বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক অজয় বড়ুয়া আর নেই

বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক, দৈনিক সংবাদের ক্রীড়া সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা অজয় বড়ুয়া লন্ডনের সেন্ট বার্টস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, পুত্রবধূ, দুই কন্যা, দুই জামাতা, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। অজয় বড়ুয়ার বড় সন্তান ও একমাত্র ছেলে হিমাদ্রী বড়ুয়া টুটুল সংবাদকে জানান, ‘ইংল্যান্ডের আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে যত দ্রুত সম্ভব বাবার মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হব। ’ লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার মো. আশেকুন্নবী চৌধুরী টেলিফোনে সংবাদকে জানিয়েছেন, অজয় বড়ুয়ার মরদেহ ঢাকায় পাঠানোর ব্যাপারে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

অজয় বড়ুয়া দৈনিক সংবাদের হয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সংবাদ সংগ্রহ করতে গত ৩১ মে সস্ত্রীক লন্ডন যান। বাংলাদেশের প্রথম তিনটি ম্যাচ কাভারও করেন। এরপর হঠাৎ তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিন জ¦রে ভোগার পর ২৩ জুন তাকে লন্ডনের কিং জর্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নিউমোনিয়া, হৃদরোগ ও অন্য জটিলতা দেখা দেয়ায় তাকে সেন্ট বার্র্টস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হৃৎপিন্ডে সফল অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরলেও তিনি আর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরেননি। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যেই ছিলেন। ৮ জুলাই থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পুরো শরীরে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সিটিস্ক্যান করার পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয় জানতে পারেন চিকিৎসকরা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অজয় বড়ুয়া ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই তার ক্রীড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ক্রীড়া সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে পাকিস্তানেও ফুটবল খেলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্লুজ লাভ করেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ক্লাবের হয়ে ফুটবলও খেলেছেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রীয় কর্মী ছিলেন তিনি। অজয় বড়ুয়া ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে দৈনিক সংবাদে ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। এরপর সংবাদের ক্রীড়া সম্পাদক ও ইউনিট চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি অনেক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কাভার করেছেন। ১৯৮০ সালে ব্যাংককে যুব এশিয়ান ফুটবল কাভারের মধ্য দিয়ে তার দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কাভার করা শুরু। পেশাগত কাজে তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার সময় তিনি সংবাদের হয়ে সেই বিশ্বকাপ কাভার করেন।

দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য, পেশাদার ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সদস্য, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। তার হাত ধরে অনেকে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

শোক প্রকাশ : প্রবীণ সাংবাদিক অজয় বড়ুয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও নেতারা। পাশাপাশি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন তারা।

প্রবীণ সাংবাদিক অজয় বড়ুয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান। এছাড়া বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক অজয় বড়ুয়া আর নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক, দৈনিক সংবাদের ক্রীড়া সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা অজয় বড়ুয়া লন্ডনের সেন্ট বার্টস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, পুত্রবধূ, দুই কন্যা, দুই জামাতা, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। অজয় বড়ুয়ার বড় সন্তান ও একমাত্র ছেলে হিমাদ্রী বড়ুয়া টুটুল সংবাদকে জানান, ‘ইংল্যান্ডের আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে যত দ্রুত সম্ভব বাবার মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হব। ’ লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার মো. আশেকুন্নবী চৌধুরী টেলিফোনে সংবাদকে জানিয়েছেন, অজয় বড়ুয়ার মরদেহ ঢাকায় পাঠানোর ব্যাপারে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

অজয় বড়ুয়া দৈনিক সংবাদের হয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সংবাদ সংগ্রহ করতে গত ৩১ মে সস্ত্রীক লন্ডন যান। বাংলাদেশের প্রথম তিনটি ম্যাচ কাভারও করেন। এরপর হঠাৎ তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিন জ¦রে ভোগার পর ২৩ জুন তাকে লন্ডনের কিং জর্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নিউমোনিয়া, হৃদরোগ ও অন্য জটিলতা দেখা দেয়ায় তাকে সেন্ট বার্র্টস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হৃৎপিন্ডে সফল অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরলেও তিনি আর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরেননি। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যেই ছিলেন। ৮ জুলাই থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পুরো শরীরে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সিটিস্ক্যান করার পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয় জানতে পারেন চিকিৎসকরা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অজয় বড়ুয়া ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই তার ক্রীড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ক্রীড়া সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে পাকিস্তানেও ফুটবল খেলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্লুজ লাভ করেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ক্লাবের হয়ে ফুটবলও খেলেছেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রীয় কর্মী ছিলেন তিনি। অজয় বড়ুয়া ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে দৈনিক সংবাদে ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। এরপর সংবাদের ক্রীড়া সম্পাদক ও ইউনিট চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি অনেক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কাভার করেছেন। ১৯৮০ সালে ব্যাংককে যুব এশিয়ান ফুটবল কাভারের মধ্য দিয়ে তার দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কাভার করা শুরু। পেশাগত কাজে তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার সময় তিনি সংবাদের হয়ে সেই বিশ্বকাপ কাভার করেন।

দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য, পেশাদার ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সদস্য, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। তার হাত ধরে অনেকে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

শোক প্রকাশ : প্রবীণ সাংবাদিক অজয় বড়ুয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও নেতারা। পাশাপাশি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন তারা।

প্রবীণ সাংবাদিক অজয় বড়ুয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান। এছাড়া বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।