ইরানে হামলা

ট্রাম্পের ক্ষমতা খর্বের অনুমোদন দিল প্রতিনিধি পরিষদ

ইরানে হামলা চালাতে চাইলে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস) অনুমতি নিতে হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। হামলা চালানোর ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের একক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নতুন একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কংগ্রেস। প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ইরানে হামলা চালানোর আগে ট্রাম্পকে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হবে। তবে ইরান যদি আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে তাহলে এ প্রস্তাব কার্যকর হবে না। তেহরানের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মার্কিন কংগ্রেস এমন পদক্ষেপ নিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দেশটির প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া কোন দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন না। তবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাত দেখিয়ে কোন দেশের ওপর সীমিত হামলা বা সীমিত আকারে কোথাও সেনা পাঠানোর জন্য কংগ্রেসের অনুমতির প্রয়োজন নেই। এ আইনের আওতায় থেকে ট্রাম্প যাতে ইরানের ওপর সেরকম কোন হামলা চালাতে না পারেন সেজন্য প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে। সম্প্রতি ইরানের আকাশসীমায় একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন অনুপ্রবেশ করার পর সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। এর একদিন পর ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ইরানের কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে অনুমোদিত না হলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের যৌথ অধিবেশন বসবে। এরপর দুই কক্ষে অনুমোদিত হলে প্রস্তাবটিকে চূড়ান্তভাবে আইনে পরিণত হওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সইয়ের প্রয়োজন হবে। এদিকে শুক্রবার বিরোধী ডেমোক্র্যাট দল নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটির পক্ষে ২৫১ ও বিপক্ষে ১৭০ ভোট পড়ে। প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, কংগ্রেস ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করলে কিংবা ইরানে হামলার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন নেয়া না হলে দেশটির ওপর হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট কোন সামরিক বাজেট পাবেন না। এদিনের ভোটাভুটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোর সমর্থক বলে পরিচিত অনেক রিপাবলিকান প্রতিনিধিও প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এদের মধ্যে ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত আইন প্রণেতা ম্যাট গেটস অন্যতম।

এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ইয়েমেনের ওপর সৌদি আগ্রাসনে রিয়াদের প্রতি সমর্থন নিষিদ্ধ করে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে। ওই প্রস্তাবটিরও আইনে পরিণত হওয়ার জন্য সিনেটের অনুমোদন লাগবে।

উগ্র-জাতীয়তাবাদী

উসকানিদাতাদের প্রশংসা ট্রাম্পের

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্র-জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের উসকানিদাতাদের প্রশংসার জন্য হোয়াইট হাউজে স্যোশাল মিডিয়া সম্মেলনকে কাজে লাগিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

যদিও ট্রাম্প নিজেই এদের অনেকের দৃষ্টিভঙ্গিকে চরম হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানানো হয় ইন্টারনেটের ‘সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে আলোচনার জন্য। তবে এতে ফেসবুক, টুইটার বা গুগলের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানির কোন প্রতিনিধিকে আহ্বান জানায়নি ট্রাম্প প্রশাসন। যাদের আহ্বান জানানো হয়েছে তাদের মধ্যে ছিলেন প্রজেক্ট ভেরিতাসের প্রতিষ্ঠাতা জেমস ও’কিফি, ট্রাম্পপন্থি আন্দোলনকর্মী বিল মিচেল, কলেজ রিপাবলিকান আন্দোলনকর্মী চার্রি কির্ক।

বেন গ্যারিসন নামের ডানপন্থি কার্টুনিস্ট সমালোচনার মুখে উপস্থিত হতে সম্মত হননি। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট টুইটারে নিজের অসংখ্য ফলোয়ার থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং রক্ষণশীল ঘরানার উপস্থিতদের প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, সামাজিকমাধ্যমে তার অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া কমে গেছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে না ধরেই ট্রাম্প বলেন, আপনাদের অনেকেই অসাধারণ প্রতিভাবান। তবে তা খারাপ। আলোচনার পর ট্রাম্প এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, তিনি সব মার্কিন নাগরিকদের জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে নিয়ন্ত্রণ ও আইনি সমাধান খুঁজে দেখার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডানপন্থি ও উগ্র-জাতীয়তবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগ তোলার পর বৃহস্পতিবার এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

মে মাসে হোয়াইট হাউজ ফেসবুক ও টুইটারে সেন্সরশিপের শিকার হলে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি টুল প্রকাশ করেছে।

