মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংসে এক মাস সময় দিলেন হাইকোর্ট

সারাদেশে বাজারে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ করে এক মাসের মধ্যে ধ্বংস করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এসব আদেশ বাস্তবায়ন করে স্বাস্থসচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। এ সময় আড়ংয়ে অভিযান পরিচালনাকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের উপপরিচালককে বন্ধের দিনে যেভাবে বদলি করা হয়েছে সেটা লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করা হয়।

গেল ১০ মে রাজধানীর ফার্মগেটে খামারবাড়িতে আ কা মু গিয়াস উদ্দিন মিলকী মিলনায়তনে ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার তদারকির করি। এই বাজার তদারকির গত ছয় মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে ভোক্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই প্রতারণা রোধে অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশেই তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। কখনো ক্রেতা সেজে, আবার কখনো ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে ফার্মেসিগুলোর কার্যক্রমে নজরদারি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ১৭ জুন রিট করেন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

একইসঙ্গে আড়ংয়ে অভিযান পরিচালনাকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের উপপরিচালককে বন্ধের দিনে যেভাবে বদলি করা হয়েছে সেটা লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, বন্ধের মধ্যে ওই কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ স্থগিতে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। যদি সব কিছুতেই প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তাহলে সচিবরা কেন আছেন? তারা কী ওদের পকেটে ঢুকে গেছেন?’

শুনানিতে আড়ং ইস্যুতে আদালত বলেন, ‘আড়ংয়ে অভিযান পরিচালনাকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে বন্ধের দিনে যেভাবে বদলি করা হয়েছে সেটা লজ্জার। যারা বদলি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ধরনের বদলির ফলে যারা সৎ অফিসার, তারা কাজ করতে নিরুৎসাহিত হন।’

প্রসঙ্গত, রোজার মাসের শেষ দিকে আড়ংয়ের উত্তরা শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তা মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। পরে তাকে তাৎক্ষণিক বদলির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে। পরে তার বদলি স্থগিত করা হয়।

বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংসে এক মাস সময় দিলেন হাইকোর্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সারাদেশে বাজারে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ করে এক মাসের মধ্যে ধ্বংস করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এসব আদেশ বাস্তবায়ন করে স্বাস্থসচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। এ সময় আড়ংয়ে অভিযান পরিচালনাকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের উপপরিচালককে বন্ধের দিনে যেভাবে বদলি করা হয়েছে সেটা লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করা হয়।

গেল ১০ মে রাজধানীর ফার্মগেটে খামারবাড়িতে আ কা মু গিয়াস উদ্দিন মিলকী মিলনায়তনে ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার তদারকির করি। এই বাজার তদারকির গত ছয় মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে ভোক্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই প্রতারণা রোধে অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশেই তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। কখনো ক্রেতা সেজে, আবার কখনো ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে ফার্মেসিগুলোর কার্যক্রমে নজরদারি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ১৭ জুন রিট করেন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

একইসঙ্গে আড়ংয়ে অভিযান পরিচালনাকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের উপপরিচালককে বন্ধের দিনে যেভাবে বদলি করা হয়েছে সেটা লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, বন্ধের মধ্যে ওই কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ স্থগিতে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। যদি সব কিছুতেই প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তাহলে সচিবরা কেন আছেন? তারা কী ওদের পকেটে ঢুকে গেছেন?’

শুনানিতে আড়ং ইস্যুতে আদালত বলেন, ‘আড়ংয়ে অভিযান পরিচালনাকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে বন্ধের দিনে যেভাবে বদলি করা হয়েছে সেটা লজ্জার। যারা বদলি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ধরনের বদলির ফলে যারা সৎ অফিসার, তারা কাজ করতে নিরুৎসাহিত হন।’

প্রসঙ্গত, রোজার মাসের শেষ দিকে আড়ংয়ের উত্তরা শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তা মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। পরে তাকে তাৎক্ষণিক বদলির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে। পরে তার বদলি স্থগিত করা হয়।