মিন্নির প্রতি উৎসাহী না হয়ে মূল আসামিদের দিকে নজর দিন

বরগুনায় আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির প্রতি উৎসাহী না হয়ে মামলার অন্য আসামিদের দিকে পুলিশের নজর দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। মামলাটি সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) বা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) কর্তৃক তদন্তের নির্দেশনা চাওয়ার বিষয়ে রিটের শুনানিতে গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। শুনানিতে আদালত বলেন, ‘পুলিশ অ্যালার্ট থাকলে রিফাতকে মরতে হতো না। পুলিশ কি ঘুমিয়ে ছিল? পুলিশের উচিত মিন্নির প্রতি উৎসাহী না হয়ে অন্য আসামির দিকে নজর দেয়া। মিন্নির নাম তদন্তে পাওয়া গেলে সাক্ষী হতে বাধা কোথায়? আমরা তদন্তের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।’ এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। এ পর্যায়ে আদালত হস্তক্ষেপ করলে তদন্তে ব্যাঘাত হবে।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা (বন্দুকযুদ্ধ) করা হয়েছে। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘পুলিশকে গুলি করলে তারা পাল্টা গুলি করতেই পারে।’ এরপর আদালত রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

প্রসঙ্গত, বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় পিবিআই বা সিআইডির তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত ২৫ জুলাই হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ রিটটি করেন। রিটে বলা হয়, স্থানীয় পুলিশ এমন স্পর্শকাতর মামলা তদন্ত করতে অভিজ্ঞ নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বড় ধরনের মামলা সিআইডি তদন্ত করে। সিআইডির কাজ হলো তদন্ত করা। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের কাজ আসামিদের গ্রেফতার করা। ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলা পিবিআই তদন্ত করে। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে পিবিআই বা সিআইডি দ্বারা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হোক।

রিটে আরও বলা হয়, রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। অন্য কোন সাক্ষী নেই। অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত। এ অবস্থায় সাক্ষীকে আসামি করলে প্রকৃত বিচার হবে না। সাক্ষীর জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় নেয়া যাবে কিন্তু আসামি হিসেবে জবানবন্দি নেয়া যাবে না। অথচ মিন্নিকে পাঁচদিনের রিমান্ড দেয়া হয় এবং তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। তাই মিন্নির গ্রেফতার ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অবৈধ হবে বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়েছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের আইজি, বরিশালের ডিআইজি, বরগুনার পুলিশ সুপারসহ সাত জনকে বিবাদী করা হয়।

সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯ , ১৪ শ্রাবন ১৪২৫, ২৫ জিলকদ ১৪৪০

পুলিশকে হাইকোর্ট

মিন্নির প্রতি উৎসাহী না হয়ে মূল আসামিদের দিকে নজর দিন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বরগুনায় আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির প্রতি উৎসাহী না হয়ে মামলার অন্য আসামিদের দিকে পুলিশের নজর দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। মামলাটি সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) বা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) কর্তৃক তদন্তের নির্দেশনা চাওয়ার বিষয়ে রিটের শুনানিতে গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। শুনানিতে আদালত বলেন, ‘পুলিশ অ্যালার্ট থাকলে রিফাতকে মরতে হতো না। পুলিশ কি ঘুমিয়ে ছিল? পুলিশের উচিত মিন্নির প্রতি উৎসাহী না হয়ে অন্য আসামির দিকে নজর দেয়া। মিন্নির নাম তদন্তে পাওয়া গেলে সাক্ষী হতে বাধা কোথায়? আমরা তদন্তের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।’ এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। এ পর্যায়ে আদালত হস্তক্ষেপ করলে তদন্তে ব্যাঘাত হবে।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা (বন্দুকযুদ্ধ) করা হয়েছে। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘পুলিশকে গুলি করলে তারা পাল্টা গুলি করতেই পারে।’ এরপর আদালত রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

প্রসঙ্গত, বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় পিবিআই বা সিআইডির তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত ২৫ জুলাই হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ রিটটি করেন। রিটে বলা হয়, স্থানীয় পুলিশ এমন স্পর্শকাতর মামলা তদন্ত করতে অভিজ্ঞ নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বড় ধরনের মামলা সিআইডি তদন্ত করে। সিআইডির কাজ হলো তদন্ত করা। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের কাজ আসামিদের গ্রেফতার করা। ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলা পিবিআই তদন্ত করে। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে পিবিআই বা সিআইডি দ্বারা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হোক।

রিটে আরও বলা হয়, রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। অন্য কোন সাক্ষী নেই। অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত। এ অবস্থায় সাক্ষীকে আসামি করলে প্রকৃত বিচার হবে না। সাক্ষীর জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় নেয়া যাবে কিন্তু আসামি হিসেবে জবানবন্দি নেয়া যাবে না। অথচ মিন্নিকে পাঁচদিনের রিমান্ড দেয়া হয় এবং তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। তাই মিন্নির গ্রেফতার ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অবৈধ হবে বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়েছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের আইজি, বরিশালের ডিআইজি, বরগুনার পুলিশ সুপারসহ সাত জনকে বিবাদী করা হয়।