সৌদিতে মার্কিন সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে সম্মত বাদশাহ সালমান

সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইটার বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে। একইদিন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরালো করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগও এক বিবৃতিতে সৌদি আরবে সেনা মোতায়েনের খবর নিশ্চিত করেছে।

চলতি বছরের জুনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে ১ হাজার সেনা মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাদের ঠিক কোথায় মোতায়েন করা হবে তা তখন জানানো হয়নি। সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সিএনএন আভাস দেয়, ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সৌদির সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরও জোরালো করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে দেশটিতে নতুন করে ৫০০ মার্কিন সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন। গত শুক্রবার সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইটার বার্তায় জানায়, ‘আঞ্চলিক হুমকির মুখে সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের অংশীদারত্বকে জোরালো করছে।’ বাদশাহ সালমান যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদিতে সেনা মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছেন বলেও জানানো হয় এ সময়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, সৌদিতে প্রায় ৫০০ মার্কিন সেনা সদস্যকে মোতায়েন করা হতে পারে। পেন্টাগনের গত মাসের ঘোষণার অংশ হিসেবে তাদের মোতায়েন করা হবে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন সৌদির রাজধানী রিয়াদের উত্তর অংশে অবস্থিত প্রিন্স সুলতান বিমান ঘাঁটিতে পাঁচশো সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জানান, বিমান ঘাঁটিতে আগে থেকেই অল্প সংখ্যক সেনা রয়েছে। তবে ওই ঘাঁটিতে মোতায়েন থাকা মার্কিন পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাসহ রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিমান ঘাঁটির উন্নয়নের জন্য আরও কিছু সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বিমান ঘাঁটিতে পঞ্চম প্রজন্মের অত্যাধুনিক স্টিলথ এফ-২২সহ অন্যান্য মডেলের জঙ্গিবিমান ওড়ানোর পরিকল্পনা ওয়াশিংটন নিচ্ছে বলেও ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সৌদি আরবে সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। এরই মধ্যে দুই দফায় চুক্তি থেকে আংশিক সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে তেহরান। আর ইরানের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে উগসাগরীয় এলাকায় বিমানবাহী রণতরী, ক্ষেপণাস্ত্রসহ যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের হুমকি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ শুরুর অভিযোগ এনেছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক তেলবাহী ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে আসছে ওয়াশিংটন। তেহরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। গত ২০ জুন ‘আরকিউ-৪ গ্লোবাল হক’ নামে একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করে ইরানের সেনাবাহিনী। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়। তবে ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশের অভিযোগ নাকচ করে তারা দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক সীমার মধ্যে অবৈধভাবে তেহরান তাদের ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

রবিবার, ২১ জুলাই ২০১৯ , ৬ শ্রাবন ১৪২৫, ১৭ জিলকদ ১৪৪০

সৌদিতে মার্কিন সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে সম্মত বাদশাহ সালমান

সংবাদ ডেস্ক

image

সালমান বিন আবদুল আজিজ

সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইটার বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে। একইদিন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরালো করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগও এক বিবৃতিতে সৌদি আরবে সেনা মোতায়েনের খবর নিশ্চিত করেছে।

চলতি বছরের জুনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে ১ হাজার সেনা মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাদের ঠিক কোথায় মোতায়েন করা হবে তা তখন জানানো হয়নি। সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সিএনএন আভাস দেয়, ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সৌদির সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরও জোরালো করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে দেশটিতে নতুন করে ৫০০ মার্কিন সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন। গত শুক্রবার সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইটার বার্তায় জানায়, ‘আঞ্চলিক হুমকির মুখে সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের অংশীদারত্বকে জোরালো করছে।’ বাদশাহ সালমান যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদিতে সেনা মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছেন বলেও জানানো হয় এ সময়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, সৌদিতে প্রায় ৫০০ মার্কিন সেনা সদস্যকে মোতায়েন করা হতে পারে। পেন্টাগনের গত মাসের ঘোষণার অংশ হিসেবে তাদের মোতায়েন করা হবে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন সৌদির রাজধানী রিয়াদের উত্তর অংশে অবস্থিত প্রিন্স সুলতান বিমান ঘাঁটিতে পাঁচশো সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জানান, বিমান ঘাঁটিতে আগে থেকেই অল্প সংখ্যক সেনা রয়েছে। তবে ওই ঘাঁটিতে মোতায়েন থাকা মার্কিন পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাসহ রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিমান ঘাঁটির উন্নয়নের জন্য আরও কিছু সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বিমান ঘাঁটিতে পঞ্চম প্রজন্মের অত্যাধুনিক স্টিলথ এফ-২২সহ অন্যান্য মডেলের জঙ্গিবিমান ওড়ানোর পরিকল্পনা ওয়াশিংটন নিচ্ছে বলেও ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সৌদি আরবে সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। এরই মধ্যে দুই দফায় চুক্তি থেকে আংশিক সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে তেহরান। আর ইরানের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে উগসাগরীয় এলাকায় বিমানবাহী রণতরী, ক্ষেপণাস্ত্রসহ যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের হুমকি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ শুরুর অভিযোগ এনেছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক তেলবাহী ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে আসছে ওয়াশিংটন। তেহরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। গত ২০ জুন ‘আরকিউ-৪ গ্লোবাল হক’ নামে একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করে ইরানের সেনাবাহিনী। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়। তবে ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশের অভিযোগ নাকচ করে তারা দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক সীমার মধ্যে অবৈধভাবে তেহরান তাদের ড্রোন ভূপাতিত করেছে।