বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ধস

জলাবদ্ধতা-রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি

নানাবিধ সমস্যায় দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসী পাহাড়ধস, জলাবদ্ধতা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও জোয়ারের পানির দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে একের পর এক বৃষ্টিতে নগরজুড়ে পানি জমার সঙ্গে সঙ্গে যানজটে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে ওয়াসার খুঁড়াখুঁড়ি। নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তার পাশে অনেক স্থানে গর্ত হয়েছে এবং গাড়ির চাকা সেসব গর্তে আটকে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোথাও দুর্ঘটনার কারণ ছিল এসব গর্ত। অনেক স্থানে রিকশা উল্টে পানিতে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে গতকাল সকাল থেকে কোন বৃষ্টিপাত না হলেও দুপুরের পর বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। অন্যদিকে ধস আতঙ্কে রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দারা। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বেশিরভাগ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সরেজমিন নগরীর চকবাজার গুলজার মোড় থেকে গণি বেকারি মোড় পর্যন্ত দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে ওয়াসার পানির সংযোগ দিতে গিয়ে সড়কটি কেটে গর্তের সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কারণে সিএনসজি অটোরিকশা, টেম্পো ও প্যাডেলচালিত রিকশা এসব গর্তে পড়ে একদিকে যানজট, অন্যদিকে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ সড়কে যান চলাচল ছিল সীমিত।

যানজটে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বন্দর) তারিক আহমদ সেলফোনে বলেন, টানা বৃষ্টিতে পুরো নগরী হাঁটুপানি আবার কোথাও কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর পোর্ট কানেকটিং সড়কজুড়ে ছোট-বড় গর্তের কারণে যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ কারণে পুরো সড়ক জুড়ে লেগে থাকে যানজট।

নগরজুড়ে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি প্রসঙ্গে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, নগরবাসীকে পানি দিতে হলে তো রাস্তা খুঁড়তে হবে। তবে আমরা কাজ করার পর তা সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিই। সিটি করপোরেশন তা মেরামত করার কথা। তারপরও তারা না করলে আমার অস্থায়ীভাবে মেরামত করে দেব।

গতকাল সরেজমিন হালিশহর কে-ব্লক এলাকার বাসিন্দারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি হলেই আমাদের এখানে কোমর পানি হয়। প্রধান সড়কে পানি না থাকলেও লেন ও বাইলেন পানি আছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আগ্রাবাদ অ্যাকসেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোড উঁচু করার খেসারত। শুধু হালিশহর কে-ব্লক নয়Ñ এল-ব্লক, জি-ব্লক, হালিশহর ছোটপুল, শান্তিবাগ, ওয়াসা মোড়, মেহেদিবাগ, প্রবর্তক মোড়, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, বাদুড়তলা, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ অ্যাকসেস রোড, বাকলিয়া, হালিশহর, চকবাজার, ডিসি রোডসহ নগরীর বড় অংশজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার কাটা সড়কগুলো। এতে নগরীর প্রধান অনেক সড়কে যান চলাচল আটকে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। ভাঙা রাস্তার কারণে পোর্ট কানেকটিং সড়কে দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকগুলো চলাচলে ডিটি রোডেও যানজট দেখা দেয়।

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনী। আগামী বছরের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনীর পাঁচটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম মাঠে কাজ করছে। এই টিমের কাজ হলো বৃষ্টি শুরু হলে কোথায় কোথায় পানি আটকে যাচ্ছে, তা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এখন কোথাও দীর্ঘক্ষণ পানি আটকে থাকার ঘটনা ঘটছে না।

