সাড়ে তিন বছর পর কিলার সুবজ গ্রেফতার

সন্ত্রাসী শাহাদাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড আনোয়ার হোসেন সবুজের দাবি করা কোটি টাকা চাঁদা না দেয়ায় হোটেল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জুনায়েতকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালে পহেলা ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মূল আসামি শুটার সবুজকে গত সোমবার রাতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিশেষ টিম যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে গ্রেফতার করে। সে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে ব্যবসায়ী তার জীবন বাঁচাতে হত্যাকান্ডের আগে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু চাঁদাবাজরা ১ কোটি টাকা দাবি করছিল। পুরো টাকা না দেয়ায় তাকে হত্যা করেছিল বলে স্বীকার করেছে। অভিযোগ রয়েছে, থানা পুলিশ ৩ বছরেরও বেশি সময় চেষ্টা করে এ (২০১৬ পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ পহেলা ফেব্রুয়ারি) আসামিকে ধরতে না পারলেও পিবিআই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত করে আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

পিবিআই জানায়, মামলার বাদী ডা. সাঈদ হোসেন সোহাগ অভিযোগ করে বলেন, তার বড় ভাই মৃত রফিকুল ইসলাম জুনায়েত আবাসিক হোটেলের ব্যবসা করে আসছিলেন। ২০১৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি রাতে ১১২, দক্ষিণ বিশিল নিউ শাহাজালাল আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার শাহ আলমের কাছ থেকে হোটেলের হিসাব নিকাশ নিয়ে তার বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরপর আর তার খবর নেই। পরের দিন ২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিসেস নাহার নামে একজন তাকে ফোন দিয়ে জানায় যে, দারুস সালাম রোড পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদের সামনে ফুটপাতের উপর বাদীর ভাই রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে বাদী দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার বড় ভাইয়ের লাশ ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখে শনাক্ত করেন। বুকের বাম পাশে গুলির আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং গুলির খোসা ও চেকের তিনটি টুকরা জব্দ করেন। পরবর্তীতে বাদীর ভাইয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।

নিহতের ভাই ডা. সাঈদ হোসেন সোহাগ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৬ তারিখ-২/২/২০১৬। দারুস সালাম থানা পুলিশকর্তৃক মামলাটি তদন্তকালে হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত আসামি সোহেল ওরফে শুটার সোহেল ও শেখ মৃদুল ওরফে বাবু ওরফে মির্জাদের গ্রেফতার করেন।

ঢাকা মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে এবং ঘটনায় জড়িত আবদুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশকে গ্রেফতারপূর্বক মামলাটি তদন্ত শেষে ৮ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ডিবি পুলিশ প্রধান ২ জন আসামি গ্রেফতার না করেই বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। প্রধান আসামি গ্রেফতার ও ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন না হওয়ায় বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ প্রদান করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পিবিআই, ঢাকা মেট্রো (উত্তর)-এর পুলিশ পরিদর্শক মো. জুয়েল মিঞা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ পলাতক মূল আসামি গ্রেফতারের নিমিত্তে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেন।

পরবর্তীতে নিয়োজিত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে খবর পেয়ে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের দিক-নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী অফিসারের নেতৃত্বে একটি টিম গত ২৯ জুলাই রাতে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা হতে আসামি আনোয়ার হোসেন সবুজ ওরফে সজিব ওরফে শুটার সবুজকে আটক করে।

আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, নিহত রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের পিতা মরহুম বিল্লাল হোসেন ১৯৯৭ সালে আবাসিক হোটেল শাহজালাল প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে হোটেল ব্যবসা করে আসছিলেন। অত্র মামলার ঘটনার বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই স্থানীয় চাঁদাবাজ শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড আসামি আনোয়ার হোসেন সবুজ ওরফে শুটার সবুজসহ তার সহযোগী আসামি শুটার সোহেল, শেখ মৃদুল ওরফে বাবু, আবদুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশ উক্ত হোটেল থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের নাম করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছিল।

চাঁদাবাজ গ্রুপ রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে একটি ইন্ডিয়ান মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে আসে যোগাযোগ করার জন্য। কিন্তু রফিকুল ইসলাম তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পর থেকে রফিকুল ইসলাম জুনায়েত মোবাইলে বিভিন্ন হুমকি ধামকির মেসেজ আসতো। উক্ত দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পাওয়ায় চাঁদাবাজ গ্রুপটি অত্র মামলার রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

চাঁদাবাজ গ্রুপ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ষড়যন্ত্র করে রফিকুল ইসলামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি শুটার সবুজ, শুটার সোহেল, শেখ মৃদুল ওরফে বাবু ওরফে মির্জা, আবদুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী রফিকুল ইসলামকে হত্যার গোপন পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৭/১/২০১৬ আসামি শুটার সবুজ তার সহযোগী আসামিদের সিমসহ কয়েকটি মোবাইল ফোন সেট প্রদান করে এবং সে নিজের কাছে একটি মোবাইল ফোন রাখে। ঐ ফোনগুলো দিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে এবং শাহজালাল হোটেলের মালিক জুনায়েতকে নজরদারিতে রাখে।

পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গত ২০১৬ সালে পহেলা ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে আসামিরা শুটার সবুজের বাসায় একত্রিত হয়। এরপর শুটার সবুজের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। পহেলা ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২টার দিকে জুনায়েত হোটেলের সব হিসাব নিকাশ শেষ করে তার নিজ বাসা দক্ষিণ বিশিলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। জুনায়েত মিরপুর দারুস সালাম রোডে পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদের সামনে ফুটপাতের উপর পৌঁছা মাত্র আসামি শুটার সবুজের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা জুনায়েতকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে। শুটার সবুজ তার হাতে থাকা পিস্তল জুনায়েতের বুকের বাম পাশে ঠেকিয়ে গুলি করে। গুলি করার পর জুনায়েতের মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সবাই গুদারাঘাট বটতলার দিকে চলে যায়। রাত ১টার দিকে আসামি শুটার সবুজের নির্দেশে সবাই মোবাইল বন্ধ করে সিমসহ তুরাগ নদীতে ফেলে দেয় এবং সবাই আত্মগোপন করে থাকে। গ্রেফতারকৃত আসামি আনোয়ার হোসেন ওরফে শুটার সবুজের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা, যা শাহআলী থানার মামলা নং-২(২)১৬ ধারা-১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯-এ রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও কোন মামলা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, অত্র মামলার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী গ্রুপটি নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানের সময় পিস্তলকে সাংকেতিক শব্দ ‘বই’ এবং পিস্তলের গুলিকে ‘কয়েন’ বলতো। অত্র মামলার ঘটনায় জড়িত সহযোগী অপরাপর আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।

আরও খবর
যবিপ্রবি ভিসির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রুল
কামরান টি. রহমান এমপ্লয়ার ফেডারেশনের সভাপতি পুনর্নির্বাচিত
ডেঙ্গু সচেতনতা সৃষ্টি ও সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু রোধে পরিপত্র জারি
বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উন্নয়নে আগ্রহী ভারত
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সর্বস্তরের মানুষের অংশ নেয়ার আহ্বান কাদেরের
অভিযোগপত্রে সাবেক এমপি ও পুলিশের নাম না থাকায় বিক্ষোভ
ছাত্রের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট
ডেঙ্গু টেস্ট রিপোর্ট দিতে হিমশিমে সোহরাওয়ার্দী
গুজববিরোধী ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক র‌্যালি
দলীয় আয় বাড়ছে বিএনপির
ডেঙ্গু : মিনিস্টার মনিটরিং সেল গঠন
আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ নিহত ২, আহত ৩০
সন্তানের জন্য দুধ কিনতে বলায় স্ত্রীর গায়ে আগুন
বাংলাদেশ এখন উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশ : কৃষিমন্ত্রী
ধর্ষণ মামলার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত
মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বামপন্থিরাই বাস্তবায়ন করবে
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে হুমকির মুখে মা

বুধবার, ৩১ জুলাই ২০১৯ , ১৬ শ্রাবন ১৪২৫, ২৭ জিলকদ ১৪৪০

চাঁদার জন্য মিরপুরে ব্যবসায়ী হত্যা

সাড়ে তিন বছর পর কিলার সুবজ গ্রেফতার

বাকী বিল্লাহ

সন্ত্রাসী শাহাদাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড আনোয়ার হোসেন সবুজের দাবি করা কোটি টাকা চাঁদা না দেয়ায় হোটেল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জুনায়েতকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালে পহেলা ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মূল আসামি শুটার সবুজকে গত সোমবার রাতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিশেষ টিম যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে গ্রেফতার করে। সে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে ব্যবসায়ী তার জীবন বাঁচাতে হত্যাকান্ডের আগে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু চাঁদাবাজরা ১ কোটি টাকা দাবি করছিল। পুরো টাকা না দেয়ায় তাকে হত্যা করেছিল বলে স্বীকার করেছে। অভিযোগ রয়েছে, থানা পুলিশ ৩ বছরেরও বেশি সময় চেষ্টা করে এ (২০১৬ পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ পহেলা ফেব্রুয়ারি) আসামিকে ধরতে না পারলেও পিবিআই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত করে আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

পিবিআই জানায়, মামলার বাদী ডা. সাঈদ হোসেন সোহাগ অভিযোগ করে বলেন, তার বড় ভাই মৃত রফিকুল ইসলাম জুনায়েত আবাসিক হোটেলের ব্যবসা করে আসছিলেন। ২০১৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি রাতে ১১২, দক্ষিণ বিশিল নিউ শাহাজালাল আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার শাহ আলমের কাছ থেকে হোটেলের হিসাব নিকাশ নিয়ে তার বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরপর আর তার খবর নেই। পরের দিন ২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিসেস নাহার নামে একজন তাকে ফোন দিয়ে জানায় যে, দারুস সালাম রোড পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদের সামনে ফুটপাতের উপর বাদীর ভাই রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে বাদী দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার বড় ভাইয়ের লাশ ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখে শনাক্ত করেন। বুকের বাম পাশে গুলির আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং গুলির খোসা ও চেকের তিনটি টুকরা জব্দ করেন। পরবর্তীতে বাদীর ভাইয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।

