বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাইফুল বিতর্কিত বদির ভাইদের কথাও বলে গেছে

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় দেশের এক নম্বর মাদক চোরাকারবারি সাইফুল করিম যাদের ইয়াবা কারবার দেখভাল করত, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ২ ভাই ও এক ফুপাতো ভাইসহ টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফরের নামও রয়েছে। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, ২ সপ্তাহ আগে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে হাজি সাইফুল করিম জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করে গেছে। বন্দুকযুদ্ধের ওই ঘটনায় টেকনাফ থানার এসআই রাসেল আহমদ ৩৩ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা করেন।

এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, সাইফুল করিম মৃত্যুর আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকটি ইয়াবা ও হুন্ডি চক্রের ৩৩ জনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের সবাইকে সাইফুল করিম হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এই ৩৩ জনের মধ্যে ১৮ জনের পূর্ণ নাম ও পরিচয় এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৫ জনকে অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ওই এজাহারে বদির ২ ভাই ও এক ফুপাতো ভাইয়ের ইয়াবার কারবারের প্রসঙ্গ এলেও তাদের আসামি করা হয়নি। আসামির তালিকায় নাম এসেছে কেবল বদির ভাগ্নে মো. ফারুকের।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল করিম স্বীকার করে, মায়ানমার থেকে আমদানি পণ্যের ভেতরে লুকিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবা নিয়ে আসে সে। তখন থেকেই টেকনাফসহ সারাদেশে ইয়াবার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত। সে জানিয়েছে, জালিয়াপাড়া ঘাট এলাকার মো. আমিন, মৌলভি মুজিব, সালমান, টিটি জাফরের (জাফর আলম) ভাই গফুর, এমপি বদির ভাই শুক্কুর, শওকত ও রাসেল গংয়ের ইয়াবা ব্যবসা নিজেই পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে টেকনাফের আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা বদির ভাই মুজিবরি রহমান ওরফে মৌলভি মুজিব পলাতক বলে পুলিশের ভাষ্য। বদির আরেক ভাই আবদুর শুক্কুর ও ফুপাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল গত ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সাইফুল করিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী ও মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। বদির ভাই মৌলভি মুজিব এতদিন টেকনাফে প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও কিছুদিন ধরে মিয়ানমারের মংডুতে অবস্থান করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও তার ছেলে শাহজাহান চেয়ারম্যান ঢাকায় আছে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে তারা দুবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নুরুল হক ভুট্টু কক্সবাজারের একটি আস্তানায় অবস্থান করছে। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানা পুলিশ নুরুল হক ভুট্টু, তার এক ভাই ও বাবার ৩১ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করেছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে আলোচিত কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে কয়েকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।

এদিকে সাবেক এমপি বদি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় ইয়াবা পাচারের হোতা হিসেবে নামও ছিল এক সময়। ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ৭৩ জনকে কক্সবাজারের ইয়াবা গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, তাদের শীর্ষে ছিলেন বদি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বদির বদলে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর ২ মাসের মধ্যে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা কারবারি। তাদের মধ্যে বদির চার ভাইসহ আট আত্মীয়ও ছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে ইয়াবার প্রথম চালান দেশে এনেছিল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়াপাড়ার ডা. মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাইফুল করিম। মাদকের কারবারে রাতারাতি ধনী হয়ে ওঠা সাইফুল কক্সবাজার জেলা থেকে সর্বোচ্চ কর দিয়ে সিআইপি মর্যাদাও পেয়েছিল। টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনের সাতটি মামলার পলাতক আসামি সাইফুলকে গত ৩০ মে গ্রেফতার করে টেকনাফের পুলিশ। থানায় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে গভীর রাতে ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে বের হয় পুলিশের একটি দল। টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের কাছে মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তার নিহত হওয়ার খবর জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এর আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোট ৬৭ জনের নাম প্রকাশ করে গেছে সাইফুল! সেখানে কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা ও বেশ কয়েক সাংবাদিকের নামও এসেছে। কিন্তু পুলিশের করা মামলার এজাহারে কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা সাংবাদিকের নাম নেই। সেখানে সাইফুলের ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসার অন্যতম সহযোগী হিসেবে জাফর আলম ওরফে টিটি জাফরের কথা বলা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, টিটি জাফরের মাধ্যমে হুন্ডির টাকায় বাংলাদেশে ইয়াবার চালান আনা হতো এবং সিন্ডিকেটের সহযোগীদের মাধ্যমে ওই ইয়াবার চালান সারাদেশে পাচার করা হতো।

