উপকূলে অকাল বর্ষণ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

উপকূলীয় অঞ্চলে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে উঠতি ফসল বিশেষ করে আমন ধান এবং তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে-

রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে অকাল বর্ষণে কাটা আমন ধান ও তরমুজ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। বৃষ্টির পানিতে পালা দেয়া ধানে গজ হয়ে যেতে পারে বলে জানান কৃষকরা। আর যদি তাই হয় তা হলে সব ধান বিক্রির অযোগ্য হয়ে পরবে। তাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা মোটেই এড়িয়ে যায় না।

কয়েকদিন ধরে প্রচ- শীত আর মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজমান। উপকূলীয় এলাকায় আমন ধান কাটা প্রায় শেষ। তরমুজের আঁটি বপন করার ভরা মৌসুম। পৌষ মাসের মাঝামাঝি বৃষ্টি হয় না সচরাচর। তাই বৃষ্টির কথা চিন্তা করেনি কোনও কৃষক। গত শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি। চলে টানা প্রায় ৫ ঘণ্টা। ধানের পালায় ঢুকে যায় বৃষ্টির পানি। যে যেভাবে পারছে ফসল রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লেখা পর্যন্ত আকাশে প্রচুর মেঘ ও বৃষ্টি চলছিল। রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি প্রধান এলাকা। প্রচুর ধান ও তরমুজ চাষ হয় এই উপজেলায়। এখন সব কৃষকের খলায় ধান, এত বৃষ্টি হলে ঢেকে রাখার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই তাদের। তবুও শেষ রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

তাছাড়া বৃষ্টির পানি জমে গেছে তরমুজ ক্ষেতে। এতে গজিয়ে ওঠা চারা ও সদ্য বপন করা আঁটি পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে যানান তরমুজ চাষিরা। শেষ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। তরমুজ চাষি রাঙ্গাবালীর সওকত প্যাদা, কোড়ালিয়া গ্রামের মনির হোসেন ও বসির হাওলাদার জানান তারা অন্তত ১৫০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছে। অনেক ক্ষেতে চাড়াও গজিয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেতে আঁটি বপন চলছে। বৃষ্টির পানিতে গজে উঠা চাড়া ও বপন করা আঁটি পঁচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানি সরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এভাবে আরও বৃষ্টি হলে শেষ রক্ষা হবে না বলে মনে করছেন চাষিরা।

গলাচিপা

গত ২৪ ঘণ্টা যাবত গলাচিপায় টানা ভারি ও মাঝারি বর্ষায় অনেক ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ক্ষেতে রোপণ করা গাছের গোড়ায় পানি জমে গাছ মরে যাচ্ছে। বিশেষ করে তরমুজ চাষিরা বেহাল দশায় উপনীত হয়েছে। গলাচিপা উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। ভাল ফলনের আশায় কৃষকরা এসব জমিতে ধানের আবাদ না করে তরমুজের ভাল ফলনের আশায় অনাবাদি রেখেছেন। তাদের সে আশা গুরেবালিতে পরিণত হয়েছে। অসময়ে বৃষ্টিপাতে ক্ষেতের তরমুজ লতা পচে যাচ্ছে। এদিকে ইটভাটার মালিকদেরও বেজায় লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের হিসাব মতে এতে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকারও বেশি হবে। এছাড়া যেসব কৃষক ধান কেটে পালা দিয়ে রেখেছেন তারাও বিপাকে রয়েছেন। রতনদি তালতলী ইউনিয়নের নিমহাওলা গ্রামের কৃষক আ. বারেক জানান, উফশী জাতের ধানে পানি পেলেই অংকুর্দোগম হয়। এ বৃষ্টিতে অনেকের উঠানো পালা দিয়ে রাখা ধান নষ্ট হয়ে যাবে। গোলখালী গ্রামের তরমুজ চাষি জুয়েল মোল্লা জানান, তার চাষকৃত ১২ একর জমির অধিকাংশ এলাকায় পানি জমে গেছে। আর বর্ষা না হলেও রোদ উঠলেই অনেক গাছ মরে যাবে। এছাড়া অন্যান্য রবি শস্যের ইতোমধ্যেই ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিসার দফতর সূত্র জানায়, কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে ইতোমধ্যেই প্রত্যেক ইউনিয়নে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২০ , ২৩ পৌষ ১৪২৬, ৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