নিহতের ভাই ডা. সাঈদ হোসেন সোহাগ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৬ তারিখ-২/২/২০১৬। দারুস সালাম থানা পুলিশকর্তৃক মামলাটি তদন্তকালে হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত আসামি সোহেল ওরফে শুটার সোহেল ও শেখ মৃদুল ওরফে বাবু ওরফে মির্জাদের গ্রেফতার করেন।

ঢাকা মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে এবং ঘটনায় জড়িত আবদুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশকে গ্রেফতারপূর্বক মামলাটি তদন্ত শেষে ৮ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ডিবি পুলিশ প্রধান ২ জন আসামি গ্রেফতার না করেই বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। প্রধান আসামি গ্রেফতার ও ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন না হওয়ায় বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ প্রদান করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পিবিআই, ঢাকা মেট্রো (উত্তর)-এর পুলিশ পরিদর্শক মো. জুয়েল মিঞা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ পলাতক মূল আসামি গ্রেফতারের নিমিত্তে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেন।

পরবর্তীতে নিয়োজিত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে খবর পেয়ে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের দিক-নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী অফিসারের নেতৃত্বে একটি টিম গত ২৯ জুলাই রাতে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা হতে আসামি আনোয়ার হোসেন সবুজ ওরফে সজিব ওরফে শুটার সবুজকে আটক করে।

আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, নিহত রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের পিতা মরহুম বিল্লাল হোসেন ১৯৯৭ সালে আবাসিক হোটেল শাহজালাল প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে হোটেল ব্যবসা করে আসছিলেন। অত্র মামলার ঘটনার বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই স্থানীয় চাঁদাবাজ শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড আসামি আনোয়ার হোসেন সবুজ ওরফে শুটার সবুজসহ তার সহযোগী আসামি শুটার সোহেল, শেখ মৃদুল ওরফে বাবু, আবদুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশ উক্ত হোটেল থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের নাম করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছিল।

চাঁদাবাজ গ্রুপ রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে একটি ইন্ডিয়ান মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে আসে যোগাযোগ করার জন্য। কিন্তু রফিকুল ইসলাম তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পর থেকে রফিকুল ইসলাম জুনায়েত মোবাইলে বিভিন্ন হুমকি ধামকির মেসেজ আসতো। উক্ত দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পাওয়ায় চাঁদাবাজ গ্রুপটি অত্র মামলার রফিকুল ইসলাম জুনায়েতের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

চাঁদাবাজ গ্রুপ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ষড়যন্ত্র করে রফিকুল ইসলামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি শুটার সবুজ, শুটার সোহেল, শেখ মৃদুল ওরফে বাবু ওরফে মির্জা, আবদুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী রফিকুল ইসলামকে হত্যার গোপন পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৭/১/২০১৬ আসামি শুটার সবুজ তার সহযোগী আসামিদের সিমসহ কয়েকটি মোবাইল ফোন সেট প্রদান করে এবং সে নিজের কাছে একটি মোবাইল ফোন রাখে। ঐ ফোনগুলো দিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে এবং শাহজালাল হোটেলের মালিক জুনায়েতকে নজরদারিতে রাখে।

পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গত ২০১৬ সালে পহেলা ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে আসামিরা শুটার সবুজের বাসায় একত্রিত হয়। এরপর শুটার সবুজের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। পহেলা ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২টার দিকে জুনায়েত হোটেলের সব হিসাব নিকাশ শেষ করে তার নিজ বাসা দক্ষিণ বিশিলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। জুনায়েত মিরপুর দারুস সালাম রোডে পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদের সামনে ফুটপাতের উপর পৌঁছা মাত্র আসামি শুটার সবুজের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা জুনায়েতকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে। শুটার সবুজ তার হাতে থাকা পিস্তল জুনায়েতের বুকের বাম পাশে ঠেকিয়ে গুলি করে। গুলি করার পর জুনায়েতের মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সবাই গুদারাঘাট বটতলার দিকে চলে যায়। রাত ১টার দিকে আসামি শুটার সবুজের নির্দেশে সবাই মোবাইল বন্ধ করে সিমসহ তুরাগ নদীতে ফেলে দেয় এবং সবাই আত্মগোপন করে থাকে। গ্রেফতারকৃত আসামি আনোয়ার হোসেন ওরফে শুটার সবুজের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা, যা শাহআলী থানার মামলা নং-২(২)১৬ ধারা-১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯-এ রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও কোন মামলা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, অত্র মামলার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী গ্রুপটি নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানের সময় পিস্তলকে সাংকেতিক শব্দ ‘বই’ এবং পিস্তলের গুলিকে ‘কয়েন’ বলতো। অত্র মামলার ঘটনায় জড়িত সহযোগী অপরাপর আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।