বিশ্বকাপ ডায়রি

বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় তলানীতে হলেও ক্রিকেটে উন্নতি লক্ষ্যণীয় এবং প্রশংসনীয়। প্রথমত, হাতেগোণা যে ক’টি দেশ ক্রিকেট খেলে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭/৮-এ। অবশ্য (খেলাটির ৩টি ফরম্যাটে) আইসিসির তত্ত্বাবধানে খেলা মাত্র ১৫/২০টি দেশের মধ্যে কুলীন মর্যাদা লাভ করেছে ১১টি দেশ এবং এগুলোই বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এবং পারস্পরিক সিরিজ খেলার সুযোগপ্রাপ্ত।

কিন্তু এটাও সত্যি যে, শীর্ষ ৬টি দেশ ( অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ) বাদে বাকি ৪টি দেশের পেশাদারীত্ব, মানসিকতা ও দায়বদ্ধতায় ঘাটতির কারণে সব ম্যাচে ধারাবহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না। যেমন চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ৩৩০ রান করে চোকার্স নামে সমধিক পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে চমৎকার সূচনা করেও দেশবাসী এবং এখানকার বাংলাদেশিদের উদ্দীপ্ত করলেও তা অক্ষুণ্ন রাখতে পারছে না। এর আসল কারণ দলের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের হতাশ করা ব্যর্থতা এবং পেসারদের সাদামাটা বোলিং। যদিও স্পিনাররা কোনমতে উতরে যাচ্ছেন। গত দু’টি খেলায় (নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড) মাশরাফি বাহিনীর খেলা দেখে চোখ বুজে বলা যায় বিশ্বকাপে খেলার মতো সার্বিক মান অর্জনে দলের অনেক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষত, ব্যাটিংয়ে কোচ রোডসকে দুঃশ্চিন্তামুক্ত করা যে ক’জন নতুন প্রতিভা দলে রয়েছেন তারা আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে বেশ ভালো খেললেও তার ধারণার যথার্থতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। পাশাপাশি দলের ভরসা পঞ্চপা-বের (সাকিব বাদে) ফর্মহীনতায় দলকে হারতে হচ্ছে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বকাপে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, মনসংযোগ, আত্মবিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধে চুল পরিমাণ ঘাটতি থাকলেও আশাপ্রদ ফল লাভ করা অনিশ্চিত হয়ে যায়।

ফলে গত শনিবার কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে শীর্ষ ফেভারিট স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টস জিতেও মাশরাফির ফিল্ডিং নেয়া সবাইকে বিস্মিত করেছে। পরিণাম ১০৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হার। দলের থিংক ট্যাংকদের মনে রাখা উচিত ছিল গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকেই নাকানি-চুবানি খাইয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। সেই আহত সিংহ এবার প্রথমে ব্যাটিং পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে টাইগারদের ওপর। তদুপরি এবারের উইকেটগুলো যে ব্যটিংবান্ধব করা হয়েছে সেটা পত্র-পত্রিকায় অনেকবার লেখা হয়েছে। এজন্যই প্রথমে ব্যাট হাতে যেভাবে নিশ্চিন্তে খেলা যায় পরে তা আর হয়ে ওঠে না। আর যদি তিন শতাধিক রান তাড়া করতে হয় তাহলে সবসময় ঝুঁকি নিয়ে খেলতে হয়। কারণ, প্রতি ওভারে চাহিদা অনুসারে রান করতে না পারলে যে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় তা সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তখন বাধ্য হয়েই পিঞ্চ হিট করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

এছাড়াও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন পেসারের বোলিং ধার এবং লাইন-লেংথ মোটেও সন্তোষজনক ছিল না। সাইফউদ্দিন ও মিরাজ ২টি করে উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন যথাক্রমে ৯ ওভারে ৭৮ ও ১০ ওভারে ৬৭। এমন ভোঁতা বোলিংয়ের শতভাগ সুযোগ নিয়ে জেসন রয়, বাটলার ও বেয়ারস্টোরা নির্ভয়ে ব্যাটিং করে ৩৮৬ রানের বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেয় মাশরাফিদের মাথার ওপর। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল ওপেনার জেসন রয় (১৫৩)। অথচ শুরতে ব্যাটিং করলে আর যাই হোক চাপমুক্ত থেকে মোটমুটি ২৫০-৩০০ রান করার সুযোগ ছিল। আর বড় স্কোর না হলেও একই ফল হতো। জবাবে ওভার প্রতি ৭.৭ রানের বোঝা মাথায় রেখে বেশিদূর এগুতে ব্যর্থ হয়ে তামিম-সৌম্যসহ ৭ জন ব্যাটসম্যানকে ফিরতে হয় মাত্র ৯৩ রানে। ব্যতিক্রম শুধু শীর্ষ অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার ১১৯ বলে ১টি ছক্কা ও ১২টি চারে করা ১২১ রানও দলকে শোচনীয় হার থেকে বাঁচাতে পারেনি। ফলে বাকি ম্যাচগুলোতে বিশ্বস্ত ব্যাটসম্যানরা উল্লেখযোগ্য রান করতে না পারলে বিশ্বকাপকে বিদায় বলার বিকল্প থাকবে না।

সোমবার, ১০ জুন ২০১৯ , ২৭ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ৬ শাওয়াল ১৪৪০

