উৎপাদনে শক্তিশালী হওয়া খুবই আবশ্যক।

এসিআই মবিলিটি, প্লাস্টিক অ্যান্ড এগ্রিবিজনেস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, ‘কৃষি খাতে আমরা মোটামুটি সব কিছুই আমদানি করছি। দেশের জনগণের চাহিদা মেটাতে ৭০ ভাগ জমিতেই ধান উৎপাদন করতে হয়। যেখানে কৃষি খাতে কর্মরত মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ জড়িত। এজন্য তিনি কৃষি খাতে গবেষণা বৃদ্ধি, নতুনত্ব ও প্রযুক্তি আনায়ন এবং পণ্যের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’