২ বছরে করদাতার সংখ্যা কোটিতে উন্নীত করা হবে

এনবিআর চেয়ারম্যান

আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশে করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। গত শনিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে ‘অর্থবিল-২০১৯ ও জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ এবং নতুন ভ্যাট নীতি ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি’ বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এসব এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ কর দেন। তাই করদাতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আগামী ২ বছরের মধ্যে করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা সেই কাজ শুরু করেছি। কর জরিপ শুরু হয়েছে, পাশাপাশি কর অফিস ও জনবল বাড়ানো হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটকে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব অভিহিত করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এবারের বাজেটকে আমরা ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করেছি। এর জন্য কিছু ক্ষেত্রে প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে। কারণ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ না হলে আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। পাশাপাশি ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ার কারণে রাজস্ব আয়ও বেড়ে যাবে। এ সময় নতুন ভ্যাট আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি হলে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে আমরা তার সমাধান করব। ব্যবসায়ীরা যেন ভ্যাট ফাঁকি না দিতে পারেন, এজন্য ভ্যাট কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারি অব বাংলাদেশ-এর (আইসিএসবি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে আইসিএসবির কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) কানন কুমার রায় ও সদস্য (মূসক নীতি) ড. আবদুল মান্নান সিকদার, আইসিএসবি সভাপতি মোহাম্মদ সানাউল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এবং কোম্পানি বিভাগের প্রধান মো. আজিজুর রহমান।

প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ সিপিডি সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৭৪ ধারা এবং আয়কর বিধি ১৯৮৪-এর ৩৭নং উল্লেখ করে বলেন, চার্টার্ড সেক্রেটারিরা আইটিপি হিসেবে যোগ্যতাসম্পন্ন। তিনি এসআরও প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান যা আইসিএসবির সদস্যদের ভ্যাট উপদেষ্টা হিসেবে অনুশীলন করার আইনি অনুমতিপ্রাপ্ত হয়। এজন্য একজন সদস্যকে সর্বনিম্ন ৫ বছরের অভিজ্ঞতাসহ আবেদন করলে এনবিআর ভ্যাট আডভাইজার হিসেবে অনুমোদন দিবে। তিনি আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করেন যে এনবিআরের চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রয়োজনীয় এসআরওগুলো প্রদান করে আইসিএসবি সদস্যদের আয়কর অধ্যাদেশে আইটিপি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের জন্য স্বাভাবিকভাবেই এনবিআর রাজস্ব সংগ্রহের মূল ভূমিকা পালন করে চলছে।

গতকাল বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে বন্দরের লিংক রোড ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে পাসপোর্ট যাত্রীদের ট্রলি ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এ সময় তিনি বলেন, এবারের বাজেট বিনিয়োগবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব হয়েছে। দেশে যাতে বিনিয়োগ বেশি হয় সে জন্য ডিউটি অ্যাডজাস্ট করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়ানো ও কমানো হয়েছে। দেশে বিনিয়োগ হলে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে সহজীকরণ করা। বাণিজ্য সহজ হলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে। সে সুবিধা জনগণও ভোগ করবে। সেই লক্ষেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বহিরাগত দালালরা যাত্রীদের ব্যাগেজ টানাটানি করতে না পারে সেজন্য ল্যাগেজ ট্রলি দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে অর্থমন্ত্রীও করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আগামী অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা ২২ লাখ থেকে ১ কোটিতে উন্নীত করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাজস্ব জনবল নেই বিধায় বিপুল আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের সব মানুষ যেন কর প্রদানে অনুপ্রাণিত হয় সে বিষয়টি প্রচার করবেন। আমরা কিন্তু অনেক কঠিন কাজে নামছি। ২০ লাখ, ২২ লাখ থেকে প্রথম বছরে আমরা ১ কোটি করদাতা সংখ্যা করতে চাই। এই যে করদাতা বাড়াব, কাকে বাড়াব? যারা কর প্রদানে উপযুক্ত তাদেরই করের আওতায় আনা হবে। আমাদের দেশের ৪ কোটি মানুষ আছে। যারা আয়কর দেয়ার উপযুক্ত। আওতা বাড়িয়ে এসব মানুষকে যদি করের আওতায় আনতে পারি তাহলে আমাদের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত অনেক বেড়ে যাবে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক আউটসোর্স করব। কারণ যে পরিমাণ রাজস্ব আদায়ে লোকবল প্রয়োজন সে পরিমাণ এত অল্প সময়ে পাওয়া যাবে না। তাই আউটসোর্সের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হবে।

