বিক্ষোভে নিহত মুসলিমদের দাফনেও হস্তক্ষেপ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনবিরোধী বিক্ষোভে উত্তরপ্রদেশে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সংবাদ মাধ্যম হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর এখন নিহতদের দাফনেও বিধি-নিষেধ আরোপ করছে। অনেক পরিবারকে বাধ্য করছে গোপনে দ্রুত দাফন করতে। গত মাসের ২০ তারিখে ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ সুলেমান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ওই দিন মধ্যরাতে নিহতের বাবাকে কাছের পুলিশ স্টেশনে ডেকে নিয়ে দাফনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সুলেমানের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল বিজনর জেলার ব্যস্ত এলাকায় নেহতাউর চৌমুহনীতে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

সংশোধীত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিক্ষোভ ও স্লোগানে পুলিশ গুলি চালানোর অল্প কিছু সময় সুলেমানের লাশ পাওয়া যায়। মৃত্যুর পর সুলেমানের মরদেহ বিজনর জেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ তা আটকে রাখে। এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের বাবা জাহিদ হুসাইনের বাবাকে জানান, পরদিন (২১ ডিসেম্বর) সুলেমানের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। কিন্তু পরিবারের কাছে লাশ এক শর্তে হস্তান্তর করা হবে, তা হলো নেহতাউর থেকে দূরে কোথাও দ্রুতই দাফন করতে হবে। জানাজায় কোনও বন্ধু বা শোকাহতকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। কঠোর পুলিশি বন্দোবস্তের মধ্যে দাফন সম্পন্ন করতে হবে। সুলেমানের বড় ভাই শোয়েব পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিলেন বাবার সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ বলে তোমরা দাঙ্গাকারী। দাফনেও তোমরা দাঙ্গা শুরু করবে। তারা আরও বলে যে কোনও জায়গায় গর্ত খুঁড়ো এবং পুঁতে ফেলো। শোয়েব জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের দাফনের ধর্মীয় রীতি ধৈর্য ধরে পুলিশকে বুঝিয়ে বলেছেন তারা।

গত মাসের ২১ তারিখে সকাল ৭টার কিছুক্ষণ পর সুলেমানের মরদেহ পুলিশের একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িটি পুলিশ প্রহরায় বিজনর থেকে বাগদাদ আনসার এলাকার একটি গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে তার নানি বাস করতেন। একই দিন রাতে, নেহতাউর এলাকার আরেকটি নিরুপায় পরিবারকেও পুলিশের সঙ্গে একই ধরনের সমঝোতা করতে হয়েছে। ৮ মাসের শিশুর বাবা ২১ বছর বয়সী আনাস হোসাইন একটি সরু গলিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনাতেও পুলিশ দূরে কোথাও দাফনে রাজি না হওয়ার পূর্বে মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তরে রাজি হয়নি। আনাসের দাফনের সময় মিথান নামের গ্রামে একটি কবরস্থানে পুলিশ পাহারা দেয়, নিহতের ভাই কবর খুঁড়েন, বাবা ছেলের মরদেহকে গোসল করান। আর তার চাচা কবরে লাশের ওপরে দেয়ার জন্য কাঠ ও বাঁশের ব্যবস্থা করেন। বাবা আরশাদ হোসাইন বলেন, আমাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই আনাসকে শেষবার দেখার সুযোগ পাননি। বিজনর এলাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিত শ্রিবাস্তব নিশ্চিত করেছেন, সুলেমান ও আনাসের মরদেহ দূরে কোথাও দাফন করার নির্দেশনা দেয়ার বিষয়ে।

নেহতাউরের পরিস্থিতি উত্তেজনাকর থাকায় এই নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি বলেন, পরিবার সম্মত হয়েছে।

উল্লেখ্য, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে গিয়ে বসবাস করা অমুসলিমদের দেশটির নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বৈষম্যমূলক এ আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে উত্তর প্রদেশে। বন্দী করা হয়েছে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে।

বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২০ , ১৯ পৌষ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

