সাকিব-লিটনের অবিস্মরণীয় জুটিতে বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হতে পারে

আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যে কবিগুরুর উপস্থিতি অত্যাবশ্যকীয় তা বলা বাহুল্য। যেমন-দহে অতীত ভূবনে ভূবনে, কাজ করে যাও গোপনে গোপনে। গত সোমবার সামারসেট কাউন্টির টনটন গ্রাউন্ডে মাশরাফি বাহিনীর আরেকটি ঐতিহাসিক জয় যে অতীতে নাটকীয় সব সাফল্যের পুনরাবৃত্তি তা সহজে অনুমেয়। যার ফলে বিশ্ব ক্রিকেট এবং দেশবাসীকে একাত্ম হয়ে আনন্দ-উল্লাসের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। এ জয় যে আগের সবকটি জয়ের চেয়েও গুরুত্ববহ এবং মর্যাদাপূর্ণ তা বলা বাহুল্য। ২০১৫ বিশ্বকাপে এবারের স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে নাটকীয় জয়ে কোয়ার্টারে ওঠা এবং গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ধরাশায়ী করে সেমিতে খেলার যোগ্যতার মাপকাঠিতে বাংলাদেশ দল ক্রিকেট বিশ্বে উন্নতির রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে।

তারপরও বর্তমান দলের মূল সমস্যা, সাফল্য অর্জনে ধারাবাহিকতার ঘাটতির-হামেশা দেখা যায়। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের বিশ্বকাপেও। গত ২ জুন লন্ডন ওভালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৩ শতাধিক রান করে জয় লাভের পর টানা ২ ম্যাচে হার সেটা প্রমাণিত। ব্রিস্টলে ৪র্থ ম্যাচে লঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টিতে পন্ড হওয়ায় মাশরাফি বাহিনীর শেষ চারে খেলার আশা-ভরসা উবে যায়। যদিও পয়েন্ট তালিকায় ৭মে থাকাও কম নয়। কিন্তু‘ আরও ওপরে ওঠার জন্য গত সোমবার টনটেনে উন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল সাংঘাতিক কঠিন পরীক্ষা। কারণ তাদের দলও বেশ ভালো খেলছে। অবশ্য বাংলাদেশকে অতীতে অনেকবার এমন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তবে বিশ্বকাপের আগে ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে উন্ডিজকে ৩ বার হারিয়ে শিরোপা জয়ের যথার্থতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জও ছিল। এর অন্যতম কারণ ঐ সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের গেইলসহ ২/৩ জন শীর্ষ খেলোয়াড় খেলেননি। এজন্য মাশরাফিদের জয়ের কোন বিকল্প ছিল না। কোচ রোডস, বিসিবি ও দেশবাসীও জানেন এবং বিশ্বাস করেন দলের শক্তি- সামর্থ, আত্মবিশ্বাস ও মনোবল এবার আকাশচুম্বি। কিন্তু ভয় ছিল ক্রিকেটের অনিশ্চিত চরিত্রে। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড ও স্বাগতিকদের কছে হারের পর উন্ডিজ বধে পুরো ভরসা হচ্ছিল না। তদুপরি কাডির্ফের মতো এবারও টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে ক্যারিবিয়ানেদের ৩২১ রান সংগ্রহে মনের জোর বেশ নড়বড়ে করে দেয়।

