শরীয়তপুরে রমিজ বাহিনীর কাছে জিম্মি ৩ ইউপির মানুষ

শরীয়তপুরের সদর উপজেলার চিকন্দী, ডোমসার ও শোলপাড়া ইউনিয়নে সন্ত্রাসী রমিজ বাহিনীর তা-বে আতঙ্কে এলাকাবাসী। চাঁদার টাকা না পেলে চলে নির্মম নির্যাতন। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায় না নারী ও শিশু। রয়েছে মাদক ব্যবসা, জমি দখল আর লুটপাটের অভিযোগও। এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পালং মডেল থানায় রয়েছে ৫২টি মামলা।

রজিম খা এলাকায় কানা রমিজ নামেই পরিচিত। এক সময় এলাকায় সালিশি করাই ছিল তার প্রধান কাজ। এরপর সখ জাগে জনপ্রতিনিধি হওয়ার কিন্তু ছিল না জনসমর্থন। নির্বাচনে জয়ী হতে গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রভাব খাটিয়ে ছিনিয়ে নেয় জনপ্রতিনিধির তকমা। এভাবেই উত্থান রমিজ খার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সন্ত্রাসী রমিজ বাহিনীর প্রধান কানা রমিজকে। ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এলাকায়। তার নিজের রয়েছে ৯ জন ছেলে। তারাই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে পুরো বাহিনীকে। চিকন্দী ইউনিয়নের মোতালেব মাদরব ও ডোমসার ইউনিয়নের কাশেম মাদবর দুই জনই এখন পঙ্গু। স্ক্রাচে ভর করে চলতে চেষ্টা করেন তারা। এখন আর কোন কাজ করতে পারেন না। অসহায় অবস্থায় দিন কাটে তাদের। কিন্তু এমন অবস্থা ছিল না তাদের। অন্য আট দশজনের মতো স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতে পারতেন। কাজ করে সংসার চালাতেন। সন্ত্রাসী রমিজ বাহিনীর নির্মাম নির্যাতনের শিকার এই দুই ব্যক্তি। অপারাধ রমিজ বাহিনির দাবি মতো অর্থ দিতে পারেননি তারা। তাই তাদের ওপর চলে হামলা। করা হয় মারধর। আজ তারা অসহায় আর অচল অবস্থায় দিন পার করছেন।

ডোমসার ইউনিয়নের কাশেম মাদবর বলেন, ১৯ শতাংশ জমি নিয়ে নুর মোহাম্মদের সঙ্গে বিরোধ ছিল। আমাদের জমির কাগজপত্র সব ঠিক ছিল কিন্তু নুর মোহম্মদের পক্ষ নিয়ে রমিজ খার বাহিনী রাত দুই টার সময় আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আমাকে কুপিয়ে জখম করে রেখে যায়। কেউই এগিয়ে আসতে সাহস পায় নাই। পরে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায় বেঁচে গেছি। জমিজমার মীমাংসার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, বাজারে ব্যবসা চালাতে হলে চাঁদা, সড়কে গাড়ি চালালে দিতে হবে মাসিক চাঁদা, মাদক ব্যবসা আর ধর্ষণ এই বাহিনীর সদস্যদের কাছে নিয়মিত হয়ে গেছে। শুধু টাকা নয় ওই সন্ত্রাসীরা খেলায় খুশি মতো পণ্য নিয়ে যায় দোকান থেকে। প্রতিবাদ করলে চলে নির্যাতন। রমিজ বাহিনীর অত্যাচারে অনেকেই গুটিয়ে নিয়েছেন চিকন্দী বাজারের ব্যবসা। চিকন্দি বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল তালুকদার বলেন, আমি ১০ বছর ধরে ব্যবসা করেছি। রমিজ বাহিনীর সদস্যরা আমার কাছে চাঁদা চায় কিন্তু আমি চাঁদা দিতে রাজি হই নাই। এরপর ওরা আমার বাড়িতে গিয়া ভাঙচুর করে আমাকে রাম দা দিয়ে কোপায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাণে বেচেঁ গেছি। এখন ব্যবসা বন্ধ করে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাই। অটো চালাক রমজান আলী বলেন, রজিম খার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর খা প্রথমে তিন হাজার টাকা নিয়েছে আর প্রতি মাসে একশ করে টাকা নেয়। টাকা না দিলে গাড়ি চালাতে দেয় না। অনেক চালকই এখন এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আমরা চাঁদা দিয়েই গাড়ি চালাই। এসব অভিযোগ সম্পর্কে রমিজ বাহিনীর প্রধান রমিজ খা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি সব অস্বীকার করেন। বলেন ,এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমার প্রতিপক্ষরাই এমনটা ঘটাচ্ছে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন বলেন, এসব ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ অবহিত আছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু কয়েক দিন পরেই তারা জামিনে বের হয়ে যায়। ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোন ধরনের অপকর্ম ঘটালে অভিযোগ দেয়ার জন্য স্থানীয়দের বলা হয়েছে।

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১২ পৌষ ১৪২৬, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪১