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০

ইরানে হামলা

ট্রাম্পের ক্ষমতা খর্বের অনুমোদন দিল প্রতিনিধি পরিষদ

সংবাদ ডেস্ক

image

সিনেট অনুমোদনের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সই করলে প্রস্তাবটি পাস হবে

ইরানে হামলা চালাতে চাইলে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস) অনুমতি নিতে হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। হামলা চালানোর ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের একক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নতুন একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কংগ্রেস। প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ইরানে হামলা চালানোর আগে ট্রাম্পকে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হবে। তবে ইরান যদি আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে তাহলে এ প্রস্তাব কার্যকর হবে না। তেহরানের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মার্কিন কংগ্রেস এমন পদক্ষেপ নিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দেশটির প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া কোন দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন না। তবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাত দেখিয়ে কোন দেশের ওপর সীমিত হামলা বা সীমিত আকারে কোথাও সেনা পাঠানোর জন্য কংগ্রেসের অনুমতির প্রয়োজন নেই। এ আইনের আওতায় থেকে ট্রাম্প যাতে ইরানের ওপর সেরকম কোন হামলা চালাতে না পারেন সেজন্য প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে। সম্প্রতি ইরানের আকাশসীমায় একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন অনুপ্রবেশ করার পর সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। এর একদিন পর ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ইরানের কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে অনুমোদিত না হলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের যৌথ অধিবেশন বসবে। এরপর দুই কক্ষে অনুমোদিত হলে প্রস্তাবটিকে চূড়ান্তভাবে আইনে পরিণত হওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সইয়ের প্রয়োজন হবে। এদিকে শুক্রবার বিরোধী ডেমোক্র্যাট দল নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটির পক্ষে ২৫১ ও বিপক্ষে ১৭০ ভোট পড়ে। প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, কংগ্রেস ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করলে কিংবা ইরানে হামলার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন নেয়া না হলে দেশটির ওপর হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট কোন সামরিক বাজেট পাবেন না। এদিনের ভোটাভুটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোর সমর্থক বলে পরিচিত অনেক রিপাবলিকান প্রতিনিধিও প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এদের মধ্যে ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত আইন প্রণেতা ম্যাট গেটস অন্যতম।

এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ইয়েমেনের ওপর সৌদি আগ্রাসনে রিয়াদের প্রতি সমর্থন নিষিদ্ধ করে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে। ওই প্রস্তাবটিরও আইনে পরিণত হওয়ার জন্য সিনেটের অনুমোদন লাগবে।

উগ্র-জাতীয়তাবাদী

উসকানিদাতাদের প্রশংসা ট্রাম্পের

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্র-জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের উসকানিদাতাদের প্রশংসার জন্য হোয়াইট হাউজে স্যোশাল মিডিয়া সম্মেলনকে কাজে লাগিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

যদিও ট্রাম্প নিজেই এদের অনেকের দৃষ্টিভঙ্গিকে চরম হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানানো হয় ইন্টারনেটের ‘সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে আলোচনার জন্য। তবে এতে ফেসবুক, টুইটার বা গুগলের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানির কোন প্রতিনিধিকে আহ্বান জানায়নি ট্রাম্প প্রশাসন। যাদের আহ্বান জানানো হয়েছে তাদের মধ্যে ছিলেন প্রজেক্ট ভেরিতাসের প্রতিষ্ঠাতা জেমস ও’কিফি, ট্রাম্পপন্থি আন্দোলনকর্মী বিল মিচেল, কলেজ রিপাবলিকান আন্দোলনকর্মী চার্রি কির্ক।

বেন গ্যারিসন নামের ডানপন্থি কার্টুনিস্ট সমালোচনার মুখে উপস্থিত হতে সম্মত হননি। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট টুইটারে নিজের অসংখ্য ফলোয়ার থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং রক্ষণশীল ঘরানার উপস্থিতদের প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, সামাজিকমাধ্যমে তার অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া কমে গেছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে না ধরেই ট্রাম্প বলেন, আপনাদের অনেকেই অসাধারণ প্রতিভাবান। তবে তা খারাপ। আলোচনার পর ট্রাম্প এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, তিনি সব মার্কিন নাগরিকদের জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে নিয়ন্ত্রণ ও আইনি সমাধান খুঁজে দেখার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডানপন্থি ও উগ্র-জাতীয়তবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগ তোলার পর বৃহস্পতিবার এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

মে মাসে হোয়াইট হাউজ ফেসবুক ও টুইটারে সেন্সরশিপের শিকার হলে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি টুল প্রকাশ করেছে।