মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৫ জানুয়ারি

বাঙালি অন্যায়ের প্রতি মাথানত করতে প্রস্তুত নয়

বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। কিন্তু এই স্বাধীনতার জন্য কত মা সন্তান হারিয়েছে, কত স্ত্রী স্বামী হারিয়েছে, কত পিতা তার সন্তানদের হারিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। দেশ স্বাধীন হয়েছে, আজও বাংলার হাজার হাজার মা, পিতা, স্ত্রী আশায় বুক বেঁধে আছে শীঘ্রই হয়তো তাদের আপনজন তাদের বুকে ফিরে আসবে। কিন্তু না, তাদের মধ্যে অনেকেই আর ফিরে আসবে না। কুমিল্লা জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবদুল মজিদের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ঠিক তেমনি একজন মা। যিনি তার সন্তানের আশায় বুক বেঁধে বসে আছেন। কিন্তু তিনি জানেন না যে, তাঁর স্নেহের ধন মোজাম্মেল হক (আবু)। আর তার বুকে ফিরে আসবে না। মোজাম্মেল হকের (আবু) মতো লক্ষ লক্ষ যুবকের তাজা রক্তের বিনিময়েই তো আজ বাংলা স্বাধীন।

শহীদ মোজাম্মেল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র। শহীদ মোজাম্মেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল মান্নান চৌধুরীর ভ্রাতুস্পুত্র ১৯৭১ সনের ১১ সেপ্টেম্বর। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মুজিববাহিনীর সৈন্যদের নিয়ে তিনটি নৌকা এগিয়ে যাচ্ছে কসবার নিকটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটির দিকে। নৌকাগুলোতে আছে বীর জোয়ান মোজাম্মেল, আবু জাহিদ, সাফু, পাখী, মমিনসহ আরও অনেকে।

দিনের বেলা অত্যন্ত ভালোভাবে রেকি করা হয়েছিল। নৌকাগুলো সরু খাল দিয়ে এগিয়ে চলছে। সামনের দিকে। একের পর এক সরু খাল ডিঙিয়ে এসে পড়ছিল ছারগাছ বাজারের কাছে। এমন সময় হঠাৎ পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ করল এই দলটির ওপর। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হলো। খান। সেনাদের অসংখ্য বর্বর সেনা মারা গেল। কিন্তু মুজিববাহিনীর মোজাম্মেল, জাহিদ, সাইফুল ইসলাম শহীদ হলেন এ যুদ্ধে। এই শহীদ মোজাম্মেল তার দলবল নিয়ে পাকিস্তান সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে বহু পাকিস্তান সেনাকে হত্যা ও আহত করেছেন। শহীদ মোজাম্মেল তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, বাঙালি অন্যায়ের কাছে অসত্যের কাছে মাথা নোয়াতে প্রস্তুত নয়। পাকিস্তান হানাদারবাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছে ৭ বছরের কচি ছেলে রফিকুল ইসলাম। ২২ মে কুমিল্লার কসবাথানাধীন গোপীনাথপুর গ্রামে নিজের গৃহের আঙিনায় খেলা করার সময় পাকিস্তানিবাহিনীর গুলিবর্ষণে তার মৃত্যু ঘটে।

পাকিস্তান তার ভুল উপলব্ধি করবে-বুলগেরিয়া ও পোলিশ কর্মচারীদের মন্তব্য

নয়াদিল্লি। বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ড সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ এই মর্মে আশা প্রকাশ করেছেন। যে, পাকিস্তান সরকার তার ভুল উপলব্ধিকরতঃ এই দুটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কোছেদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন। বর্তমানে ভারত সফররত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পোলিশ প্রতিনিধি দলের নেতা ও সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্সিস এডামকিউইস এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, তার দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কোছেদের সিদ্ধান্তে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন যে, একটি আইনত প্রতিষ্ঠিত সরকারের নেতৃত্বাধীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশকে অস্বীকার করে পোলান্ড কোন যুক্তিতে ৫ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পাকিস্তানকেই শুধু স্বীকার করে যাবেন। তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গেও স্বাভাবিক সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহী।

বুলগেরিয়া রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য : ভারতস্থ বুলগেরিয়া রাষ্ট্রদূত মিস্টার নেতিন আজ এ মর্মে মন্তব্য প্রকাশ করেন যে, পাকিস্তান সরকার বুলগেরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কোছেদে যে ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, পাকিস্তানি জনগণ শিগগিরই তা উপলব্ধি করতে পারবেন।

রাজশাহীতে ছয়জনের লাশ উদ্ধার

রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি গর্ত হতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় অন্যান্য কলেজের ছয়জন ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধারের পর কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত আরেকটি ঘৃণ্য অপরাধের হদিস পাওয়া গেল। যাদের লাশ উদ্ধার করা হলো : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ অর্থনীতির (অনার্স) ছাত্র পাবনা জেলার অধিবাসী মোহাম্মদ আলী; ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র দ্বিতীয় বর্ষের পাবনার শওকত রেজা; ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র পাবনার মোজাম্মেল হক; রাজশাহী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ ইংরেজি অনার্সের ছাত্র রাজশাহীর আবদুল মান্নান এবং পলিট্যাকনিক ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজশাহীর মোহাম্মদ ইয়াকুব। সব কয়টি লাশই বোয়ালিয়া থানার নিকট আলবদর বাহিনীর ‘কসাইখানার’ উত্তর দিকে অবস্থিত একটি পরিখায় স্তূপীকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। লশের সন্ধান পেয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের অধ্যাপক ও ছাত্রবৃন্দ ঘটনাস্থলে গমন করেন এবং লাশগুলো শনাক্ত করার পর তাদের নামাজে জানাজা ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন। প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নিকট হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে গত ১২ ডিসেম্বর ফ্যাসিস্ট বদরবাহিনীর লোকেরা এই হতভাগ্য ছাত্রদের অপহণ করে।

আফ্রো এশীয় সংহতি সম্মেলনে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা

কায়রো। আফ্রো এশীয় সংহতি সংস্থার প্রথম সম্মেলনে বাংলাদেশে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর নরহত্যা ও নৃশংসতার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, বেশের জনগণের নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার আছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয় যে, উপমহাদেশের দৃশ্যপট পরিবর্তন এই এলাকার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তিকে সংহত করবে। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল ইউসুফ সভায় ইতিপূর্বে প্রস্তাব করে যে, সম্মেলনে গৃহীত সমুদয় প্রস্তাব সাধারণ ঘোষণার অংশ হবে। তার এই প্রস্তাব সম্মেলনে গৃহীত হয়। সম্মেলনে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম জোরদার করা ও সম্মেলনের চেয়ারম্যান জনাব মো. জায়াতের ভাষায় আমাদের মূল শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত

সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করার সংকল্প গৃহীত হয়। সমাপ্ত অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধি মিস্টার ভি, কে, কৃষ্ণ মেনন ভারতীয় উপমহাদেশ ও ভিয়েতনামে অনুসৃত নীতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোনা করেন।

তিনি বলেন, উপমহাদেশের সমস্যা স্বল্প সময়ের মধ্যে মীমাংসা না হলে পূর্ব বাংলায় অপর ভিয়েতনামের সৃষ্টি হতো। পর্যবেক্ষকদের মতে, সম্মেলনের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রশ্ন প্রাধান্য লাভ করে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৫ জানুয়ারি

বাঙালি অন্যায়ের প্রতি মাথানত করতে প্রস্তুত নয়

বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। কিন্তু এই স্বাধীনতার জন্য কত মা সন্তান হারিয়েছে, কত স্ত্রী স্বামী হারিয়েছে, কত পিতা তার সন্তানদের হারিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। দেশ স্বাধীন হয়েছে, আজও বাংলার হাজার হাজার মা, পিতা, স্ত্রী আশায় বুক বেঁধে আছে শীঘ্রই হয়তো তাদের আপনজন তাদের বুকে ফিরে আসবে। কিন্তু না, তাদের মধ্যে অনেকেই আর ফিরে আসবে না। কুমিল্লা জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবদুল মজিদের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ঠিক তেমনি একজন মা। যিনি তার সন্তানের আশায় বুক বেঁধে বসে আছেন। কিন্তু তিনি জানেন না যে, তাঁর স্নেহের ধন মোজাম্মেল হক (আবু)। আর তার বুকে ফিরে আসবে না। মোজাম্মেল হকের (আবু) মতো লক্ষ লক্ষ যুবকের তাজা রক্তের বিনিময়েই তো আজ বাংলা স্বাধীন।

শহীদ মোজাম্মেল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র। শহীদ মোজাম্মেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল মান্নান চৌধুরীর ভ্রাতুস্পুত্র ১৯৭১ সনের ১১ সেপ্টেম্বর। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মুজিববাহিনীর সৈন্যদের নিয়ে তিনটি নৌকা এগিয়ে যাচ্ছে কসবার নিকটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটির দিকে। নৌকাগুলোতে আছে বীর জোয়ান মোজাম্মেল, আবু জাহিদ, সাফু, পাখী, মমিনসহ আরও অনেকে।

দিনের বেলা অত্যন্ত ভালোভাবে রেকি করা হয়েছিল। নৌকাগুলো সরু খাল দিয়ে এগিয়ে চলছে। সামনের দিকে। একের পর এক সরু খাল ডিঙিয়ে এসে পড়ছিল ছারগাছ বাজারের কাছে। এমন সময় হঠাৎ পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ করল এই দলটির ওপর। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হলো। খান। সেনাদের অসংখ্য বর্বর সেনা মারা গেল। কিন্তু মুজিববাহিনীর মোজাম্মেল, জাহিদ, সাইফুল ইসলাম শহীদ হলেন এ যুদ্ধে। এই শহীদ মোজাম্মেল তার দলবল নিয়ে পাকিস্তান সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে বহু পাকিস্তান সেনাকে হত্যা ও আহত করেছেন। শহীদ মোজাম্মেল তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, বাঙালি অন্যায়ের কাছে অসত্যের কাছে মাথা নোয়াতে প্রস্তুত নয়। পাকিস্তান হানাদারবাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছে ৭ বছরের কচি ছেলে রফিকুল ইসলাম। ২২ মে কুমিল্লার কসবাথানাধীন গোপীনাথপুর গ্রামে নিজের গৃহের আঙিনায় খেলা করার সময় পাকিস্তানিবাহিনীর গুলিবর্ষণে তার মৃত্যু ঘটে।

পাকিস্তান তার ভুল উপলব্ধি করবে-বুলগেরিয়া ও পোলিশ কর্মচারীদের মন্তব্য

নয়াদিল্লি। বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ড সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ এই মর্মে আশা প্রকাশ করেছেন। যে, পাকিস্তান সরকার তার ভুল উপলব্ধিকরতঃ এই দুটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কোছেদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন। বর্তমানে ভারত সফররত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পোলিশ প্রতিনিধি দলের নেতা ও সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্সিস এডামকিউইস এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, তার দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কোছেদের সিদ্ধান্তে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন যে, একটি আইনত প্রতিষ্ঠিত সরকারের নেতৃত্বাধীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশকে অস্বীকার করে পোলান্ড কোন যুক্তিতে ৫ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পাকিস্তানকেই শুধু স্বীকার করে যাবেন। তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গেও স্বাভাবিক সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহী।

বুলগেরিয়া রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য : ভারতস্থ বুলগেরিয়া রাষ্ট্রদূত মিস্টার নেতিন আজ এ মর্মে মন্তব্য প্রকাশ করেন যে, পাকিস্তান সরকার বুলগেরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কোছেদে যে ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, পাকিস্তানি জনগণ শিগগিরই তা উপলব্ধি করতে পারবেন।

রাজশাহীতে ছয়জনের লাশ উদ্ধার

রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি গর্ত হতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় অন্যান্য কলেজের ছয়জন ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধারের পর কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত আরেকটি ঘৃণ্য অপরাধের হদিস পাওয়া গেল। যাদের লাশ উদ্ধার করা হলো : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ অর্থনীতির (অনার্স) ছাত্র পাবনা জেলার অধিবাসী মোহাম্মদ আলী; ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র দ্বিতীয় বর্ষের পাবনার শওকত রেজা; ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র পাবনার মোজাম্মেল হক; রাজশাহী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ ইংরেজি অনার্সের ছাত্র রাজশাহীর আবদুল মান্নান এবং পলিট্যাকনিক ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজশাহীর মোহাম্মদ ইয়াকুব। সব কয়টি লাশই বোয়ালিয়া থানার নিকট আলবদর বাহিনীর ‘কসাইখানার’ উত্তর দিকে অবস্থিত একটি পরিখায় স্তূপীকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। লশের সন্ধান পেয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের অধ্যাপক ও ছাত্রবৃন্দ ঘটনাস্থলে গমন করেন এবং লাশগুলো শনাক্ত করার পর তাদের নামাজে জানাজা ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন। প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নিকট হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে গত ১২ ডিসেম্বর ফ্যাসিস্ট বদরবাহিনীর লোকেরা এই হতভাগ্য ছাত্রদের অপহণ করে।

আফ্রো এশীয় সংহতি সম্মেলনে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা

কায়রো। আফ্রো এশীয় সংহতি সংস্থার প্রথম সম্মেলনে বাংলাদেশে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর নরহত্যা ও নৃশংসতার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, বেশের জনগণের নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার আছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয় যে, উপমহাদেশের দৃশ্যপট পরিবর্তন এই এলাকার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তিকে সংহত করবে। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল ইউসুফ সভায় ইতিপূর্বে প্রস্তাব করে যে, সম্মেলনে গৃহীত সমুদয় প্রস্তাব সাধারণ ঘোষণার অংশ হবে। তার এই প্রস্তাব সম্মেলনে গৃহীত হয়। সম্মেলনে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম জোরদার করা ও সম্মেলনের চেয়ারম্যান জনাব মো. জায়াতের ভাষায় আমাদের মূল শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত

সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করার সংকল্প গৃহীত হয়। সমাপ্ত অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধি মিস্টার ভি, কে, কৃষ্ণ মেনন ভারতীয় উপমহাদেশ ও ভিয়েতনামে অনুসৃত নীতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোনা করেন।

তিনি বলেন, উপমহাদেশের সমস্যা স্বল্প সময়ের মধ্যে মীমাংসা না হলে পূর্ব বাংলায় অপর ভিয়েতনামের সৃষ্টি হতো। পর্যবেক্ষকদের মতে, সম্মেলনের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রশ্ন প্রাধান্য লাভ করে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২