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

২ বছরে করদাতার সংখ্যা কোটিতে উন্নীত করা হবে

এনবিআর চেয়ারম্যান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশে করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। গত শনিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে ‘অর্থবিল-২০১৯ ও জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ এবং নতুন ভ্যাট নীতি ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি’ বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এসব এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ কর দেন। তাই করদাতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আগামী ২ বছরের মধ্যে করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা সেই কাজ শুরু করেছি। কর জরিপ শুরু হয়েছে, পাশাপাশি কর অফিস ও জনবল বাড়ানো হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটকে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব অভিহিত করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এবারের বাজেটকে আমরা ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করেছি। এর জন্য কিছু ক্ষেত্রে প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে। কারণ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ না হলে আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। পাশাপাশি ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ার কারণে রাজস্ব আয়ও বেড়ে যাবে। এ সময় নতুন ভ্যাট আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি হলে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে আমরা তার সমাধান করব। ব্যবসায়ীরা যেন ভ্যাট ফাঁকি না দিতে পারেন, এজন্য ভ্যাট কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারি অব বাংলাদেশ-এর (আইসিএসবি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে আইসিএসবির কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) কানন কুমার রায় ও সদস্য (মূসক নীতি) ড. আবদুল মান্নান সিকদার, আইসিএসবি সভাপতি মোহাম্মদ সানাউল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এবং কোম্পানি বিভাগের প্রধান মো. আজিজুর রহমান।

প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ সিপিডি সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৭৪ ধারা এবং আয়কর বিধি ১৯৮৪-এর ৩৭নং উল্লেখ করে বলেন, চার্টার্ড সেক্রেটারিরা আইটিপি হিসেবে যোগ্যতাসম্পন্ন। তিনি এসআরও প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান যা আইসিএসবির সদস্যদের ভ্যাট উপদেষ্টা হিসেবে অনুশীলন করার আইনি অনুমতিপ্রাপ্ত হয়। এজন্য একজন সদস্যকে সর্বনিম্ন ৫ বছরের অভিজ্ঞতাসহ আবেদন করলে এনবিআর ভ্যাট আডভাইজার হিসেবে অনুমোদন দিবে। তিনি আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করেন যে এনবিআরের চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রয়োজনীয় এসআরওগুলো প্রদান করে আইসিএসবি সদস্যদের আয়কর অধ্যাদেশে আইটিপি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের জন্য স্বাভাবিকভাবেই এনবিআর রাজস্ব সংগ্রহের মূল ভূমিকা পালন করে চলছে।

গতকাল বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে বন্দরের লিংক রোড ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে পাসপোর্ট যাত্রীদের ট্রলি ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এ সময় তিনি বলেন, এবারের বাজেট বিনিয়োগবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব হয়েছে। দেশে যাতে বিনিয়োগ বেশি হয় সে জন্য ডিউটি অ্যাডজাস্ট করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়ানো ও কমানো হয়েছে। দেশে বিনিয়োগ হলে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে সহজীকরণ করা। বাণিজ্য সহজ হলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে। সে সুবিধা জনগণও ভোগ করবে। সেই লক্ষেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বহিরাগত দালালরা যাত্রীদের ব্যাগেজ টানাটানি করতে না পারে সেজন্য ল্যাগেজ ট্রলি দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে অর্থমন্ত্রীও করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আগামী অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা ২২ লাখ থেকে ১ কোটিতে উন্নীত করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাজস্ব জনবল নেই বিধায় বিপুল আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের সব মানুষ যেন কর প্রদানে অনুপ্রাণিত হয় সে বিষয়টি প্রচার করবেন। আমরা কিন্তু অনেক কঠিন কাজে নামছি। ২০ লাখ, ২২ লাখ থেকে প্রথম বছরে আমরা ১ কোটি করদাতা সংখ্যা করতে চাই। এই যে করদাতা বাড়াব, কাকে বাড়াব? যারা কর প্রদানে উপযুক্ত তাদেরই করের আওতায় আনা হবে। আমাদের দেশের ৪ কোটি মানুষ আছে। যারা আয়কর দেয়ার উপযুক্ত। আওতা বাড়িয়ে এসব মানুষকে যদি করের আওতায় আনতে পারি তাহলে আমাদের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত অনেক বেড়ে যাবে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক আউটসোর্স করব। কারণ যে পরিমাণ রাজস্ব আদায়ে লোকবল প্রয়োজন সে পরিমাণ এত অল্প সময়ে পাওয়া যাবে না। তাই আউটসোর্সের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হবে।