উপকূলে অকাল বর্ষণ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

সংবাজ জাতীয় ডেস্ক

উপকূলীয় অঞ্চলে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে উঠতি ফসল বিশেষ করে আমন ধান এবং তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে-

রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে অকাল বর্ষণে কাটা আমন ধান ও তরমুজ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। বৃষ্টির পানিতে পালা দেয়া ধানে গজ হয়ে যেতে পারে বলে জানান কৃষকরা। আর যদি তাই হয় তা হলে সব ধান বিক্রির অযোগ্য হয়ে পরবে। তাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা মোটেই এড়িয়ে যায় না।

কয়েকদিন ধরে প্রচ- শীত আর মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজমান। উপকূলীয় এলাকায় আমন ধান কাটা প্রায় শেষ। তরমুজের আঁটি বপন করার ভরা মৌসুম। পৌষ মাসের মাঝামাঝি বৃষ্টি হয় না সচরাচর। তাই বৃষ্টির কথা চিন্তা করেনি কোনও কৃষক। গত শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি। চলে টানা প্রায় ৫ ঘণ্টা। ধানের পালায় ঢুকে যায় বৃষ্টির পানি। যে যেভাবে পারছে ফসল রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লেখা পর্যন্ত আকাশে প্রচুর মেঘ ও বৃষ্টি চলছিল। রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি প্রধান এলাকা। প্রচুর ধান ও তরমুজ চাষ হয় এই উপজেলায়। এখন সব কৃষকের খলায় ধান, এত বৃষ্টি হলে ঢেকে রাখার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই তাদের। তবুও শেষ রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

তাছাড়া বৃষ্টির পানি জমে গেছে তরমুজ ক্ষেতে। এতে গজিয়ে ওঠা চারা ও সদ্য বপন করা আঁটি পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে যানান তরমুজ চাষিরা। শেষ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। তরমুজ চাষি রাঙ্গাবালীর সওকত প্যাদা, কোড়ালিয়া গ্রামের মনির হোসেন ও বসির হাওলাদার জানান তারা অন্তত ১৫০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছে। অনেক ক্ষেতে চাড়াও গজিয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেতে আঁটি বপন চলছে। বৃষ্টির পানিতে গজে উঠা চাড়া ও বপন করা আঁটি পঁচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানি সরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এভাবে আরও বৃষ্টি হলে শেষ রক্ষা হবে না বলে মনে করছেন চাষিরা।

গলাচিপা

গত ২৪ ঘণ্টা যাবত গলাচিপায় টানা ভারি ও মাঝারি বর্ষায় অনেক ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ক্ষেতে রোপণ করা গাছের গোড়ায় পানি জমে গাছ মরে যাচ্ছে। বিশেষ করে তরমুজ চাষিরা বেহাল দশায় উপনীত হয়েছে। গলাচিপা উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। ভাল ফলনের আশায় কৃষকরা এসব জমিতে ধানের আবাদ না করে তরমুজের ভাল ফলনের আশায় অনাবাদি রেখেছেন। তাদের সে আশা গুরেবালিতে পরিণত হয়েছে। অসময়ে বৃষ্টিপাতে ক্ষেতের তরমুজ লতা পচে যাচ্ছে। এদিকে ইটভাটার মালিকদেরও বেজায় লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের হিসাব মতে এতে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকারও বেশি হবে। এছাড়া যেসব কৃষক ধান কেটে পালা দিয়ে রেখেছেন তারাও বিপাকে রয়েছেন। রতনদি তালতলী ইউনিয়নের নিমহাওলা গ্রামের কৃষক আ. বারেক জানান, উফশী জাতের ধানে পানি পেলেই অংকুর্দোগম হয়। এ বৃষ্টিতে অনেকের উঠানো পালা দিয়ে রাখা ধান নষ্ট হয়ে যাবে। গোলখালী গ্রামের তরমুজ চাষি জুয়েল মোল্লা জানান, তার চাষকৃত ১২ একর জমির অধিকাংশ এলাকায় পানি জমে গেছে। আর বর্ষা না হলেও রোদ উঠলেই অনেক গাছ মরে যাবে। এছাড়া অন্যান্য রবি শস্যের ইতোমধ্যেই ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিসার দফতর সূত্র জানায়, কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে ইতোমধ্যেই প্রত্যেক ইউনিয়নে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।