ইউরোপীয় দেশগুলোর জরুরি বৈঠক

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ‘জেসিপিওএ’ পরমাণু চুক্তি বহাল রাখতে জরুরি বৈঠকে বসছে এর ইউরোপীয় অংশিদার দেশগুলো। গতকাল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিলিত হওয়ার কথা। এ বৈঠকে চুক্তি রক্ষায় নতুন পদক্ষেপ নেয়ার প্রচেষ্টা চালানো এবং মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা নিরসনের পথ খোঁজা হবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৫ সালের ১৪ জুলাই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র (পি-ফাইভ) ও জার্মানি (প্লাস ওয়ান) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্য জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ ) নামের পরমাণু চুক্তিতে সই করে। ইরান পরমাণু চুক্তি নামে পরিচিত এ সমঝোতা অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সীমিত রেখে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একই বছরের নভেম্বর থেকে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালও শুরু করে ওয়াশিংটন। এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যত তারা কোন পদক্ষেপই নেয়নি বলে অভিযোগ করে ইরান। এ দেশগুলোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে চলতি বছরের মে মাসে চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার ঘোষণা দেয় তেহরান। এ সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। গত ৭ জুলাই সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রেক্ষিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৫ শতাংশে উত্তীর্ণ করার ঘোষণা দেয় ইরান। ২০১৫ সালে সম্পাদিত ওই সমঝোতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি ছিল তেহরানের। গতকাল অনুষ্ঠেয় ব্রাসেলসে তিন ইউরোপীয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠকে ইরানকে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানা গেছে। এ বৈঠক সামনে রেখে তিন দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে পরমাণু চুক্তির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। ওতে আরও বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে গভীর সমস্যায় পড়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করা, উত্তেজনা নিরসনের পথ খোঁজা এবং আবারও আলোচনা শুরুর সময় এসেছে।’ ‘ঝুঁকিপূর্ণ এমন সময়ে এ চুক্তির সব অংশীদারকেই সংযম প্রদর্শন করার দরকার রয়েছে। এর পাশাপাশি নিজেদের কার্যক্রমের সম্ভাব্য পরিণতি বিচার করার প্রয়োজনও রয়েছে’। উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনা উপস্থিতির মধ্যে ১০ দিন আগে জিব্রাল্টার প্রণালীতে ইরানের একটি তেলের ট্যাঙ্কার আটক করে ব্রিটিশ নৌবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্যাঙ্কারটি সিরিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ ব্রিটেনের। এ নিয়ে তেহরানের সঙ্গে উত্তেজনা সত্ত্বেও ব্রাসেলসের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। ওই বৈঠক সামনে রেখে তিনি জানিয়েছেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের পাশাপাশি পরমাণু চুক্তি রক্ষায় যা কিছু করা সম্ভব তার সবকিছুই করা হবে। একই সঙ্গে ইরানকে চুক্তি মেনে চলতে উৎসাহ দিতেও কাজ করা হবে।

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ , ২ শ্রাবন ১৪২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪০

ইরানের পরমাণু চুক্তি রক্ষা

ইউরোপীয় দেশগুলোর জরুরি বৈঠক

সংবাদ ডেস্ক

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ‘জেসিপিওএ’ পরমাণু চুক্তি বহাল রাখতে জরুরি বৈঠকে বসছে এর ইউরোপীয় অংশিদার দেশগুলো। গতকাল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিলিত হওয়ার কথা। এ বৈঠকে চুক্তি রক্ষায় নতুন পদক্ষেপ নেয়ার প্রচেষ্টা চালানো এবং মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা নিরসনের পথ খোঁজা হবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৫ সালের ১৪ জুলাই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র (পি-ফাইভ) ও জার্মানি (প্লাস ওয়ান) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্য জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ ) নামের পরমাণু চুক্তিতে সই করে। ইরান পরমাণু চুক্তি নামে পরিচিত এ সমঝোতা অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সীমিত রেখে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একই বছরের নভেম্বর থেকে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালও শুরু করে ওয়াশিংটন। এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যত তারা কোন পদক্ষেপই নেয়নি বলে অভিযোগ করে ইরান। এ দেশগুলোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে চলতি বছরের মে মাসে চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার ঘোষণা দেয় তেহরান। এ সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। গত ৭ জুলাই সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রেক্ষিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৫ শতাংশে উত্তীর্ণ করার ঘোষণা দেয় ইরান। ২০১৫ সালে সম্পাদিত ওই সমঝোতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি ছিল তেহরানের। গতকাল অনুষ্ঠেয় ব্রাসেলসে তিন ইউরোপীয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠকে ইরানকে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানা গেছে। এ বৈঠক সামনে রেখে তিন দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে পরমাণু চুক্তির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। ওতে আরও বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে গভীর সমস্যায় পড়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করা, উত্তেজনা নিরসনের পথ খোঁজা এবং আবারও আলোচনা শুরুর সময় এসেছে।’ ‘ঝুঁকিপূর্ণ এমন সময়ে এ চুক্তির সব অংশীদারকেই সংযম প্রদর্শন করার দরকার রয়েছে। এর পাশাপাশি নিজেদের কার্যক্রমের সম্ভাব্য পরিণতি বিচার করার প্রয়োজনও রয়েছে’। উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনা উপস্থিতির মধ্যে ১০ দিন আগে জিব্রাল্টার প্রণালীতে ইরানের একটি তেলের ট্যাঙ্কার আটক করে ব্রিটিশ নৌবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্যাঙ্কারটি সিরিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ ব্রিটেনের। এ নিয়ে তেহরানের সঙ্গে উত্তেজনা সত্ত্বেও ব্রাসেলসের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। ওই বৈঠক সামনে রেখে তিনি জানিয়েছেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের পাশাপাশি পরমাণু চুক্তি রক্ষায় যা কিছু করা সম্ভব তার সবকিছুই করা হবে। একই সঙ্গে ইরানকে চুক্তি মেনে চলতে উৎসাহ দিতেও কাজ করা হবে।