কিন্তু‘ বিশ্ব ক্রিকেটের শীর্ষ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং গত ৩ ম্যাচে অলস সময় কাটানো লিটন দাসের ৫ বোলার দক তুলোধুনো করা অবিস্মরণীয় সব শটে কুপোকাত হয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ীরা। তাও আবার ৪১.৩ ওভারে মাত্র ৩ জনের বিনিময়ে ৩২২ রান করা সত্যি সোনায়-সোহাগা। ৪র্থ উকেটে এ দু’জনের নান্দনিক সব শট গোটা ক্রিকেট জগৎকেও বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। কার্ডিফে চ্যম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব-মাহমুদুল্লাহর অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের প্রত্যক্ষদর্শী আমিও লিখছি এবার তার চেয়ে সুপার-ডুপার সাকিব-লিটনের অপরাজিত জুটির কালজয়ী এ গৌরব ময় খেলার কৃতিত্বে বাংলাদেশ একলাফে ৭ থেকে ৫ম স্থানে। এখন আফসোস হচ্ছে লঙ্কার ম্যাচটি হলে শেষ চারে খেলার স্বপ্ন হয় তো বাস্তবে রূপ নিতো। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ জয়ের পর শেষ চারে খেলতে না পারলেও প্রাপ্তির খাতা অমর্যাদা হতো না। সত্যি বলতে কি সাকিব-লিটনের অবাক করা ব্যাটিং দেখার পর রাতেও স্মৃতিতে জাগরুক ছিল। বিশেষত, শেষ দিকে গ্যাব্রিয়েলের এক ওভারের প্রথম ৩ বলে লিটনের ৩টি ছক্কা মারার দৃশ্য। সাকিবের উপর অবশ্য কোন সময় ভরসার কমতি ছিল না। বিশেষ করে অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধারের পর কোচ রোডসের মন্তব্য (এবার প্রমাণ করতে হবে ) যে তাকে আরও প্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী তা অনস্বীকার্য। এ সুবাদে তিনি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের শীর্ষে স্থান করে নিয়েছেন। কিন্তু লিটন? ওপেনার ও কিপার হয়েও দলে খেলার সুযোগ পচ্ছেন না তামিম-সৌম্য ও মুশফিকের পোক্ত স্থানের কারণে। সৌভাগ্যবশত মিঠুনের টানা ব্যর্থতায় কপাল খুলে যাওয়া লিটন যে বাজীমাত করবেন তা কারও ভাবনায় ছিল কিনা সন্দেহ। মুশফিকের দুর্ভাগ্যজনক আউটে সুযোগ পেয়ে লিটন ক্রিজে নেমে ১/২ রান করে যেভাবে অবস্থান মজবুত করেন তা নতুনদের জন্য শিক্ষনীয়। অত্যন্ত ঠান্ডা মেজাজে সাকিবকে সঙ্গ দেয়ার পাশাপাশি নিজের সংগ্রহকেও ৬ কমশতকে উন্নীত করার পথে যে সর্বসাহসিক ছক্কা ও বাউন্ডারি মারেন তা দেশবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবচেয়ে বেশি প্রশংসনীয় হচ্ছে স্থায়ী ভিত গড়ার পর তার ৮টি বাউন্ডারি ও ৪ টি ছক্কার মারে সাবলীল ভঙ্গি। যাকে বলা যায় লুকিয়ে থাকা রতœ। আসলে মনে হয় সঙ্গী ও অভিজ্ঞ সাকিবের রকমারি বাউন্ডারি মার দেখে লিটনের মন-মানসিকতা ও মনোবলকে সুদৃঢ় করেছে। বিশেষ করে ৩০ ওভারের পর এ দু’জনের ব্যাট উন্ডিজকে নাকানি-চুবানি খাওয়ায় বললেও কম হয়। তাদের ব্যাটিং রূপকথাকেও হার মানায়।

মাশরাফিদের নতুন লক্ষ্য বাকি ৪টি ম্যাচের অন্তত ২টিতে জিতে রানরেট ও পয়েন্টের উন্নতি সাধন। এর মধ্যে আফগানিস্তান কে হারানো ফরজ। এরপর পাকিস্তান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটিকে হারাতে পারলে পথ মোটামুটি পরিষ্কার।

বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০

সাকিব-লিটনের অবিস্মরণীয় জুটিতে বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হতে পারে

image

আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যে কবিগুরুর উপস্থিতি অত্যাবশ্যকীয় তা বলা বাহুল্য। যেমন-দহে অতীত ভূবনে ভূবনে, কাজ করে যাও গোপনে গোপনে। গত সোমবার সামারসেট কাউন্টির টনটন গ্রাউন্ডে মাশরাফি বাহিনীর আরেকটি ঐতিহাসিক জয় যে অতীতে নাটকীয় সব সাফল্যের পুনরাবৃত্তি তা সহজে অনুমেয়। যার ফলে বিশ্ব ক্রিকেট এবং দেশবাসীকে একাত্ম হয়ে আনন্দ-উল্লাসের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। এ জয় যে আগের সবকটি জয়ের চেয়েও গুরুত্ববহ এবং মর্যাদাপূর্ণ তা বলা বাহুল্য। ২০১৫ বিশ্বকাপে এবারের স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে নাটকীয় জয়ে কোয়ার্টারে ওঠা এবং গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ধরাশায়ী করে সেমিতে খেলার যোগ্যতার মাপকাঠিতে বাংলাদেশ দল ক্রিকেট বিশ্বে উন্নতির রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে।

তারপরও বর্তমান দলের মূল সমস্যা, সাফল্য অর্জনে ধারাবাহিকতার ঘাটতির-হামেশা দেখা যায়। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের বিশ্বকাপেও। গত ২ জুন লন্ডন ওভালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৩ শতাধিক রান করে জয় লাভের পর টানা ২ ম্যাচে হার সেটা প্রমাণিত। ব্রিস্টলে ৪র্থ ম্যাচে লঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টিতে পন্ড হওয়ায় মাশরাফি বাহিনীর শেষ চারে খেলার আশা-ভরসা উবে যায়। যদিও পয়েন্ট তালিকায় ৭মে থাকাও কম নয়। কিন্তু‘ আরও ওপরে ওঠার জন্য গত সোমবার টনটেনে উন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল সাংঘাতিক কঠিন পরীক্ষা। কারণ তাদের দলও বেশ ভালো খেলছে। অবশ্য বাংলাদেশকে অতীতে অনেকবার এমন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তবে বিশ্বকাপের আগে ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে উন্ডিজকে ৩ বার হারিয়ে শিরোপা জয়ের যথার্থতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জও ছিল। এর অন্যতম কারণ ঐ সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের গেইলসহ ২/৩ জন শীর্ষ খেলোয়াড় খেলেননি। এজন্য মাশরাফিদের জয়ের কোন বিকল্প ছিল না। কোচ রোডস, বিসিবি ও দেশবাসীও জানেন এবং বিশ্বাস করেন দলের শক্তি- সামর্থ, আত্মবিশ্বাস ও মনোবল এবার আকাশচুম্বি। কিন্তু ভয় ছিল ক্রিকেটের অনিশ্চিত চরিত্রে। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড ও স্বাগতিকদের কছে হারের পর উন্ডিজ বধে পুরো ভরসা হচ্ছিল না। তদুপরি কাডির্ফের মতো এবারও টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে ক্যারিবিয়ানেদের ৩২১ রান সংগ্রহে মনের জোর বেশ নড়বড়ে করে দেয়।

