‘মিন্নির মাথায় হত্যার দায় রেখে সব আসামিকে রেহাই দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

বরগুনা প্রেসক্লাবে রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফ মিন্নির বাবাকে দোষারোপ করে বক্তব্য রাখার পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, মিন্নির মাথায় রিফাত শরীফ হত্যার দায় রেখে সব আসামিকে ছেড়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুলিশ এ মামলায় রাজনীতি টেনে এনেছে, মামলা ঘুরিয়ে দেয়ার প্রেক্ষাপট তৈরিতে দুলাল শরীফকে ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় নয়ন বন্ড বেঁচে থাকলে মামলায় সাক্ষী হতো। মোজাম্মেল হক কিশোর গতকাল বরগুনা প্রেসক্লাবে রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফের সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রশ্নে সাংবাদিকদের বলেন, রিফাত হত্যার সঠিক তদন্ত হলে রিফাতের বাবার ক্ষতি কী? এ তদন্তে তার মেয়ে মিন্নি যদি দোষী হয় কারও আপত্তি থাকবে না। আসলে দুলাল শরীফ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত চান না। তাই আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে এবং পুলিশের পরামর্শে এখন নানা কথা বলছে। না হলে ১নং সাক্ষীকে আসামি বানাবে কেন? একদিকে পুলিশ অন্যদিকে রাজনীতিক মহল শেষ পর্যন্ত এই মামলায় কে সাক্ষী দেবে তা বোঝাই যায়। তিনি বলেন, এখনও মামলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আসামি ধরা পড়েনি। সে আসামিদের ধরার বিষয় দুলাল শরীফের কোন বক্তব্য নেই, মিন্নির পরিবার নিয়ে টানাহেঁচড়া উদ্দেশ্যমূলক। আসলে রিফাত হত্যার দায়ভাগ মিন্নির মাথায় চাপিয়ে দিয়ে সব আসামিকে রেহাই দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বিকেল ৪টায় তার এক আত্মীয়র সঙ্গে বরগুনা প্রেসক্লাবে আসেন। তিনি এ সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত নিহত রিফাত শরীফের বাবার সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে উল্লিখিত মন্তব্য করে বলেন, মামলার তদন্তভার পিবিআইতে গেলে সঠিক তদন্ত হবে; তাতে দুলাল শরীফের গা জ্বলে কেন? অন্য কোন রহস্য আছে কি না তিনি জানতে চান। তিনি আরও বলেন, আসলে দুলাল শরীফ নিজের ছেলের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছে। না হলে যে এ মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী, যার আবেদন ছাড়া রিফাত হত্যা মামলা থানার টেবিলের কোনায় পড়ে থাকত, কেউ খোঁজ পেত না, তাকে আসামি করে মামলাটি ক্ষতিগ্রস্ত করবে কেন? মিন্নির বাবা বলেন, আসামিদের সঙ্গে তার যোগসাজশ হয়েছে তাদের সম্পূর্ণভাবে বাঁচাতে চায়, নাহলে এ ধরনের কেউ বক্তব্য দেয় না।

নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব হয় পুলিশি ভূমিকা নিয়ে

সম্প্রতি সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ১১ মে ২০১৯ রিফাত শরীফকে পুলিশ গ্রেফতার করে বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া থেকে। রাত ১টার দিকে সুজনের সাইকেল গেরেজে তিনজনের কথোপকথনের রেকর্ড পাওয়া যায়। এর মধ্যে নিহত রিফাত শরীফ, বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ড ও বরগুনার পুলিশের এসআই সোহেল। এ সময় এসআই সোহেল রিফাত শরীফের পাছায় লাথি মারতে উদ্যত হলে রিফাত শরীফ তাকে বলে, তার পা ভাঙা কিন্তু। এ কথা শুলে এসআই সোহেল রিফাত শরীফকে বাঁধার জন্য গরুর দড়ি আনতে বলেন। তখন নয়ন বন্ড বলে, আমার বাসায় ১০ বার ডিবি পাঠাইছ। এখন নিজেই ধরা খাইছ। পাপ বাপেরেও ছাড়ে না। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি রিফাত শরীফ। এ ঘটনায় রিফাত শরীফ ১৯ দিন জেল খাটে। যত দূর জানা যায়, রিফাত জেলে যাওয়ার পরই নয়ন বন্ড মিন্নিকে জোর করে তুলে নিয়ে নানা ধরনের ভয় দেখিয়ে একটি খাতায় সই করিয়ে ভুয়া কাবিন বানায়। রিফাত শরীফকে গ্রেফতার ও গ্রেফতার বিষয়ে নয়ন বন্ডের ভিডিও করায় খুব মাইন্ড করেছিল রিফাত শরীফ। বিষয়টি তৌহিদ নামে রিফাতের এক বন্ধুকে বললে, সে নয়ন বন্ডকে প্রশ্ন করেছিল, কেন সে ভিডিও করল এবং রিফাতকে ধরিয়ে দিল। তখন দুজনের মধ্যে বিরোধের কথাই চলে আসে। রিফাত শরীফও জেল থেকে মুক্ত হয়ে নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে রেগে যায় যার ফলে একটি হতাকান্ড হয়ে যায়। তবে নয়ন বন্ড কী কারণে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলো, এখনও তা পরিষ্কার নয়। কারণ বর্তমানে মিন্নিকে নিয়ে পুলিশের কল্পিত ভূমিকা নয়ন বন্ডের অপরাধকে ছাপিয়ে গেছে। তাই অনেকেই মন্তব্য করেন, রিফাত হত্যা মামলায় নয়ন বন্ড বেঁচে থাকলে সাক্ষী হতো।

সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯ , ১৪ শ্রাবন ১৪২৫, ২৫ জিলকদ ১৪৪০

