আক্কেলপুরে তুলসীগঙ্গার ভাঙনে অস্তিত্ব সংকটে মন্দির-শ্মশান

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা সদরের নবাবগঞ্জঘাট মহাশ্মশান, মন্দির ও সংলগ্ন দেবোত্তর সম্পত্তি অবকাঠামো তুলসীগঙ্গা নদীতে যে কোন সময় বিলীন হয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীর পাড়ে আরসিসি পাইলিং রিটার্নিং ওয়াল ও ব্লক না থাকায় প্রতিবছর মন্দির ও শ্মশান প্রাঙ্গণ ভেঙ্গে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ৩ লাখ টাকা বরাদ্দে সবদেহ সৎকারের জন্য নির্মাণাধীন চুল্লি যে কোন সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। যার ফলে প্রতিবছর বন্যায় আক্কেলপুর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮১৬ সালে আক্কেলপুর এলাকার সুরতলাল চৌধুরী, মহাদেব আগরওয়ালা, ভীমরাজ আগরওয়ালা ও স্থানীয় মারোয়ারী সমিতির উদ্যোগে তুলসীগঙ্গা নদীর তীরে নবাবগঞ্জ ঘাটে হিন্দু ও মারোয়ারী সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তিদের দাহ ও সমাধি দেয়ার জন্য নিজেদের অর্থে ১১ বিঘা জমি শ্মশানের নামে দান করে। সেই জমিতে বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও এখানে সমাধির স্থান, চুলি ও বিশ্রামাগার রয়েছে। এই মহাশ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যেই সরকারের সমাজসেবা অধিদফতর ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যথাক্রমে নিবন্ধন ও তালিকাভুক্ত সনদপত্র পেয়েছে। এই শ্মশান ও মন্দির বন্যায় তুলসীগঙ্গা নদীতে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আক্কেলপুর-জয়পুরহাট সড়ক থেকে প্রায় দুইশ’ গজ হেঁটে যাবার পথটি গত বন্যায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। তখন চরম বিপর্যয়ে পড়তে হয় সবদেহ নিয়ে যেতে। শ্মশানের এই সঙ্কট ও দুর্ভোগ নিরসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃৃবৃন্দ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সুফল পায়নি। ফলে তাদের মাঝে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। নবাবগঞ্জঘাট মহাশ্মশান, দেবোত্তর ও সমাজ কল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার আগরওয়ালা জানান, আক্কেলপুর ও নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার কয়েক হাজার হিন্দু ও মারোয়ারী জনগোষ্ঠীর সবদেহ দাহ ও সমাধি দেয়ার একমাত্র জায়গা এই মহাশ্মশান। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে শ্মশান ও মন্দির রক্ষায় লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। শ্মশান, মন্দির ও সংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দাবি জানিয়েছেন হিন্দু ও মারোয়ারী সম্প্রদায়ের লোকজন। আক্কেলপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট রাজেন্দ্র প্রসাদ আগরওয়ালা বলেন,শ্মশান, মন্দির ও সংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আক্কেলপুর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওমপ্রকাশ আগরওয়ালা বলেন, এই মহাশ্মশান, মন্দিরের জায়গা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা দরকার। আর যারা শ্মশানের জায়গা ও জেলা পরিষদের জায়গা অবৈধ দখল করেছে তাদের উচ্ছেদ করা দরকার। আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর বলেন,হিন্দু ধর্মালম্বীদের পবিত্র জায়গা শ্মশান ও মন্দির। তুলসীগঙ্গা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা পৌরসভার পক্ষ থেকে নেয়া হবে। আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, শ্মশান ও মন্দির নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আ. মুমিন বলেন, বাজেট পেলে তুলশীগঙ্গা নদীর ভাঙন থেকে শ্মশান ও মন্দিরকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১২ পৌষ ১৪২৬, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪১

আক্কেলপুরে তুলসীগঙ্গার ভাঙনে অস্তিত্ব সংকটে মন্দির-শ্মশান

ওম প্রকাশ আগরওয়ালা, আক্কেলপুর(জয়পুরহাট)

image

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা সদরের নবাবগঞ্জঘাট মহাশ্মশান, মন্দির ও সংলগ্ন দেবোত্তর সম্পত্তি অবকাঠামো তুলসীগঙ্গা নদীতে যে কোন সময় বিলীন হয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীর পাড়ে আরসিসি পাইলিং রিটার্নিং ওয়াল ও ব্লক না থাকায় প্রতিবছর মন্দির ও শ্মশান প্রাঙ্গণ ভেঙ্গে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ৩ লাখ টাকা বরাদ্দে সবদেহ সৎকারের জন্য নির্মাণাধীন চুল্লি যে কোন সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। যার ফলে প্রতিবছর বন্যায় আক্কেলপুর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮১৬ সালে আক্কেলপুর এলাকার সুরতলাল চৌধুরী, মহাদেব আগরওয়ালা, ভীমরাজ আগরওয়ালা ও স্থানীয় মারোয়ারী সমিতির উদ্যোগে তুলসীগঙ্গা নদীর তীরে নবাবগঞ্জ ঘাটে হিন্দু ও মারোয়ারী সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তিদের দাহ ও সমাধি দেয়ার জন্য নিজেদের অর্থে ১১ বিঘা জমি শ্মশানের নামে দান করে। সেই জমিতে বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও এখানে সমাধির স্থান, চুলি ও বিশ্রামাগার রয়েছে। এই মহাশ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যেই সরকারের সমাজসেবা অধিদফতর ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যথাক্রমে নিবন্ধন ও তালিকাভুক্ত সনদপত্র পেয়েছে। এই শ্মশান ও মন্দির বন্যায় তুলসীগঙ্গা নদীতে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আক্কেলপুর-জয়পুরহাট সড়ক থেকে প্রায় দুইশ’ গজ হেঁটে যাবার পথটি গত বন্যায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। তখন চরম বিপর্যয়ে পড়তে হয় সবদেহ নিয়ে যেতে। শ্মশানের এই সঙ্কট ও দুর্ভোগ নিরসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃৃবৃন্দ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সুফল পায়নি। ফলে তাদের মাঝে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। নবাবগঞ্জঘাট মহাশ্মশান, দেবোত্তর ও সমাজ কল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার আগরওয়ালা জানান, আক্কেলপুর ও নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার কয়েক হাজার হিন্দু ও মারোয়ারী জনগোষ্ঠীর সবদেহ দাহ ও সমাধি দেয়ার একমাত্র জায়গা এই মহাশ্মশান। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে শ্মশান ও মন্দির রক্ষায় লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। শ্মশান, মন্দির ও সংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দাবি জানিয়েছেন হিন্দু ও মারোয়ারী সম্প্রদায়ের লোকজন। আক্কেলপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট রাজেন্দ্র প্রসাদ আগরওয়ালা বলেন,শ্মশান, মন্দির ও সংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আক্কেলপুর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওমপ্রকাশ আগরওয়ালা বলেন, এই মহাশ্মশান, মন্দিরের জায়গা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা দরকার। আর যারা শ্মশানের জায়গা ও জেলা পরিষদের জায়গা অবৈধ দখল করেছে তাদের উচ্ছেদ করা দরকার। আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর বলেন,হিন্দু ধর্মালম্বীদের পবিত্র জায়গা শ্মশান ও মন্দির। তুলসীগঙ্গা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা পৌরসভার পক্ষ থেকে নেয়া হবে। আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, শ্মশান ও মন্দির নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আ. মুমিন বলেন, বাজেট পেলে তুলশীগঙ্গা নদীর ভাঙন থেকে শ্মশান ও মন্দিরকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।