রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে বিশ্ব সম্প্রদায়, দাতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সংশিষ্ট সবাইকে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি গতকাল নগরীর একটি হোটেলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। অথচ দূষণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশসহ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ভূমিকা খুবই নগণ্য। যেসব দেশ এর জন্য দায়ী তাদেরকে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা এখন আর কোন একটি দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এর সমাধানে গোটা বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি’ শীর্ষক এ আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করে। ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের অধ্যাপক ড. পিটার স্যামন্ডস সম্মেলনের মূলবক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘বিশ্বায়নের এ যুগে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সমন্বয় এবং তার প্রায়োগিক রূপান্তর।’ বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র এলাকাকে কেন্দ্র করে আজ সুনীল অর্থনীতির সুবর্ণ দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমাদের দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে।’ আবদুল হামিদ আগামী দিনের ব্লু-ইকোনমি ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গবেষণা ও আনুষঙ্গিক কর্মকা- পরিচালনা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনুষদের বিভাগগুলোর শিক্ষাক্রম আরও আধুনিক, প্রায়োগিক ও বাস্তমুখী করে তোলার উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে দেশের প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি উন্নয়ন-কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়।’ বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দফতরসমূহের যোগসূত্র বা ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি পার্টনারশিপ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত একটি ধারণা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করে দেশি-বিদেশি গবেষকদের সমন্বয়ে উদ্ভাবনী গবেষণার নব-দিগন্ত অনুসন্ধানের প্রচষ্টায় নিয়োজিত থাকা।’ মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের ভূমিরূপ, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিহ্রাস ও টেকসই অবকাঠামো গঠন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শতবর্ষ মেয়াদী বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি টেকসই উন্নয়নকেন্দ্রিক একটি উন্নত জাতি গঠনে বাংলাদেশ সরকার ২০২১ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, এই সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত গবেষণাকর্ম, তথ্য-উপাত্তের সঠিক প্রয়োগ সে লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এম.পি, সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সম্মেলন সচিব অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসর ডীন অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, সিনিয়র শিক্ষাবিদ, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের সম্মানিত সদস্য, বঙ্গভবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সচিব এবং সিনিয়র বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১
বাসস
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে বিশ্ব সম্প্রদায়, দাতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সংশিষ্ট সবাইকে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি গতকাল নগরীর একটি হোটেলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। অথচ দূষণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশসহ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ভূমিকা খুবই নগণ্য। যেসব দেশ এর জন্য দায়ী তাদেরকে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা এখন আর কোন একটি দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এর সমাধানে গোটা বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি’ শীর্ষক এ আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করে। ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের অধ্যাপক ড. পিটার স্যামন্ডস সম্মেলনের মূলবক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘বিশ্বায়নের এ যুগে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সমন্বয় এবং তার প্রায়োগিক রূপান্তর।’ বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র এলাকাকে কেন্দ্র করে আজ সুনীল অর্থনীতির সুবর্ণ দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমাদের দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে।’ আবদুল হামিদ আগামী দিনের ব্লু-ইকোনমি ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গবেষণা ও আনুষঙ্গিক কর্মকা- পরিচালনা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনুষদের বিভাগগুলোর শিক্ষাক্রম আরও আধুনিক, প্রায়োগিক ও বাস্তমুখী করে তোলার উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে দেশের প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি উন্নয়ন-কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়।’ বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দফতরসমূহের যোগসূত্র বা ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি পার্টনারশিপ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত একটি ধারণা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত করে দেশি-বিদেশি গবেষকদের সমন্বয়ে উদ্ভাবনী গবেষণার নব-দিগন্ত অনুসন্ধানের প্রচষ্টায় নিয়োজিত থাকা।’ মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের ভূমিরূপ, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিহ্রাস ও টেকসই অবকাঠামো গঠন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শতবর্ষ মেয়াদী বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি টেকসই উন্নয়নকেন্দ্রিক একটি উন্নত জাতি গঠনে বাংলাদেশ সরকার ২০২১ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, এই সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত গবেষণাকর্ম, তথ্য-উপাত্তের সঠিক প্রয়োগ সে লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এম.পি, সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সম্মেলন সচিব অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসর ডীন অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, সিনিয়র শিক্ষাবিদ, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের সম্মানিত সদস্য, বঙ্গভবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সচিব এবং সিনিয়র বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।