কিন্তু‘ বিশ্ব ক্রিকেটের শীর্ষ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং গত ৩ ম্যাচে অলস সময় কাটানো লিটন দাসের ৫ বোলার দক তুলোধুনো করা অবিস্মরণীয় সব শটে কুপোকাত হয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ীরা। তাও আবার ৪১.৩ ওভারে মাত্র ৩ জনের বিনিময়ে ৩২২ রান করা সত্যি সোনায়-সোহাগা। ৪র্থ উকেটে এ দু’জনের নান্দনিক সব শট গোটা ক্রিকেট জগৎকেও বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। কার্ডিফে চ্যম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব-মাহমুদুল্লাহর অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের প্রত্যক্ষদর্শী আমিও লিখছি এবার তার চেয়ে সুপার-ডুপার সাকিব-লিটনের অপরাজিত জুটির কালজয়ী এ গৌরব ময় খেলার কৃতিত্বে বাংলাদেশ একলাফে ৭ থেকে ৫ম স্থানে। এখন আফসোস হচ্ছে লঙ্কার ম্যাচটি হলে শেষ চারে খেলার স্বপ্ন হয় তো বাস্তবে রূপ নিতো। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ জয়ের পর শেষ চারে খেলতে না পারলেও প্রাপ্তির খাতা অমর্যাদা হতো না। সত্যি বলতে কি সাকিব-লিটনের অবাক করা ব্যাটিং দেখার পর রাতেও স্মৃতিতে জাগরুক ছিল। বিশেষত, শেষ দিকে গ্যাব্রিয়েলের এক ওভারের প্রথম ৩ বলে লিটনের ৩টি ছক্কা মারার দৃশ্য। সাকিবের উপর অবশ্য কোন সময় ভরসার কমতি ছিল না। বিশেষ করে অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধারের পর কোচ রোডসের মন্তব্য (এবার প্রমাণ করতে হবে ) যে তাকে আরও প্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী তা অনস্বীকার্য। এ সুবাদে তিনি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের শীর্ষে স্থান করে নিয়েছেন। কিন্তু লিটন? ওপেনার ও কিপার হয়েও দলে খেলার সুযোগ পচ্ছেন না তামিম-সৌম্য ও মুশফিকের পোক্ত স্থানের কারণে। সৌভাগ্যবশত মিঠুনের টানা ব্যর্থতায় কপাল খুলে যাওয়া লিটন যে বাজীমাত করবেন তা কারও ভাবনায় ছিল কিনা সন্দেহ। মুশফিকের দুর্ভাগ্যজনক আউটে সুযোগ পেয়ে লিটন ক্রিজে নেমে ১/২ রান করে যেভাবে অবস্থান মজবুত করেন তা নতুনদের জন্য শিক্ষনীয়। অত্যন্ত ঠান্ডা মেজাজে সাকিবকে সঙ্গ দেয়ার পাশাপাশি নিজের সংগ্রহকেও ৬ কমশতকে উন্নীত করার পথে যে সর্বসাহসিক ছক্কা ও বাউন্ডারি মারেন তা দেশবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবচেয়ে বেশি প্রশংসনীয় হচ্ছে স্থায়ী ভিত গড়ার পর তার ৮টি বাউন্ডারি ও ৪ টি ছক্কার মারে সাবলীল ভঙ্গি। যাকে বলা যায় লুকিয়ে থাকা রতœ। আসলে মনে হয় সঙ্গী ও অভিজ্ঞ সাকিবের রকমারি বাউন্ডারি মার দেখে লিটনের মন-মানসিকতা ও মনোবলকে সুদৃঢ় করেছে। বিশেষ করে ৩০ ওভারের পর এ দু’জনের ব্যাট উন্ডিজকে নাকানি-চুবানি খাওয়ায় বললেও কম হয়। তাদের ব্যাটিং রূপকথাকেও হার মানায়।

মাশরাফিদের নতুন লক্ষ্য বাকি ৪টি ম্যাচের অন্তত ২টিতে জিতে রানরেট ও পয়েন্টের উন্নতি সাধন। এর মধ্যে আফগানিস্তান কে হারানো ফরজ। এরপর পাকিস্তান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটিকে হারাতে পারলে পথ মোটামুটি পরিষ্কার।