১৮ বছরের ধৈর্যের দৃষ্টান্ত জালাল উদ্দীন

গত নির্বাচনে ২ ভোট এবার পেলেন ৩

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসলেই ভোটে দাঁড়ানো জালাল উদ্দীনের নেশা। এ পর্যন্ত তিনি তিনটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পাস করেননি একবারও। তারপরও তার নিজের ভেতরে কোন রকম কষ্ট নেই বরং তিনি বলছেন সৎ ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে জনগণ তাকেই বেছে নিবেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি মনের দিক দিয়ে বেশ খানিকটা এগুতে পারলেও ভোটের দিক থেকে তেমনটি পারেননি। কারণ তিনি প্রথমে ২০১১ সালে ওই ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে ভোট পেয়েছিলেন ১৩৩টি। ২০১৬ সালে মেম্বার পদে পেয়েছিলেন দুই ভোট, কিন্তু এবার ইউনিয়নের একই পদে ভোট পেয়েছেন তিনটি। অর্থাৎ গত নির্বাচনের চেয়ে মাত্র একটি মূল্যবান ভোট বাড়াতে পেরেছেন। তাকে ঘিরে উৎসুক জনগণের প্রশ্ন তার পরিবারের মোট ১১টি ভোট, তাহলে তার পরিবারের অন্য ভোটগুলো গেলো কোথায়?

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জের সুন্দরপুরের দুর্গাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে মোট ৪ জন মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে হুমায়ন কবির ফুটবল প্রতীকে ৬৬০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ৪১০ ভোট। আব্বাস আলী কোন ভোট পাননি।

এ ওয়ার্ডের মেম্বার পদের ভোটে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কেননা একজন পেয়েছেন শূন্যভোট। তাহলে তার নিজের ভোট গেলো কোথায়। আর নির্বাচনে দীর্ঘদিনের আগ্রহী জালাল উদ্দীন পেয়েছেন মাত্র তিন ভোট, তাহলে তার পরিবারের ভোট গেল কোথায়?

ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা মিশন আলী জানান, নির্বাচন সব জায়গাতেই হয়। কিন্তু তার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জালাল উদ্দীন প্রতি নির্বাচনেই অংশ নেন। কখনও চেয়ারম্যান পদে আবার কখনও মেম্বার পদে। এ ওয়ার্ডে আরও একটি মজার ঘটনা ঘটেছে, মেম্বার পদে প্রার্থী আব্বাস আলী শূন্য ভোট পেয়েছেন। তাহলে ওই প্রার্থীর নিজের ও তার পরিবারের ভোটটা গেল কোথায়। এ নিয়ে এলাকায় হাসি-তামাশার সৃষ্টি হয়েছে।

ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু জানান, জালাল উদ্দীন নিজেই একজন নির্বাচনে আগ্রহী মজার মানুষ। নিজের প্রচার নিজেই করেন। নিজের রিকশায় প্রচার মাইক বেঁধে নিজে চালিয়ে নিয়ে বেড়ান আর এলাকায় ভোট ভিক্ষা করেন। নিজের পোস্টার নিজেই বিলি করেন। যাই হোক এটাও নির্বাচনের একটি অংশ।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেছেন জালাল উদ্দীন ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেছেন। তার বাড়ি সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাদিরকোল গ্রামে। তার বাবার নাম আরশেদ আলী, সংসারে স্ত্রী, চার ছেলে পাঁচ মেয়ে তার। আগে রিকশা চালাতেন। এখন কবিরাজি করেন। প্রতি নির্বাচনে তিনি আগ্রহের সঙ্গে অংশ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে ভোট ভিক্ষা করেন। এবার তিনি মোট তিন ভোট পেয়েছেন। এর আগের নির্বাচনে পেয়েছিলেন দুই ভোট। তারপরও তিনি আগ্রহ হারাননি।

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১ , ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

১৮ বছরের ধৈর্যের দৃষ্টান্ত জালাল উদ্দীন

গত নির্বাচনে ২ ভোট এবার পেলেন ৩

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসলেই ভোটে দাঁড়ানো জালাল উদ্দীনের নেশা। এ পর্যন্ত তিনি তিনটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পাস করেননি একবারও। তারপরও তার নিজের ভেতরে কোন রকম কষ্ট নেই বরং তিনি বলছেন সৎ ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে জনগণ তাকেই বেছে নিবেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি মনের দিক দিয়ে বেশ খানিকটা এগুতে পারলেও ভোটের দিক থেকে তেমনটি পারেননি। কারণ তিনি প্রথমে ২০১১ সালে ওই ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে ভোট পেয়েছিলেন ১৩৩টি। ২০১৬ সালে মেম্বার পদে পেয়েছিলেন দুই ভোট, কিন্তু এবার ইউনিয়নের একই পদে ভোট পেয়েছেন তিনটি। অর্থাৎ গত নির্বাচনের চেয়ে মাত্র একটি মূল্যবান ভোট বাড়াতে পেরেছেন। তাকে ঘিরে উৎসুক জনগণের প্রশ্ন তার পরিবারের মোট ১১টি ভোট, তাহলে তার পরিবারের অন্য ভোটগুলো গেলো কোথায়?

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জের সুন্দরপুরের দুর্গাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে মোট ৪ জন মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে হুমায়ন কবির ফুটবল প্রতীকে ৬৬০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ৪১০ ভোট। আব্বাস আলী কোন ভোট পাননি।

এ ওয়ার্ডের মেম্বার পদের ভোটে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কেননা একজন পেয়েছেন শূন্যভোট। তাহলে তার নিজের ভোট গেলো কোথায়। আর নির্বাচনে দীর্ঘদিনের আগ্রহী জালাল উদ্দীন পেয়েছেন মাত্র তিন ভোট, তাহলে তার পরিবারের ভোট গেল কোথায়?

ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা মিশন আলী জানান, নির্বাচন সব জায়গাতেই হয়। কিন্তু তার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জালাল উদ্দীন প্রতি নির্বাচনেই অংশ নেন। কখনও চেয়ারম্যান পদে আবার কখনও মেম্বার পদে। এ ওয়ার্ডে আরও একটি মজার ঘটনা ঘটেছে, মেম্বার পদে প্রার্থী আব্বাস আলী শূন্য ভোট পেয়েছেন। তাহলে ওই প্রার্থীর নিজের ও তার পরিবারের ভোটটা গেল কোথায়। এ নিয়ে এলাকায় হাসি-তামাশার সৃষ্টি হয়েছে।

ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু জানান, জালাল উদ্দীন নিজেই একজন নির্বাচনে আগ্রহী মজার মানুষ। নিজের প্রচার নিজেই করেন। নিজের রিকশায় প্রচার মাইক বেঁধে নিজে চালিয়ে নিয়ে বেড়ান আর এলাকায় ভোট ভিক্ষা করেন। নিজের পোস্টার নিজেই বিলি করেন। যাই হোক এটাও নির্বাচনের একটি অংশ।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেছেন জালাল উদ্দীন ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেছেন। তার বাড়ি সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাদিরকোল গ্রামে। তার বাবার নাম আরশেদ আলী, সংসারে স্ত্রী, চার ছেলে পাঁচ মেয়ে তার। আগে রিকশা চালাতেন। এখন কবিরাজি করেন। প্রতি নির্বাচনে তিনি আগ্রহের সঙ্গে অংশ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে ভোট ভিক্ষা করেন। এবার তিনি মোট তিন ভোট পেয়েছেন। এর আগের নির্বাচনে পেয়েছিলেন দুই ভোট। তারপরও তিনি আগ্রহ হারাননি।