শরীয়তপুরে রমিজ বাহিনীর কাছে জিম্মি ৩ ইউপির মানুষ

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর

image

শরীয়তপুরের সদর উপজেলার চিকন্দী, ডোমসার ও শোলপাড়া ইউনিয়নে সন্ত্রাসী রমিজ বাহিনীর তা-বে আতঙ্কে এলাকাবাসী। চাঁদার টাকা না পেলে চলে নির্মম নির্যাতন। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায় না নারী ও শিশু। রয়েছে মাদক ব্যবসা, জমি দখল আর লুটপাটের অভিযোগও। এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পালং মডেল থানায় রয়েছে ৫২টি মামলা।

রজিম খা এলাকায় কানা রমিজ নামেই পরিচিত। এক সময় এলাকায় সালিশি করাই ছিল তার প্রধান কাজ। এরপর সখ জাগে জনপ্রতিনিধি হওয়ার কিন্তু ছিল না জনসমর্থন। নির্বাচনে জয়ী হতে গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রভাব খাটিয়ে ছিনিয়ে নেয় জনপ্রতিনিধির তকমা। এভাবেই উত্থান রমিজ খার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সন্ত্রাসী রমিজ বাহিনীর প্রধান কানা রমিজকে। ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এলাকায়। তার নিজের রয়েছে ৯ জন ছেলে। তারাই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে পুরো বাহিনীকে। চিকন্দী ইউনিয়নের মোতালেব মাদরব ও ডোমসার ইউনিয়নের কাশেম মাদবর দুই জনই এখন পঙ্গু। স্ক্রাচে ভর করে চলতে চেষ্টা করেন তারা। এখন আর কোন কাজ করতে পারেন না। অসহায় অবস্থায় দিন কাটে তাদের। কিন্তু এমন অবস্থা ছিল না তাদের। অন্য আট দশজনের মতো স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতে পারতেন। কাজ করে সংসার চালাতেন। সন্ত্রাসী রমিজ বাহিনীর নির্মাম নির্যাতনের শিকার এই দুই ব্যক্তি। অপারাধ রমিজ বাহিনির দাবি মতো অর্থ দিতে পারেননি তারা। তাই তাদের ওপর চলে হামলা। করা হয় মারধর। আজ তারা অসহায় আর অচল অবস্থায় দিন পার করছেন।

ডোমসার ইউনিয়নের কাশেম মাদবর বলেন, ১৯ শতাংশ জমি নিয়ে নুর মোহাম্মদের সঙ্গে বিরোধ ছিল। আমাদের জমির কাগজপত্র সব ঠিক ছিল কিন্তু নুর মোহম্মদের পক্ষ নিয়ে রমিজ খার বাহিনী রাত দুই টার সময় আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আমাকে কুপিয়ে জখম করে রেখে যায়। কেউই এগিয়ে আসতে সাহস পায় নাই। পরে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায় বেঁচে গেছি। জমিজমার মীমাংসার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, বাজারে ব্যবসা চালাতে হলে চাঁদা, সড়কে গাড়ি চালালে দিতে হবে মাসিক চাঁদা, মাদক ব্যবসা আর ধর্ষণ এই বাহিনীর সদস্যদের কাছে নিয়মিত হয়ে গেছে। শুধু টাকা নয় ওই সন্ত্রাসীরা খেলায় খুশি মতো পণ্য নিয়ে যায় দোকান থেকে। প্রতিবাদ করলে চলে নির্যাতন। রমিজ বাহিনীর অত্যাচারে অনেকেই গুটিয়ে নিয়েছেন চিকন্দী বাজারের ব্যবসা। চিকন্দি বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল তালুকদার বলেন, আমি ১০ বছর ধরে ব্যবসা করেছি। রমিজ বাহিনীর সদস্যরা আমার কাছে চাঁদা চায় কিন্তু আমি চাঁদা দিতে রাজি হই নাই। এরপর ওরা আমার বাড়িতে গিয়া ভাঙচুর করে আমাকে রাম দা দিয়ে কোপায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাণে বেচেঁ গেছি। এখন ব্যবসা বন্ধ করে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাই। অটো চালাক রমজান আলী বলেন, রজিম খার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর খা প্রথমে তিন হাজার টাকা নিয়েছে আর প্রতি মাসে একশ করে টাকা নেয়। টাকা না দিলে গাড়ি চালাতে দেয় না। অনেক চালকই এখন এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আমরা চাঁদা দিয়েই গাড়ি চালাই। এসব অভিযোগ সম্পর্কে রমিজ বাহিনীর প্রধান রমিজ খা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি সব অস্বীকার করেন। বলেন ,এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমার প্রতিপক্ষরাই এমনটা ঘটাচ্ছে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন বলেন, এসব ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ অবহিত আছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু কয়েক দিন পরেই তারা জামিনে বের হয়ে যায়। ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোন ধরনের অপকর্ম ঘটালে অভিযোগ দেয়ার জন্য স্থানীয়দের বলা হয়েছে।