জোয়ারের পানির দুর্ভোগ শুধু আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা নয়Ñ আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল, খাতুনগঞ্জ, চান্দগাঁও পাঠানিয়াগোদা রোড ও বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়। অন্যদিকে বর্ষা শুরু হলেই নগরীতে পাহাড়ধসের ঘটনা বেড়ে যায়। ভারী বর্ষণে নগরের লালখান বাজার সংলগ্ন পোড়া কলোনি পাহাড়ে ধসের সৃষ্টি হয় গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে। এতে কয়েকটি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আখতার বলেন, ভারী বর্ষণে পাহাড়ধস হতে পারেÑ এমন পূর্বাভাসের পর পোড়া কলোনি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা ৩৭টি পরিবারকে কয়েকদিন আগেই সরিয়ে নেয় জেলা প্রশাসন। ফলে বৃহস্পতিবার পাহাড়ধসের সৃষ্টি হলেও কেউ হতাহত হননি। তিনি বলেন, সরিয়ে নেয়া ৩৭টি পরিবারের মধ্যে ১২টি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের খাবার ও ত্রাণসামগ্রী দেয়া হচ্ছে। বাকিরা নগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করা তাদের আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে গেছেন। এছাড়া আজ (গতকাল) আমাদের মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। যেসব ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দারা এখনও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন, তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়ধস ব্যবস্থপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই পাহাড়ের পাদদেশের বসতিদের সরিয়ে নিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এবারও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।

একদিকে পাহাড়ধস ও অপরদিকে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগের পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর নিচু এলাকা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এটি নিত্যদুর্যোগ নগরবাসীর। গতকাল দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ওপর প্রায় হাঁটুসমান পানি। তবে সারাদিন বৃষ্টি ছিল না। আশপাশের দোকান ও বাসাবাড়িতে পানি জমলেও তারা যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় কাস্টমস অফিস সংলগ্ন মার্কেটের কাঠ ব্যবসায়ী টিংকু বলেন, বর্ষা এলে প্রতিদিন জোয়ারের সময় পানি উঠবে, তা আমরা জানি। ওই হিসেবে আমরা আমাদের কাজ করছি। বৃষ্টি বেশি হলে পানির উচ্চতাও বেড়ে যায়।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

দুর্ভোগের নগরী চট্টগ্রাম

বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ধস

জলাবদ্ধতা-রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো

নানাবিধ সমস্যায় দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসী পাহাড়ধস, জলাবদ্ধতা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও জোয়ারের পানির দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে একের পর এক বৃষ্টিতে নগরজুড়ে পানি জমার সঙ্গে সঙ্গে যানজটে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে ওয়াসার খুঁড়াখুঁড়ি। নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তার পাশে অনেক স্থানে গর্ত হয়েছে এবং গাড়ির চাকা সেসব গর্তে আটকে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোথাও দুর্ঘটনার কারণ ছিল এসব গর্ত। অনেক স্থানে রিকশা উল্টে পানিতে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে গতকাল সকাল থেকে কোন বৃষ্টিপাত না হলেও দুপুরের পর বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। অন্যদিকে ধস আতঙ্কে রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দারা। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বেশিরভাগ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সরেজমিন নগরীর চকবাজার গুলজার মোড় থেকে গণি বেকারি মোড় পর্যন্ত দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে ওয়াসার পানির সংযোগ দিতে গিয়ে সড়কটি কেটে গর্তের সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কারণে সিএনসজি অটোরিকশা, টেম্পো ও প্যাডেলচালিত রিকশা এসব গর্তে পড়ে একদিকে যানজট, অন্যদিকে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ সড়কে যান চলাচল ছিল সীমিত।

যানজটে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বন্দর) তারিক আহমদ সেলফোনে বলেন, টানা বৃষ্টিতে পুরো নগরী হাঁটুপানি আবার কোথাও কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর পোর্ট কানেকটিং সড়কজুড়ে ছোট-বড় গর্তের কারণে যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ কারণে পুরো সড়ক জুড়ে লেগে থাকে যানজট।

