বিদেশি নাগরিক হিসেবে দেখা হবে রোহিঙ্গাদের

মায়ানমার সচিব

মায়ানমার রোহিঙ্গাদের বিদেশি নাগরিক হিসেবে দেখবে বলে জানিয়েছেন মায়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। তাদের বিদেশি হিসেবে মায়ানমারে থাকার অনুমোদন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল দুপুর দুটার দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ডি-৪ ক্যাম্পে হিন্দু ও খ্রিস্টান রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মায়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোববার এবং শনিবার আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছি। মায়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন মোতাবেক তিন ধরনের নাগরিকত্ব দেয়া হয়ে থাকে। সেই মোতাবেক আইনের তিন নম্বর ধারা অনুযায়ী যারা তিন প্রজন্ম ধরে মায়নামারে বসবাস করে আসছেন তাদের ‘নেট্টালাইজড সিটিজেনশিপ’ দেয়ার বৈধতা আছে। সুতরাং তারা সরাসরি মায়ানমারের নাগরিক না হলেও তাদের এই ধারার আওতায় মায়ানমারে বিদেশি নাগরিক হিসেবে থাকার বৈধতা দেয়া হবে। এই মোতাবেক আমরা তাদের জাতীয় আইডি (ইআইডি) কার্ড দেব। যার মাধ্যমে তাদের মধ্যে জাতীয়তা কিংবা গোত্র নিয়ে কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না। এর আগে, সকালে ক্যাম্প-৪ এ মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মায়ানমারের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে মায়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। তার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ১০ সদস্য। রোহিঙ্গাদের পক্ষে মাস্টার মুহিব উল্লাহর নেতৃত্বে ৩০ সদস্যে মায়ানমার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে ৫ জন নারী সদস্য রয়েছে। তাদের সঙ্গে আসিয়ানের ৫ প্রতিনিধিও রয়েছে। পরে ৪ খ্রিস্টান ও ১০ হিন্দু রোহিঙ্গার সঙ্গে বৈঠকে বসেন এ প্রতিনিধি দল। গত ২৭ জুলাই তিন দিনে সফরে বাংলাদেশে আসেন মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১০ সদস্য। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে তাদের এ সফর বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নানান শর্তের কারণে সঠিক কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এরই মাঝে রোববার আবারও বৈঠকে বসল দুই পক্ষ। উলেখ্য যে, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টের পর থেকে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এরপর দফায় দফায় চেষ্টা করেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দ্বিতীয়বারের মত প্রতিনিধি দল পাঠালো মায়ানমার।

বৈঠকে মায়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিভিন্ন দাবি- তুলে ধরেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. মুহিব উল্লাহ। তিনি বলেন, শনিবারের আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। রোববার আবার তারা বৈঠক করেছেন। আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। মুহিব বলেন, তারা সেই পুরনো প্রস্তাবগুলোই আমাদের দিয়েছেন। মায়ানমারে গিয়ে আগে এডিপি ক্যাম্পে থাকতে হবে। আমরা তাদের এসব প্রস্তাবে রাজি নই। মহিব উলাহ আরও বলেন, নাগরিকত্ব না দিলে কোন রোহিঙ্গা মায়ানমারে ফিরতে রাজি নয়। মায়ানমার প্রতিনিধি দলকে ২ মাস পর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংলাপের জন্য আবারও আসতে বলেছি। এর আগে শুক্রবার রাতে মায়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ পৌঁছে। শনিবার সকালে বিমানযোগে কক্সবাজারে পৌঁছেন। সেখান থেকে সড়কপথে ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে যান মায়ানমার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর বেলা একটার দিকে উখিয়ায় পৌঁছে সেখানে বিকেল চারটা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ২ দফা বৈঠক করেন তারা। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সৈন্যবাহিনী ও স্থানীয় মগদের চালানো নির্যাতন ও দমন নিপীড়নের কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বর্তমানে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছে।

সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯ , ১৪ শ্রাবন ১৪২৫, ২৫ জিলকদ ১৪৪০

