কেশবপুরে সমবায় সমিতির ফাঁদে সর্বস্বান্ত ব্যবসায়ী

কেশবপুরে আস্থা পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের ঋণের ফাঁদে পড়ে এক ফার্ণিচার ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ওই সমিতির ফ্লাড ইন্টারেস্টের নামে চড়া সুদ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশে দিয়ে জেলে ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে গত ১১ ডিসেম্বর ফার্নিচার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে কেশবপুর পৌর এলাকার অনন্ত সড়কের পাশে উত্তম সাহা, মকবুল হোসেনসহ কতিপয় ব্যক্তি আস্থা পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সঞ্চয় ও ঋণদান কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল পৌর এলাকার সাবদিয়া অফিসপাড়ার ফার্ণিচার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ওই সমিতির সদস্য হন। এ সময় ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে কর্তৃপক্ষ তার ও জামিনদারের কাছ থেকে চুকনগর শাখার এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেডের ০১১১১০০০০৮৩৯০৬ নম্বর হিসাবের সিএ.সিডিএ- ১০৪২৬২৭ ও ১০৪২৬২৮ নম্বরের ব্লাঙ্ক চেক এবং ১০০ টাকার ২টি নন জুডিসিয়াল ব্লাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নিয়ে ১ লাখ টাকার ঋণ প্রদান করেন। কিন্তু তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়ে ঋণের দায়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। এরই ফাঁকে তিনি ওই সমিতিকে প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা করে ৭ মাসে ২১ হাজার টাকা ঋণের কিস্তি হিসেবে জমা দেন। এছাড়া ওই সমিতিতে তার ডিপিএস বাবদ ৮ হাজার টাকা, সঞ্চয় বাবদ ২৬ হাজার ১শ’ টাকা জমা রয়েছে। এরপরও কিছুদিন ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সমিতি কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট করিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে হয়রানি করেন। শুধু তাই নয় ওই ব্ল্যাঙ্ক চেকের একটিতে ২ লাখ ২৭ হাজার ৭’শ টাকা বসিয়ে এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড থেকে চেকটি ডিজাইন করিয়ে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিরসনের কথা বললে সমিতি কর্তৃপক্ষ ঋণটি ফ্লাড ইন্টারেস্টে দেয়া হয়েছে বলে তাকে জানায়। কিন্তু ঋণ নেয়ার আগে তাকে ফ্লাড ইন্টারেস্টের বিষয়টি গোপন রাখা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি না বুঝেই ঋণটি নিয়েছিলেন। ঋণগ্রস্ত শহিদুল ইসলাম আবেদনপত্রে ওই সমিতির ব্ল্যাঙ্ক চেক, স্ট্যাম্প নিয়ে প্রতারণাসহ ফ্লাড ইন্টারেস্টের নামে চড়া সুদ আদায়ের নামে প্রতারণা, হয়রানি, হুমকির হাত থেকে রক্ষার দাবি জানান। এ ব্যাপারে আস্থা পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, তার প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রাহক শহিদুল ইসলাম ১৮ মাস কিস্তির টাকা দেয়নি। তার ব্যাপারে স্থানীয় মাতব্বররা দায়িত্ব নিয়ে শুধু সময় ক্ষেপণই করেছেন। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠান তার কাছে যে টাকা পাবে তার থেকে বেশি লেখা হয়নি। সে অভিযোগে মনগড়াভাবে অঙ্ক বসিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। অচিরেই উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২০ , ২৩ পৌষ ১৪২৬, ৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

কেশবপুরে সমবায় সমিতির ফাঁদে সর্বস্বান্ত ব্যবসায়ী

প্রতিনিধি, কেশবপুর (যশোর)

কেশবপুরে আস্থা পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের ঋণের ফাঁদে পড়ে এক ফার্ণিচার ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ওই সমিতির ফ্লাড ইন্টারেস্টের নামে চড়া সুদ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশে দিয়ে জেলে ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে গত ১১ ডিসেম্বর ফার্নিচার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে কেশবপুর পৌর এলাকার অনন্ত সড়কের পাশে উত্তম সাহা, মকবুল হোসেনসহ কতিপয় ব্যক্তি আস্থা পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সঞ্চয় ও ঋণদান কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল পৌর এলাকার সাবদিয়া অফিসপাড়ার ফার্ণিচার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ওই সমিতির সদস্য হন। এ সময় ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে কর্তৃপক্ষ তার ও জামিনদারের কাছ থেকে চুকনগর শাখার এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেডের ০১১১১০০০০৮৩৯০৬ নম্বর হিসাবের সিএ.সিডিএ- ১০৪২৬২৭ ও ১০৪২৬২৮ নম্বরের ব্লাঙ্ক চেক এবং ১০০ টাকার ২টি নন জুডিসিয়াল ব্লাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নিয়ে ১ লাখ টাকার ঋণ প্রদান করেন। কিন্তু তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়ে ঋণের দায়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। এরই ফাঁকে তিনি ওই সমিতিকে প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা করে ৭ মাসে ২১ হাজার টাকা ঋণের কিস্তি হিসেবে জমা দেন। এছাড়া ওই সমিতিতে তার ডিপিএস বাবদ ৮ হাজার টাকা, সঞ্চয় বাবদ ২৬ হাজার ১শ’ টাকা জমা রয়েছে। এরপরও কিছুদিন ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সমিতি কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট করিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে হয়রানি করেন। শুধু তাই নয় ওই ব্ল্যাঙ্ক চেকের একটিতে ২ লাখ ২৭ হাজার ৭’শ টাকা বসিয়ে এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড থেকে চেকটি ডিজাইন করিয়ে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিরসনের কথা বললে সমিতি কর্তৃপক্ষ ঋণটি ফ্লাড ইন্টারেস্টে দেয়া হয়েছে বলে তাকে জানায়। কিন্তু ঋণ নেয়ার আগে তাকে ফ্লাড ইন্টারেস্টের বিষয়টি গোপন রাখা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি না বুঝেই ঋণটি নিয়েছিলেন। ঋণগ্রস্ত শহিদুল ইসলাম আবেদনপত্রে ওই সমিতির ব্ল্যাঙ্ক চেক, স্ট্যাম্প নিয়ে প্রতারণাসহ ফ্লাড ইন্টারেস্টের নামে চড়া সুদ আদায়ের নামে প্রতারণা, হয়রানি, হুমকির হাত থেকে রক্ষার দাবি জানান। এ ব্যাপারে আস্থা পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, তার প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রাহক শহিদুল ইসলাম ১৮ মাস কিস্তির টাকা দেয়নি। তার ব্যাপারে স্থানীয় মাতব্বররা দায়িত্ব নিয়ে শুধু সময় ক্ষেপণই করেছেন। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠান তার কাছে যে টাকা পাবে তার থেকে বেশি লেখা হয়নি। সে অভিযোগে মনগড়াভাবে অঙ্ক বসিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। অচিরেই উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।