নগরজুড়ে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি প্রসঙ্গে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, নগরবাসীকে পানি দিতে হলে তো রাস্তা খুঁড়তে হবে। তবে আমরা কাজ করার পর তা সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিই। সিটি করপোরেশন তা মেরামত করার কথা। তারপরও তারা না করলে আমার অস্থায়ীভাবে মেরামত করে দেব।

গতকাল সরেজমিন হালিশহর কে-ব্লক এলাকার বাসিন্দারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি হলেই আমাদের এখানে কোমর পানি হয়। প্রধান সড়কে পানি না থাকলেও লেন ও বাইলেন পানি আছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আগ্রাবাদ অ্যাকসেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোড উঁচু করার খেসারত। শুধু হালিশহর কে-ব্লক নয়Ñ এল-ব্লক, জি-ব্লক, হালিশহর ছোটপুল, শান্তিবাগ, ওয়াসা মোড়, মেহেদিবাগ, প্রবর্তক মোড়, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, বাদুড়তলা, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ অ্যাকসেস রোড, বাকলিয়া, হালিশহর, চকবাজার, ডিসি রোডসহ নগরীর বড় অংশজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার কাটা সড়কগুলো। এতে নগরীর প্রধান অনেক সড়কে যান চলাচল আটকে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। ভাঙা রাস্তার কারণে পোর্ট কানেকটিং সড়কে দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকগুলো চলাচলে ডিটি রোডেও যানজট দেখা দেয়।

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনী। আগামী বছরের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনীর পাঁচটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম মাঠে কাজ করছে। এই টিমের কাজ হলো বৃষ্টি শুরু হলে কোথায় কোথায় পানি আটকে যাচ্ছে, তা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এখন কোথাও দীর্ঘক্ষণ পানি আটকে থাকার ঘটনা ঘটছে না।

জোয়ারের পানির দুর্ভোগ শুধু আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা নয়Ñ আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল, খাতুনগঞ্জ, চান্দগাঁও পাঠানিয়াগোদা রোড ও বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়। অন্যদিকে বর্ষা শুরু হলেই নগরীতে পাহাড়ধসের ঘটনা বেড়ে যায়। ভারী বর্ষণে নগরের লালখান বাজার সংলগ্ন পোড়া কলোনি পাহাড়ে ধসের সৃষ্টি হয় গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে। এতে কয়েকটি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আখতার বলেন, ভারী বর্ষণে পাহাড়ধস হতে পারেÑ এমন পূর্বাভাসের পর পোড়া কলোনি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা ৩৭টি পরিবারকে কয়েকদিন আগেই সরিয়ে নেয় জেলা প্রশাসন। ফলে বৃহস্পতিবার পাহাড়ধসের সৃষ্টি হলেও কেউ হতাহত হননি। তিনি বলেন, সরিয়ে নেয়া ৩৭টি পরিবারের মধ্যে ১২টি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের খাবার ও ত্রাণসামগ্রী দেয়া হচ্ছে। বাকিরা নগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করা তাদের আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে গেছেন। এছাড়া আজ (গতকাল) আমাদের মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। যেসব ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দারা এখনও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন, তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়ধস ব্যবস্থপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই পাহাড়ের পাদদেশের বসতিদের সরিয়ে নিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এবারও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।

একদিকে পাহাড়ধস ও অপরদিকে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগের পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর নিচু এলাকা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এটি নিত্যদুর্যোগ নগরবাসীর। গতকাল দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ওপর প্রায় হাঁটুসমান পানি। তবে সারাদিন বৃষ্টি ছিল না। আশপাশের দোকান ও বাসাবাড়িতে পানি জমলেও তারা যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় কাস্টমস অফিস সংলগ্ন মার্কেটের কাঠ ব্যবসায়ী টিংকু বলেন, বর্ষা এলে প্রতিদিন জোয়ারের সময় পানি উঠবে, তা আমরা জানি। ওই হিসেবে আমরা আমাদের কাজ করছি। বৃষ্টি বেশি হলে পানির উচ্চতাও বেড়ে যায়।