বিশ্বকাপ ডায়রি

লন্ডন থেকে অজয় বড়ুয়া

বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় তলানীতে হলেও ক্রিকেটে উন্নতি লক্ষ্যণীয় এবং প্রশংসনীয়। প্রথমত, হাতেগোণা যে ক’টি দেশ ক্রিকেট খেলে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭/৮-এ। অবশ্য (খেলাটির ৩টি ফরম্যাটে) আইসিসির তত্ত্বাবধানে খেলা মাত্র ১৫/২০টি দেশের মধ্যে কুলীন মর্যাদা লাভ করেছে ১১টি দেশ এবং এগুলোই বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এবং পারস্পরিক সিরিজ খেলার সুযোগপ্রাপ্ত।

কিন্তু এটাও সত্যি যে, শীর্ষ ৬টি দেশ ( অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ) বাদে বাকি ৪টি দেশের পেশাদারীত্ব, মানসিকতা ও দায়বদ্ধতায় ঘাটতির কারণে সব ম্যাচে ধারাবহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না। যেমন চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ৩৩০ রান করে চোকার্স নামে সমধিক পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে চমৎকার সূচনা করেও দেশবাসী এবং এখানকার বাংলাদেশিদের উদ্দীপ্ত করলেও তা অক্ষুণ্ন রাখতে পারছে না। এর আসল কারণ দলের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের হতাশ করা ব্যর্থতা এবং পেসারদের সাদামাটা বোলিং। যদিও স্পিনাররা কোনমতে উতরে যাচ্ছেন। গত দু’টি খেলায় (নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড) মাশরাফি বাহিনীর খেলা দেখে চোখ বুজে বলা যায় বিশ্বকাপে খেলার মতো সার্বিক মান অর্জনে দলের অনেক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষত, ব্যাটিংয়ে কোচ রোডসকে দুঃশ্চিন্তামুক্ত করা যে ক’জন নতুন প্রতিভা দলে রয়েছেন তারা আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে বেশ ভালো খেললেও তার ধারণার যথার্থতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। পাশাপাশি দলের ভরসা পঞ্চপা-বের (সাকিব বাদে) ফর্মহীনতায় দলকে হারতে হচ্ছে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বকাপে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, মনসংযোগ, আত্মবিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধে চুল পরিমাণ ঘাটতি থাকলেও আশাপ্রদ ফল লাভ করা অনিশ্চিত হয়ে যায়।

ফলে গত শনিবার কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে শীর্ষ ফেভারিট স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টস জিতেও মাশরাফির ফিল্ডিং নেয়া সবাইকে বিস্মিত করেছে। পরিণাম ১০৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হার। দলের থিংক ট্যাংকদের মনে রাখা উচিত ছিল গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকেই নাকানি-চুবানি খাইয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। সেই আহত সিংহ এবার প্রথমে ব্যাটিং পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে টাইগারদের ওপর। তদুপরি এবারের উইকেটগুলো যে ব্যটিংবান্ধব করা হয়েছে সেটা পত্র-পত্রিকায় অনেকবার লেখা হয়েছে। এজন্যই প্রথমে ব্যাট হাতে যেভাবে নিশ্চিন্তে খেলা যায় পরে তা আর হয়ে ওঠে না। আর যদি তিন শতাধিক রান তাড়া করতে হয় তাহলে সবসময় ঝুঁকি নিয়ে খেলতে হয়। কারণ, প্রতি ওভারে চাহিদা অনুসারে রান করতে না পারলে যে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় তা সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তখন বাধ্য হয়েই পিঞ্চ হিট করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

এছাড়াও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন পেসারের বোলিং ধার এবং লাইন-লেংথ মোটেও সন্তোষজনক ছিল না। সাইফউদ্দিন ও মিরাজ ২টি করে উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন যথাক্রমে ৯ ওভারে ৭৮ ও ১০ ওভারে ৬৭। এমন ভোঁতা বোলিংয়ের শতভাগ সুযোগ নিয়ে জেসন রয়, বাটলার ও বেয়ারস্টোরা নির্ভয়ে ব্যাটিং করে ৩৮৬ রানের বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেয় মাশরাফিদের মাথার ওপর। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল ওপেনার জেসন রয় (১৫৩)। অথচ শুরতে ব্যাটিং করলে আর যাই হোক চাপমুক্ত থেকে মোটমুটি ২৫০-৩০০ রান করার সুযোগ ছিল। আর বড় স্কোর না হলেও একই ফল হতো। জবাবে ওভার প্রতি ৭.৭ রানের বোঝা মাথায় রেখে বেশিদূর এগুতে ব্যর্থ হয়ে তামিম-সৌম্যসহ ৭ জন ব্যাটসম্যানকে ফিরতে হয় মাত্র ৯৩ রানে। ব্যতিক্রম শুধু শীর্ষ অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার ১১৯ বলে ১টি ছক্কা ও ১২টি চারে করা ১২১ রানও দলকে শোচনীয় হার থেকে বাঁচাতে পারেনি। ফলে বাকি ম্যাচগুলোতে বিশ্বস্ত ব্যাটসম্যানরা উল্লেখযোগ্য রান করতে না পারলে বিশ্বকাপকে বিদায় বলার বিকল্প থাকবে না।