রিফাত হত্যা

‘মিন্নির মাথায় হত্যার দায় রেখে সব আসামিকে রেহাই দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

প্রতিনিধি, বরগুনা

বরগুনা প্রেসক্লাবে রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফ মিন্নির বাবাকে দোষারোপ করে বক্তব্য রাখার পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, মিন্নির মাথায় রিফাত শরীফ হত্যার দায় রেখে সব আসামিকে ছেড়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুলিশ এ মামলায় রাজনীতি টেনে এনেছে, মামলা ঘুরিয়ে দেয়ার প্রেক্ষাপট তৈরিতে দুলাল শরীফকে ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় নয়ন বন্ড বেঁচে থাকলে মামলায় সাক্ষী হতো। মোজাম্মেল হক কিশোর গতকাল বরগুনা প্রেসক্লাবে রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফের সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রশ্নে সাংবাদিকদের বলেন, রিফাত হত্যার সঠিক তদন্ত হলে রিফাতের বাবার ক্ষতি কী? এ তদন্তে তার মেয়ে মিন্নি যদি দোষী হয় কারও আপত্তি থাকবে না। আসলে দুলাল শরীফ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত চান না। তাই আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে এবং পুলিশের পরামর্শে এখন নানা কথা বলছে। না হলে ১নং সাক্ষীকে আসামি বানাবে কেন? একদিকে পুলিশ অন্যদিকে রাজনীতিক মহল শেষ পর্যন্ত এই মামলায় কে সাক্ষী দেবে তা বোঝাই যায়। তিনি বলেন, এখনও মামলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আসামি ধরা পড়েনি। সে আসামিদের ধরার বিষয় দুলাল শরীফের কোন বক্তব্য নেই, মিন্নির পরিবার নিয়ে টানাহেঁচড়া উদ্দেশ্যমূলক। আসলে রিফাত হত্যার দায়ভাগ মিন্নির মাথায় চাপিয়ে দিয়ে সব আসামিকে রেহাই দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বিকেল ৪টায় তার এক আত্মীয়র সঙ্গে বরগুনা প্রেসক্লাবে আসেন। তিনি এ সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত নিহত রিফাত শরীফের বাবার সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে উল্লিখিত মন্তব্য করে বলেন, মামলার তদন্তভার পিবিআইতে গেলে সঠিক তদন্ত হবে; তাতে দুলাল শরীফের গা জ্বলে কেন? অন্য কোন রহস্য আছে কি না তিনি জানতে চান। তিনি আরও বলেন, আসলে দুলাল শরীফ নিজের ছেলের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছে। না হলে যে এ মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী, যার আবেদন ছাড়া রিফাত হত্যা মামলা থানার টেবিলের কোনায় পড়ে থাকত, কেউ খোঁজ পেত না, তাকে আসামি করে মামলাটি ক্ষতিগ্রস্ত করবে কেন? মিন্নির বাবা বলেন, আসামিদের সঙ্গে তার যোগসাজশ হয়েছে তাদের সম্পূর্ণভাবে বাঁচাতে চায়, নাহলে এ ধরনের কেউ বক্তব্য দেয় না।

নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব হয় পুলিশি ভূমিকা নিয়ে

সম্প্রতি সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ১১ মে ২০১৯ রিফাত শরীফকে পুলিশ গ্রেফতার করে বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া থেকে। রাত ১টার দিকে সুজনের সাইকেল গেরেজে তিনজনের কথোপকথনের রেকর্ড পাওয়া যায়। এর মধ্যে নিহত রিফাত শরীফ, বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ড ও বরগুনার পুলিশের এসআই সোহেল। এ সময় এসআই সোহেল রিফাত শরীফের পাছায় লাথি মারতে উদ্যত হলে রিফাত শরীফ তাকে বলে, তার পা ভাঙা কিন্তু। এ কথা শুলে এসআই সোহেল রিফাত শরীফকে বাঁধার জন্য গরুর দড়ি আনতে বলেন। তখন নয়ন বন্ড বলে, আমার বাসায় ১০ বার ডিবি পাঠাইছ। এখন নিজেই ধরা খাইছ। পাপ বাপেরেও ছাড়ে না। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি রিফাত শরীফ। এ ঘটনায় রিফাত শরীফ ১৯ দিন জেল খাটে। যত দূর জানা যায়, রিফাত জেলে যাওয়ার পরই নয়ন বন্ড মিন্নিকে জোর করে তুলে নিয়ে নানা ধরনের ভয় দেখিয়ে একটি খাতায় সই করিয়ে ভুয়া কাবিন বানায়। রিফাত শরীফকে গ্রেফতার ও গ্রেফতার বিষয়ে নয়ন বন্ডের ভিডিও করায় খুব মাইন্ড করেছিল রিফাত শরীফ। বিষয়টি তৌহিদ নামে রিফাতের এক বন্ধুকে বললে, সে নয়ন বন্ডকে প্রশ্ন করেছিল, কেন সে ভিডিও করল এবং রিফাতকে ধরিয়ে দিল। তখন দুজনের মধ্যে বিরোধের কথাই চলে আসে। রিফাত শরীফও জেল থেকে মুক্ত হয়ে নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে রেগে যায় যার ফলে একটি হতাকান্ড হয়ে যায়। তবে নয়ন বন্ড কী কারণে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলো, এখনও তা পরিষ্কার নয়। কারণ বর্তমানে মিন্নিকে নিয়ে পুলিশের কল্পিত ভূমিকা নয়ন বন্ডের অপরাধকে ছাপিয়ে গেছে। তাই অনেকেই মন্তব্য করেন, রিফাত হত্যা মামলায় নয়ন বন্ড বেঁচে থাকলে সাক্ষী হতো।