বিদেশি নাগরিক হিসেবে দেখা হবে রোহিঙ্গাদের

মায়ানমার সচিব

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার)

মায়ানমার রোহিঙ্গাদের বিদেশি নাগরিক হিসেবে দেখবে বলে জানিয়েছেন মায়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। তাদের বিদেশি হিসেবে মায়ানমারে থাকার অনুমোদন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল দুপুর দুটার দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ডি-৪ ক্যাম্পে হিন্দু ও খ্রিস্টান রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মায়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোববার এবং শনিবার আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছি। মায়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন মোতাবেক তিন ধরনের নাগরিকত্ব দেয়া হয়ে থাকে। সেই মোতাবেক আইনের তিন নম্বর ধারা অনুযায়ী যারা তিন প্রজন্ম ধরে মায়নামারে বসবাস করে আসছেন তাদের ‘নেট্টালাইজড সিটিজেনশিপ’ দেয়ার বৈধতা আছে। সুতরাং তারা সরাসরি মায়ানমারের নাগরিক না হলেও তাদের এই ধারার আওতায় মায়ানমারে বিদেশি নাগরিক হিসেবে থাকার বৈধতা দেয়া হবে। এই মোতাবেক আমরা তাদের জাতীয় আইডি (ইআইডি) কার্ড দেব। যার মাধ্যমে তাদের মধ্যে জাতীয়তা কিংবা গোত্র নিয়ে কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না। এর আগে, সকালে ক্যাম্প-৪ এ মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মায়ানমারের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে মায়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। তার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ১০ সদস্য। রোহিঙ্গাদের পক্ষে মাস্টার মুহিব উল্লাহর নেতৃত্বে ৩০ সদস্যে মায়ানমার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে ৫ জন নারী সদস্য রয়েছে। তাদের সঙ্গে আসিয়ানের ৫ প্রতিনিধিও রয়েছে। পরে ৪ খ্রিস্টান ও ১০ হিন্দু রোহিঙ্গার সঙ্গে বৈঠকে বসেন এ প্রতিনিধি দল। গত ২৭ জুলাই তিন দিনে সফরে বাংলাদেশে আসেন মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১০ সদস্য। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে তাদের এ সফর বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নানান শর্তের কারণে সঠিক কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এরই মাঝে রোববার আবারও বৈঠকে বসল দুই পক্ষ। উলেখ্য যে, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টের পর থেকে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এরপর দফায় দফায় চেষ্টা করেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দ্বিতীয়বারের মত প্রতিনিধি দল পাঠালো মায়ানমার।

বৈঠকে মায়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিভিন্ন দাবি- তুলে ধরেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. মুহিব উল্লাহ। তিনি বলেন, শনিবারের আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। রোববার আবার তারা বৈঠক করেছেন। আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। মুহিব বলেন, তারা সেই পুরনো প্রস্তাবগুলোই আমাদের দিয়েছেন। মায়ানমারে গিয়ে আগে এডিপি ক্যাম্পে থাকতে হবে। আমরা তাদের এসব প্রস্তাবে রাজি নই। মহিব উলাহ আরও বলেন, নাগরিকত্ব না দিলে কোন রোহিঙ্গা মায়ানমারে ফিরতে রাজি নয়। মায়ানমার প্রতিনিধি দলকে ২ মাস পর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংলাপের জন্য আবারও আসতে বলেছি। এর আগে শুক্রবার রাতে মায়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ পৌঁছে। শনিবার সকালে বিমানযোগে কক্সবাজারে পৌঁছেন। সেখান থেকে সড়কপথে ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে যান মায়ানমার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর বেলা একটার দিকে উখিয়ায় পৌঁছে সেখানে বিকেল চারটা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ২ দফা বৈঠক করেন তারা। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সৈন্যবাহিনী ও স্থানীয় মগদের চালানো নির্যাতন ও দমন নিপীড়নের কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বর্তমানে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছে।