পদ্মা সেতুতে বসল ২১তম স্প্যান

এ মাসেই আরও ২টি বসানো হবে

পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে ২১ তম স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো)। গতকাল সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিয়ারে এই স্প্যানটি বসানো হয়। এর মাধ্যমের সেতুর ৩ হাজার ১৫০ মিটার বা প্রায় সোয়া ৩ কিলোমিটার অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। চলতি মাসে আরও দুটি স্প্যান বসানোর কথা রয়েছে। এছাড়া স্প্যানের ওপর রোড ও রেলওয়ে সø্যাব বসানো কাজ চলছে। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে সø্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে সø্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। ৪২টি পিয়ারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। মাওয়ায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১৩ স্প্যান তৈরি করা হয়েছে। বাকি ৮টি স্প্যান চীন থেকে মাওয়ায় আনা হবে। সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩৬টি পিয়ার পুরোপুরি নির্মাণ শেষ হয়েছে। বাকি ৬টি পিয়ার চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, পদ্মা সেতুর সার্বিক সেতুর ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। এছাড়া নদী শাসনের কাজ ৬৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের জুনের পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এখন থেকে প্রতি মাসে সেতুর তিনটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সে হিসেবে চলতি বছরেই শেষ হয়ে যাবে সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ। এছাড়া আগামী চলতি মাসের জুনের মধ্যে সেতুর পিয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিয়ারে ২১তম স্প্যান ‘৬-বি’ বসানো হয়েছে। এর আগে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর সেতুর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিয়ারে বসানো হয় ২০তম স্প্যানটি। গতকাল সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন বহন করে সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিয়ারের কাছে আনা হয় দুপুরে। পরে বিকেল ৩টায় সেতুর পিয়ারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। এই ৩২ নম্বর পিয়ারটি নতুন নকশা নির্মাণ করা হয়। পাইলিং জটিলতার কারণে ১৪টি পিয়ারে একটি পাইল বৃদ্ধি করে নতুন নকশায় তা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ নম্বর পিয়ারসহ আরও ১৩টি পিয়ার রয়েছে। এই পিলারগুলোর নম্বর হলো ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫। নতুন নকশায় ১৪টি পিয়ারের জন্য ৭টি করে পাইল করার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। সমস্যা সমাধানে কাজ করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (সিওডব্লিউআই) ইউকে লিমিটেড। ইতোমধ্যে ৬,৭ ও ৩২ নাম্বার পিয়ারে স্প্যান বসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এখানে পিয়ার গেঁথে রাখা হয়েছে। এমন পদ্ধতি বাংলাদেশেই প্রথম এবং বিশ্বেও খুব একটা নজির নেই। পাইলের সঙ্গে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেয়া হয়েছে। আর পাইপের ভেতর দিয়ে এক ধরনের কেমিক্যাল পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে নদীর তলদেশের মাটিতে। ফলে তলদেশের মাটি শক্ত রূপ ধারণ করে। এরপর এসব পাইল ভার বহনের সক্ষমতা অর্জন করে। এ পদ্ধতিটির নাম স্কিন গ্রাউটিং ।

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১ মাঘ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

পদ্মা সেতুতে বসল ২১তম স্প্যান

এ মাসেই আরও ২টি বসানো হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে ২১ তম স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো)। গতকাল সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিয়ারে এই স্প্যানটি বসানো হয়। এর মাধ্যমের সেতুর ৩ হাজার ১৫০ মিটার বা প্রায় সোয়া ৩ কিলোমিটার অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। চলতি মাসে আরও দুটি স্প্যান বসানোর কথা রয়েছে। এছাড়া স্প্যানের ওপর রোড ও রেলওয়ে সø্যাব বসানো কাজ চলছে। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে সø্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে সø্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। ৪২টি পিয়ারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। মাওয়ায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১৩ স্প্যান তৈরি করা হয়েছে। বাকি ৮টি স্প্যান চীন থেকে মাওয়ায় আনা হবে। সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩৬টি পিয়ার পুরোপুরি নির্মাণ শেষ হয়েছে। বাকি ৬টি পিয়ার চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, পদ্মা সেতুর সার্বিক সেতুর ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। এছাড়া নদী শাসনের কাজ ৬৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের জুনের পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এখন থেকে প্রতি মাসে সেতুর তিনটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সে হিসেবে চলতি বছরেই শেষ হয়ে যাবে সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ। এছাড়া আগামী চলতি মাসের জুনের মধ্যে সেতুর পিয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিয়ারে ২১তম স্প্যান ‘৬-বি’ বসানো হয়েছে। এর আগে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর সেতুর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিয়ারে বসানো হয় ২০তম স্প্যানটি। গতকাল সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন বহন করে সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিয়ারের কাছে আনা হয় দুপুরে। পরে বিকেল ৩টায় সেতুর পিয়ারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। এই ৩২ নম্বর পিয়ারটি নতুন নকশা নির্মাণ করা হয়। পাইলিং জটিলতার কারণে ১৪টি পিয়ারে একটি পাইল বৃদ্ধি করে নতুন নকশায় তা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ নম্বর পিয়ারসহ আরও ১৩টি পিয়ার রয়েছে। এই পিলারগুলোর নম্বর হলো ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫। নতুন নকশায় ১৪টি পিয়ারের জন্য ৭টি করে পাইল করার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। সমস্যা সমাধানে কাজ করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (সিওডব্লিউআই) ইউকে লিমিটেড। ইতোমধ্যে ৬,৭ ও ৩২ নাম্বার পিয়ারে স্প্যান বসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এখানে পিয়ার গেঁথে রাখা হয়েছে। এমন পদ্ধতি বাংলাদেশেই প্রথম এবং বিশ্বেও খুব একটা নজির নেই। পাইলের সঙ্গে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেয়া হয়েছে। আর পাইপের ভেতর দিয়ে এক ধরনের কেমিক্যাল পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে নদীর তলদেশের মাটিতে। ফলে তলদেশের মাটি শক্ত রূপ ধারণ করে। এরপর এসব পাইল ভার বহনের সক্ষমতা অর্জন করে। এ পদ্ধতিটির নাম স্কিন গ্রাউটিং ।