এ মামলার আসামির তালিকায় নাম থাকা ইয়াবা কারবারিরা হলো টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার জাফর আহমদ ওরফে টিটি জাফর, অলিয়াবাদ গ্রামের ছৈয়দ আলম ওরফে সোনা মিয়া, পুরান পল্লানপাড়ার মো. ফারুক (বদির ভাগ্নে), ডেইলপাড়ার মো. আমিন, শীলবুনিয়াপাড়ার নুর হাছন, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার আমির আলী ওরফে বার্মাইয়া আলী, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বড় হাবিরপাড়ার মো. আলী আহম্মদ, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. আয়াছ ওরফে বার্মাইয়া আয়াছ, তার ছোট ভাই মো. ইয়াছের ওরফে বার্মাইয়া ইয়াছের, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. দেলোয়ার, কেরুনতলী এলাকার মো. মিজান ও লেঙ্গুর বিলের জাফর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের মো. কাদের। এছাড়া অলিয়াবাদ গ্রামের রবিউল আলম, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. শফিক, মো. শামসু, উত্তর লম্বরীর মো. শামসু, মধ্য জালিয়াপাড়ার মো. মনিরুজ্জামান ওরফে আমির সাব ও নিহত সাইফুল করিমের ভাগ্নে মো. মিজানের নাম রয়েছে ১৮ জনের মধ্যে।

এজাহারে বলা হয়েছে, সাইফুল টেকনাফ স্থলবন্দরের বৈধ ব্যবসার আড়ালে উপরে উল্লেখিত আসামিদের মাধ্যমে ইয়াবা কারবার পরিচালনা করত। মায়ানমারের মংডু শহর থেকে ইয়াবার চালান টেকনাফ এনে সারাদেশে পাচার করত। মামলার আসামিরা যৌথ মূলধন বিনিয়োগ করে ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি কিনত।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ নানাভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

আরও খবর
কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধিসহ অগ্রাধিকার পাচ্ছে পাঁচ বিষয়
বাজেট অধিবেশন আজ শুরু
বৃষ্টির শঙ্কা নিয়ে ব্রিস্টলে আজ বাংলা-লঙ্কা মুখোমুখি
ব্রিস্টলে সূর্যের হাসিতে টাইগারদের অনুশীলন
ব্রিস্টলই কি স্বরূপে ফেরাবে মাশরাফিকে!
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জারদারি গ্রেফতার
রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ
দুদক পরিচালক বাছির সাময়িক বরখাস্ত
সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪২ জন নিহত
এবার সড়কে দুর্ঘটনা কম মৃত্যু বেশি
১৮ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ আরব আমিরাতের
অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ : শুনানি ২০ জুন
একদিনে সড়কে ঝরল আরও ৭ প্রাণ
প্রথম পর্যায়ে মনোনীত ১৩ লাখ ১৮,৮৬৬ শিক্ষার্থী

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০১৯ , ২৮ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ৭ শাওয়াল ১৪৪০

টেকনাফে

বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাইফুল বিতর্কিত বদির ভাইদের কথাও বলে গেছে

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় দেশের এক নম্বর মাদক চোরাকারবারি সাইফুল করিম যাদের ইয়াবা কারবার দেখভাল করত, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ২ ভাই ও এক ফুপাতো ভাইসহ টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফরের নামও রয়েছে। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, ২ সপ্তাহ আগে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে হাজি সাইফুল করিম জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করে গেছে। বন্দুকযুদ্ধের ওই ঘটনায় টেকনাফ থানার এসআই রাসেল আহমদ ৩৩ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা করেন।

এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, সাইফুল করিম মৃত্যুর আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকটি ইয়াবা ও হুন্ডি চক্রের ৩৩ জনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের সবাইকে সাইফুল করিম হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এই ৩৩ জনের মধ্যে ১৮ জনের পূর্ণ নাম ও পরিচয় এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৫ জনকে অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ওই এজাহারে বদির ২ ভাই ও এক ফুপাতো ভাইয়ের ইয়াবার কারবারের প্রসঙ্গ এলেও তাদের আসামি করা হয়নি। আসামির তালিকায় নাম এসেছে কেবল বদির ভাগ্নে মো. ফারুকের।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল করিম স্বীকার করে, মায়ানমার থেকে আমদানি পণ্যের ভেতরে লুকিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবা নিয়ে আসে সে। তখন থেকেই টেকনাফসহ সারাদেশে ইয়াবার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত। সে জানিয়েছে, জালিয়াপাড়া ঘাট এলাকার মো. আমিন, মৌলভি মুজিব, সালমান, টিটি জাফরের (জাফর আলম) ভাই গফুর, এমপি বদির ভাই শুক্কুর, শওকত ও রাসেল গংয়ের ইয়াবা ব্যবসা নিজেই পরিচালনা করত। তাদের মধ্যে টেকনাফের আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা বদির ভাই মুজিবরি রহমান ওরফে মৌলভি মুজিব পলাতক বলে পুলিশের ভাষ্য। বদির আরেক ভাই আবদুর শুক্কুর ও ফুপাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল গত ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সাইফুল করিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী ও মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। বদির ভাই মৌলভি মুজিব এতদিন টেকনাফে প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও কিছুদিন ধরে মিয়ানমারের মংডুতে অবস্থান করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও তার ছেলে শাহজাহান চেয়ারম্যান ঢাকায় আছে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে তারা দুবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নুরুল হক ভুট্টু কক্সবাজারের একটি আস্তানায় অবস্থান করছে। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানা পুলিশ নুরুল হক ভুট্টু, তার এক ভাই ও বাবার ৩১ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করেছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে আলোচিত কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে কয়েকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।

এদিকে সাবেক এমপি বদি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় ইয়াবা পাচারের হোতা হিসেবে নামও ছিল এক সময়। ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ৭৩ জনকে কক্সবাজারের ইয়াবা গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, তাদের শীর্ষে ছিলেন বদি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বদির বদলে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর ২ মাসের মধ্যে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা কারবারি। তাদের মধ্যে বদির চার ভাইসহ আট আত্মীয়ও ছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে ইয়াবার প্রথম চালান দেশে এনেছিল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়াপাড়ার ডা. মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাইফুল করিম। মাদকের কারবারে রাতারাতি ধনী হয়ে ওঠা সাইফুল কক্সবাজার জেলা থেকে সর্বোচ্চ কর দিয়ে সিআইপি মর্যাদাও পেয়েছিল। টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনের সাতটি মামলার পলাতক আসামি সাইফুলকে গত ৩০ মে গ্রেফতার করে টেকনাফের পুলিশ। থানায় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে গভীর রাতে ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে বের হয় পুলিশের একটি দল। টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের কাছে মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তার নিহত হওয়ার খবর জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এর আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোট ৬৭ জনের নাম প্রকাশ করে গেছে সাইফুল! সেখানে কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা ও বেশ কয়েক সাংবাদিকের নামও এসেছে। কিন্তু পুলিশের করা মামলার এজাহারে কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা সাংবাদিকের নাম নেই। সেখানে সাইফুলের ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসার অন্যতম সহযোগী হিসেবে জাফর আলম ওরফে টিটি জাফরের কথা বলা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, টিটি জাফরের মাধ্যমে হুন্ডির টাকায় বাংলাদেশে ইয়াবার চালান আনা হতো এবং সিন্ডিকেটের সহযোগীদের মাধ্যমে ওই ইয়াবার চালান সারাদেশে পাচার করা হতো।

এ মামলার আসামির তালিকায় নাম থাকা ইয়াবা কারবারিরা হলো টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার জাফর আহমদ ওরফে টিটি জাফর, অলিয়াবাদ গ্রামের ছৈয়দ আলম ওরফে সোনা মিয়া, পুরান পল্লানপাড়ার মো. ফারুক (বদির ভাগ্নে), ডেইলপাড়ার মো. আমিন, শীলবুনিয়াপাড়ার নুর হাছন, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার আমির আলী ওরফে বার্মাইয়া আলী, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বড় হাবিরপাড়ার মো. আলী আহম্মদ, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. আয়াছ ওরফে বার্মাইয়া আয়াছ, তার ছোট ভাই মো. ইয়াছের ওরফে বার্মাইয়া ইয়াছের, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. দেলোয়ার, কেরুনতলী এলাকার মো. মিজান ও লেঙ্গুর বিলের জাফর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের মো. কাদের। এছাড়া অলিয়াবাদ গ্রামের রবিউল আলম, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. শফিক, মো. শামসু, উত্তর লম্বরীর মো. শামসু, মধ্য জালিয়াপাড়ার মো. মনিরুজ্জামান ওরফে আমির সাব ও নিহত সাইফুল করিমের ভাগ্নে মো. মিজানের নাম রয়েছে ১৮ জনের মধ্যে।

এজাহারে বলা হয়েছে, সাইফুল টেকনাফ স্থলবন্দরের বৈধ ব্যবসার আড়ালে উপরে উল্লেখিত আসামিদের মাধ্যমে ইয়াবা কারবার পরিচালনা করত। মায়ানমারের মংডু শহর থেকে ইয়াবার চালান টেকনাফ এনে সারাদেশে পাচার করত। মামলার আসামিরা যৌথ মূলধন বিনিয়োগ করে ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি কিনত।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ নানাভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।