বিক্ষোভে নিহত মুসলিমদের দাফনেও হস্তক্ষেপ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের

সংবাদ ডেস্ক |

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনবিরোধী বিক্ষোভে উত্তরপ্রদেশে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সংবাদ মাধ্যম হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর এখন নিহতদের দাফনেও বিধি-নিষেধ আরোপ করছে। অনেক পরিবারকে বাধ্য করছে গোপনে দ্রুত দাফন করতে। গত মাসের ২০ তারিখে ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ সুলেমান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ওই দিন মধ্যরাতে নিহতের বাবাকে কাছের পুলিশ স্টেশনে ডেকে নিয়ে দাফনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সুলেমানের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল বিজনর জেলার ব্যস্ত এলাকায় নেহতাউর চৌমুহনীতে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

সংশোধীত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিক্ষোভ ও স্লোগানে পুলিশ গুলি চালানোর অল্প কিছু সময় সুলেমানের লাশ পাওয়া যায়। মৃত্যুর পর সুলেমানের মরদেহ বিজনর জেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ তা আটকে রাখে। এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের বাবা জাহিদ হুসাইনের বাবাকে জানান, পরদিন (২১ ডিসেম্বর) সুলেমানের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। কিন্তু পরিবারের কাছে লাশ এক শর্তে হস্তান্তর করা হবে, তা হলো নেহতাউর থেকে দূরে কোথাও দ্রুতই দাফন করতে হবে। জানাজায় কোনও বন্ধু বা শোকাহতকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। কঠোর পুলিশি বন্দোবস্তের মধ্যে দাফন সম্পন্ন করতে হবে। সুলেমানের বড় ভাই শোয়েব পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিলেন বাবার সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ বলে তোমরা দাঙ্গাকারী। দাফনেও তোমরা দাঙ্গা শুরু করবে। তারা আরও বলে যে কোনও জায়গায় গর্ত খুঁড়ো এবং পুঁতে ফেলো। শোয়েব জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের দাফনের ধর্মীয় রীতি ধৈর্য ধরে পুলিশকে বুঝিয়ে বলেছেন তারা।

গত মাসের ২১ তারিখে সকাল ৭টার কিছুক্ষণ পর সুলেমানের মরদেহ পুলিশের একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িটি পুলিশ প্রহরায় বিজনর থেকে বাগদাদ আনসার এলাকার একটি গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে তার নানি বাস করতেন। একই দিন রাতে, নেহতাউর এলাকার আরেকটি নিরুপায় পরিবারকেও পুলিশের সঙ্গে একই ধরনের সমঝোতা করতে হয়েছে। ৮ মাসের শিশুর বাবা ২১ বছর বয়সী আনাস হোসাইন একটি সরু গলিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনাতেও পুলিশ দূরে কোথাও দাফনে রাজি না হওয়ার পূর্বে মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তরে রাজি হয়নি। আনাসের দাফনের সময় মিথান নামের গ্রামে একটি কবরস্থানে পুলিশ পাহারা দেয়, নিহতের ভাই কবর খুঁড়েন, বাবা ছেলের মরদেহকে গোসল করান। আর তার চাচা কবরে লাশের ওপরে দেয়ার জন্য কাঠ ও বাঁশের ব্যবস্থা করেন। বাবা আরশাদ হোসাইন বলেন, আমাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই আনাসকে শেষবার দেখার সুযোগ পাননি। বিজনর এলাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিত শ্রিবাস্তব নিশ্চিত করেছেন, সুলেমান ও আনাসের মরদেহ দূরে কোথাও দাফন করার নির্দেশনা দেয়ার বিষয়ে।

নেহতাউরের পরিস্থিতি উত্তেজনাকর থাকায় এই নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি বলেন, পরিবার সম্মত হয়েছে।

উল্লেখ্য, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে গিয়ে বসবাস করা অমুসলিমদের দেশটির নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বৈষম্যমূলক এ আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে উত্তর প্রদেশে। বন্দী করা হয়েছে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে।