চেক জালিয়াতি মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ আদালতে

আত্মসাতের দেড় কোটি টাকায় স্ত্রীর নামে বাড়ি

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি চেক জালিয়াতি মামলায় গতকাল দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। ফেনীতে উম্মুল কোরআন ক্যাডেট মাদ্রাসার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে উম্মুল কুরা ডেভেলপার লিমিটেড নামে একটি আবাসন সমিতির ১০৯ সদস্যের নামে থাকা ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে সে। ফেনীর পাঠানবাড়ি এলাকায় সে গড়ে তোলে আলিশান বাড়ি ‘ফেরদৌসী মঞ্জিল’। ইসলামী ব্যাংক কলেজ রোড ফেনী শাখায় চেকটি বার বার প্রত্যাখ্যাত হলে আবদুল কাইয়ুম বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর আদালতে মামলাটি করেন। নিয়মিত শুনানির অংশ হিসেবে গতকাল এ মামলার চার সাক্ষীর মধ্যে দু’জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অসিম কুমার দে। সমিতির সাধারণ সভায় আত্মসাৎ প্রমাণিত হলে সমিতির সব সদস্যের পক্ষে আবদুল কাইয়ুমের নামে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিল অধ্যক্ষ সিরাজ। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি শাহ মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম বলেন সোমবার বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। জেরার জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। আমরা এ মামলায় আসামির শাস্তি চেয়েছি।

উম্মুল কুরা ডেভেলপার লিমিটেডের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাওলানা আবদুল মালেক বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে ১০৯ জনের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদ একা হাতিয়ে নেয় অধ্যক্ষ সিরাজ। কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রির সুবিধায় চেয়ারম্যান সিরাজকে একক ক্ষমতার অধিকার দেয়া হয়। লেনদেন ও ব্যাংকের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে এমন সিদ্ধান্ত নেন প্রতিষ্ঠানের ইসি কমিটির সদস্যরা। তবে এমন সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। ওই সুযোগে কৌশলে পুরো টাকাই হাতিয়ে নেয় সিরাজ। সদস্যরা টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিলে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট সে ওই টাকার একটি চেক দেয়। ২৭ আগস্ট চেকটি ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়। ৩০ আগস্ট লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর সমিতির সদস্যরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৮ সালে এ মামলায় ২১ দিন জেলও খাটে অধ্যক্ষ সিরাজ।

মামলার বাদী আবদুল কাইয়ুম নিশান বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অধীন থাকা উম্মুল কোরআন মাদ্রাসা ভবনটি ২০১৭ সালে রাজু, সোহাগ, নয়ন ও মতুর্জা নামে কয়েক সন্ত্রাসীর সহায়তায় সিরাজ দখল করে। তিনি বলেন, ফেনীর মহিপাল এলাকায় কোম্পানির নামে থাকা সাড়ে ১৬ শতাংশ জমি নিজের নামে করে নেন সে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ফেনীর পাঠানবাড়ির মোড় এলাকায় উসমান ফার্নিচার নামে জমির দখল নেয় সে। এই কাজে তাকে ভ্যান নয়ন সহায়তা করে। উম্মুল কুরা ডেভেলপারের অধীনে থাকা এসব সম্পত্তি দখল করে সব টাকা নিজের নামে ব্যাংকে জমা করে সিরাজ। কোম্পানির সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করে সে ফেনীর পাঠানবাড়ির মোড়ে স্ত্রীর নামে গড়ে তোলেন আলিশান বাড়ি ‘ফেরদৌসী মঞ্জিল’।

মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০১৯ , ৪ আষাঢ় ১৪২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪০

চেক জালিয়াতি মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ আদালতে

আত্মসাতের দেড় কোটি টাকায় স্ত্রীর নামে বাড়ি

প্রতিনিধি, ফেনী

image

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি চেক জালিয়াতি মামলায় গতকাল দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। ফেনীতে উম্মুল কোরআন ক্যাডেট মাদ্রাসার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে উম্মুল কুরা ডেভেলপার লিমিটেড নামে একটি আবাসন সমিতির ১০৯ সদস্যের নামে থাকা ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে সে। ফেনীর পাঠানবাড়ি এলাকায় সে গড়ে তোলে আলিশান বাড়ি ‘ফেরদৌসী মঞ্জিল’। ইসলামী ব্যাংক কলেজ রোড ফেনী শাখায় চেকটি বার বার প্রত্যাখ্যাত হলে আবদুল কাইয়ুম বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর আদালতে মামলাটি করেন। নিয়মিত শুনানির অংশ হিসেবে গতকাল এ মামলার চার সাক্ষীর মধ্যে দু’জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অসিম কুমার দে। সমিতির সাধারণ সভায় আত্মসাৎ প্রমাণিত হলে সমিতির সব সদস্যের পক্ষে আবদুল কাইয়ুমের নামে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিল অধ্যক্ষ সিরাজ। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি শাহ মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম বলেন সোমবার বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। জেরার জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। আমরা এ মামলায় আসামির শাস্তি চেয়েছি।

উম্মুল কুরা ডেভেলপার লিমিটেডের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাওলানা আবদুল মালেক বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে ১০৯ জনের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদ একা হাতিয়ে নেয় অধ্যক্ষ সিরাজ। কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রির সুবিধায় চেয়ারম্যান সিরাজকে একক ক্ষমতার অধিকার দেয়া হয়। লেনদেন ও ব্যাংকের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে এমন সিদ্ধান্ত নেন প্রতিষ্ঠানের ইসি কমিটির সদস্যরা। তবে এমন সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। ওই সুযোগে কৌশলে পুরো টাকাই হাতিয়ে নেয় সিরাজ। সদস্যরা টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিলে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট সে ওই টাকার একটি চেক দেয়। ২৭ আগস্ট চেকটি ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়। ৩০ আগস্ট লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর সমিতির সদস্যরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৮ সালে এ মামলায় ২১ দিন জেলও খাটে অধ্যক্ষ সিরাজ।

মামলার বাদী আবদুল কাইয়ুম নিশান বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অধীন থাকা উম্মুল কোরআন মাদ্রাসা ভবনটি ২০১৭ সালে রাজু, সোহাগ, নয়ন ও মতুর্জা নামে কয়েক সন্ত্রাসীর সহায়তায় সিরাজ দখল করে। তিনি বলেন, ফেনীর মহিপাল এলাকায় কোম্পানির নামে থাকা সাড়ে ১৬ শতাংশ জমি নিজের নামে করে নেন সে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ফেনীর পাঠানবাড়ির মোড় এলাকায় উসমান ফার্নিচার নামে জমির দখল নেয় সে। এই কাজে তাকে ভ্যান নয়ন সহায়তা করে। উম্মুল কুরা ডেভেলপারের অধীনে থাকা এসব সম্পত্তি দখল করে সব টাকা নিজের নামে ব্যাংকে জমা করে সিরাজ। কোম্পানির সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করে সে ফেনীর পাঠানবাড়ির মোড়ে স্ত্রীর নামে গড়ে তোলেন আলিশান বাড়ি ‘ফেরদৌসী মঞ্জিল’।