ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

  • অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩০ জুন
  • হাতকড়া না পরানোয় প্রতিবাদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৩০ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে রোববার হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানার পুলিশ। পরে আদালতে হাজির করার খবরে গতকাল সকাল থেকে আদালত চত্বরে পুলিশ ও গণমাধ্যমের কর্মীরা ভিড় করতে থাকেন। প্রিজন ভ্যানে করে তাকে দুপুর সাড়ে ১২টার পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে রাখা হয়। পরে বেলা ২টার পর বাদামি রঙের টি-শার্ট ও কালো চশমা পরা মোয়াজ্জেমকে পুলিশ বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। মোয়াজ্জেম এ সময় মাথা নিচু করে ছিলেন। প্রথমে তাকে কাঠগড়ার বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়। এ সময় তার হাতে হাতকড়া না থাকায় আইনজীবীরা মোয়াজ্জেমের হাতে হাতকড়া পরানোর দাবি তোলেন। এরপর তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে তাকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। তার জন্য জামিন আবেদন করা হয়।

আসামি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ আদালতকে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য তিনি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ না দিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে। দরখাস্তকারী আসামি ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক ছিলেন না। পত্রিকা মারফত তিনি জানতে পারেন, তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ জন্য আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। পালিয়ে বিদেশে যাননি।

এদিকে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন আদালতকে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আইনের সেবক হয়েও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাননি। আদালত যখন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন, তখন তিনি সরাসরি আপনার আদালতে হাজির হতে পারতেন। নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে পারতেন। কিন্তু ওসি মোয়াজ্জেম তা না করে পালিয়ে ছিলেন। তাই তার জামিন আবেদন নাকচ করা হোক।

আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ফেনীতে হত্যাকা-ের শিকার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোয় হয়। গত মার্চে নুসরাত তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর মোয়াজ্জেম তাকে থানায় ডেকে নিয়ে জবানবন্দি নিয়েছিলেন। এর কয়েকদিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখনই ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরে বিচারক ওই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এরই ধারাবাহিকতায় পিবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে, সেখানে ওসি মোয়াজ্জেমের নিজের মোবাইল ফোনে জবানবন্দি রেকর্ড করা এবং তা ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। পিবিআইয়ের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারক গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এর আগে হাসপাতালে নুসরাতের মৃত্যুর পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে।

মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০১৯ , ৪ আষাঢ় ১৪২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪০

ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

আদালত বার্তা পরিবেশক

image

  • অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩০ জুন
  • হাতকড়া না পরানোয় প্রতিবাদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৩০ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে রোববার হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানার পুলিশ। পরে আদালতে হাজির করার খবরে গতকাল সকাল থেকে আদালত চত্বরে পুলিশ ও গণমাধ্যমের কর্মীরা ভিড় করতে থাকেন। প্রিজন ভ্যানে করে তাকে দুপুর সাড়ে ১২টার পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে রাখা হয়। পরে বেলা ২টার পর বাদামি রঙের টি-শার্ট ও কালো চশমা পরা মোয়াজ্জেমকে পুলিশ বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। মোয়াজ্জেম এ সময় মাথা নিচু করে ছিলেন। প্রথমে তাকে কাঠগড়ার বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়। এ সময় তার হাতে হাতকড়া না থাকায় আইনজীবীরা মোয়াজ্জেমের হাতে হাতকড়া পরানোর দাবি তোলেন। এরপর তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে তাকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। তার জন্য জামিন আবেদন করা হয়।

আসামি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ আদালতকে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য তিনি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ না দিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে। দরখাস্তকারী আসামি ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক ছিলেন না। পত্রিকা মারফত তিনি জানতে পারেন, তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ জন্য আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। পালিয়ে বিদেশে যাননি।

এদিকে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন আদালতকে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আইনের সেবক হয়েও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাননি। আদালত যখন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন, তখন তিনি সরাসরি আপনার আদালতে হাজির হতে পারতেন। নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে পারতেন। কিন্তু ওসি মোয়াজ্জেম তা না করে পালিয়ে ছিলেন। তাই তার জামিন আবেদন নাকচ করা হোক।

আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ফেনীতে হত্যাকা-ের শিকার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোয় হয়। গত মার্চে নুসরাত তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর মোয়াজ্জেম তাকে থানায় ডেকে নিয়ে জবানবন্দি নিয়েছিলেন। এর কয়েকদিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখনই ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরে বিচারক ওই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এরই ধারাবাহিকতায় পিবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে, সেখানে ওসি মোয়াজ্জেমের নিজের মোবাইল ফোনে জবানবন্দি রেকর্ড করা এবং তা ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। পিবিআইয়ের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারক গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এর আগে হাসপাতালে নুসরাতের মৃত্যুর পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে।