চীনে মুসলিম বন্দীশিবিরের প্রশংসায় সৌদিসহ ৩৭ দেশ

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে দেশটির আচরণের প্রশংসা করেছে সৌদি আরবসহ ৩৭টি দেশ। জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছে তারা। এমন সময়ে এ চিঠি সামনে এলো যখন ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা ও মুসলিম শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়েছে বেইজিং। চীনের পক্ষ থেকে এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

ওতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে পাঠানো চিঠিতে সৌদি আরব ও রাশিয়াসহ ৩৫টি দেশ চীনের উইঘুর নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ওই চিঠির একটি কপি হাতে পেয়েছে রয়টার্স। চলতি বছরের (২০১৯ সাল) ১০ জুলাই উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা নিপীড়নের নিন্দা জানায় জাতিসংঘের সদস্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানসহ ২২টি দেশ। এসব দেশের রাষ্ট্রদূতরা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাঠানো লিখিত বার্তায় চীনের উইঘুর নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। এদিকে চীনের উইঘুর নীতির প্রতি সমর্থন জানানো দেশগুলোর চিঠিতে জিনজিয়াংয়ে বেইজিংয়ের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ‘চীনের অসামান্য অর্জন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন জিনজিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদবিরোধী নানা ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের একটি হচ্ছে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন (উইঘুর বন্দিশিবিরকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে দাবি করে চীন)। এবারের ৩৭ দেশের চিঠিতে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। সব নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত তিন বছরে সেখানে কোনও সন্ত্রাসী হামলা ঘটেনি। ফলে মানুষ নিরাপত্তার সঙ্গে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। সৌদি ছাড়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, বেলারুশ, বার্মা, ফিলিপাইন, সিরিয়া, পাকিস্তান, ওমান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন। এছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও এটিতে সই করেছেন। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীন সফরকালে দেশটিতে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার হরণের পক্ষে আওয়াজ তোলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২২ ফেব্রুয়ারি বেইজিং সফরকালে ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চীনের অধিকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দুই দেশের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রসঙ্গত, উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে বেইজিং। চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং-এর শাসনামলে দেশটিতে কয়েক কোটি মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনজনিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়। ২০১০ সালে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির গোপন নথির সূত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, মাও সে তুং-এর শাসনামলে কমপক্ষে চার কোটি মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। এদিকে গত বছরের (২০১৮ সাল) আগস্টে জেনেভায় চীনের ওপর জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির দুই দিনের বিশেষ সভায় উঠে আসে চীনে উইঘুরদের বন্দিশিবিরে আটকে রাখার বিষয়টি। সভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির জাতিগত বৈষম্য বিষয়ক সংস্থা জানায়, চীনে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত উইঘুর প্রদেশকে কার্যত ‘বিশাল একটি বন্দিশিবিরে’ পরিণত করেছে।

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০

চীনে মুসলিম বন্দীশিবিরের প্রশংসায় সৌদিসহ ৩৭ দেশ

সংবাদ ডেস্ক

image

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে দেশটির আচরণের প্রশংসা করেছে সৌদি আরবসহ ৩৭টি দেশ। জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছে তারা। এমন সময়ে এ চিঠি সামনে এলো যখন ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা ও মুসলিম শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়েছে বেইজিং। চীনের পক্ষ থেকে এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

ওতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে পাঠানো চিঠিতে সৌদি আরব ও রাশিয়াসহ ৩৫টি দেশ চীনের উইঘুর নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ওই চিঠির একটি কপি হাতে পেয়েছে রয়টার্স। চলতি বছরের (২০১৯ সাল) ১০ জুলাই উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা নিপীড়নের নিন্দা জানায় জাতিসংঘের সদস্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানসহ ২২টি দেশ। এসব দেশের রাষ্ট্রদূতরা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাঠানো লিখিত বার্তায় চীনের উইঘুর নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। এদিকে চীনের উইঘুর নীতির প্রতি সমর্থন জানানো দেশগুলোর চিঠিতে জিনজিয়াংয়ে বেইজিংয়ের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ‘চীনের অসামান্য অর্জন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন জিনজিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদবিরোধী নানা ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের একটি হচ্ছে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন (উইঘুর বন্দিশিবিরকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে দাবি করে চীন)। এবারের ৩৭ দেশের চিঠিতে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। সব নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত তিন বছরে সেখানে কোনও সন্ত্রাসী হামলা ঘটেনি। ফলে মানুষ নিরাপত্তার সঙ্গে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। সৌদি ছাড়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, বেলারুশ, বার্মা, ফিলিপাইন, সিরিয়া, পাকিস্তান, ওমান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন। এছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও এটিতে সই করেছেন। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীন সফরকালে দেশটিতে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার হরণের পক্ষে আওয়াজ তোলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২২ ফেব্রুয়ারি বেইজিং সফরকালে ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চীনের অধিকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দুই দেশের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রসঙ্গত, উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে বেইজিং। চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং-এর শাসনামলে দেশটিতে কয়েক কোটি মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনজনিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়। ২০১০ সালে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির গোপন নথির সূত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, মাও সে তুং-এর শাসনামলে কমপক্ষে চার কোটি মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। এদিকে গত বছরের (২০১৮ সাল) আগস্টে জেনেভায় চীনের ওপর জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির দুই দিনের বিশেষ সভায় উঠে আসে চীনে উইঘুরদের বন্দিশিবিরে আটকে রাখার বিষয়টি। সভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির জাতিগত বৈষম্য বিষয়ক সংস্থা জানায়, চীনে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত উইঘুর প্রদেশকে কার্যত ‘বিশাল একটি বন্দিশিবিরে’ পরিণত করেছে।